পারমিতা” পর্ব-২৬

0
1350

#পারমিতা
পর্ব ২৬
_নীলাভ্র জহির

সামান্তার বিদায়ের আগ মুহুর্তে হঠাৎ খুব ভেঙে পড়ল পারমিতা। প্রিয় বন্ধু যেন আজ থেকে ওর পর হয়ে যাচ্ছে। বিয়ে বিষয়টা সবসময় আনন্দের হলেও বিদায় জিনিসটা সবসময়ই কষ্টের। সামান্তা নিজেই পারমিতাকে স্বান্তনা দিচ্ছে। তার প্রিয় মানুষের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। যে মানুষটা অনেক দায়িত্ববান, অনেক কেয়ারফুল। তাকে পাওয়ার আনন্দটাই সামান্তার কাছে অনেক। মাকেও বুকে জড়িয়ে সামান্তা স্বান্তনা দিয়ে বলছে, আমি তো দূরে কোথাও যাচ্ছি না মা। দুদিন পরপরই আসবো। তোমার সঙ্গে আমার দুরত্ব কখনোই বাড়বে না।
মায়ের মন এতে মানছে না। তিনি পারমিতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। এই বিষণ্ণ মুহুর্ত পারমিতাকেও ম্লান করে দিয়েছে। সেও কাঁদছে। রোদ প্রীতুলকে নিয়ে বসে আছে। প্রীতুল বারবার জিজ্ঞেস করছে রোদকে, আম্মু কেন কাঁদছে? কেউ মেরেছে আম্মুকে?
রোদ ওকে বুঝিয়ে শান্ত করে রাখছে। তার ভালো লাগছে না। পারমিতার মলিন কান্নারত মুখ রোদের বুক ভারী করে তুলছে।
সামান্তা শেষ মুহুর্তে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। সেই কান্না আর থামলো না। শেষ পর্যন্ত ওকে জোর করে গাড়িতে তুলে দেয়া হল। সত্যিই বিদায়ের ক্ষণে একটা মেয়ে যখন উপলব্ধি করতে পারে সে আসলেই খুব দূরে চলে যাচ্ছে, ছেড়ে যাচ্ছে প্রিয় বাবা মাকে, তখন তার বুকফাটা আর্তনাদ আর লুকিয়ে রাখা যায় না। তবুও কেউই বুঝতে পারে না এই কষ্টের অনুভূতি।

পারমিতা প্রীতুলকে দেখতে রোদের কাছে এলো। রোদ রুমাল এগিয়ে দিলো ওর দিকে। অবাক হল পারমিতা। আজকালকার দিনেও কারও কাছে রুমাল থাকে নাকি? খুবই সফট, মোলায়েম একটা রুমাল। পারমিতা চোখ মুখ মুছে প্রীতুলকে কাছে ডেকে নিয়ে বলল, আব্বু তুমি আমাকে কাঁদতে দেখে ভয় পাওনি তো?
– না পাইনি। রোদ আমাকে বলেছে তুমি আনন্দে কাঁদছ। বেশি খুশি হলে নাকি মানুষ এভাবে কান্না করে।
পারমিতা ফিক করে হেসে বলল, রোদ সত্যি বলেছে। সামান্তা খালামনির বিয়েতে আমরা অনেক আনন্দ পেয়েছি। তাই সবাই আনন্দে কান্না করছে।
– আম্মু আমি কেন কান্না করলাম না? খালামনি কি মাইন্ড করবে?
হেসে উঠল পারমিতা। রোদও হাসছে। পারমিতা রোদকে ইশারায় বলল, বসুন। দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
পারমিতার পাশের চেয়ারে বসে পড়ল রোদ। প্রীতুল পারমিতার কোল থেকে নেমে সামান্তার কাছে গেল। ভীড় ঠেলে যেতে কষ্ট হচ্ছিল ওর। রোদ দৌড়ে গিয়ে সহায়তা করল ওকে। সবাইকে সরিয়ে সরিয়ে প্রীতুলকে সামান্তার কাছে নিয়ে গেল। পারমিতা মুগ্ধ হল রোদের এই আচরণে। মুহুর্তের জন্যও রোদ ওকে বুঝতে দেয়নি যে, এটা তার প্রিয়তমার বিবাহিত ঘরের সন্তান। অন্যের সন্তানকে নিয়ে মানুষের মধ্যে যে হীনমন্যতা থাকে, রোদের মধ্যে তার ছিটেফোঁটাও নেই। বরং রোদ প্রীতুলকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতে শুরু করেছে। আদরে, যত্নে, পরম মমতায় ওকে আগলে রাখছে। প্রীতুলকে খুব প্রায়োরিটি দিচ্ছে। বিষয়গুলো মুগ্ধ হবার মতোই। কিন্তু দিনশেষে সত্যিটা বারবার মনে পড়ে যায় পারমিতার। রোদের মতো একজন মানুষকে তার জীবনে না জড়ানোই ভালো। তার জীবন আর রোদের জীবনের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল পারমিতা। প্রীতুলকে জড়িয়ে ধরে সামান্তা অনেক কান্নাকাটি করে ধীরেধীরে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। সবাই ওকে যত্নের সঙ্গে গাড়িতে তুলে দিলো। গাড়ি ছেড়ে যাবার পর পুরো বাড়িতে নেমে এলো নীরবতা। চারদিক সুনসান, কারও মুখে শব্দ নেই, বাক্য নেই। শুধুই নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে সবখানে। আন্টি অসহায় ভঙ্গিতে বসে আছেন। বাকিরা যে যার মতো চুপ করে আছে।
পারমিতা বাসার বাইরে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। রোদ ওকে বলল, চলো আমার সঙ্গে।
– কোথায়? আন্টির সঙ্গে কথা বলতে হবে।
– ওনাকে কিছুক্ষণ একা ছেড়ে দাও। ঠিক হয়ে যাবে সব। তোমার নিজেরই মন খারাপ খুব। এরমধ্যে বাসায় ঢুকলে আরও দমবন্ধ লাগবে।
– তাহলে কি করব?
– আমার সঙ্গে চলো। কিছুক্ষণ বাইরে ঘুরে চলে আসবো
– আপনি গাড়ি নিয়ে এসেছেন?
– না। আমরা রিকশায় ঘুরতে যাবো।
– কয়টা বাজে?
– সাড়ে নয়টা।
– আচ্ছা চলুন। এগারোটার আগেই ফেরত আসতে হবে কিন্তু।
– বেশ। আমি পৌঁছে দিয়ে যাবো। টেনশন করো না।

একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ল রোদ ও পারমিতা। রোদ প্রীতুলকে কোলের ওপর বসালো। রিকশা চলতে শুরু করলে পারমিতার মন ভালো হয়ে যেতে লাগল। ফুরফুরে বাতাস লাগছে। এই এলাকাটা মোটামুটি ফাঁকাই বলা চলে। তাই চলাফেরা করেও শান্তি। আজ ওর নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। এই পরিপূর্ণতার স্বাদ কি রোদের জন্যই! যে প্রীতুলের বাবার শূন্যতা পূর্ণ করে দিয়েছে, অথবা পূর্ণ করেছে পারমিতার একাকীত্ব।

রিকশা চলতে চলতে দুজনেই চুপচাপ। প্রীতুল একা কথা বলছে। মাঝেমাঝে ওর সঙ্গে মেতে উঠছে রোদ।
পারমিতা কিছুক্ষণপর বলল, এই এলাকা আপনি চেনেন?
– মোটামুটি চিনি।
– আপনি কি ঢাকার সব এলাকাই চেনেন?
– কম বেশি চিনি।
– বাহ। আমি তাহলে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে বসে আছি।
– বলা যায়। তবে এলাকা চিনলেই কেউ অভিজ্ঞ হয় না। অভিজ্ঞ হয় জ্ঞানে, আর অভিজ্ঞতায়।
– আপনি অনেক জ্ঞানী। অনেক মেধাবী।
– এ কারণে বুঝি আমাকে ভয় পাও?
– না তো। কেন?
– অনেকেই মেধাবীদের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পায়। তাই জিজ্ঞেস করছি।
– হা হা হা। কি যে বলেন না। যাইহোক, বাইরে নিয়ে আসার জন্য থ্যাংকস। আমার ভালো লাগছে। বাসার ভেতর সত্যিই খুব দম বন্ধ হয়ে আসতো।
– আন্টি আবার খুঁজবে না তো তোমাকে?
– এখন ওনার খোঁজার সময় কোথায়? খুঁজলেও অসুবিধা নেই। আমি তো হারিয়ে যাওয়ার মানুষ নই। তাছাড়া আমরা বেশিক্ষণ দেরী করবো না।
– হারিয়ে যাওয়ার মানুষ নও? তাহলে আমার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলে কেন?

পারমিতা চুপ করে রইল। এর কোনো সদুত্তর তার জানা নেই। আর উত্তর দিলেও বা কী, রোদ সেটা মানবে না। মুচকি হেসে পারমিতা বলল, খুঁজে বের করতে পারেন কিনা সেটা দেখার জন্য।

– সিরিয়াসলি!
– আরে না না। এটা মজা করে বললাম। আমার আসলে এরকম কোনো বাসনা ছিলো না।
রোদ শব্দ করে হাসছে। লজ্জায় পড়ে গেল পারমিতা। সত্যিই সে এরকম কোনো ইচ্ছে থেকে হারিয়ে যেতে চায় নি। সে চেয়েছিল রোদ তাকে ভুলে যাক। অবশ্য নিজের অবচেতন মনেএ কথা পারমিতাও বুঝতে পারে না। অবচেতন মনে সে চায়, রোদ তাকে সমস্তটা উজার করে ভালবাসুক।

একটা রেস্টুরেন্টে বসে ক্যাপুচিনো কফি খেলো ওরা। প্রীতুলকে কিনে দেয়া হল তার পছন্দের খাবার। কথায়, অনুভূতিতে মুহুর্তটা সুন্দর হয়ে উঠল। এসির শীতল আবহাওয়া আর রেস্টুরেন্টের শীতল পরিবেশ মুহুর্তেই মন খারাপ দূর করে দিলো। মৃদু সুরে গানও বাজছে।
পারমিতা বলল, কি দেখছেন?
রোদ অনেক্ষণ যাবত মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে থাকায় প্রশ্নটা করে সে।
রোদ উত্তর দিলো, একটা কথা বলবো? যদি কিছু মনে না করো।
– অবশ্যই। বলুন না।
– তুমি একদিন বলেছিলে আমার নাকি যোগ্য কাউকে বিয়ে করা উচিৎ। তুমি নাকি যোগ্য নও? যদি সম্ভব হতো, তোমাকে আমার চোখ দিয়ে দেখাতাম। এইমুহুর্তে তোমাকে কতটা স্মার্ট আর সুন্দর লাগছে। যদিও আমি এমন সাজগোজ খুব একটা পছন্দ করিনা। তোমার ভাষায় যোগ্যতা যদি এটাকে বলো, তাহলে বলবো এইমুহুর্তে আমি একজন যোগ্য মেয়ের সামনেই বসে আছি। আর যদি বলো, জ্ঞানে ও আচরণে যোগ্য কিনা, সেদিক থেকে তুমি সবার চাইতে যোগ্য। তাই তো তোমাকেই বেছে নিয়েছি। তুমি জানোনা তুমি কতটা অনন্য।

পারমিতা বিমোহিত হলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে যখনই মুখ খুলতে যাবে, রোদ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ডিভোর্স আর বাচ্চার কথাই বলবে তো? প্লিজ থামো। এই টপিক নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না। ডিভোর্স আমার কাছে খুবই তুচ্ছ একটা ব্যাপার। কখনো আমি ভাব্বোও না তোমার ডিভোর্স হয়েছে, আমার ফ্যামিলির কেউই বলবে না এটা। আর প্রীতুলকে আমি ভালবাসতে পেরেছি কিনা সেটা তোমার চেয়ে ভালো কেউ বুঝবে না। এগুলো মুখে ব্যাখ্যা করা যায় না পারমিতা।

পারমিতা চুপ করে রইল। সবকিছুই তার পক্ষে। তার সুন্দরের কামনায়। কিন্তু তারপরও কোথাও একটা ফাঁক থেকে যায়।
পারমিতা বলল, আসলে আমি এই যুদ্ধটা একাই করতে চেয়েছিলাম। আপনি আমার দায়িত্ব নিয়ে ফেললে আমার যুদ্ধ তো আর রইল না।
– বেশ। তুমি যা ভালো মনে করো। আশাকরি আমরা এই বিষয়টা নিয়েও একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি।
– যেমন?
– তুমি এক্সট্রা কোনো প্রিভিলেন্স নেবে না। নিজের মতো যেভাবে চাও থাকবে, চাকরি করবে। স্বাধীন ও স্বনির্ভর। আর দিনশেষে আমাকে ভালবাসবে। আমার স্ত্রী হয়ে থাকবে। হয়তো এমনটাই আমাদের দুজনের জন্য ভালো হবে।

পারমিতা চুপ করে রইল। আইডিয়াটা ভালো লেগেছে ওর। কিন্তু এখনই এসব ভাবতে ইচ্ছে করছে না। যদিও মনের কোণে নতুন করে স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। একসঙ্গে রোজ এভাবে ঘুরতে বের হওয়া, আনন্দে সময় কাটানো, দুঃখের সাথী হওয়া, সবকিছু কতই না সুন্দর হতো। পারমিতা ভাবনায় হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরিয়ে আনলো নিজেকে। স্বপ্ন দেখতে ভয় পায় ও। তাই স্বপ্ন দেখতে চায় না।

রোদ বলল, বাসায় গিয়ে ডিনার করতে পারবে বলে মনে হয় না। সেই সন্ধ্যায় খেয়েছো। এখন কিছু খেয়ে নাও।
– না। প্লিজ খাবো না। ইচ্ছে করছে না।
– অল্প কিছু খাও।
খাবারের মেন্যু এগিয়ে দিলো রোদ। পারমিতা অনেক্ষণ মেন্যুতে চোখ বুলিয়েও কিছু অর্ডার করার সিদ্ধান্তে আসতে পারলো না। রোদ ওকে বেশ কয়েকটি খাবারের নাম ও খেতে কেমন হবে, কোনটা কোন দেশের খাবার সেটা বুঝিয়ে দিলো। কোন ধরনের খাবার বেশি উপভোগ করতে পারবে সেটাও বুঝালো। পারমিতা মুখ টিপে হাসতে হাসতে রোদের কাণ্ড দেখছিল। নিজেকে মনে হচ্ছিল একটা শিশু। শেষ অবধি পারমিতা একটা খাবার অর্ডার করতে সক্ষম হল। আর খাবারের টেস্টও ছিল অসাধারণ। রোদ বলল, তোমার সিলেকশনের প্রশংসা করতে হয়।
– আর যে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কোন খাবারটা ভালো হবে, তার?
– চাইলে তার প্রশংসা করতেই পারো। হা হা হা।

রিকশা নিয়ে প্রীতুল ও পারমিতাকে সামান্তার বাসায় পৌঁছে দিলো রোদ। বিদায় নেয়ার সময় দুজনেরই কোনো এক অদ্ভুত কারণে মন খারাপ হয়ে গেলো। পারমিতা রোদকে ইশারায় বলল, অফিসে গিয়ে দেখা হবে।
রোদ বলল, কাল নিতে আসবো। বাসায় কখন যাবে জানিয়ে দিও।
– না, তার দরকার নেই। আমি একাই চলে যাবো। পরশুদিন আপনার সঙ্গে অফিসে দেখা হবে।
– ওকে। জোর করবো না। সাবধানে থেকো।

প্রীতুলকে আদর দিয়ে রোদ চলে গেল। পারমিতা বাসায় ঢুকে দেখল সবকিছু শান্ত। তবে পরিবেশ কিছুটা উন্নত হয়েছে। সবাই নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। বিদায়ের মলিনতা খানিকটা কেটে গেছে। পারমিতা স্বস্তির সঙ্গে আন্টির সঙ্গে দেখা করতে গেল। আন্টি জানতে চাইলেন, কোথায় ছিলে মা?
পারমিতা বিষয়টা লুকাতে চাইলো না। বলল, রোদ বললো একটু বাইরে যেতে। প্রীতুল জ্বালাচ্ছিল।
– রোদকে পছন্দ করো?
পারমিতা চমকে উঠল। মাথা নাড়িয়ে বলল, না। সেরকম কিছু না।
– মাথা নাড়াও আর যাই করো। তোমার চেহারায় লাজুকতা দেখেই আমি বুঝেছি তুমি ওকে পছন্দ করো। ছেলেটাকে আমারও ভালো লেগেছে। সামান্তা বলেছিল ওর বাবা নাকি তোমাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছেন, তুমি রাজি হওনি।
পারমিতা চুপ করে রইল। তিনি বললেন, দেখো মা। আমার বয়স হয়েছে। জীবনের অনেক কিছু দেখে এসেছি। তুমি সামান্তার সঙ্গে অনেকদিন একসাথে আছো। আমি তোমার ব্যাপারে সবই জানি। কতটা সংগ্রাম করে টিকে আছো, সব। এখন সামান্তা নেই, তোমার জন্য আরও কঠিন হবে সবকিছু। বলছি যে, নিজের জন্য মাঝেমাঝে স্বার্থপর হতে হয়। একটা সঠিক সিদ্ধান্ত কিন্তু জীবনটাকেই পালটে দেয় মা। রোদের অর্থসম্পদ নিয়ে তোমার আগ্রহ না থাকুক। টাকা পয়সার দিকে তোমার মনযোগ না দিলেও চলবে। কিন্তু একজন সঙ্গীর প্রয়োজন অবশ্যই আছে। মানুষ একা বাঁচতে পারে না। কাউকে জীবনে প্রয়োজন হয়। কারও সঙ্গে পথচলা, একাকীত্বের সময়ে কেউ পাশে থাকলো। এসবের জন্য জীবনে একটা মানুষ লাগে। মা রে, তোমার যদি ওকে ভালো লাগে তাহলে বিয়েতে রাজি হয়ে যাও। দেখবে যা কিছু হবে, ভালোর জন্যই হবে। বাস্তবতা কত কঠিন, সেটা তোমার চাইতে ভালো কেউ জানে না। বুঝেশুনে একটা সিদ্ধান্ত নাও।
পারমিতা ঘরে এসে বারবার আন্টির কথাগুলো ভাবতে লাগল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে গম্ভীর হয়ে চিন্তা করতে লাগল। একবার রোদের ভাবনা ওকে আবন্দ দেয়, আরেক বার অজানা আশংকায় মনে ভয় প্রবেশ করে। এই দোটানা নিয়ে পারমিতা গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে এলো। মোবাইল বেএ করে দেখল রাসিফ দুইবার কল দিয়েছিল। পারমিতা প্রীতুলের দিকে তাকালো। তাকে সত্যিকার বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে বাকি নতুন করে বাবার সঙ্গে পরিচয় হবে, সেটা ওকে ভাবাচ্ছে। রাসিফ এইমুহুর্তে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করলেই ভালো হতো। অনেক শান্তিতে থাকতে পারতো পারমিতা। সবকিছু ভেবে পারমিতা রাসিফের নাম্বারটা ব্লকলিস্টে রেখে দিলো। রোদের ভালবাসা আর জীবনের বাস্তবতা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে ওকে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here