এবং_তুমি পর্ব ৭

0
1029

গল্পের নাম— #এবং_তুমি
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ৭ (বোনাস)

হুড খোলা রিক্সায় আমার শরীর ঘেষে রিক্সায় বসেছেন ইশান স্যার।। ভয় আর উত্তেজনায় কাঁপছিলাম। এতটা কাঁপছিলাম যে রিক্সার নড়ার সাথেও তা বুঝা যাচ্ছিলো। স্যার বোধহয় বুঝলেন। তিনি মৃদু হেসে সরে বসলেন। আমি স্বাভাবিক হলাম। শাই শাই গতিতে রিক্সা চলার সাথে আমার শাড়ীর আঁচল এলেমেলো হয়ে উড়ছিলো। বারংবার মুখের উপর থেকে চুল সরাতে সরাতে আমি ক্লান্ত হয়ে উঠলাম। বিরক্তিতে চুলগুলো পেঁচিয়ে খোপা করে নিলাম। আগোছালো খোঁপা। তাই সেই আগের মতো চুল উড়ে আসছে। আমার পাশের লোকটার বেধ হয় খবর ই নেই যে তার পাশে বসা মেয়েটার কি হাল হচ্ছে। সে একপানে সামনের দিকে চেয়ে রয়েছে। আমার রাগ উঠলো।

বিরক্তিকর সুরে রিক্সাওয়ালাকে বললাম, —মামা একটু ধীরে চালান।

ইশান শান্ত কন্ঠে বললো, —কোনো দরকার নেই মামা। আপনি যেভাবে চালাচ্ছেন ওভাবেই চালান।

— আমার সমস্যা হচ্ছে তাই ধীরে চালাতে বলেছি।

ইশান পাত্তা দিলো না। সে ভাব নিয়ে সামনে তাকিয়ে বসে আছে। রাগে আমার পিত্তি জ্বলে উঠলো। আমার চোখমুখ কালো হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিলো এক্ষুণি কেঁদে দিবো। ইশানের চোখে বোধহয় ব্যাপার টা পড়লো। আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। ইশান মৃদু হেসে আমার দিকে সরে আসলেন। একদম গা ঘেষে বসলেন। তার ডানহাত আমার পেছনে নিয়ে নিলেন। শাড়ির আঁচল টেনে আমার মাথায় পরিয়ে দিলেন। খুব কায়দা করে আমার মুখের উপর পড়া চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিলেন। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। তিনি হুড টেনে দিলেন। আমার মসৃণ কোমড়ের উন্মুক্ত অংশে হাত রেখে ফিসফিস করে বললেন, — তোমায় একদম বউ বউ। রসগোল্লা টাইপ বউ। ইচ্ছা করছে কচকচ করে খেয়ে ফেলি।

আমি বললাম,– ছিঃ,কি অশ্লীল।

ইশান ভুবন কাপিয়ে হাসলেন। তার হাসির শব্দের ঝংকার শুনে রিক্সাওয়ালা পর্যন্ত পেছনে ঘুরে তাকালেন। আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম। ভীষণ লজ্জা। আমি এক ধাক্কা দিয়ে ইশানকে সরিয়ে দিলাম। রিক্সাওয়ালা তখনও আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আমি তাকে সামনে ফিরে চালাতে বললাম। কথাটা শেষ না করতেই বড় মাইক্রোবাসের সাথে আমাদের রিক্সার সংঘর্ষ হলো। এত জোরে রিক্সা বাড়ী খেলো যে আমি আর ইশান দুজনেই ছিটকে গাড়ি থেকে পড়ে গেলাম। আমি রিক্সার ডান পাশে থাকায় মাটির উপর পড়েছিলাম। তখন হাত আর কনুইয়ের বেশ কিছু স্থান সাথে সাথে ছিলে যায়। অপরদিকে ইশান রাস্তায় রক্তের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। তার শরীর থেকে স্রোতের মতো রক্ত ভেসে যাচ্ছে। এই দৃশ্যপট সহ্য হলো না আমার। গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম,— ইশাননননন

— এইতো,এইতো আমি। কি হয়েছে? কি হয়েছে?

ইশান আতঙ্কিত গলায় আমাকে প্রশ্ন করছেন। তার হাতে হলুদ রঙের তোয়ালে। মুখ ভেজা। আমার থেকে প্রায় আট দশ ইঞ্চি দূরে দাড়িয়ে আছপ সে। অথচ আমার মনে হচ্ছিলো আমার থেকে কতশত মাইল দূরে সে। আমার দম আটকে যাচ্ছিলো। শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হতে লাগলো। ইশান একপ্রকার দৌড়ে এসে আমার ধরলেন।

—কি হয়েছে? এমন করছো কেনো? দুঃস্বপ্ন দেখেছো?

ইশানের নরম কন্ঠে আমি শান্ত হলাম। এটা স্বপ্ন ছিলো? আমি এতক্ষণ ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম? কিন্তু এত বাজে স্বপ্ন কেনো?হোয়াই? এর নিশ্চই বড়সড় কারণ আছে। ইশানকে শক্ত করে ধরলাম। সঙ্গে সঙ্গে হুরহুর করে কেঁদে উঠলাম।

ইশান অস্থির হয়ে বললো,

—কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে বলবে তো? না বললে কীভাবে বুঝবো?

—আপনাকে যেতে দিবো না। একদম যেতে দিবো না।

—আচ্ছা দিও না। কিন্তু বলো তো কি হয়েছে?

আমার কন্ঠ আসছিলো না। নাক টেনে ধরা ধরা গলায় বললাম,

— হাসপাতাল, হাসপাতাল থে্ থেকে আ আসার স্ সময়…

ইশান আমাকে থামিয়ে বললো,

—হাসপাতাল থেকে আমরা চলে এসেছি প্রভাতি। বাবাও এসেছেন। এখন সুস্থ আছেন। তিনি ঘুমাচ্ছেন। আর বাকি সবাইও যার যার রুমে ঘুমাচ্ছে। তুমি খামোখা চিন্তা করছো।

—কিন্তু আ আমি….

—তুমি কিছুই নয়। যা দেখেছো তা দুঃস্বপ্ন বৈ কিছুই নয়। অসময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলে তাই হয়তো দুঃস্বপ্ন দেখেছো।

আমি চুপ করে রইলাম। ইশান স্যার উঠে গেলেন। এক গ্লাস পানি এনে আমার সামনে ধরলেন। আমি বিনা দ্বিধায় খেয়ে নিলাম। কয়েক মুহূর্ত এক স্থানে বসে রইলাম। হাসপাতাল থেকে দুপুরের দিকেই চলে এসেছিলাম। বাবাও আমাকে হাসপাতালে বিদায় দিয়েছিলেন। যাবার সময় কি কান্না টাই না করেছিলো। বাবাকে থামাতে না পেরে শেষমেষ বললাম যে সপ্তাহখানেকের ভেতরেই আমি চলে আসবো। এর ভেতরে আর চিঠি দেখায় সময় মিলে নি। রিপোর্ট পত্রের সাথে চিঠি লুকিয়ে বাড়ীতে নিয়ে এসেছি। বাড়ীর কারোর নজরে অবশ্য চিঠির ব্যাপার টা পড়ে নি। শুধুমাত্র ফুফুমা একবার বলেছিলো ওই নীল কাগজে কি? আমি রিপোর্ট বলে লুকিয়ে নিয়েছিলাম। বাড়ীতে এসে খুব গোপনে নিরাপদ স্থানে রেখে দিয়েছিলাম। বিশেষত ইশান যাতে টের না পায় তার ব্যবস্থা করলাম। এরপর এরপর, চোখ ভারী হয়ে এসেছিলো। ক্লান্তিতে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম। ডাক্তারের ঔষধগুলোর জন্যই এত ঘুম। আমার নিজের উপর ভীষণ রাগ উঠলো। ভীষণ রাগ! এত…..

#চলবে….

[বোনাস পর্ব কেমন লাগলো? আপনারা খুশি হয়েছেন তো? মন্তব্য না জানালে কিন্তু আমি খুশি হবো না। ভালোবাসা সকল পাঠকের প্রতি।]

® সোনালী আহমেদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here