এবং_তুমি পর্ব ১৮

0
955

গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ১৮

আমি রাগ দেখিয়ে স্মার্ট ফোনটার দিকে তাকালাম। যখন তাকালাম তখন ই বোধহয় আমার হুশ চলে গেলো। শরীরের সব শক্তি উড়ে গিয়েছিলো। বিষ্ময়ে আমার চোখদুটো বড় হয়ে গেলো। হাত-পা অটোমেটিক থেমে এলো। আমি মুখে হাত দিয়ে উনার দিকে একপলক তাকিয়ে পুনরায় স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। ততক্ষণে আমার বাক-শক্তি হারিয়ে গিয়েছিলো। মুখ দিয়ে শব্দ ই বের হচ্ছিলো না।

—-এ্ এটা তো…

ইশান আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,

—-হু,তুমি।

স্ক্রিনের উপর ভাসমান ফটোর দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলাম না। শরীর ঝিমিয়ে উঠলো। এটা কোনো স্বাভাবিক ছবি নয়, খুবই এলোমেলো ছবি। ছিঃ,এত বাজে ছবি কীভাবে ইশানের ফোনে? আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। তৎক্ষণাৎ ডিলেট করে দিলাম। ইশান হাসলেন। হেসে বললেন,

—ডিলেট করে লাভ নেই। আমার কাছে আরো অনেক অনেক কপি আছে।

—ছিঃ!

ইশান গাড়ী স্টেয়ারিং এর উপর হাত রেখে বললেন,

—-এত ছিঃ,ছিঃ করছো কেনো? লুক এট ইট, হোয়াট এ পিকচার ম্যান। আই জাস্ট লাভ ইট।
ওয়েট,জুম করে দেখাই…

আমি ফোন টা শক্ত করে চেপে রইলাম। বিষ্ময়ে বোধহয় মরে টরে যাবো। এ ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড তো ইশানের বিছানার। অর্থাৎ আমার শশুড়বাড়ীর। কিন্তু আমি তো কখনো এমন ছবি তুলি না। অর্থাৎ ইশান তুলেছেন? কিন্তু কবে?কখন?কীভাবে?

ইশান ফোনটা টেনে নিতে চাইলেন। আমি শক্ত করে ধরে রাখলাম। কঠিন গলায় বললাম,

—আপনি এ ছবি কই পেলেন?

—কই পাবো মানে? আমার বউ এর নগ্ন ছবি অন্যকেউ দিবে কীভাবে? হাউ? অভিয়েসলি আমি তুলেছি… ইউ নো হোয়াট, এর বড় একটা ফটোকপি ও করিয়েছি। আমি তো ছবি-টবি আঁকতে পারি না তাই। উহু,টেনশন নট, আমার নিজের প্রিন্টিং মেশিনে, আমি নিজে প্রিন্ট করেছি।

আমি শক্ত গলায় বললাম,

—-আর কি করেছেন?

—-ছুঁয়েছি.. কিস করেছি। কতটা জানো? তুমি তো জানবে না,আমি বলছি..তুমি আমার কন্ঠনালিতে যতটা চুমু দিয়েছো তার ৪গুণ যোগ ২। কতটা হয়েছে বলো তো? অংকের হিসাব বুঝো তো? বুঝবে না কেনো, তুমি তো গণিতের বেস্ট স্টুডেন্ট। যাও,তবুও বলে দিচ্ছি, ৩০ টা। তুমি তো বলো আমি তোমাকে ছুঁয়েও দেখি নি।অথচ দেখো আমি ৩০ টা চুমু খেয়েছি।

—এসব কবে হয়েছে?

—তুমি বোধ হয় ভালো করে ছবিগুলো দেখো নি। দেখলেই বুঝতে কোনদিনের ছবি। দেখছো না বিছানা ভিজে আছে। সেদিন তো জামা-কাপড় না বদলে শুয়েছিলে। তাই আমি বদলে দিয়েছিলাম। তুমি আবার অজ্ঞান-টজ্ঞান ছিলে না, আমিই ইচ্ছে করে তোমায় ডাকি নি। কঠিন সাবধানতার সাথে করেছি। যাতে তুমি জেগে না যাও।

—আমি কেনো বুঝি নি?

ইশান আমার খুব কাছে এসে বললো,

— তুমি তো এগুলো বুঝবে না। বুঝবে কীভাবে আমাকে ছেড়ে দেওয়া যায়।

আমার শরীর অস্বাভাবিক কাঁপছে। যে কেউ দেখলে বলবে, রাবার স্প্রিং! ইশানের এত কাছে আসা আমার সহ্য হচ্ছে না। দম আটকে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা ও যেসব বলেছে তা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা নিশ্চই দুঃস্বপ্ন। হ্যা,মানছি আমার ঘুম ভারী। তাই বলে কেউ একজন আমার সাথে এতকিছু করে ফেলবে আমি বুঝি টেরও পাবো না? কিন্তু সে রাতের কিছু স্মৃতি বলছে সত্যও হতে পারে। কেননা ঘুমের মধ্যে একবার চোখে মেলেছিলাম, তখন ইশান আমার গালে চুমু দিচ্ছিলেন। আমি স্বপ্ন ভেবে আবারো চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলাম। কারণ আমার ধারনা ইশান কোনোদিন আমার এত কাছে আসবে না। যেখানে আমি নিজ থেকে গিয়েছিলাম ওর কাছে। সেখানে এটা নিচক একটি দুঃস্বপ্নই?
কিছুই ভাবতে পারছি না। মাথা ধরে যাচ্ছে। আজ কি কোনো চমকে যাবার দিন?এত চমকপ্রবণ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ভাবনা চিন্তার মাঝেই ইশান সরে গেলেন। পুনরায় গাড়ী টা চালু দিলেন। সাই সাই গতিতে গাড়ী সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। ততক্ষণে আমার মাথায় চিন্তার আস্ত এক পাহাড় গড়ে উঠছিলো। আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,

—আপনি কেনো এমন করেছিলেন?

ইশান গাড়ী চালানো বহাল রেখেই বললেন,

— কোনটা? তোমাকে ছুঁয়ে…

—বারবার উচ্চারণ করা কী জরুরী?

— জরুরী নয় মানে? আলবাত জরুরী। আমার জীবনের বেস্ট একটা মোমেন্ট। বলবো না?আর তাছাড়া আমি তো তোমার মতো সবার সামনে খুল্লাম-খুল্লি আমাদের ভেতরের বিষয়গুলো ডিসকাস করছি না। জাস্ট তোমাকেই বলছি..

— আপনি কি ওখানের বিষয়গুলোর জন্য এভাবে কথাবার্তা বলছেন? তাহলে আমি দদুঃখিত। আসলে আমার তখন মাথা ঠিক ছিলো না। নাফিয়া আপা আপনাদের দুজনকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছিলো, আর তখন আশেপাশে এত মানুষ ছিলো যে আমি ভুল….

ইশান গাড়ী থামিয়ে দিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললেন,

— সিরিয়াসলি? জাস্ট মিষ্টি খেতে দেখে তুমি ভুলভাল ধারনা করে নিয়েছো। সাথে সবার সামনে আমাদের ভেতরের সম্পর্ক বর্ণনা করেছো। ডোন্ট ইউ নো,ওরা সাংবাদিক? ভালো,খুব ভালো। ওয়েট করো কাল সকালে খবরের কাগজের জন্য। দেখে নিও,কি কি লিখা থাকে। তখন প্রত্যেককে জবাবদিহি করো।

ইশান ভয়ংকর রেগে গেলেন। গাড়ীর স্পীড সাথে সাথে বেড়ে গেলো। অচেনা পথ,অচেনা স্থান পেরিয়ে যাচ্ছে। আমি চুপ রইলাম। ইশান হঠাৎ ই বললেন,

— ওয়েট,ওয়েট…. আমি তোমার বোনের সাথে এমন কিছু করে ফেললেও তো তোমার সমস্যা হবার কথা নয়। তুমি কেনো রেগে গেলে? তুমি তো আমাকে ডিবোর্স দিবে তাই না? তাহলে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করি বা না করি তাতে তোমার কি? তোমার মাথা কেনো খারাপ হবে? হোয়াই?

আমি থতমত খেয়ে গেলাম। যাকে বলে নিজের জালে নিজেই ফেঁসে যাওয়া। ইশান তো জানেন আমার ফিলিংস। আমি কি করেছি না করেছি সব তো জানেন। ইনফ্যাক্ট তিনি নিজেই তো এসব বলে আমাকে লজ্জা দিয়েছিলেন। তিনি কি বুঝতে পারছেন না আমি উনার প্রতি দূর্বল।ভীষণ দূর্বল! নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন। যাতে আমি নিজ থেকে বলি। আমি কথা ঘুরিয়ে নিলাম। উল্টো জোর দিয়ে বললাম,

—আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন। আমি প্রথমে প্রশ্ন করেছি। আগে সেটার উত্তর দিন।

—-কে কথা ঘুরাচ্ছে? আমি না তুমি?

—অভিয়েসলি আপনি। কারণ আমি আপনাকে প্রথমে বলতে বলেছি। এবার না ঘুরিয়ে বলে ফেলুন। কেনো করেছিলেন?

ইশান গাড়ী টা থামিয়ে দিলেন। বললেন,

—ওকে,ফাইন। আমি বলছি,- কজ ইউ আর মাই ওয়াইফ। আমি তোমার সাথে সব করতে পারি। সব মানে সব। এ টু জেড। আন্সার পেয়েছো? এবার তুমি বলো…

আমিও রেগে বললাম,

— আমার উত্তরটাও সেইম। আপনি আমার স্বামী। তাই আমি এত রিয়েক্ট করেছি।মানছি ডিবোর্স হবার কথা, কিন্তু এখনো তো হয় নি। তাই না।

ইশান সরে বসলেন। ক্লান্ত, দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। যার আওয়াজ আমার কান পর্যন্ত পৌঁছেছিলো। নিরবে কয়েক সেকেন্ড মৌনতা পালন করলেন।তারপর, আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

— তুমিও জানো,আমিও জানি কেনো তোমার এত ওভার রিয়েকশন ছিলো। তুমি আমাকে পছন্দ করো, হয়তো ভালোওবাসো। আমাকে নিয়ে তোমার পজেসিভনেস কিন্তু সেটাই বলছে। আমি জানি না কেনো তুমি আমাকে ছেড়ে দিতে চাইছো। কেনো আমাদের সম্পর্ক টা শেষ করতে চেয়েছো। কিন্তু এর কারণ যদি আমার মেনে না নেওয়া বা তোমার বোন হয়ে থাকে। তাহলে আমি বলবো প্লিজ,আমাকে একটা চান্স দাও। লাস্ট চান্স। মাধবি আপার সাথে যে আমার কিছু ছিলো না তা নিশ্চই তোমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। আর রইলো তোমাকে মেনে না নেওয়া? আচ্ছা,তুমিই বলো,আমার পরিস্থিতিতে তুমি থাকলে কি প্রথমেই সব মেনে নিতে? নিশ্চই না। তাহলে আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া ই যায় তাই না? দিবে কি লাস্ট একটা সুযোগ? ডিবোর্স কিন্তু সবকিছুর সমাধান নয়। তুমি চাইলেই সব ঠিক হতে পারে। প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও। কথা দিলাম, আমি সব ঠিক করে ফেলবো।

#চলবে…….

®সোনালী আহমেদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here