প্রিয়তমা পর্ব-৪ ৫ ৬

0
3424

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (৪র্থ ৫+৬ পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
আজ লামিয়ার জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে।ছেলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী করে। ছেলে দেখতেও মোটামুটি ভালো। তবে একটু ওভার স্মার্ট দেখেই বুঝেছে লাবিব। অনেক অবস্থাসম্পন্ন পরিবার।ঢাকায় দু তিনটা বাড়ি আছে। ছেলের পরিবারে আর মনে হয় কেউ বাকি নেই আসতে। একেবারে পুরুষ মহিলা মিলে ১৫জনের মত হবে। হুট করেই উনারা কার থেকে খবর পেয়ে এসেছে। তবুই যথাসম্ভব সমাদরের ব্যবস্থা করা হলো।
লামিয়া তার মাকে ভালো করে জানিয়ে দিয়েছে ও ছেলে ছাড়া আর কোন পুরুষের সামনে যাবেনা। এদিকে নাস্তা শেষে ছেলের বোন পিড়াপীড়ি শুরু করলো মেয়েকে নিয়ে আসতে।
লামিয়ার বাবা কিছুটা সংকোচ করে বললো,,, কিছু মনে করবেন না আসলে আমার মেয়ে কোন পরপুরুষের সাথে দেখা দেয়না। তাই আসতে চাচ্ছেনা।শুধু ছেলে আর আপনারা মহিলারা থাকলে ও আসবে।
-ছেলের বোন এটা আবার কেমন কথা!!! সবার সামনে আসলে কি হবে?
-আমার মেয়ে পরিপূর্ণ পর্দাশীল তাই।
-ছেলের ভাবি কিছুটা টিটকারী করে বললো,,, আজকাল এ টাইপ মেয়ে আছে নাকি!!!
-লাবিব কিছুটা রাগ নিয়ে বললো হ্যা আছে আমার বোন এই টাইপ। আমার বোন এখানে আসবেনা। আপনারা চাইলে চলে যেতে পারেন।
ওরা কিছুটা অপমান বোধ করলো। কিন্তু এত কষ্ট করে এসেছে যখন তখন দেখে যাওয়াটা ভালো। অগত্যা ছেলে ছাড়া অন্য পুরুষরা বেরিয়ে গেলো।
লাবিব লামিয়াকে নিয়ে আসলো। লামিয়া ওড়না দিয়ে ভালো করে মাথা আর শরীর ঢেকে নিলো। কারন বিয়ের জন্য ছেলেকে মুখ হাত পা শুধু দেখানো জায়েজ। ও সামনে এসে আস্তে করে সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
-ছেলের মা সালামের জবাব দিয়ে বললো বসো।
লামিয়া বসতেই উনি প্রশ্ন করলেন কি নাম তোমার?
-জী লামিয়া আহমেদ।
-কিসে পড়?
-অনার্স ১ম বর্ষে।
-ছেলের বোন কিছুটা উৎসাহ নিয়ে বললো কি নিয়ে পড়ো?
-জী ইসলামিক স্টাডিজ।
-ছেলের ভাবি ভ্রু কুঁচকে বললো এটা কো সাবজেক্ট নাকি!!! এটা দিয়ে তো ভবিষ্যতে কিছু করতেও পারবেনা।
-কয় ভাইবোন তোমরা?
-দুই বোন এক ভাই।
-তুমি কত নাম্বারভাই বোনের মাঝে?
-সবার ছোট
-সাংসারিক কাজ কিছু পারো?
-জী পারি।
-মা তোমার চুল গুলো একটু দেখাওতো।
– লামিয়া এবার প্রচন্ড বিরক্ত হলো। অস্বস্তি নিয়ে বললো সরি আন্টি আমি আপনাদের সামনে আমার চুল খুলবোনা। ওর এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে আরো কিছু কথা শুনাতে কিন্তু পারছেনা।
-ও আচ্ছা থাক না দেখাতে চাইলে। ভদ্রমহিলা উনার মেয়েকে ইশারায় বললো হাটিয়ে দেখাতে পায়ে কোন সমস্যা আছে কিনা?
মেয়েটি উঠে লামিয়াকে উঠিয়ে হাটিয়ে আনলো।
-লামিয়া বসতেই আবারো বললো,,,কোরআন পড়তে পারো?
-জী
-আচ্ছা ছোট থেকে যেকোন একটা সূরা বলতো।
লামিয়া সূরা শুনানোর পরে ছেলের মা ছেলেকে বললো তুই কি আলাদা করে কিছু কথা বলতে চাস?
লামিয়া অনেকটা অসহায়ের দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো। এবার পারলে ও কেঁদে দেয়। লাবিব এতোক্ষন অনেক কষ্টে রাগ চেপে রেখেছিলো। সামনে বাবা বসে আছে তাই। ওরা কেউ ওর বাবার সামনে উচ্চবাচ্যে কথা বলেনা।কিন্তু এখন আর না এটা কি ধরনের মেয়ে দেখা।
ছেলে কিছু বলার আগেই লাবিব বলে উঠলো ভাইয়া আপনি যা জিজ্ঞেস করার এখানেই করুন।
ছেলের বোন বললো এটা আবার কেমন কথা ছেলে মেয়ে আলাদা কথা বলবে এতে বাঁধা কিসের। ওদের পছন্দ অপছন্দ আছেনা এভাবে সবার সামনে বলা যায় নাকি।
-সবার সামনে বলা যাবেনা এমন কি কথা উনাদের এখন থাকতে পারে। আন্টি আপনারা বোধহয় জানেন না।ছেলে মেয়ে একান্তে কথা বলা প্রকাশ্য হারাম।
-ছেলের ভাবি বললো,,, কথায় কথায় হাদীস ঝাড়বেন নাতো। হাদীস আমরা ও জানি।
-কি হাদীস জানেন। এইভাবে মেয়ে দেখতে এসে অবান্তর সব কথা জিজ্ঞেস করাটা কোন হাদীসে আছে। একবার আপনার চুল দেখতে চান আরেকবার হাটিয়ে দেখছেন সব ঠিক আছে কিনা? কি এসব কি? আপনারা কি পন্য কিনতে এসেছেন যে এভাবে নেড়েচেড়ে দেখতেছেন?
-ছেলের বোন বললো,,আপনি এভাবে রাগছেন কেন। মেয়ে দেখতে আসলে মানুষ যাচাই বাছাই করবেনা।
-এটা কি ধরনের যাচাই বাছাই করছেন। চলাফেরায় স্মার্টনেস আছে এছাড়া ভদ্রতা বলতে আর কিছু নাই। কিছু মনে করবেন না আপনারা আসতে পারেন আপনারা চাইলে আমরা আমার বোনকে বিয়ে দিবোনা এখানে।
সবাই বেরিয়ে গেলো এপর্যায়ে।
লাবিব বললো উচিত শিক্ষা হয়েছে যত্তসব। ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো,,, তোমার সামনে তোমার মেয়েকে এরকম অবান্তর প্রশ্ন করছে তুমি কিছু বলোনি আব্বু।
ওরা চলে যেতেই লামিয়া কেঁদে দিলো। আব্বু আমি তোমাকে কতবার বলেছি এসব মানুষকে বাসায় আনবেনা। আমি ধনসম্পদ চাইনা একটা দ্বীনদার ছেলে দেখো আমি কোন আপত্তি করবোনা এ বলে লামিয়া ওখান থেকে চলে গেলো।
আকরাম চৌধুরী আর রাহেলা চৌধুরীর তাদের ছোট ছেলে আনাস বিন আকরাম চৌধুরির জন্য মেয়ে দেখা শুরু করেছেন আঁটঘাঁট বেঁধে। রাহেলা চৌধুরীর এক কথা ছেলে যত না না করুক না কেন এবার তিনি ছেলেকে বিয়ে দিয়ে ছাড়বেন। ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে আর বিয়ে করার সামর্থ্য ও আল্লাহর রহমতে ওর হয়েছে। হাদীসে আছে- ছেলে মেয়ে উপযুক্ত হলে তাদের বিয়ে দেয়া মা বাবার দায়িত্ব। উনাদের দুই মেয়ে দুই ছেলের মাঝে আনাস সবার ছোট। বড় ছেলে সাদাফ বউ নিয়ে সউদিতে আছে। মেয়েরা ও সংসারী হয়েছে। শুধু ছোট ছেলেটা বাকি আছে। ওর জীবন সাজিয়ে দিয়ে উনার উনাদের উপর আল্লাহর দেয়া অর্পিত দায়িত্বটা থেকে মুক্তি নিবেন।
অনেক আশা নিয়ে ছেলের রুমে আসছেন ছেলে যেন একবার রাজি হয়। ছেলে রাজি না থাকার জন্য কাউকে কথা ও দিতে পারছেন না।
আনাস অফিসের কিছু কাজ করছিলো। মাকে দেখেই বললো ওহ আম্মু আসো। কিছু বলবে?
-আমি কি বলতে চাই সেটা তুই ভালো করে জানিস।
-উফ!!! আম্মু আমিএখনো পুরোপুরি বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয়।
-ওর মা একটু রেগে কবে প্রস্তুত হবি তুই?
-রাগছো কেন?
-তো কি করবো। কিছুটা আবেগী হয়ে,, আমরা আজ আছি কাল নাই। মানুষের মৃত্যুর কোন বিশ্বাস নাই। কত ইচ্ছে তোকে বিয়ে দিয়ে নাত নাতনির মুখ দেখবো। কিন্তু সে ইচ্ছে আর হয়তো পূরণ করতে পারবোনা।
-আম্মু ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করবেনা বলে দিচ্ছি।
-আচ্ছা তোর কোন পছন্দ থাকলে বল। আমরা তাকেই মেনে নিবো।
-আম্মু কি যা তা বলছো আমার পছন্দ থাকবে কেন। তোমরা জানোনা আমি কেমন। আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা মেয়ে দেখো আমি বিয়ে করবো।
-এইতো লাইনে এসেছিস।
-হাসবেনা শর্ত আছে। যেকোনো মেয়ে হলে আমার হবেনা। মেয়ে অবশ্যই দ্বীনদার আর সংসারী হতে হবে।
-অবশ্যই আপনার কথামতো হবে বাবাজী। রাজি হয়েছেন তাতেই আমি খুশি।
তারপর থেকে উনি হন্তদন্ত হয়ে মেয়ে খোঁজা শুরু করছেন। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় এমন দ্বীনদার মেয়ে কোথায় পাবো?
পিয়াস সেদিন যখন আনাসদের বাসায় আসলো আনাসের সাথে দেখা করতে।
আনাসের মা ওকে বললো,,, বাবা তোমার বন্ধু বিয়েতে রাজি হয়েছে কিন্তু তার দ্বীনদার মেয়ে চাই।কিন্তু আমি কোথায় পাবো দ্বীনদার মেয়ে? যে দুনিয়া এখন মেয়েরা যেভাবে চলাফেরা করে আমার তো শঙ্কা হচ্ছে ছেলের মনের মত মেয়ে পাবো কিনা?
-হুম আন্টি ঠিক বলেছেন এখন ভালো মেয়ে খুঁজে পাওয়া সত্যি কঠিন।
-বাবা একটু দেখতো তোমার পরিচিত কোন মেয়ে আছে কিনা।
-আন্টি আমার পরিচিত,,,,, তখনি পিয়াসের লামিয়ার কথা মনে পড়লো। একটু চিৎকার দিয়ে বললো,,, আন্টি পেয়েছি!!!!! একেবারে আপনাদের মনের মত মেয়ে । আনাসের ও মনের মত হবে মেয়েটা। কিন্তু আপনারা ওতদূরে যাবেন কিনা ভাবছি?
-দুরত্ব কোন ব্যাপার না তুমি বলো মেয়েটা কে?
আনাস পিয়াসের চিৎকারে রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো কিরে চিৎকার করছিস কেন বাড়িতে চোর টোর ডুকেছে নাকি?
-পিয়াস হেসে বললো,,,জ্বী না চোর না আপনার জন্য বউ খুঁজে পেয়েছি।
-আনাস ভ্রু কুঁচকে বললো,,, বউ খুঁজে পেয়েছিস মানে?
-সরি বউ না আপনার বিয়ের জন্য মেয়ের খোঁজ পেয়েছি।
এর জন্য এইভাবে চিৎকার করবি? তুই না মানুষ হবিনা!!!! আর তুই এখানে কি করছিস রুমে আয় কথা আছে বলে আবার চলে গেলো।
আনাসের মা বললো,,,ওর কথা ছাড়োতো। মেয়েটা কে সেটা বলো?
-আমার খালাতো বোন।
-মেয়ে দেখতে কেমন?
-আন্টি আমি ওকে কখনো দেখিনি।
-কি বলো কখনো দেখোনি মানে?
-আসলে আন্টি ও কারো সাথে দেখা দেয়না। অনেক পর্দাশীল মেয়ে।তবে মা সব সময় বলে লামিয়ার মত মেয়ে হয়না। অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। যে ঘরে যাবে তারা অনেক ভাগ্যবান।
-আমার এই মেয়েকে চাই আনাসের জন্য। তুমি তোমার আন্টির সাথে কথা বলো। আর পারলে মেয়েটার একটা ছবি দিতে বলো।
-আচ্ছা আমি কথা বলে আপনাকে জানাবো। তবে ছবি দিবে কিনা সন্দেহ আছে।
-আচ্ছা তুমি কথা বলে দেখো। তাদের ও তো মতামত আছে।
-আচ্ছা আন্টি আজ আমি আসি। খবর নিয়ে জানাবো আপনাকে বলে পিয়াস চলে গেলো…….
চলবে……….

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (৫ম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
অফিস থেকে ফিরেই সোহান সাহেব ড্রয়িংরুমে বসেই স্ত্রীকে ডাকাডাকি শুরু করলেন। এই শুনছো? লাবিবের মা কোথায় তুমি? একটু এদিকে আসো।
-আচ্ছা কি হয়েছে কি তোমার? ফিরতে না ফিরতে চেঁচামেচি শুরু করছো।
-আমি কি শখ করে চেঁচাচ্ছি নাকি।
-তো আপনি কি জন্য চেঁচাচ্ছেন একটু শুনি?
-আপনার বোনের ছেলে ফোন করেছে আজ আমাকে তাই বলতে ডেকেছি। নয়তো আমার কোন ঠেকা পড়ছে তো আপনাকে ডাকতে।
-ওমা!!! পিয়াস ফোন করেছে? কখন? কিন্তু আমার ফোনে কল না দিয়ে তোমাকে কেন ফোন দিল ও?
– এই তো নিজের মানুষের কথা শুনে শুনেছে এবার উনার হাসি আসছে। আমার কাছে দরকার তাই আমার কাছে ফোন দিয়েছে।
-কি দরকার?
-লামিয়ার বিয়ের ব্যাপারে ওর এক বন্ধুর কথা বলতে ফোন দিয়েছে। ছেলেটাকে তুমি চিনবে পলির বিয়েতে এসেছিলো।
লামিয়া এতক্ষণ রুমে বসে বাবা মায়ের ঝগড়া শুনে হাসছিলো এ পর্যায়ে হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। পিয়াস ভাইয়ার বন্ধুগুলো খুব অসভ্য। পিয়াস ভাইয়া জেনেশুনে আমার জন্য ওই ছেলে লামিয়া চুপ হয়ে বাবা মায়ের কথা শুনার জন্য কান পাতলো ওইদিকে
-ওর মা বললো পিয়াসের বন্ধু তো তিনটা এসেছিলো কোনটার কথা বলছো তুমি।
-ওইযে মিডিয়াম উচ্চতার উজ্জ্বল শ্যামলা করে যে ছেলেটা। মুখে চাপ দাঁড়ি আছে যে সেই ছেলেটা। আমার সাথে পলির রিশেপসনে কথা বললো না!!!
-ওহ ওই ছেলেটস। হুম ছেলেটাকে দেখে তো ভালোই মনে হয়েছে। বিয়ে বাড়িতে এতো হৈ হুলৌড়ের মাঝে কোথাও দেখিনি তাকে।
-হুম ছেলেটার আচার আচরণ ও ভালো আছে। ঢাকাতেই পুরো পরিবারে থাকে।পিয়াস বললো ছেলেটা ইসলামিক মন মাইন্ডের। এখন আমরা রাজি হলে ও ওদেরকে আসতে বলবে। আর ওদের পরিবার ও নাকি অনেক ভালো।
-তাহলে আসতে বলো দেখি কি হয়। বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যায়না। আল্লাহর হুকুম থাকা লাগে।
-হুম। আর ওরা নাকি লামিয়ার একটা ছবি দেখতে চেয়েছিলো। ওতদূর থেকে আসবে তাই ওরা আগে দেখতে চেয়েছে। পছন্দ হলে এসেই সব ঠিক করবে।
-তুমি কি পাগল? তোমার যে মেয়ে? তুমি চিনোনা তোমার মেয়েকে। ও ছবি তুলবেনা।
-এটা কোন কথা নাকি বিয়ের জন্য দিতে বলেছে বিনা কারণে তো মেয়ে। তুমি ওকে বুঝিয়ে বলো রাজি হয় কিনা?
-আচ্ছা।
-পারলে আমাকে এক কাপ চা দাওতো।
দিচ্ছি বলেই জোবায়দা বেগম রান্নাঘরের দিকে গেলেন।
লামিয়া পড়ছিলো ওই মুহুর্তে ওর মা দরজায় বাহিরে দাঁড়িয়ে বললো আসবো মা?
-লামিয়া ওইদিকে তাকিয়ে বললো আম্মু আসো অনুমতি নেয়ার কি আছে।
-উনি ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বললো,,তুই তো বলেছিস কারো রুমে প্রবেশ করতে অনুমতি নিতে হয়।
-আম্মু আমি তেমার মেয়ে আমার রুমে আসতে কোন অনুমতি নেয়ার দরকার নাই।
-হুম আসলে আমি একটা কথা বলতে আসছি।
-লামিয়া জানে ওর মা এখন কি বলবে?
– তোর জন্য পিয়াস ওর এক বন্ধুর বিয়ের জন্য বলছিলো?
-আম্মু পিয়াস ভাইয়ার ওই বন্ধুগুলো তো….
-ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ওর মা বললো জানি আমি তুই কি বলতে চাইছিস। তুই না বললেও আমি জানি তুই সেদিন তোর খালামণির বাসা থেকে কেন চলে আসছিস। কিন্তু এই ছেলেটা সেই ছেলেগুলোর মধ্যে না। বিয়েতে ও এসেছিলো কিন্তু উৎসবের কোন জায়গায় অংশগ্রহণ করেনি। পিয়াস বলছিলো ও একটু আলাদা। তোর আব্বুর ও মত আছে। আর তোর দুলাভাই আর লাবিবকে দিয়ে আমরা ছেলের ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নিবো। এখন তোর মতামতটা জানা দরকার
-আম্মু আমি কি বলবো তোমরা দেখো। তোমাদের পছন্দ আমার পছন্দ।
-আলহামদুলিল্লাহ অনেক খুশি হলাম। মা ওরা বলছিলো একটা ছবির জন্য আসলে ওতদূর থেকে এসে যদি কিছু না হয় তাহলে উনাদের ও তো সমস্যা।
-আম্মু তুমি জানোনা আমি ছবি তুলতে পছন্দ করিনা তারপরো বলছো? আমি ছবি তুলবোনা।
-মারে বিয়ের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। দেখ একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে না করিসনা। ঘরে অবিবাহিত মেয়ে থাকলে মা বাবার কত চিন্তাএখন বুঝবিনা।
-আম্মু!!!
-এমন করিস না একটা ছবিই তো।
অগত্যা লামিয়াকে একটা ছবি তুলতেই হলো।
আনাসের মা তো ছবি দেখেই বলে দিয়েছে পিয়াস,,, এই মেয়েকেই আমার ছেলের বউ করে চাই। তুমি কথা বল বাবা। আমরা যেকোন দিন গিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসতে চাই। আর উনাদের ও তো আমাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে হবে।
আনাসের বাবাও ছবি দেখে জানালো এই মেয়ে উনার ছেলের জন্য ঠিকআছে উনার কোন আপত্তি নেই। এখন বাকি আছে যার বিয়ে তার মতামতের।
রাতে আনাস খাবার টেবিলে আসতেই ওর মা বললো,,, তোর সাথে কথা আছে আমার।
-হুম শুনছি বলো।
-তোর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখেছি। মেয়ে তোর বাবার আর আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
-তো
-তো কি। তোর মতামত জানাবি তো । আমরা কি ওদের সাথে কথা বলবো?
-চারিত্রিক ব্যাপারে সব খোঁজ খবর নিয়েছো?
-হ্যা নিয়েছি। মেয়ে পিয়াসের খালাতো বোন।
-কি? পিয়াসের খালাতো বোন?
-তুই চিনিস নাকি? অবশ্য পিয়াস বলছিলো ওর বোনের বিয়েতে মেয়েটা এসেছিলো তুই দেখে থাকতে পারিস।
মেয়ের ছবি পাঠিয়েছে তুই দেখে আমাকে তোর মতামত জানাস।
-না চিনিনা। আম্মু আমার দেখতে হবেনা।তোমাদের যখন পছন্দ তখন আমার আর কিছু বলার নেই। কারণ আমার তোমাদের পছন্দের উপর বিশ্বাস আছে। তোমরা যা ভালো মনে কর তাই করো।
ওদিকে লামিয়াদের পরিবার থেকে সব খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। সব দিক দিয়ে আনাসের পরিবার ও উনাদের পছন্দ হয়েছে। আজ আনাসের মা বাবা এসে লামিয়াকে আংটি পরিয়ে গেলো। বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করে উনারা আবার চলে গেলো। সামনের শুক্রবারের পরের শুক্রবারে বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। দুই পরিবারের সম্মতিতে কোন জাঁকজমকতা না করে ছোট খাট করে বিয়ের ওয়ালিমা সম্পন্ন হবে।
আনাসের মায়ের সামনে যখন লামিয়াকে আনা হলো তখন তিনি ওর চাঁদ মুখটি দেখে বলে উঠলো মাশাআল্লাহ্!!! এ যেন একটা জান্নাতী হুর । লামিয়ার মাকে তখনি বললেন,, বোন আমার তো আজই মেয়েটাকে ঘরে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে বলেই হেসে দিলো। লামিয়াদের পুরো পরিবারটা উনার এতো পছন্দ হয়েছে পরিবারের একেকটা মানুষের ব্যাবহার কি অমায়িক।
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে আনাসের বন্ধুরা লামিয়ার সাথে ফোনে কথা বলার জন্য বারবার বলছে। সজিব বললো দোস্ত নাম্বার আমরা সংগ্রহ করে দিবো তুই কথা বল।
-আনাস বললো চুপ করতো কোন দরকার নেই কথা বলার।
-শাওন বললো,,, দেখ দোস্ত বিয়ে তো আজ না হয় কাল করবি। বিয়ের আগে কথা বলে দুজনের মাঝে আন্ডার্সট্যান্ডিং করে নেয়াটা ভালো নয়। একজন আরেক জনকে চিনবি জানবি।
-পিয়াস বললো কোন সুযোগ নেই ওপাশ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাবেনা শাওন। আর আমার বন্ধু তো আজ অবধি তার হবু বউয়ের মুখ ও দেখেনি আর কথা বলবে? কাকে কি বলছিস?
-সজিব বললো,,, কি বলছিস এখনো দেখেনি মানে। এঙ্গেজে তুই যাসনি আনাস?
-না।
-ভাই আজকাল তো এসব চলে।তোদের মত আর কেউ আছে নাকি আমার জানা নাই?
-আনাস বললো আজাইরা কথা বলিস না । বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু এখনো হয়নি। আর বিয়ের আগ পর্যন্ত নারী পুরুষের সাথে কথা বলা পুরোপুরি হারাম। চেনা জানা বিয়ের পরেও হতে পারে।
-সজিব বললো,, আনাস পিয়াস কিন্তু এখন তোর বিয়ের উকিল বাবা
বলার সাথে সাথেই সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।
শাওন বললো সত্যিই তো বন্ধু থেকে উকিল বাবা ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং তো।
সবাই আরেকদফা হেসে উঠলো।
আনাসের বোনেরা ভাইয়ের বিয়ের কেনাকাটার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। যত যাই হোক ওদের আদরের ছোট ভাইয়ের বিয়ে বলা কথা!!! কোন কিছুর কমতি হওয়া যাবেনা। কিন্তু যার বিয়ে সে যেন বাড়িতে থেকে ও নাই। কথায় আছেনা – যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়াপড়শির ঘুম নাই এ বাড়ির অবস্থা ও তাই।
আনাসের ছোট বোন তো বলেই ফেললো কিরে ভাইয়া মানুষ বিয়ে নিয়ে কত এক্সাইটেড থাকে আর তুই কিরে? মানুষ এমন বোরিং টাইপ কেমনে হয়?
আনাস বোনের কথায় হেসে দেয়।
ওদিকে লামিয়াদের বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় চলছে জোরেশোরে। তবে লামিয়া বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে কেঁদে চলেছে। নিজের সব আপন মানুষকে ছেড়ে ওতদূরে গিয়ে কি করে থাকবে। একদল অচেনা অজানা মানুষের মাঝে কিভাবে জীবন কাটাবে। মেয়েদের জীবনটা সত্যি বড় অদ্ভুত। নিজের সব আপন মানুষকে ছেড়ে অচেনা কিছু মানুষকে আপন করে নেয়া কত কষ্টের তা শুধু সেই মেয়েটাই জানে। মা, বাবা নিজের বাড়ি যা এতদিন ওর ছিল কয়দিন পর এ বাড়িটা পর হয়ে যাবে। হয়ে যাবে এ বাড়ির দু’দিনের অতিথি। কি অদ্ভুত না?
লামিয়া জানে মেয়েদের জীবন এমন কিন্তু তারপরও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে অনেক কষ্ট। আল্লাহ কি রাখছে ভাগ্যে। সে মানুষটা কেমন হবে? কেমন হবে তার পরিবার? এইসব নানা ধরনের ভয় ও মনে কাজ করছে। তবে নামাজ পড়ে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছে। যেন আল্লাহর রহমত তার উপর থাকে।
ফারিহা বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই চলে এসেছে তার আদরের ছোট বোনের বিয়ে আর সে থাকবেনা তাই কি হয়!!!
অবশেষে সেই দিনটি ঘনিয়ে এলো যেদিন দুজন অচেনা মানুষ বাঁধা পড়বে এক মধুর সম্পর্কের বাঁধনে।

চলবে……..

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
আজ লামিয়া আহমেদ আর আনাসের বিন আকরামের বিয়ে। বরযাত্রী খুব ভোরে রওনা দিয়েছে ঢাকা থপকে পিয়াস ফোন করে জানিয়েছে। পিয়াস ওদের সাথেই আসছে।
এদিকে লামিয়াদের সারা বাড়ীতে অতিথি ভরে গেছে। কাল রাতে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লামিয়াকে মেহেদী পরানো হলো। মেহেদীর রঙে হাত রঙ্গীন হয়ে উঠেছে। সকালে লামিয়ার হাত দেখে পলি দুষ্টুমি করে বললো,,, লামিয়া!!! তোর বর তো তোকে অনেক আদর করবে।
-কি বলছিস? বুঝলি কি করে?
-যার হাতে মেহেদী যত বেশি রং ছড়াবে তার বর তাকে তত বেশি আদর করে।
-থাপ্পড় দিবো বদমাইশ। এইসব কে বললো তোকে? যতসব ফালতু কথা।
-আরে ফালতু কথা না সত্যি বলছি আমি শুনেছি।
-পলি তুই যা তো এখন। আমাকে একটু একা থাকতে দে।
-হুম যাচ্ছি যাচ্ছি জানিতো এখন তো আর আমাদের কথা ভালো লাগবেনা। এখন তো মনের মধ্যে অন্য কারো আনাগোনা আমরা তো এখন…
-লামিয়া একটুখানি লজ্জা আর রাগত স্বরে বললো পলির বাচ্ছা তুই যাবি নাকি আমি উঠবো।
পলি হাসতে হাাতে দৌড়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো
পার্লার থেকে লোক আসবে লামিয়াকে সাজাতে।কিন্তু ও কিছুতেই পার্লারের লোকের হাতে সাজবেনা।
-দেখ আপু আমি পার্লারের মেয়ের হাতে সাজবোনা।
-কেন সমস্যা কি তোর? বিয়ের দিনইতো মানুষ একটু সাজে।
-আপু আমি তো সাজবোনা বলিনি। শুধু বলেছি ওদের হাতে সাজবোনা।
-কেন ওদের হাতে সাজলে সমস্যা কি?
-আরে ওরা সাজাতে গিয়ে মুখের পশম আর ভ্রু তুলে ফেলবে।
-তো কি হয়েছে?
-আপু বোকার মত কথা বলছিস কেন? ভ্রু বা পশম উঠানো পুরোপুরি হারাম।
-আচ্ছা আমি ওদের বলে দিবো এমনিতে সাজাতে কেমন? কখনো তো ভুল করে ও সাজিস না আজ না হয় বরের জন্য একটু সাজবি।
কি আর করা সবার আবদার মেটাতে সাজতেই হলো। কিন্তু কোনভাবে কপালে টিপ পরানো গেলোনা।
– পলি বললো আচ্ছা তোর সবকিছুতে এতো বাড়াবাড়ি কেন?
-প্লিজ জোর করিসনা। আমি টিপ পরবোনা মানে পরবোনা। মুসলমানদের জন্য টিপ পরা পুরোপুরি হারাম।
-আচ্ছা একদিনেরই তো ব্যাপার কি আর হবে।
-এই একদিনেই তো যতসব নাজায়েয হারাম কাজ গুলো আমাদের হয়ে যায়।
-তোর সবকিছুতে হাদীস টানা লাগবে।
-তোরা কথাগুলোই বলিস এমন যে হাদীস টানা লাগেনা হাদীস এমনি তেই এসে যায়।
-ফারিহা বললো,,, পলি ওকে জোর করিসনা। ও যেটা বলছে সেটাই ঠিক।
পলি চুপ হয়ে গেলো। ফারিহা এখনো পুরোপুরি পর্দা না করলে আগের থেকে অনেক শালীনভাবে চলাফেরা করে। রাহাতের আর শশুর শাশুড়ির সাথে এখন ওর অনেক ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আর এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে লামিয়ার জন্য। বোনের উপর ওর কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। লামিয়া যদি সেদিন ওইভাবে না বুঝাতো ওর জীবনটা ধ্বংস হয়ে যেত। এখন সে বোনের মত চলার চেষ্টা করে। লামিয়ার সব কথা চলাফেরা ফারিহার এখন ভালো লাগে।
দুপুর ১২টার দিকেই বরপক্ষ এসে গেছে। বর আসার পরেই পুরো বাড়ি হে হুল্লোড়ে মুখোরিত হয়ে উঠলো। কনেপক্ষ বরপক্ষের মেহমানদের সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতর বাড়িতে নিয়ে আসলো। বিয়ে বাড়ীতে গেট ধরা বা হাত ধোয়ানো সব অন্যসব রীতিনীতি কোনটাই পালন করা হয়নি এটা আগেই বলা হয়েছে যাতে এটা নিয়ে কোন ঝামেলা না হয়। লামিয়ার কিছু কাজিন বরের হাত ধোয়ানোর জন্য যেতে চেয়েছিলো কিন্তু লাবিব যেতে দেয়নি। যার হাত সেই ধোওয়াবে তোমাদের যেতে হবেনা ভিতরে যাও বলে ধমকে ব্ভেতর বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
আজকাল শালীরা দুলাভাইয়ের হাত ধোওয়াবে দেবর ভাবীকে কোলে নিয়ে যাওয়ার মত কিছু নাজায়েয আর হারাম কাজের প্রচলন হয়ে আছে। আল্লাহ আমাদের এইসব থেকে রক্ষা করুক।
খাওয়া দাওয়ার পর বিয়ে পড়ানো হলো। দুই লক্ষ দেনমোহরের বিনিময়ে বিয়ে সম্পন্ন হলো। দেন মোহরের পুরো টাকাটা আনাস নগদ দিয়ে দিয়েছে আনাস ওর বাবাকে আগেই বলে দিয়েছে এটা নিয়ে যেন কোন ঝামেলা না হয়। ওর যা দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাই দিবে।
আজকাল মামুষ নিজের মানসন্মান রক্ষার জন্য লাখ লাখ টাকা দেনমোহর ধরে একটা ছেলের উপর চাপিয়ে দেয়। যাতে সবাইকে বলে বেড়াতে আমার ছেলে বা মেয়ের এতো টাকা দেনমোহর ধরেছি। এখন টাকাটা ছেলেটার দেয়ার সামর্থ্য থাক বা না থাক তাতে কোন সমস্যা নাই। আর বিয়ের রাতে স্বামিরা স্ত্রী কে বলে কয়ে মোহরানার টাকাটা মাপ করে নেয়। অথচ মোহরানা স্ত্রীর হক। যা আল্লাহ তাকে নির্ধারন করে দিয়েছে। তাই জোর করে ইনিয়ে বিনিয়ে মোহরানা মাপ করা যায়না। অবশ্য স্ত্রী যদি খুশিমনে কিছু বাদ দেয় সেটা অন্য কথা।
মোহরানা নামাজ রোযার মতই ফরয। মোহরানার টাকা পরিশোধ না করে কোন স্বামী মারা গেলে কেয়ামতের দিন ঋণের ভার বয়ে বেড়াতে হবে। তাই সামর্থ অনুযায়ী মোহরানা নির্ধারন করা উচিত। অবশ্য লামিয়াদের বাড়িতে কেউ এই নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করেনি। সবাই খুশি মনে মেনে নিয়েছে। লামওয়ার বাবা বলেছে মোহরানা কিছু নয়,, আমার মেয়ে সুখী হলেই হবে।
আনাসের কাছ থেকে বিয়ের কবুল শুনে নিয়ে লামিয়ার অনুমতি নেয়ার জন্য ওর বাবা মামা আর ভাই ভিতরে গেলো। কিন্তু লামিয়াকে যতবারই কবুল বলতে বলা হচ্ছে ও বলছেনা শুধু কাঁদছিলো। অনেকবার বলার পর ও যখন ও কবুল বলছেনা তখন নিরবতা সম্মতির লক্ষন মেনে নিয়ে সবাই চলে গেলো। তখনি লামিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। আসলে এই কয়দিন ঠিকমতো খায়নি সারাক্ষণ কান্নাকাটির ফলে শরীর দুর্বল হয়ে ছিলো। বরপক্ষ আসার আগে ফারিহা জোর করে মাত্র দু’লোকমা ভাত খাইয়েছে।
অবশেষে বিয়ে পড়ানো হলো।আর তার সাথে দুজন অচেনা অজানা মানব-মানবী সবচেয়ে কাছের আপনজনের প্রিয় মানুষের ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধা পড়েছে।
লামিয়ার জ্ঞান ফিরছেনা এদিকে বরপক্ষ যাওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। দূরের পথ এমনিতে যেতে যেতে দেরি হয়ে যাবে।
আনাস ওর বোনকে বলে দিয়েছে লামিয়াকে যেন বোরখা পড়িয়ে গাড়ীতে উঠানো হয়। আনাস সহ ঢাকার সব মেহমান ড্রয়িংরুমে বসে আছে। ভিতর রুম থেকে ওর ছোট বোন ফোন করে বলছে,,, ভাইয়া ভাবির তো জ্ঞান ফিরছেনা এ অবস্থায় কি করি? এদিকে বাবা তাড়া দিচ্ছে। গাড়ীতেই তো যাবে আর তোর গাড়ীতে তো অন্য কোন পুরুষ থাকবেনা। তাই বলছি কি উনার যে অবস্থা এখন এই অবস্থায় বোরখা না পড়লে হয় না?
আনাস বললো,,,, কি বলছিস কি? যা বলছি তাই করবি। প্রয়োজনে একটু দেরি করে বেরুবো।
লামিয়ার জ্ঞান ফিরার পরে মেয়ে জামাইকে মিষ্টি মুখ করানোর পরে আরো কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর এবার বিদায়ের পালা।
পুরো বাড়িটাতে একটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হলো। বাড়ীর সবচেয়ে আদরের মেয়েটি চলে যাচ্ছে সবাইকে ছেড়ে তার নিজের ঠিকানায়। সবাই কান্নাকাটি করতেছে।
লামিয়ার বাবা যখন লামিয়ার হাত আনাসের হাত তুলে দিচ্ছে তখন উনি কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো,,,, বাবা আমার মেয়েটা বড় আদরের এতদিন অনেক যত্নে বগলে রেখেছি। আর আজ আমার অধীন থেকে তোমার অধীনে চলে গেছে। মেয়েটা তোমার কাছে আমার দেয়া আমানত। ওর ভালো খারাপ সব কিছুর দায়িত্ব আজ থেকে তোমার। অজানা অচেনা পরিবেশ কিছু ভুল করে থাকলে শিখিয়ে দিও। অন্যায় করলে শাসন করবে। তোমাকে বিশ্বাস করে গোমার হাতে তুলে দিয়েছি খেয়াল রেখো আমার মেয়েটার বাবা মেৈর কান্না দেখে আনাসের নিজের চোখেও পানি এসে গেলো।
আনাস ওর শশুরকে বললো,,,,, আপনি দোয়া করবেন আমাদের জন্য। আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার মেয়ের কোন অযত্ন হবেনা।
আনাস শক্ত করে লামিয়ার হাত ধরে আছে এখনো মনে মনে বললো,,, হাত যখন ধরেছি তখন এ হাত কখনো ছেড়ে দেবোনা এইভাবে শক্ত করে সারাজীবন ধরে রাখবো রাখবো। আল্লাহ আমাকে তৌফিক দিন। ভালোবাসার বন্ধনে যেন বেঁধে রাখতে পারি এই মানুষটাকে।
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে আসরের নামাজের পর নবদম্পতিকে নিয়ে গাড়ী ছাড়লো ঢাকার উদ্দেশ্যে।
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here