পারমিতা” পর্ব-১১

0
1942

পারমিতা
পর্ব – ১১
_নীলাভ্র জহির

রোদের জন্মদিনের পার্টিতে এসেছে পারমিতা। সঙ্গে এসেছে প্রীতুল ও সামান্তা। একটা রেস্টুরেন্ট প্রাঙ্গনে বিশাল পার্টির আয়োজন। পারমিতা পরেছে শাড়ি, গলায় পাথরের নেকলেস। সামান্য মেক আপের সাজে ওর রূপ বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। পার্টিতে ঢোকার পর এদিক সেদিক চোখ ঘুরিয়ে রোদকে খুঁজছিল পারমিতা।
রোদ বেশ কয়েকজন মানুষকে ঘিরে কথা বলছিল। ওর দিকে চোখ যেতেই পারমিতা চোখাচোখি হওয়ার জন্য তাকিয়েই রইল। কিন্তু রোদ একবারও ওর দিকে তাকালো না। পারমিতাকে দেখতে পায়নি এমনটা নয়, দেখেও অন্যদিকে তাকিয়ে আছে রোদ। পারমিতা গম্ভীর মুখে সামান্তাকে নিয়ে একটা জায়গায় এসে বসে পড়ল।

সামান্তা বলল, কিরে ওই তো রোদ। যা ওকে উইশ করে আয়।
– রাতে মেসেজ দিয়ে উইশ করেছিলাম।
– সেজন্য এখন করতে হবেনা? যা উইশ কর গিয়ে।
– উনি তো ব্যস্ত। দেখতে পাচ্ছিস না? স্যুট টাই পরা লোকদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নিশ্চয় এই লোকগুলো অনেক নামীদামী কোম্পানির মালিক।
– তাতে কি? ও নিজে তোকে দাওয়াত করেছে। তুই উইশ করে আয়। চল আমিও সাথে যাচ্ছি।

সামান্তা উঠে দাঁড়াল। পারমিতা সামান্তার জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে রোদের কাছে এলো। রোদ যাদেরকে ঘিরে দাঁড়ানো ছিল, সেখান থেকে সরে সামান্তার সামনে এলো। পেছনে এসে দাঁড়াল পারমিতা। রোদ সামান্তাকে বলল, হাই। ভালো আছেন?
– জি। হ্যাপি বার্থডে।

সামান্তা একটা ফুলের তোড়া এগিয়ে দিলো রোদের দিকে। পারমিতা মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রোদ সামান্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পারমিতার দিকে তাকালো এবার।
পারমিতা বলল, শুভ জন্মদিন।
র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো একটা গিফট বক্স এগিয়ে দিলো পারমিতা। বক্সটা হাতে নিয়ে রোদ হাসিমুখে বলল, থ্যাংকস।
পারমিতা রোদের চোখের দিকে তাকালো। আজকে রোদের পরনে একটা বেগুনী রঙের ব্লেজার। অসম্ভব রকমের হ্যান্ডসাম লাগছে ওকে। পারমিতা সংকোচ বোধ করছে। ওর মতো হ্যান্ডসাম, বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য ম্যানেজার স্যার কী করে ওকে পছন্দ করেছিলেন! ভাবলেই বুক কাঁপে ওর।
একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা তরুণী রোদকে ইশারায় ডেকে বলল, এই রোদ।
রোদ সেদিকে চলে গেলো। পারমিতা একটা নিশ্বাস ফেলে সামান্তাকে বলল, চল আমার গিয়ে বসি।

একজন মধ্যবয়স্ক লোককে ঘিরে বেশ কয়েকজন মহিলা হাসছিলেন। উনি বিআরসি কোম্পানির এমডি। অর্থাৎ রোদের বাবা। পারমিতা ওনাকে যতবার দেখেছে, লোকটাকে ভীষণ সরল মনে হয়েছে ওর। ওদেরকে দেখে তিনি বললেন, হ্যালো। আপনারা নিশ্চয় রোদের বন্ধু? প্লিজ কোল্ড ড্রিংকস নিন।
একজন বেয়ারাকে ডেকে পারমিতার হাতে কোল্ড ড্রিংকস তুলে দিলেন তিনি। পারমিতা ওনাকে ধন্যবাদ জানাতেই তিনি সহাস্যে বললেন, ইটস ওকে। আপনাদের কোনো প্রয়োজনে একে ডাকবেন।
একটা লোককে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন বিআরসি কোম্পানির এমডি। পারমিতা বলল, লোকটা অনেক ভালো।
– হুম।
লোকটা ভালো মনের বলেই হয়তো সাধারণ ঘরের একটা মেয়েকে পুত্রবধূ বানাতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই ম্যানেজার ওকে পছন্দ করেছে এটা পরিষ্কার বুঝতে পারলো পারমিতা।

এরপর অনেক্ষণ রোদকে দেখা গেল না। পারমিতার খুব বিষণ্ণ লাগছিল। রোদ ওকে দাওয়াত করেছে এটা সত্যি কিন্তু রোদকে আজকে একান্তে কথা বলার জন্য পাওয়া যাবে না, সেটাও সত্যি। কত বড় বড় লোকরা এসেছে, তাদেরকে নিয়েই ব্যস্ত রোদ। আর পারমিতা নিশ্চয়ই ওর স্পেশাল কেউ নয় যাকে আলাদাভাবে সময় দিতে হবে। পারমিতার অস্বস্তি হচ্ছে। কেক কাটা হয়ে গেলেই দ্রুত বিদায় নেয়ার কথা ভাবছে ও।

ম্যানেজার জালালুদ্দিন স্যারের গলা শুনে চমকে উঠলো পারমিতা। স্যার বললেন, আরে! পারমিতা আপনি এখানে।
পারমিতা সালাম দিয়ে বলল, ভালো আছেন স্যার?
– ‘হ্যা আছি। কিন্তু আপনি…

পারমিতা বুঝতে পারলো জালালুদ্দিন স্যারের মনের অবস্থা। পারমিতাকে তিনি রোদের ছবি পাঠিয়েছেন। পারমিতা তারপরও প্রস্তাবে না করে দিয়েছিল। আজকে রোদের জন্মদিনের পার্টিতে ওকে দেখে তিনি অবাক হবেন এটাই স্বাভাবিক। বিস্ময় লুকাতে পারলেন না তিনি।
পারমিতা বলল, স্যার আসি।
– দাঁড়ান। আপনার সাথে কথা আছে।
– জি স্যার।

পারমিতার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সামান্তা ও প্রীতুল। ওদের দিকে এক পলক তাকালেন ম্যানেজার। তারপর বললেন, রোদ কি জানে আপনি..
– না জানে না।
– আচ্ছা। আপনার কি এখনো কোনো আপত্তি আছে..?
পারমিতা স্তব্ধ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বলল, ‘হ্যা আছে।
– এখনো আপত্তি আছে! রোদ অনেক ভালো একটা ছেলে।
– আমি জানি স্যার। কিন্তু আপনি প্লিজ এই ব্যাপারে আর ভাববেন না।
– আপনি বুঝতেও পারছেন না আপনি কি হারিয়েছেন।

পারমিতা একটা নিশ্বাস ফেলে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে রইলো। সামান্তা অবাক হয়ে একবার পারমিতার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ম্যানেজারের দিকে।
পারমিতা সামান্তাকে নিয়ে একটা চেয়ারে এসে বসলো। ম্যানেজার এগিয়ে গেলেন এমডি স্যারের দিকে। তারপর এমডির সাথে কিছু একটা নিয়ে আলাপ করতে লাগলেন। এক পর্যায়ে এমডি পারমিতার দিকে তাকালে পারমিতা বুঝতে পারলো তিনি কি বিষয়ে কথা বলছেন। অস্বস্তি হলো ওর। ম্যানেজারকে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি কেন আবার এই বিষয়ে কথা বলছেন!

পারমিতা মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। রোদ এখনো কেক কাটার নাম নেই। আরও অতিথি আসছেন একের পর এক। পারমিতা সামান্তাকে বলল, আমার ভালো লাগছে না। চল আমরা চলে যাই। খাওয়াদাওয়া করতে হবেনা। রেস্টুরেন্টে খাবো।
– খাওয়াদাওয়া করবি না বুঝলাম। রোদের সঙ্গে কথা বল?
– প্রয়োজন নেই। উনি ব্যস্ত। চল আমরা যাই।

পারমিতা দ্রুত প্রীতুলকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। বাধ্য হয়ে ওর সঙ্গে বেরিয়ে এলো সামান্তা। একটা জন্মদিনের পার্টি এত নিরামিষ হবে এটা ও আশা করেনি। আর পারমিতা আশা করেনি এখানে এসে রোদের উপেক্ষা সইতে হবে। এত ব্যস্ত মানুষের দাওয়াতে কখনো যাওয়া উচিৎ না। তাছাড়া নিজের জায়গাটাও নিজের বোঝা উচিৎ।

পারমিতা রেস্টুরেন্টে ঢুকে ইচ্ছেমতো খাবার অর্ডার করলো। ওর জেদ বুঝতে পারলো সামান্তা। ছেলে ও বান্ধবীকে খাইয়ে পারমিতা নিজেও খেলো ভরপেট। বিল মিটিয়ে বেরিয়ে এলো ওরা। এমন সময় বেজে উঠলো ফোন। পারমিতা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রোদের নাম্বার থেকে কল। নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে, আপনি কোথায়?
পারমিতা ফোন বন্ধ করে ব্যাগে রেখে দিলো। যে ব্যক্তি দাওয়াত করে নিয়ে গিয়ে উপেক্ষা করতে পারে, তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। পারমিতা কিছুতেই আর রোদের সঙ্গে কথা বলবে না।

পরেরদিন অফিসে এসে পারমিতা যথারীতি কাজ করছে। এমন সময় পিয়ন এসে বলল, ম্যাডাম রোদ স্যারের অফিসে আপনাকে ডাকছেন।
পারমিতা মুখ শক্ত করে বসে রইল। ডাকুক। যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। পারমিতা কম্পিউটার থেকে চোখ সরাল না।
এমন সময় তাকিয়ে দেখল রোদ হনহন করে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। পারমিতা মাথা নিচু করে ফেলল। সর্বনাশ করেছে। সবার সামনে যদি কিছু বলে বসে তখন কি হবে? কলিগ’রা কি ভাব্বে কে জানে।
রোদ স্বয়ং পারমিতার ডেস্কের সামনে এসে একটা ফাইল নিয়ে দেখতে দেখতে বলল, এই কাজটা করেছেন আপনি?
পারমিতা উত্তর দিলো, জি করেছি।
– কাজের আপডেট জানাননি কেন?
– সরি স্যার।
– কাজটা নিয়ে এখনই আমার রুমে আসুন।

আবারও হনহন করে হেঁটে চলে গেল রোদ। পারমিতার প্রচণ্ড রাগ জন্মালো রোদের প্রতি। এমনিতেই গতকাল তাকে ডেকে নিয়ে উপেক্ষা করেছে। আজকে আবার এভাবে অপমান করল। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পারমিতা ফাইল নিয়ে এলো রোদের চেম্বারে।
দরজায় দাঁড়িয়ে অনুমতির প্রয়োজন বোধ করল না। সোজা ভেতরে ঢুকে ফাইলটা টেবিলের ওপর রেখে দাঁড়িয়ে রইল।
রোদ জানতে চাইলো, কি হল?
– কাজটা বুঝিয়ে দিতে চাই।
– কাজ বুঝাতে হবে না। আপনি কাল ওরকমভাবে চলে গিয়েছেন কেন? আমি আপনাকে কত খুঁজেছি আপনি জানেন?
– কত খুঁজেছেন? আমি যতক্ষণ আপনার অপেক্ষা করেছি ততক্ষণ নিশ্চয়ই নয়? এবার বলবেন না আমি আপনার অপেক্ষা করিনি।
রোদ উঠে দাঁড়াল। পারমিতার কাছাকাছি চলে এলো সে। পারমিতা খানিকটা দূরে সরে গেল। রোদ আরও কাছে চলে এলো। পারমিতার কানের কাছে মুখ এনে বলল, আপনি আমাকে বুঝতে পারেননা কেন?
পারমিতা শিউরে উঠল। রোদের কণ্ঠ অন্যরকম শোনাচ্ছে। কিন্তু এতেও রাগ কমবে না ওর। পারমিতা বলল, আপনি আর আমাকে এভাবে ডাকবেন না। আমাদের শুধুমাত্র কাজের সম্পর্ক। এর বাইরে কোনোকিছুই নয়। তাই এর বাইরে আপনি আমার সঙ্গে কথাও বলতে আসবেন না।
– তাই? আমাদের শুধুমাত্র কাজের সম্পর্কে?
– হ্যাঁ।
– ঠিক আছে। আমি মানবো। কিন্তু তার আগে বলুন আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন?
– কিসের জন্য?
– গতকাল আমার উচিৎ ছিল আপনাকে সময় দেয়া। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে.. আমি এক্সট্রেমলি সরি পারমিতা।

পারমিতা কী বলবে বুঝতে পারছে না। রোদ ওর একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কেমন যেন লাগছে। ঠিক রাগ করতেও পারছে না, আবার ক্ষমা করতেও পারছে না। হঠাৎ ওর মনে হলো, বড়লোকদের কাজ না থাকলে এরা বিনোদনের জন্য কত কীছুই করে।
পারমিতা বলল, ক্ষমা করে দিয়েছি। আর আমাকে বিরক্ত করবেন না। এইযে ফাইলটা এখানে রেখে গেলাম।
পারমিতা দ্রুতপদে রোদের চেম্বার থেকে বের হয়ে এলো। এখনো ওর বুক কাঁপছে। কিন্তু আর কখনো ভুল করবে না পারমিতা। আর কখনো কাউকে প্রশ্রয় দেবে না। তার জীবনটা এখন সংগ্রামের। সংগ্রাম ছাড়া আর কিছুই ভাব্বে না।

রোদ স্তব্ধ হয়ে গেল। গতকাল একটা ভুল করেছিল সে। আজকে আবার একটা ভুল করে ফেলল। পারমিতার সঙ্গে এভাবে কথা বলা উচিৎ হয়নি। কিন্তু পারমিতার সাথে কথা বলার আর কোনো সুযোগই তো নেই।
রোদ চেয়ারে বসে রইল। নিজের ভেতর অপরাধবোধ কাজ করছে। পারমিতার স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করল। ওর সঙ্গে বন্ধুত্বের কোনো প্রয়োজন নেই, কোনো প্রয়োজন না।

রাতে ঘুম আসছিল না রোদের। বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে লাগল। বাবা বলতেন ঘুম না এলে পানি খেলে নাকি ঘুম আসে।
রোদ পানি খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলে এলো। এক গ্লাস পানি খেয়ে টেবিলে বসে রইল। এমন সময় বাবার গলার আওয়াজ শুনতে পেলো। তিনি বললেন, বাবা রোদ। কি হয়েছে?
– কিছু না আব্বু। ঘুম আসছিল না তাই। তুমি ঘুমাও নি?
– ঘুমাচ্ছিলাম। শব্দ শুনে ভাবলাম দেখে আসি। এসে দেখি তুই।

বাবা ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন ছেলেটার কিছু একটা হয়েছে। মনমরা দেখাচ্ছে রোদকে।
তিনি জানতে চাইলেন, কি হয়েছে বাবা?
রোদ বলল, কিছুই না।
– আমাকে বলা যায় না?
– আব্বু আমার কিছু ভালো লাগে না। এসব টাকা পয়সা, খ্যাতি, সুনাম, বাড়ি গাড়ি কিছুই আমার ভালো লাগে না। আমার শুধু মনে হয় সবকিছু অর্থহীন। কোনোকিছুতে আনন্দ পাই না। মরে যেতে ইচ্ছে করে।

রোদের বাবা বিষণ্ণ মুখে বললেন, এসব কি বলছিস বাবা? এরকম কথা আর কখনো বলবি না।
– আমি তো বলতে চাই না। আমার আসলেই কিছু ভালো লাগে না। সবকিছু অর্থহীন লাগে আব্বু। আমি চেয়েছিলাম এইসব জাঁকজমকপূর্ণ লাইফস্টাইল থেকে বেরিয়ে এসে একটা সাদামাটা জীবনযাপন করতে। একটা সাদামাটা মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না। মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমরা ধনীরা চাইলেই আমাদের স্ট্যাটাস ভেঙে বের হতে পারিনা কেন আব্বু?
– তুই কি সেই মেয়েটার কথা বলছিস? আমি গতকাল পার্টিতে একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। নীল রঙের শাড়ি পরা।
– হ্যাঁ। কিন্তু তুমি কিভাবে এটা জানলে?

রোদ অনেক অবাক হয়েছে।
বাবা বললেন, আরে আমি তো ম্যানেজার জালালুদ্দিনকে বলেছিলাম তোর জন্য একটা সাধাসিধা মেয়ে খুঁজতে। একদিন তুই আমাকে বলেছিলি তোর মনে নেই? আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম তোর বিয়ের জন্য কেমন মেয়ে পছন্দ? তুই বলেছিলি, খুবই সাদামাটা একটা মেয়ে। যার জীবনে চাহিদা কম, অল্পতেই খুশি থাকে, জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়েকে বিয়ে করবি। জালালুদ্দিন তো ওই মেয়েটাকেই তোর জন্য পছন্দ করেছিলেন।

রোদ ভীষণ অবাক হল। ওর বিশ্বাসই হতে চাইছিল না কথাটা। ওর বাবা বললেন, মেয়েটা নাকি অনেক ভালো। কাজকর্ম ছাড়া অন্যদিকে মন নেই। সৎ একটা মেয়ে।
– তারপর? উনি তোমাকে এটা কবে জানিয়েছেন?
– গতকাল। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল, মেয়েটা নাকি এখন বিয়ে করবে না।
– উনি কি আমার কথা মেয়েটাকে বলেছিল?
– তা জানিনা। কিন্তু উনি মেয়েটাকে আমার কথা বলেছিলেন। আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
– মাই গড! তারমানে এ কারণেই পারমিতা আমার থেকে দূরে থাকতে চায়। ও ভাবছে আমি ওকে বিয়ে করার জন্য এসব করছি…

রোদকে চিন্তিত দেখালো। ওর বাবা বললেন, কি হয়েছে?
– তেমন কিছু না। জালালুদ্দিন আংকেলকে ধন্যবাদ দিও বাবা। উনি একদম পারফেক্ট একটা মেয়েকেই পছন্দ করেছেন। আমি বিয়ে করলে ওই মেয়েকেই করবো।
– তাহলে ওকে প্রস্তাব দে?
– না। প্রস্তাব দেবো না। ওকে আমি অন্যভাবে রাজি করাবো।

রোদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। চোখে অন্যরকম একটা ঝিলিক খেলে গেল। ছুটে নিজের ঘরে চলে গেল রোদ। এখন আর হতাশ লাগছে না। পারমিতাকে নিজের করে নিতে হবে তার।

চলবে..

দীর্ঘ বিরতির পর আবার গল্প নিয়ে এলাম, অনেকেই নিয়মিত গল্পটি পড়তে পারেননি বলে রাগ অভিমান করেছেন নিশ্চয়ই।
চেষ্টা করবো সুন্দর গল্পের মধ্য দিয়ে সবার অভিমান ভাঙিয়ে দিতে। 💕💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here