পারমিতা” পর্ব-১২

0
1928

পারমিতা
পর্ব ১২

_নীলাভ্র জহির

পুরুষ মানুষের ভালবাসা এমন কেন, একবার পেয়ে গেলে সেই ভালবাসা পাবার জন্য বারবার মন আনচান করে। সারাক্ষণ মন চায়, সে আমাকে এভাবেই আজন্মকাল ধরে ভালবাসুক। পারমিতা রোদকে সহ্য করতে পারছে না। রোদের প্রতি ক্রোধ, রাগ, অভিমানের পাহাড় জমে গেছে। তবুও মনেমনে চাইছে, রোদ আমার জন্য উতলা হয়ে থাকুক। এই জিনিসটা প্রতিটা নারীকেই অপার আনন্দ দেয়। কেউ তাকে ভালবাসছে, সেই আনন্দের কাছে সব আনন্দই তুচ্ছ।

রাত জেগে কাজ করছিল পারমিতা। ঘুম আসছে না। প্রীতুল হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। একমাত্র প্রীতুলের মুখের দিকে তাকালেই পারমিতা সব কষ্ট ভুলে থাকতে পারে। অতীত তাকে নিয়ে এত বিশ্রীভাবে খেলেছে, ভাবলেই কষ্ট চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। শুধুমাত্র প্রীতুলের কথা ভেবেই একটা নিরাপদ জগত গড়ে তুলতে হবে পারমিতাকে।
এমন সময় মোবাইলে টুং করে নোটিফিকেশন এলো। পারমিতার মনে হল, রোদ বোধহয় তাকে কোনো মেসেজ পাঠিয়েছে। কিন্তু না, একটা ইমেইল এসেছে। এত রাতে ইমেইল! বেশ অবাক হল পারমিতা।
ইমেইল চেক করতে গিয়ে দেখল অফিসের হেড অফ রিসার্চ স্যার মাহতাবের মেইল। তিনি লিখেছেন একটা নতুন প্রোডাক্ট তৈরির জন্য অফিস থেকে কয়েকজন কর্মীকে বেছে নেয়া হয়েছে যারা একই ধরনের বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিসার্চ করবে। এর যত ব্যয়, সব কোম্পানি বহন করবে। এই কাজের জন্য পারমিতাকেও সিলেক্ট করা হয়েছে। অফিসে ও মাঠ পর্যায়ে দুই জায়গাতেই কাজ করতে হবে। পারমিতা রাজি আছে কিনা?
মেইল পড়ে হাসল পারমিতা। অবশ্যই সে রাজি আছে। নতুন ধরনের কাজ, নিশ্চয় নতুন অভিজ্ঞতা হবে। সে আনন্দের সঙ্গে মেইলের রিপ্লাই পাঠিয়ে দিলো।
রাতে ভালো ঘুম হল পারমিতার। পরেরদিন সকাল সকাল অফিসে চলে এলো সে। ডেস্কে বসে কাজ শুরু করল পারমিতা। দু তিনবার মেইল চেক করে দেখল কোনো আপডেট আছে কিনা।
ঘন্টা দুয়েক পরে পিয়ন এসে একটা ফাইল দিয়ে গেলেন। সেখানে যাদের নামের লিস্ট আছে, সবাইকে নিয়ে বিকেল তিনটায় আজকে মিটিং হবে। পারমিতা নিজের নাম দেখতে পেয়ে স্বস্তি অনুভব করল। নতুন কাজ, নতুন উত্তেজনা।
লিস্টে কলিগ আফসানার নাম দেখেছিল পারমিতা।ন্ব এক ফাঁকে আফসানার কাছে এসে বলল, হাই।
– হ্যালো।
– কেমন আছেন?
– ভালো। আপনি?
– ভালো। রিসার্চ লিস্ট দেখেছিলেন?
– হ্যাঁ। আপনিও আছেন নাকি লিস্টে?
পারমিতা হেসে বলল, হ্যাঁ। আমিও আছি। এজন্যই আলাপ করতে আসলাম।
– ওয়াও! যাক একজন কলিগ পেলাম তাহলে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে শুধুই আমরা দুইজন জানেন?
– তাই নাকি! জানতাম না তো। লিস্টে ওরা কারা তাহলে?
– সিনিয়র আছেন অনেকে।
– ও। সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করবো ভাবাই যায় না। আমার অনেক এক্সাইটেড লাগছে জানেন?
– আমারও খুব এক্সাইটেড লাগছে। নতুন একটা কাজ করবো।

পারমিতা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রইল। তার জীবন থেকে সব দুঃখ ধীরেধীরে মুছে যাক। নতুন সূর্য আলো নিয়ে আসুক।
আফসানা বলল, আপনাকে কয়েকদিন থেকেই দেখছি। ভাবছিলাম কথা বলি, পরিচিত হই। ভাগ্যিস আপনি আগেই এলেন।
– হা হা। কথা বলতে এলে আমি কিন্তু খুশিই হতাম।
– তাই? রোদ স্যার আসছে এদিকে। এখন ডেস্কে যান।

পারমিতা চমকে উঠল। সবাই রোদ স্যারকে অনেক ভয় পায়, সম্মান করে। কিন্তু পারমিতা রোদকে ভয় পায় না। ভয় পেলে গতকাল ওভাবে চটাং চটাং উত্তর দিতে পারে নাকি? মনেমনে গর্ববোধ করল পারমিতা। কেন যেন নিজেকে অনেক স্পেশাল মনে হলো ওর। পারমিতা ডেস্কে গেল না। আফসানার ডেস্কের পাশেই দাঁড়িয়ে রইল।
ফিসফিস করে জানতে চাইলো, ভয় পান নাকি রোদ স্যারকে?
– হ্যাঁ তা তো পাই। এমডির ছেলে। বুঝতে পারছেন? কাজে গাফিলতি দেখলে যদি অকালে চাকরি হারাই।

পারমিতা আবারও মনেমনে স্বস্তি পেলো। সবাই চাকরি হারানোর ভয় পায়। অথচ রোদ নিজেই তাকে সম্মানের সাথে এই ডেস্কে বসিয়েছে। একটা নিস্ন্বাস ফেলে দূর থেকে রোদের দিকে তাকিয়ে রইল পারমিতা।
রোদ দাঁড়িয়ে দু একজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছে, হেসে হেসে কথা বলছে। আবার ডেস্ক থেকে কেউ গুড মর্নিং বললে তার সঙ্গেও কুশলাদি বিনিময় করছে।
আফসানা বলল, ছেলেটা এত জোশ কেন?
চমকে উঠ পারমিতা। কি বললেন?
– ছেলেটা অনেক জোশ। মানে রোদ স্যার।
– বলবো নাকি স্যারকে?
– কি বলবেন?
– স্যার আপনি অনেক জোশ, আফসানা বলেছেন।
– এই না না। আমার চাকরি চলে যাবে।

জিহ্বায় কামড় দিলো আফসানা। রোদ এখনো অনেকেএ সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে কথা বলছে। কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। পারমিতার সন্দেহ হল রোদ তাকে কিছু বলবে কি না। কিন্তু রোদের সেন্স ভাল। সে কাজের ব্যাপার ছাড়া কর্মীদের সামনে পারমিতাকে কিছুই বলবে না।
পারমিতা আফসানাকে বলল, আচ্ছা আপনাকে আমি আপু ডাকবো?
– আরে না। নাম ধরেই ডাকেন। আপনি ডেস্কে যান। স্যার আসছে তো।
– আসুক। বলবো যে কাজের ব্যাপারে কথা বলছি। আড্ডা মারছি না।
– আমাদেরকে দেখলে মানুষ এমনিই বুঝবে আমরা আড্ডা মারছি।

আফসানা হাসলো। পারমিতা এবার কাজের ভঙ্গীতে বলল, তাহলে চলেন বিকেলের মিটিং নিয়ে কথা বলি। মিটিংয়ে কি এই ড্রেসেই যাবো? কোট পরতে হবে না তো?
আফসানা হাসি আটকাতে পারলো না। হাসতে হাসতে বললো, আপু আপনি অনেক মজার মানুষ। মজা পরে কইরেন। এখন যান প্লিজ।

পারমিতা ধীরপায়ে নিজের ডেস্কের দিকে এগিয়ে এযেতে লাগল। মুখে মুচকি হাসি। ডেস্কের কাছাকাছি আসতেই রোদও কাছাকাছি চলে এলো। এদিকেই আসছে রোদ। মনে হচ্ছে রোদকে পাশ কাটিয়ে যেতে হবে। পাশ কাটানোর সময় দাঁড়িয়ে গুড মর্নিং স্যার বলাটাও নিয়ম। পারমিতা দাঁড়াবে কিনা ভাবছে। এমন সময় রড একদম কাছাকাছি চলে এলো। পারমিতা মুখ খুলবে কিনা এখনো নিশ্চিত না। রোদের ওপর রেগে আছে সে। তাকে অবাক করে দিয়ে রোদ বলল, গুড মর্নিং মিস পারমিতা। ভালো আছেন?
পারমিতা থমকে দাঁড়াল। মুচকি হেসে সমর্থন জানাতে যাচ্ছিল সে। তখন আশেপাশের ডেস্ক থেকে সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে গুড মর্নিং জানাচ্ছিল। পারমিতা লজ্জায় পড়ে গেল। মাথা নামিয়ে রাখল ও। তবুও মনে আনন্দ তার। রোদ আগে তাকে গুড মর্নিং বলেছে। এটা ওর জন্য অনেক সম্মানের।
পারমিতা চুপচাপ নিজের ডেস্কে চলে এলো। ওর বিশ্বাস রোদ একবার পেছন ফিরে ওর দিকে তাকাবে। কিন্তু রোদ তাকাল না। পারমিতার মন খারাপ অনুভূত হল। যাকে ভালোই লাগে না, যাকে মুখের ওপর বন্ধুত্ব করবে না বলে দিয়েছে, তার দৃষ্টি না পেলে খারাপ লাগবে কেন, বুঝতে পারল না পারমিতা।
রোদ এখনো হেসে হেসে সবার সঙ্গে আলাপ করছে। এই লোকটা মাঝেমধ্যেই এমন করে। সবার সঙ্গে সুন্দর করে হাসিমুখে কথা বলে। এরকম আগেও দেখেছে পারমিতা। রোদকে এজন্য মনেমনে রেস্পেক্ট করে সে। রোদের মধ্যে আরো অনেক গুণাবলি আছে যেগুলো মুগ্ধ হবার মতো। আফসানার কথা শুনে রীতিমতো হিংসে হতে শুরু করেছিল পারমিতার।

পাশের ডেস্ক থেকে একজন কলিগ বলল, স্যার অনেক ভালো মানুষ বুঝলেন। আপনি গুড মর্নিং বলার আগেই আপনাকে বলে দিয়েছেন। এরকম স্যার আর হয় বলেন?
পারমিতা ম্লান হাসলো। লোকটা স্যারের প্রশংসা করতে গিয়ে ওকে খোঁচা মেরেছে। কাজে মন দিলো পারমিতা।

বিকেলে মিটিংয়ে এসে ওর অনেক ভালো লাগল। বিশাল টেবিলের চারপাশে বসে সবাই মিলে আলোচনা করছে। সেখানে বসে আছে পারিমতাও। সবাই এখানে সিনিয়র। দুজন জুনিয়রও আছে। মাহতাব স্যার সবকিছু বিস্তারিত শিখিয়ে দিচ্ছেন। বাকিটা মাঠ পর্যায়ে কাজে নেমে শেখানো হবে। কাজের জন্য বিভিন্ন প্রোডাক্ট সংগ্রহ করতে হবে, বিভিন্ন ল্যাবে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, অনেক কোম্পানিতে গিয়েও প্রোডাক্ট নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। পারমিতার উত্তেজনা কাজ করছে। এই কাজের জন্য এক্সট্রা সম্মানীও আছে। ভালোই হল, সবসময় ছেলের জন্যই কেনাকাটা করে সে। এবার সে নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা করবে। তার ভালো জামাকাপড় নেই, অফিসে পরে আসার জন্য সুন্দর ড্রেস কিনতে হবে। সামান্তাকেও কখনো কিছু গিফট দেয়া হয় না। ওর জন্যও কিছু করার সুযোগ হবে। বেশ মোটা অংকের সম্মানী দেবে কোম্পানি থেকে।

এই আনন্দে পুরোটা বিকেল পারমিতার মন ফুরফুরে রইল। বাসায় ফেরার সময় এক কেজি মাল্টা, ড্রাগন ফ্রুটস, স্ট্রবেরি ও কলা কিনে ফিরল। সামান্তা খাবার টেবিলের ওপর এতগুলো ফল দেখে বলল, কিরে ব্যাপার কি? আজ এত ফলমূল?
– তুই আর আমি খাবো। প্রতিদিন তো একটা আপেল আর একটা কমলা এনেই শেষ। আজকে আমরা মন ভরে খাবো।
– তোর মাল্টা অনেক পছন্দ। তুই খা। আমি একটা স্ট্রবেরি খাবো।
– শুধু একটা স্ট্রবেরি কেন? সবগুলো নে।
– আমার স্ট্রবেরি আইসক্রিম পছন্দ।
– আচ্ছা চল, নিচে যাই। আইসক্রিম নিয়ে আসি।
সামান্তা অবাক হয়ে বলল, আইসক্রিম? না না আজ থাক। আজকে অনেক খরচ হয়ে গেছে তোর।
– আরে বাবা চল তো।

প্রীতুলের হাত ধরে সামান্তাকে নিয়ে বাসার নিচে এলো পারমিতা। দোকানে এসে সামান্তাকে বলল, কোনটা খাবি নে।
সামান্তা একটা ছোট কাপ আইসক্রিম নিলো। পারমিতা বলল, শুধু কাপ কেন? তুই জগ নে। মামা, জগ আইসক্রিম নাই?
দোকানদার দাঁত বের করে হাসলো। পারমিতার জোরাজুরিতে আধা লিটার আকারের একটা আইসক্রিম নিতে বাধ্য হল সামান্তা। পারমিতা ছেলেকে বলল, বাবা তুমি কি নেবে?
প্রীতুল প্রথমে ভয় পাচ্ছিল। একইসাথে পাচ্ছিল লজ্জা। পারমিতা বলল, আব্বু কি নেবে তুমি? যা ইচ্ছে নাও। মামনি কিছু বলবে না।
সাহস পেয়ে প্রীতুল কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে ভেবে পায় না। সে একসঙ্গে অনেকগুলো চকলেট, বিস্কুট, চিপস নিয়ে ফেলল। বিশাল একটা প্যাকেটে তুলে পারমিতা বলল, চলো বাসায় যাই।
সামান্তা বলল, তুই পাগল হয়ে গেলি? ও এতগুলো খাবার খাবে না। সব নষ্ট করে ফেলবে।
– আমার ছেলে ওরকম না। ও এগুলো রেখে রেখে এক সপ্তাহ ধরে খাবে। ঠিক বলেছি আব্বু?
প্রীতুল বলল, হ্যাঁ আম্মু। আমি এগুলো অনেকদিন রেখে রেখে খাবো।

হাসলো সামান্তা। দীর্ঘদিন পর প্রীতুল ও সামান্তাকে হাসিখুশি দেখে ভীষণ আনন্দ হল পারমিতার। আগামীকাল থেকে নতুন একটা প্রজেক্ট শুরু হতে যাচ্ছে। এখন বাসায় গিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে কাজের।

কাজ ভালোমতোই শুরু হল। স্যার বুঝিয়ে দিলেন কাকে কোথায় গিয়ে তথ্য জোগাড় করতে হবে। পারমিতাকে যেতে হবে জুরাইন নামের একটা জায়গায়। একটা কোম্পানির ল্যাবে গিয়ে কথা বলতে হবে। কোম্পানির এমডিএ সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারা সরাসরি অনুমতি দিয়েছেন। বুক ধুকপুক করছে পারমিতার।
ডেস্কে এসে সব কাগজপত্র গুছিয়ে পারমিতা বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাতে ও মুখে ভালো করে সানস্ক্রিন মাখছে। বাইরে কড়া রোদ। সিএনজি নিয়ে যেতে হবে। এমনিতেই যা জ্যাম! গরমে আর রোদে আজ পুড়তে হবে তাকে। তবুও উত্তেজিত বোধ করছে পারমিতা। এক প্রথম অফিসের কাজে সে কোথাও যাচ্ছে।
এমন সময় মাহতাব স্যারের চেম্বারে পারমিতাকে ডেকে পাঠালেন। পারমিতা দ্রুতগতিতে স্যারের অফিসে এলো। স্যার বললেন, আপনার জন্য সুখবর আছে মিস পারমিতা।
পারমিতার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সুখবর মানে!
স্যার বললেন, অফিসের গাড়ি নিয়ে যাবেন আপনি।
পারমিতা ভিড়মি খেলো। এও কী সম্ভব!
স্যার বললেন, আজকে শুধুমাত্র চারজন বাইরে কাজে যাচ্ছেন। চারজনের জন্যই অফিসের গাড়ি ব্যবহার করার অনুমতি আছে। অফিসের আশেপাশের কাজগুলোতে সাধারণত আমরা গাড়ি দেই না। রোদ স্যার এমডি স্যারকে অনুরোধ করেছেন যেন প্রত্যেককে গাড়ি দিয়ে দেয়া হয়। নয়তো অফিসের গ্যারেজে গাড়িগুলো ফেলে রাখা হয়েছে কেন? শুধুমাত্র বড় বড় স্যাররা গাড়িতে চড়বে আর কর্মীরা রোদে পুড়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাবে সেটা তো হতে পারে না। এমডি স্যার রাজি হয়েছেন।

পারমিতা অনেক্ষণ কথা বলতে পারলো না। রোদের প্রতি মুগ্ধতায় ওর কান্না এসে যাচ্ছে। একটা মানুষ সবার জন্য এত ভাবে, এত উঁচু মন মানসিকতার কী করে হয়!
পারমিতা কৃতজ্ঞতা স্বরুপ হাসল। পরক্ষণেই বলল, কিন্তু স্যার আমি তো গাড়ি চালাতে পারি না।
হেসে ফেললেন মাহতাব স্যার। বললেন, আরে আপনি কেন গাড়ি চালাবেন? আপনাকে ড্রাইভার নিয়ে যাবে। আপনার সঙ্গে আরও দুজন যাবে। ওদেরকে পথে নামিয়ে দিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে। আবার কাজ শেষ হয়ে আপনাকে নিয়ে আসবে। বুঝতে পেরেছেন?
লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল পারমিতা। মনেমনে বলল, ধুর আমি এত বোকা কেন!

নিজের ডেস্কে এসে ব্যাগ নিয়ে তৈরি হল পারমিতা।অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ভীষণ উত্তেজিত হয়ে রইল। গেটের সামনে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে ড্রাইভার। সে গাড়ির কাছাকাছি আসতেই ড্রাইভার দরজা খুলে দিলো। পারমিতা সম্মানিত বোধ করল। এই ঠা ঠা রোদ্দুরে একটা গাড়ির প্রয়োজনীয়তা আসলেই অনেক। রোদ স্যারকে অনেক ধন্যবাদ দিতেই হয়।
পারমিতা গাড়িতে বসে আছে। সিনিয়র কর্মকর্তা আফরোজ পারমিতার পাশের সিটে বসলেন। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলেন আরেকজন। এরপর গাড়ি চলতে শুরু করল। পারমিতার বারবার মনে হতে লাগল, আজ যদি একবার রোদের সঙ্গে দেখা হতো। একটাবার যদি রোদের সঙ্গে দেখা হতো!

গাড়ি চলতে শুরু করেছে। মিনিট দুয়েকের মাথায় হঠাৎ রাস্তায় একটা দৃশ্যে চোখ আটকে গেল পারমিতার। বুক ধক করে উঠল ওর। রোদ একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে ও কথা বলছে একজন লোকের সঙ্গে। পরনে একটা হালকা গোলাপি রঙের শার্ট। মনেমনে চাইতেই এভাবে রোদকে দেখতে পাবে সেটা কল্পনাও করতে পারেনি। ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল। গাড়ি পেরিয়ে গেল। কাঁচের ভেতর থেকে রোদকে দেখল পারমিতা। রোদ তাকে দেখতে পায়নি। সে কথা বলায় ব্যস্ত। কিন্তু পারমিতা ভেনেই পেলো না, রোদকে এখানে দেখে তার এত স্বস্তি কেন হচ্ছে! মনটা ভরে উঠেছে আনন্দে। আজকে খুব আনন্দের সঙ্গেই কাজ করতে পারবে সে।

চলবে..

আগের পর্বঃ

https://www.facebook.com/439669216414853/posts/1452413761807055/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here