এবং_তুমি পর্ব ৬

0
991

গল্পের নাম— #এবং_তুমি
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ৬

রুম নাম্বার ৯০২ এ আমি একা বসে আছি। ইশান বাহিরে গেছেন। অফিস থেকে জরুরী ফোন এসেছে। সম্ভবত নতুন বিয়ের প্রজেক্টের ব্যাপারে। আমি খুশি হলাম। ইশান থাকলে আমার খুবই অসুবিধা হতো ডাক্তারের সাথে কথা বলতে। লজ্জায় হয়তো কিছুই বলতেই পারতাম না। ডাক্তারকে খুব সহজেই আমার সমস্যার কথা জানালাম।
তিনি বললেন, — এত চাপ নেবার কিছু নেই। নরমালি বিয়ের পর কিছু মেয়েদের এমন সমস্যা দেখা দেয়। আমি ট্যাবলেট লিখে দিয়েছি এগুলা খেলেই সেরে যাবে। প্লাস কয়েক ঘন্টা রেস্ট নেতেই হবে। রিমাইন্ডার, এই ঔষধে ইনস্ট্যান্ট কিছুই হবে না, ধীরে কাজ করবে।

— ওকে। আমি আরো একটা বিষয় বলেছিলাম তার জন্যেও কি এই ঔষধগুলো। আই মিন এক্সট্রা কিছু লাগবে না?

— অভিয়েসলি। তার জন্য আপনাকে দুটো টেস্ট দিয়েছি। ইউরিন এন্ড ব্লাড টেস্ট। উইদাউট রিপোর্ট আই কান্ট সে এনেথিং।

— রিপোর্ট তো ২ টার পরে পাবো। কিন্তু আপনার ভিজিটিং আওয়ার তো শুধু ১২ টা পর্যন্ত।

— আপনি কাল আসবেন রিপোর্ট নিয়ে।তখন রিপোর্ট দেখে জানিয়ে দিবো। ওহ,নো। কাল তো হবে না। কালকেই আমাকে লন্ডন যেতে হবে ট্রেনিং। আই হেভ টু গো। ওয়ান উইক ট্রেনিং। এক কাজ করুন আমি দেশে ফিরলে নাহয় দেখিয়ে নিবেন।

আমি বললাম, –ঠিক আছে। রিপোর্ট নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে পড়লাম। হাটতে হাটতে দেখলাম ইশান কারো সাথে কথা বলছে। ফোনে নয় সামনাসামনি। আমি শুধু ব্যাকসাইড দেখতে পাচ্ছিলাম। ইশান খুবই রুড আচরণ করছে। কৌতুহলবশত সেদিকে এগুলাম। অবাক চোখে দেখলাম মানুষটা আমার বাবা। চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত।কিন্তু কেনো? তিনি সম্ভবত ইশান কে কিছু বলতে চাইছেন, ইশান তা শুনতে চাইছে না। আমি ইশানের পাশে দাড়ালাম। খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম,

—কেমন আছো বাবা?

বাবা জবাব দিচ্ছেন না। একদৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রয়েছেন। মনে হচ্ছে হুশ নেই। আমার জানতে ইচ্ছা করলো,বাবা কেনো এই মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন? তিনি কি জানেন এ দৃষ্টিতে আমার মন কেঁদে উঠছে। বুক অসাড় হয়ে আসছে! আবারো বললাম, —বাবা, কেমন। আছো?
এইবার বোধহয় বাবার টনক নড়েছে। তিনি দৃষ্টি নামিয়ে বললেন,
—হু, ভালো।

—জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি? বাবা জানতে চাইলো। আমি বললাম— আমিও ভালো আছি বাবা। তুমি কি এখানে একা এসেছো?
বাবা চুপ রইলেন। আমি শান্ত কন্ঠে বললাম, — আমি জানি আপা তোমার সাথে এসেছে। তাকে এখানে আসতে বলো। কথা আছে।

বাবা বললেন, — সে আসে নি।

—মিথ্যা বলো না বাবা। তুমি জানো মিথ্যা বলা আমার পছন্দ না।

বাবা নিচু স্বরে বললেন সে সত্যিই আসে নি। আমি জানতে চাইলাম কই আছে? বাবা বলতে চাইলো না। ইশান সেই মুহূর্তে আমাদের পাশ থেকে চলে গেলো। সে বোধহয় বুঝতে পেরেছে বাবা তার জন্য বলতে চাইছে না। আমি ঠান্ডা কন্ঠে বললাম— বাবা এইবার নিশ্চই বলতে সংকোচ নেই।
—হু।

—তাহলে বলো।

বাবা জানালেন, আপা ফুফুর বাড়ী আছেন। এই একমাত্র ফুফুর সাথেই আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। কারণ বাকিরা বাবার উপর রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো। বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে রাজি হয় নি বলে। অবশ্য শেষমেষ কথা হয়েছিলো আমাদের বিয়ের পর বাবা বিয়ে করবেন। এই শর্তে এই একমাত্র ফুফু যোগাযোগ রেখেছিলেন। ফুফুর এক ছেলে। যার নাম রিয়াজ রাজ চৌধুরি। খুবই বেয়াদপ ছেলে। আমি তাকে সহ্য করতে পারি না। এর পেছনে জোরালো কারণ ছিলো, সেটা হলো সে দু-তিনবার আমার বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। এমন ছেলেকে নিশ্চই পছন্দ করা যায় না? ভয় আর সংকোচের জন্য কাউকে বলতেও পারতাম না। সে সবসময় মেয়েদের দিকে বাজে নজরে তাকায়। ক্যারেক্টালেস ছেলে। আপা প্রথম প্রথম তাকে পছন্দ করলেও শেষে খুবই অপছন্দ করতেন। কিন্তু বাবা কষ্ট পাবে বলে বলতো না। ফুফুর বাড়ী যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও বাবাকে খুশি করতে যেতো। প্রতিবার এসেই বলতো, –আই সোয়ার প্রভা, আমি জীবনেও আর ওই বাড়ীতে যাবো না। কোনদিন না জানি ওই ছেলেকে খুন করে ফেলি। তাহলে আপা আজ ফুফুর বাড়ীতে কেনো?

আমি বাবাকে ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলাম, — তুমি জিজ্ঞেস করো নি সে কেনো পালিয়ে গেছে?

—হু।

—কি বলেছে সে?

— রিয়াজকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না। তাই পালিয়েছি। এটুকুই উত্তর দিয়েছিলো সে।

— সিরিয়াসলি বাবা? বিয়ের দিন তার মনে পড়েছে সে কাকে না কাকে ভালোবাসে। এর আগে বলে নি কেনো? তুমি তাকে জিজ্ঞেস করো নি?

— সে জানিয়েছিলো আমায়, আমি মানি নি।

—কেনো মানো নি?

—কারণ সেদিন তার গায়ে হলুদ ছিলো। এরপরের দিন বিয়ে, এ সময়ে আমি কীভাবে বারণ করবো?

—ভালো, খুব ভালো।

আমার অস্থিরতার মধ্যেই বাবা বললেন, — আমি কি তোকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি?

বাবার স্বর আটকে যাচ্ছে। তিনি কাঁপছেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। বাবা কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন? কিন্তু কেনো? কেনো এত জড়তা? আমি কেঁদে ফেললাম। বাবা কোনোদিন আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেন না । আমার সাথে কখনও নরম গলায় কথা বলেন না । সবকিছু আপার সাথে করতেন। তার সুখ দুঃখ সব আপার সাথে শেয়ার করতেন। আমার খুব আফসোস থাকতো। অনেক সময় এভাবেই রইলাম। বাবা কাঁদছিলেন। আমি নরম কন্ঠে বললাম,

—বাবা

—হু

—স্যারকে আপনি কি বলছিলেন? তিনি এত রেগে যাচ্ছিলেন কেনো?

— মাধবি চিঠি দিয়েছে।

—সেজন্যই কি এত রেগে যাচ্ছিলেন।

—হু।

— আচ্ছা,তুমি আমাকে দাও। আমি দিয়ে দিবো।

বাবা দিতে চাইলেন না। তিনি বললেন, থাক দেওয়ার দরকার নেই। আমি বললাম,– কোনো সমস্যা বাবা?

—হু। মাধবি বলেছে এটা যেনো তোকে না দেখাই। শুধু ইশানকে দিতে।

—কেনো বলেছেন? কি আছে চিঠিতে?

—জানি না। ও আমাকে দেখতে বারণ করেছে।

—ঠিক আছে। আমিও দেখবো না। তুমি দাও আমি উনাকে দিয়ে দিবো।

বাবা দিতে চাইলেন না। আমি প্রায় জোর করেই নিয়ে নিলাম। চিঠি হাতে নিতেই আমি অশান্ত হয়ে উঠলাম। কি আছে এই চিঠিতে যা শুধু ইশান দেখতে পারবে আমি পারবো না? বাবা ইশানের বাবাকে দেখতে গেলেন। আমার শাশুড়ি জানালেন, তারা আর কোনোরকম অনুষ্ঠান করতে পারবে না। এমনতিই অনেক কিছু হয়েছে। বাবা বললেন –না না,আমি কোনো অনুষ্ঠান করতে নয়। বেয়াইকে দেখতে এসেছিলাম। বাড়ীতে কেউ ছিলেন না। আপনাদের কাজের বুয়া বললো আপনারা সবাই হাসপাতালে। তাই বেয়াইকে দেখতে হাসপাতালে চলে এসেছি।

ফুফু বললেন,— দেখুন, আপনার মেয়ে তো কম করেনি। আপনার তো গেছে সাথে আমাদেরও মানসম্মান গেছে। তাই এসব কিছুর মন-মানসিকতা আমাদের একদম নেই। ভাবী সেটাই বলতে চাইছে। আপনি অন্যকিছু মনে করবেন না, প্লিজ।

—না, না। আমি কিছুই মনে করি নি। আপনাদের যা ভালো মনে হয়।

বাবা মাথা নিচু করে বসে রইলেন। তিনি হয়তো খুব লজ্জা পাচ্ছেন। আমার কষ্ট লাগলো। বাবাকে কখনো কারো সামনে ঝুঁকে থাকতে হয় নি। অথচ আজ…

#চলবে……

® সোনালী আহমেদ

[লেইট এবং আগোছালো পর্বের জন্য দুঃখিত। এতগুলো সরি। ইন-শা-আল্লাহ আজ বোনাস পর্ব দিয়ে পুষিয়ে দিবো। আপনারা কিন্তু অপেক্ষা করবেন না। আমি সময়মতো দিয়ে দিবো। আপনারা কি জানেন, দিনদিন আপনাদের মন্তব্য হারিয়ে যাচ্ছে পাঠক! আমি খুবই আশাহত হচ্ছি। রিচেক করি নি,ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here