ত্রয়ী পর্ব ২৩

0
654

ত্রয়ী
মোর্শেদা হোসেন রুবি
২৩||

অনেকক্ষণ ধরেই চুপচাপ বসে আছে সায়রা। দৃষ্টি সামনের জানালার ঘোলা কাঁচে নিবদ্ধ। পুরো জানালা বরফে সাদা হয়ে আছে। বাইরে প্রচুর তুষারপাত হচ্ছে। টিভিতে রেড সিগন্যাল দিচ্ছে। পুরো দার্জিলিং এ মুহূর্তে বরফের নিচে। অনেকেই জানালার এপাশ থেকে সেই নৈসর্গিক দৃশ্যের স্থির চিত্র ক্যামেরাবন্দী করে রাখছে। কিন্তু সায়রাকে এসব কোনকিছুই স্পর্শ করছেনা। ওর কানে এখনও রুৎবা খালামনির কথাগুলো ভাসছে ।তিনি বারবারই বলছিলেন, ” তুই সানা পরিবারের মেয়ে বান্না। কাজেই আমির সানা তোর বাবা হোক বা চাচা তাতে কিছু যায় আসে না। তুই সানা পরিবারের উত্তরাধিকারী। আর এটা মিথ্যে নয়। এটা সবাই জানে। তোর দাদী পর্যন্ত।” রুৎবা খালামনির এই অনাবশ্যক দাবির পেছনে নিজের পলকা অবস্থানটুকু যেন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। তবে কথাগুলো বুকে ধাক্কা মত মারলেও খালামনির শেষ কথাটা সায়রার কানে গলিত লাভার মত ঠেকেছিল। আপনা হতেই চোখে কোল বেয়ে পানির ধারা বইল সায়রার। নিজেকে নিয়ে কত গর্ব ছিল। আজ সব ধূলিস্যাৎ হলো। সায়রার আজ মাটির ধূলার চেয়েও নগন্য , জঘন্য। দীর্ঘশ্বাসের ভারী বাতাস চারপাশের তুষার পড়ার শব্দের সাথে মিশে ঘরের পরিবেশটাকে আরো ভারী করে তুলেছে। সায়রার চেহারা আপনা হতেই বিকৃত হল। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছে না। কারণ দরজার ওপারে লোকটা ইতোমধ্যেই দু’বার চাপা স্বরে ওকে ডেকে গেছে। সে হয়ত ঘটনা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। নইলে এতক্ষণে পেয়ারী মির্জা আর শ্রাবনীর জেনে যাবার কথা যে সায়রা কাঁদছে। কিন্তু বারসাত তাদের কিছু জানায়নি কারণ সে বুঝতে পেরেছে এখানে ঘটনা যা’ই ঘটে থাকুক না কেন তা তার পরিবারের জানা উচিত হবেনা।

কথাটা মনে আসতেই চোখের পানির বন্যা বইল সায়রার। আজ সে কতটা ঘৃণিত তা বারসাতের ছানাবড়া চোখই বলে দিয়েছে। কারণ সায়রা আবেগ চাপতে পারেনি। বারসাতের সামনে নিজের স্বরূপ তুলে ধরেছে। সত্যি বলতে, রুৎবা খালামনির কথাগুলো হজম করা ওর পক্ষে সহজ ছিল না। অবশ্য খালামনি এত সহজে মুখ খোলার পাত্রী ছিলেন না। সায়রা তাকে ভয় দেখিয়েছিল। ফোন করেই সরাসরি তীক্ষ্ম স্বরে বলেছিল, ” আমি তোমাকে তিনটা প্রশ্ন করব খালামনি। প্রত্যেকটার সঠিক জবাব না পাওয়া পর্যন্ত আমি তোমার বাসায় আসবো না। এখান থেকেই ফিরে যাব। আই প্রমিজ।”
রুৎবা খালামনি দারুণ হকচকিয়ে গিয়েছিলেন সায়রার হ্যালো বা সালামের বদলে এই কথাগুলো শুনে। তিনি ভয় পাওয়া গলায় জানতে চেয়েছিলেন সায়রারা এখন কোথায় আছে। তুষারপাত কমলে তিনি নিজেই গাড়ী নিয়ে চলে আসবেন ওকে নিতে। সায়রা তখনই বলে দিয়েছিল, ” এখানে এলেও আমাকে পাবে না খালামনি। তার আগেই আমি এখান থেকে বেরিয়ে যাব।”
-” কী পাগলামি শুরু করেছিস ? তিনটা কেন তিরিশটা প্রশ্নের উত্তর দেব তোর। আগে তুই বাড়ি তো আয়।” এটা ছিল রুৎবা খালামনির উষ্মা মেশানো অনুরোধ। সায়রার পাল্টা জবাব ছিল আরো ধারাল।
-” ঠিক আছে বাকি সাতাশটা আমি তোমার সামনে এসে শুনব। এখন শুধু আমাকে তিনটা প্রশ্নের জবাব ফোনে দাও। নইলে আমি মানব না।” রুৎবা খালামনি হার মানতে বাধ্য হয়েছিল। হাল ছাড়ার ভঙ্গিতে বলেছিল,
-” আচ্ছা, বল কী জানতে চাস তুই ? তবে তার আগে একটা শর্ত আছে।”
-” বলো।”
-” ওয়াদা কর যে জবাব শুনে তুই কোথাও যাবিনা আর কোনরকম পাগলামি করবিনা।”
-” করবো না, কথা দিলাম। প্রমিজ।” সায়রা সত্যিটাই বলেছিল কারণ ও নিজেও বুঝতে পারছিল, ওর হয়ত আর ঢাকা ফেরা হবেনা। এক ব্যভিচারী মায়ের কাছে।
-” আমার প্রথম প্রশ্ন হলো আমার জন্মদাতার নাম কী? ” সায়রা শান্ত স্বরে জানতে চাইলে রুৎবা খালামনি চুপ মেরে গিয়েছিলেন। তারপর আস্তে করে জবাব দিয়েছিলেন।
-” ইকবাল সানা। তোরর জন্মদাতার নাম ইকবাল সানা।”
-” হম। এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন। আমি কী নীলিমা আহমেদের প্রথম সন্তান ? ” এই প্রশ্নে রুৎবা খালামনি ফোনের ওপারেই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন।
-” এসব কথা তোকে কে বলেছে ? কথা কোনদিন থেকে কোনদিকে নিচ্ছিস তুই ? তুই সানা পরিবারের একমাত্র মেয়ে আর এটাই সত্য। আমির সানা তোর জন্মদাতা না হতে পারে কিন্তু সে তোর বাবার সব হক আদায় করেছে আর শরীয়ত মতে চাচা বাবার সমতূল্য। মানুষের কী দেবর ভাসুরের সাথে বিয়ে হয়না ? ” এসবই ছিল রুৎবা খালামনির চেঁচামেচির অংশবিশেষ। সায়রা তখনও ততটা ভেঙে পড়েনি কারণ স্বামীর মৃত্যু বা বিচ্ছেদের পর দেবর ভাসুরের সাথে বিয়ে যায়েজ ও হালাল। এতে দোষের কিছুই নেই কিন্তু সায়রা পুরো পাথর হয়ে গিয়েছিল যখন মূল উত্তর বাদ দিয়ে রুৎবা খালামনি এসব বলে চলেছিলেন। সায়রা তখন কোনমতে বলতে পেরেছিল, ” আমার জবাব আমি পেয়ে গেছি খালামনি। তোমার নিরবতাই বলে দিচ্ছে যে আমি আমার মায়ের দ্বিতীয় জারজ সন্তান। আমার আগে আরেকটি সন্তান আমার মা এবরশন করে নষ্ট করেছিল। অস্বীকার করবে ? ”
-” বান্না প্লিজ। আমি তোর সাথে এ ব্যপারে সামনা সামনি খোলামেলা কথা বলব। অনেক ঘটনা আছে। সবটা না জেনে এভাবে একতরফা ভাবনা তোকে ভুল উত্তরই যোগাবে। মা, সোনা, তুই বাড়ি আয় তারপর আমরা…!” রুৎবা খালামনিকে থামিয়ে দিয়ে সায়রা চোখ মুছে বলেছিল, ” লাস্ট কোশ্চেন খালামনি। নীলিমা আহমেদের সাথে কী ইকবাল সানার বিয়ে হয়েছিল ? ”

ভাবনার জগতে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ। দুহাতে শাল চেপে হু হু করে কেঁদে ফেলল সায়রা। জীবনে কোনোদিন নিজের ওপর এত ঘেন্না জন্মায়নি। আজ নিজেকে নরকের কীট বলে মনে হচ্ছে। আত্মীয়াদের অনেকের অনেক কথা এখন বোধগম্য হতে শুরু করেছে সায়রার কাছে। ওর এক ফুপু যিনি করাচী থাকেন তিনি প্রায়ই চঞ্চলতার জন্য সায়রাকে একাকী পেলেই উর্দুতে বকতেন , ” নীলিমা কী বেটি নীলিমা কী তারা হি হুয়া। যাব দেখো, ধুম মাচাতা ফিরে। একদাম লাফাঙ্গা কাঁহিকা।”
সায়রা তখনও তার ঐ বকুনির অর্থ বুঝতে শেখেনি। কিন্তু আজ ওর কাছে সব টলটলে জলের মত স্বচ্ছ। আর সেটা হল সে কোন অবস্থাতেই বারসাত মির্জার উপযুক্ত নয়। আরমানের মা ভুল বলেন নি। তিনি সায়রাকে বলেছিলেন, ” আমার জায়গায় তুমি হলেও নিজের বংশে এমন কাউকে পুত্রবধু হিসেবে মেনে নিতে না যার নিজের জন্মই একটা পাপ।” সায়রা কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কান্নার শব্দ বাইরে যেতে না দেবার মানসে পুরো শালটাই যেন পারলে মুখে গুঁজে দিয়েছে তারপরেও ডুকরানোর শব্দ বারবারই ছিটকে বেরোতে লাগল। মাটিতে পড়ে গড়িয়ে কাঁদতে লাগল সায়রা। লজ্জায়, নিঃশব্দে।

======

সন্ধ্যের পরপর বাড়ী ফিরল সাবা। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়তে চাইছে। আজ সারাটা দিন ও পাগলের মত হেঁটেছে। প্রথমেই গেছে পলাশ যেখানে কোচিং করত সেখানে। সেখান থেকে জানানো হলো পলাশ এখন কোচিং করায়না। তার নাকি সামনে পরীক্ষা। কাজেই সে এখন আসতে পারবেনা। অবশেষে কেচিং থেকে পলাশের ঠিকানা চেয়ে নিয়ে ঐ ঠিকানায় গিয়েছিল পলাশকে খুঁজতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে কারণ পলাশরা ওখানে থাকেনা। ওখানকার বাড়ী ওয়ালি জানিয়েছেন পলাশরা আরো দুই বছর আগেই এ বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। ওরা এখন কোথায় থাকে তা তিনি জানেন না। সাবা তখনই বুঝতে পেরেছিল ছেলেটা আসলে বহুরূপী। সে তার আপন ঠিকানাটা পর্যন্ত গোপন করেছে। আর ওর বোকা বোনটা কিনা এই বহুরূপী ছেলেটার প্রেমেই পড়ল । দেখতে হিরোদের মত হলেই যদি কেউ স্বভাবেও হিরো হয়ে যেত তাহলে তো কোন কথাই ছিল না। তারপরেও হাল ছাড়েনি সাবা। বাড়িওয়ালী মহিলার মুখে কথাটা শোনার পর সাবা ফের ঐ কোচিং এ গিয়েছিল পলাশের নতুন ঠিকানা জানে এমন কাউকে খোঁজার জন্য। কোচিং এর দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি তা দিতে না পারলেও একটা ফোন নম্বর দিয়েছিলেন সাবাকে । তার বক্তব্য মতে, এটা পলাশের রিয়েল মোবাইল নম্বর যেটাতে ফোন করলেই তিনি পলাশকে পেতেন। শুনে সাবা সাথে সাথে কল দিয়েছিল পলাশের ঐ নম্বরটাতে কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সাড়া পায়নি। হয়ত আননোওন নাম্বার বলেই রিসিভ করেনি পলাশ। তখন সাবা বিনীত অনুরোধ করেছিল সেই লোকটিকে তিনি যেন তার নম্বর থেকে পলাশকে ফোন করে ওর ঠিকানাটা জানতে চান তার নিজের প্রয়োজনের কথা বলে। লোকটি তখন উল্টো সাবাকেই সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করেছিল। তীর্যক চাহনিতে বলেছিল, ” আমার এত দায় পড়ে নাই যে পলাশকে আমার কথা বলে ঠিকানা চাইব। আপনার প্রবলেমটা কী আসলে ? ছ্যাঁকা খাইসেন নাকি ? ”
সাবা কিছুক্ষণ নিরব থেকে সত্য বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ধরা গলায় উচ্চারণ করেছিল,
-“জি না, সে আমার বোনকে ফুসলিয়ে ওর সাথে নিয়ে গেছে। কোথায় নিয়ে গেছে জানিনা। গত তিনদিন ধরে আমরা আমাদের ছোট বোনটার কোন সন্ধান পাচ্ছিনা। প্লিজ, আমাকে হেল্প করেন স্যার, প্লিজ। ” বলে কেঁদে ফেলেছিল সাবাা।

লোকটা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থেকে অবিশ্বাসের সুরে বলেছিল, ” অসম্ভব, পলাশ ভাল ফ্যামিলির ছেলে। ওর দ্বারা এ কাজ সম্ভব না। তাছাড়া আপনার বোন নিশ্চয়ই অবুঝ না। তাকে ফুসলালেই সে মানবে কেন ? ”
-” দেখুন, ও একটা বাচ্চা মেয়ে। বয়স মাত্র পনের কী ষোলো। এবারই নাইনে উঠেছে। ও আপনাদের এই কোচিং এ পড়ত। ” সাবা তখন পলাশের সাথে ওর রেস্টুরেন্টে তর্কাতর্কির কথাটা খুলে বলেছিল। ওর সব কথা শুনে লোকটা কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলেছেন, ” থাক্, কেঁদোনা। তোমার বয়স দেখেই তোমার বোনের বয়স আন্দাজ করতে পারছি। তুমি এক কাজ কর, কাল একবার আসো। আমি পলাশকে এখানে ডাকাই।”
-” যদি সে না আসে ? ” সাবার তখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না।
লোকটা হেসে বলেছিলেন, ” পাওনা টাকা সাধলে নিতে আসবেনা এমন কলিজার পাটা কোন লোকের আছে বলে আমার জানা নেই।”

ভাবনার জ্বাল ছাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে জামা কাপড় ছাড়ল সাবা। মাথাটা এখনও ভোঁ ভোঁ করছে সমানে। এমনিতেই দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি। একটা জেদ চেপে বসেছিল যেন। সারাদিন হাঁটার উপরেই গেছে আজকাল। পায়ের পাতাগুলো টনটন করছে এখন। ভাতটা খেয়েই শুয়ে পড়বে ঠিক করল। এমন সময় মিলি আপাকে ঘরে ঢুকতে দেখে তাকাল। তার হাতের প্লেটে দুটো সন্দেশ। তবে কোন প্রশ্ন করল না সাবা। ওর আসলে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। মিলি নিজেই বলল, ” সারাদিন কোথায় ছিলি রে ? দুপুরেও খাসনি। তোয়া এসে ফিরে গেল। তোরও কী শিরির রোগে ধরেছে নাকি ? “

সাবা উত্তর দিতে গিয়েও হঠাৎ থেমে গেল। মুখটা শক্ত হয়ে উঠল ওর। থমথমে চেহারা নিয়ে বলল, ” শেষের কথাটা না বললেই পারতে আপা। তুমি আমার বড় বলে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারো না। এখন যদি আমি বলি, আমার কোন পলাশ বা মঈন নেই তারপরেও কী তুমি আমাকে শিরির দলে ফেলবে ? ” মিলি থতমত খেয়ে চুপ করে গেল। যদিও সে সহজে দমন হবার মেয়ে নয় কিন্তু আজ যেন জোঁকের মুখে নুন পড়ল।
মিলি মুখ নামিয়ে বলল, ” মঈনকে কতবার মানা করি। তবু আসে। আমি কী করব তুই বল।”
-” আমার মনে হয় তুমি জানো আপা। কাউকে নিজের কাছে আসতে দেবার এবং না দেবার ক্ষমতা আমাদের সবারই কমবেশি থাকে কেবল বুদ্ধিটাই থাকেনা। আমার তো মনে হয় তোমার দুইটাই আছে। আমাকে জিজ্ঞেস করার দরকার নাই।”
-” তুই আজ এভাবে কথা বলছিস কেন সাবা ? কী হযেছে কী তোর? ”
-” কিছু হয়নি তবে হবে ।” সাবা পুনরায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল,” কাল ঐ হারামির বাচ্চাকে কোচিং এ আনার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না ওকে ধরব কী করে। আমার ধারণা কালও সে ফসকে বেরিয়ে যাবে এবং পুরো ব্যপারটা অস্বীকার করবে।”
-” কেমন করে বুঝলি ? ”
-” আপা, দিন দিন তুমিও যেন মঈন ভাইয়ের মত হয়ে যাচ্ছ। ছেলেটা এখন ঢাকায়। ফোন ধরেছে, পরীক্ষার কথা বলছে তারমানে সে তার বাড়িতে বহাল তবিয়তে আছে। আর আমি জানি শিরির সাথে এক পলাশ ছাড়া আর কারো সাথে কোন সম্পর্ক নেই।”
-” হম, আচ্ছা, এক কাজ করি। কাল মঈন আর বড় দুলাভাইকে সাথে নিয়ে চল আমরা সবাই যাই।”
-” বড় দুলাভাই বুঝলাম কিন্তু মঈন ভাই কেন ? সে কী হয় আমাদের ? ” সাবা সরাসরি বোনের দিকে তাকাল। মিলির চোখে পলক পড়ছেনা। এ কোন সাবা। যেন সাবা ওর ছোট নয় বড় বোন কথা বলছে। মিলি ইতস্তত করল।
-” আচ্ছা, মঈন বাদ। তুই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নে।” মিলি বেরিয়ে যেতে ধরলে সাবা ডাকল,” সন্দেশটা কী আমার জন্য ছিল ?”
মিলি ফিরল। মাথা নাড়ল।
-” হম।”
-” মঈন ভাই এনেছে, তাই না? ” মিলি জবাব দিলো না। সাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” তোমরা এবার বিয়ে করে নাও আপা। বিয়ের বাইরে একটা সম্পর্ক যত সুন্দরই দেখাক না কেন সেটা হারাম। জেনার পর্যায়ভুক্ত। কী দরকার আল্লাহর বিধানকে টপকে নিজেদের মনগড়া বিশ্বাসে চলার। বিপদতো দেখছ। কাল তোমার যে কোন বিপদ হবেনা কে বলতে পারে। মঈন ভাইয়ের কতটুকু জানো তুমি ? ” বলেই সচকিত হল সাবা, ” আমাকে মাফ করে দিও আপা। ছোটমুখে অনেক বড় কথা বলে ফেললাম। আসলে শিরি আমাকে অনেক কিছু হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়ে গেছে।”
মিলি এবার সামান্য হাসতে সক্ষম হল। মাথা নাড়ল,” হক কথা বলার জন্য বড় হবার দরকার নেই রে। তুই ঠিকই বলেছিস। মঈন এবার এলে এটার হেস্তনেস্ত করতে হবে। কিন্তু পলাশেরটা কী করবি। আমাদের তো অত ক্ষমতা নেই। আমি তো ভয় পাচ্ছি, নিজেকে ধরে রাখতে পারব কিনা। দেখা যাবে স্যান্ডেল খুলে মারতে শুরু করেছি।”
-” না, আপা। এই ভুলও করোনা। পলাশ পিচ্ছিল মাছ। ওকে ধরলে ছাই দিয়ে ধরতে হবে।” ধ্যানমগ্নের মত কথাগুলো বলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সাবা। শিরির কমিকস বইগুলোর দিকে। (চলবে ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here