প্রিয়তমা পর্ব-৭ ৮

0
3070

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (৭ম ৮ম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
বউ নিয়ে রাত দশটায় বাসায় পৌঁছলো। রাহেলা চৌধুরী বাড়ির ছোট বউকে সন্মানের সাথে ঘরে তুলে নিলেন। লামিয়া উনাকে সালাম করতেই বললো,,, আজ আমার ঘরটা আলোকিত হয়ে উঠলো তোকে পেয়ে।
বাসার অতিথিরা সবাই নতুন বউ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু লামিয়া এতোটা দুর্বল হয়ে গেছে যে ও আর বসে থাকতে পারছেনা। সেই যে এনে বসিয়ে রেখেছে তো রেখেছে। এই মুহূর্তে একটু একা থাকা দরকার। আর মাগরিব আর ইশার নামাজ গুলোও পড়া হয়নি। কিন্তু নতুন বউ কাকে কি বলবে? আর বললে কিনা কি বলে বসে? বলবে আসতে না আসতেই কি শুরু করেছে? কিন্তু এ মুহুর্তে ওর একটু রেস্ট দরকার।
আনাস কি যেন একটা দরকারে মায়ের রুমে আসছিলো লামিয়াকে এখনো চেয়ারে বসা দেখেই রুমের বাহিরে গিয়ে ওর ছোট বোনকে ডেকে বললো,,, আরিবা তুই কিরে? একটু বিবেক বুদ্ধি ও নাই নাকি তোর?
-আরিবা অনেকট বিরক্তি নিয়ে উফ ভাইয়া!!! কি করেছি কি আমি? এমনিতে প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে কি বলবি বল?
-তোর ক্লান্ত লাগছে তাইনা!!! ওকে সেই যে এনে বসিয়ে রেখেছিস সেদিকে কোন খেয়াল আছে তোদের?
-বাব্বাহ!!! কেয়া বাত হে ভাইয়া? আসতে না আসতেই ভালোবাসা…
-চুপ করতো সারাক্ষণ ফাযলামি করবিনা। আমার মনে হয় ওর একটু রেস্ট নেওয়ার দরকার আছে। সারাদিন তো এভাবেই ছিল আর এতোটা জার্নি করার পর সুস্থ আছে বলে তোর মনে হয়?
-আরিবা বললো,,,সরি ভাইয়া আসলেই খেয়াল ছিলনা। এসেই শুয়ে পড়েছি এতো খারাপ লাগছিলো। আমি এখনি দেখছি বলে আরিবা রুমের দিকে গেলো।
রুমে গিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,,, কি ব্যাপার নতুন বউ দেখা শেষ হয়নি এখনো। যা হয়েছে হয়েছে আবার কাল দেখবেন বলে লামিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই আরিবার বড় বোন ওকে বললো,,,, এই কি করছিস সবাই বউ দেখতেছে আর তুই ওকে নিয়ে যাচ্ছিস কেন?
আরিবা বোনের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো,,, আপু তোর কি কোন কমনসেন্স নাই? বেচারি এতোটা পথ জার্নি করে এসেছে এদিকে নিজের আপনজনদের ছেড়ে আসার কষ্ট তো আছে। আমাদের বলতে পারছেনা কিন্তু আমাদের তো বুঝা উচিত ছিল বলে লামিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম ছেড়ে।
আরিবা নিজের রুমে এনে বললো,,, ভাবি তুৃমি এবার রেস্ট নাও এখানে কেউ আসবেনা আমি দরজা লক করে দিবো।
লামিয়া আরিবার দিকে একটু কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকাতেই আরিবা দুষ্টামি ভরা কন্ঠে হেসে বলল,,,, আমি না আপনার উনি বলেছে। দেখেছো ভাবি বউয়ের জন্য কত আদর আমার ভাইয়ার।
লামিয়া লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকালো।
-থাক এখন আর লজ্জা পেতে হবেনা। সব লজ্জা রাতের জন্য রেখে দাও।
লামিয়া এবার আরো বেশি লজ্জায় পড়ে গেলো।কি মেয়েরে!!!
তারপর আস্তে করে বললো আপু,,, আমার নামাজ পড়া লাগবে। দুই ওয়াক্তের নামাজ কাযা হয়েছে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিলে ভালো হতো।
আরিবা হাত দিয়ে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো। বললো,,, তার চেন্জ করে নিলেই মনে হয় ভালো হতো দাঁড়াও আমি অন্য কাপড় নিয়ে আসছি।
লামিয়া নামাজ শেষ করে শুয়ে আছে। আরিবা বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়েছে। এখন ঘুম ও আসবেনা। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে মায়ের সাথে একটু কথা বললে ভালো লাগতো। কিন্তু ফোন তো আনা হয়নি। এতো ঝামেলার মাঝে মনেও ছিলনা।
কিছুক্ষণ পর আরিবা ফোন নিয়ে আসলো। ফোনটা লামিয়ার দিকে বাড়িয়ে বললো ভাবি তোমার আপু ফোন করেছে কথা বলো।
লামিয়া ফোনটা নিয়ে বাসার সবার সাথে অনেকক্ষন সময় নিয়ে কথা বললো। মনটা একটু ফ্রেশ লাগলো। কান থেকে ফোন নামিয়ে ফোনের দিকে তাকাতে স্কিনে একজন পুরুষের ছবি ভেসে উঠলো। তার মানে এটা উনার ফোন?
আরিবা বললো এ মানুষটা আজ থেকে তোমার হয়ে গেছে। এতো বেশি দেখো না নজর লেগে যাবে। বরকে দেখা শেষ হলে খেতে আসুন ভাবিসাহেবা
-আরিবা যে এতক্ষণ এখানেই ছিল লামিয়ার খেয়াল ছিলনা। লামিয়া আরিবার কথায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলো। এই মেয়েটা ও না! উফ!!! এভাবে কেউ লজ্জা দেয় নাকি।
-এতো লজ্জা পেতে হবেনা। আর এমনিতে ও আজ সব লজ্জার অবসান হয়ে যাবে।
-লামিয়া আরিবাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,, আপু প্লিজ আর না।
-আরিবা হাসতে হাসতে বললো,,, আচ্ছা আর বলবোনা এখন খেতে আসো।
-আপু আমি খাবোনা। একদম খেতে ইচ্ছে করছেনা
-এটা বললে হবেনা ও বাড়িতে ও কিছু খাওনি এখনো না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। এখন তোমার সুস্থ থাকাটা বেশ জরুরী।
-লামিয়া মনে মনে কি রে মেয়েটা? কথায় কথায় এরকম লজ্জা না দিলে কি হয়না।
-আরিবা বললো,,, ভাবি কিছু মনে করোনা। আসলে আমি একটু এরকই।
-না আপু আমি কিছু মনে করিনি। বরং অনেক ভালো লাগছে এরকম এজজন সঙ্গী পেয়ে।
-যাক বাবা বাঁচলাম!!! এখন চলোতো।
-আপু আমি সত্যি খাবোনা।
-আচ্ছা বুঝতে পারছি তুমি ওইদিকে যেতে চাও না। আমি বরং খাবারটা এখানে নিয়ে আসি বলে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে এসে বললো নাও খেয়ে নাও। তোমার শাশুড়ির কড়া অর্ডার পুরোটা খেতে হবে নাহলে আমার অবস্থা খারাপ হবে।
লামিয়া কোনরকমে তিন চার লোকমা খেলো মুখের ভিতর খাবার যাচ্ছেনা।
-ভাবি এতো আস্তে খেলে হবে? রাত কিন্তু অনেক হয়েছে।
-আপু আর পারছিনা।
-আচ্ছা থাক আর খেতে হবেনা এ মুহুর্তে আর জোরাজোরি করছিনা। তুমি বসো আমি আসছি।
আরিবা লামিয়াকে সুন্দর করে আবারো বউ সাজিয়ে ফুলসয্যার খাটে বসিয়ে দিয়ে আসলো। লামিয়ার মনের ভিতর অজানা ভয় আর লজ্জা এসে ভর করেছে।
আনাস কে নিয়ে ওর বন্ধুরা অনেক রকম দুষ্টুমি করতেছে।
-অমিত বললো,,,, ভাই আজ থেকে তোরও স্বাধীনতা শেষ। বিয়ে তো করেছেন এখন বুঝবে বিয়ের জ্বালা৷ আমি জানি বউ কি জিনিস বিয়ে করেছি তো।
-সজিব বললো আরে অমিত বাদ দেতো এসব। তোর জ্বালা তুই বুঝিস আনাসের বউ কিন্তু তোর বউয়ের মত মেয়ে না একটু অনরকম। আনাস ভাই আমার শুন,,,, বিড়াল কিন্তু প্রথম রাতেই মারতে হবে বুঝলি।
– আনাস বললো,,, বিড়াল মারতে হবে মানে?
সবাই একসাথে হো হো করে হেসে উঠলো
-শাওন বললো,,, বন্ধু আমার বিড়াল মারা কি জিনিস বুঝেনা।
আসলে এই কথা সেই কথা কিছুনা ওরা ইচ্ছে করেই ওকে ভিতরে যেতে দিচ্ছেনা।
-আনাস এবার অসহায়ের দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,,, প্লিজ তোরা একটু থামবি। আমার ঘুম আসছে। আমাকে একটু যেতে দে।
-আপনি আজ ঘুমাবেন না জেগে থাকবেন সেটাতো আমরা ভালো করে জানি।
-সময় কিন্তু আমারো আসবে মনে রাখিস তখন আমিও আটকাতে পারবো। আনাস পিয়াসকে ইশারায় হাত জোড় করে বললো একটু সুযোগ করে দেনা ভাই?
-পিয়াস বললো ভাই তোরা কিরে আজ ওর একটা বিশেষ রাত আর তোরা বোকার মত এসব কি করছিস? যেতে দে ওকে
অনেক বলার পরে সবাই ওকে ছাড়লো।
আনাস আস্তে করে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। পুরো ঘরটা লাল গোলাপ আর সাদা অর্কিড দিয়ে সাজানো হয়েছে। এ দুটো আনাসের পছন্দের ফুল। আনাস আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগুচ্ছে। ওর নিজের হাত পা কাঁপছে প্রচন্ড ভাবে।এরকম হচ্ছে কেন মনে হচ্ছে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি সামনে আর এগুতে পারছিনা।
লামিয়া দরজা খুলার শব্দ পেয়ে বিছানার মাঝে আরো গুটিশুটি মেরে বসলো। মানুষটা যতই সামনে আগাচ্ছে ততই ওর বুকের ধুকধুক শব্দটা বেড়ে চলছে। ঘোমটা আরো টেনে নিয়ে বিছানার চাদর খামছে ধরলো একহাতে।
আনাস ধীর পায়ে এসে লামিয়ার সামনে বসেই সালাম দিলো।
লামিয়া মনে মনে সালামের জবাব দিলো। এ মুহুর্তে ওর মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ আসছেনা।
-আনাস আস্তে করে বললো,,,কেউ সালাম দিলে তার জবাব দিতে হয়।
-লামিয়া এবার আস্তে করে সালাম জবাব দিয়ে নিজেও সালাম দিলো।
-আনাস জবাব দিয়ে বললো,,, কেমন আছেন?
-লামিয়া কাঁপা কন্ঠে জবাব দিল জী… আলহামদুলিল্লাহ।
-বিয়ের আগে কি আপনি আমাকে বা আমার কোন ছবি দেখেছেন।
-লামিয়া ঘোমটার ভিতর থেকে মাথা নাড়লো
কিছুক্ষন দুজনে চুপ করে বসে ছিল।
স্ত্রীর পবিত্র চেহারাটা দেখার জন্য মন উশখুশ করছে। তাই মনে কিছুটা জড়তা নিয়ে আনাস বললো,,, আমি আপনার মোহরানা পুরোটা শোধ করে দিয়েছি এখন কি আপনাকে একটু দেখতে পারি মানে আপনার ঘোমটাটা সরাতে পারি?
লামিয়া এই কথাটা শুনে লজ্জায় আরো মুড়িয়ে গেলো। মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছেনা।
আনাস কিছুক্ষণ চুপ করে কোন জবাব না পেয়ে বললো,,, নিরবতা সম্মতির লক্ষণ মনে করে আমি ঘোমটা সরাচ্ছি।
আনাস আস্তে করে কাঁপা হাতে ঘোমটাটা সরিয়েই বলে উঠলো,,,, মাশাআল্লাহ!!!! মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদটা আমার ঘরে আজ নেমে এসেছে। আল্লাহ তোমার লাখ লাখ শুকরিয়া।
লামিয়া দুই হাতে বিছানার চাদর খামছে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
-আপনার হাতটা ধরতে পারি।

-আনাস জবাব না পেয়ে মারিয়ার ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোর মাঝে নিলো।
মারিয়া অনুভব করছে এই মুহূর্তে ওর হাত কি কাঁপছে উনার হাত তার চেয়েও দ্বিগুণ জোরে উনার হাত কাঁপছে। কি ব্যাপার উনার হাত কাঁপছে কেন?
নিচের দিকে দৃষ্টি যেতেই দেখলো আনাসের অন্য হাতও কাঁপছে।
লামিয়া কিছু বলছেনা এই মুহুর্তে ওর ইচ্ছে করছে এই রুমটা ছেড়ে পালিয়ে যেতে।
আনাস বললো,,, আমার দিকে তাকাতে হবেনা মাথাটা একটু উঠান আমি দোয়াটা পড়ে নিচ্ছি।
আনাস দোয়া পড়ে নিলো। বললো,,, আচ্ছা আপনি কি আমাকে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছেন?
-লামিয়া মাথা নাড়লো।
-আপনি কি কথা বলতে পারেন না। ও সরি বলেছেন তো একবার।
আসুন আগে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে দু রাকাত নামাজ পড়ে নিই। অজু আছেতো?
-লামিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,,, জী আছে।
নামাজ শেষ করে আনাস লামিয়াকে বললো,,,, তুমি করে বলতে পারি তো না?
-জী বলুন।
-লামিয়ার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো,,, প্রথমে যেটা বলছি আমার বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কারন তারা তোমাকে পছন্দ করে নিয়ে এসেছে। কখনো কোন কথা বা কাজের দ্বারা তাদের কষ্ট দেয়া যাবেনা। কারণ বাবা মা আমার পৃথিবী
-জী আমি চেষ্টা করবো তাদের সব কথা মেনে চলার জন্য।।
-হুম এবার আসল কথায় আসি,,,, শুন আজ আমাদের জীবনের বিশেষ এক রাত। আজ থেকে আমাদের জীবনের এক নব অধ্যায়ের সূচনা হলো। আমি জানি তুমি যথেষ্ট পর্দাশীল ইসলাম অনুরাগী তোমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বুঝাতে হবেনা মনে হয়
আমাকে তোমার স্বামী নয় বন্ধু হিসাবে সবসময় আমার সাথে সব শেয়ার করবে। তোমার আমার মাঝে কোন কোন প্রতিবন্ধকতা চাইনা আমি। আমি চেষ্টা করবো তোমার মনের মত হওয়ার। তোমার সব আবদার পূরণ করার চেষ্টা করব। কখনো যদি কোন চাওয়া পূরন করতে না পারি মনে কষ্ট নেয়া যাবেনা। আমি যাতে তোমার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারি সবসময় সেই চেষ্টায় করবে। যেমন আজকের মত আমার সামনে সবসময় সেজেগুজে থাকবে। চেষ্টা করবে আমার প্রিয়তমা হয়ে ওঠার। আমি কিন্তু কখনো আমার প্রতি তোমার ভালোবাসার কমতি কখনো সহ্য করবোনা বলে দিলাম। যখনি ডাকবো তখনি আমার ডাকে সাড়া দিতে হবে মনে থাকবে?
লামিয়া মাথা নাড়লো। মনে মনে বললো আল্লাহ এ কি মানুষ আমাকে দিয়েছো? প্রথম রাতেই যা শুরু করেছে। এমন ভাবে লেকচার দিচ্ছে মনে হচ্ছে শিক্ষক ছাত্রীকে জ্ঞান দিচ্ছে। জানিনা কপালে কি আছে আমার? এতো কথা কেমনে বলে?
মনে মনে কিছু বলতে হবেনা কথা আরো বাকি আছে। আমার রাগ খুব বেশি না। কিন্তু কোন কারনে রেগে গেলে মাথা ঠিক থাকেনা মাঝে মাঝে তোমাকে মারতে ও পারি।
লামিয়া এই কথা শুনে মাথা উঠিয়ে আনাসের দিকে তাকালো। আনাস মুচকি মুচকি হাসছিলো।
মারলে শুন তখন রাগ করে বাবার বাড়ি যাওয়া যাবেনা। আমার বাড়িতে থাকতে হবে সবসময় আমি রাগ ভাঙাবো। আমাদের মাঝে রাগ,, অভিমান,,, ভালোবাসা,, ঝগড়া সব থাকতে হবে। সম্পর্কে ঝগড়া না হলে ভালোবাসা বাড়েনা। তাই ভালোবাসা বাড়াতে আমরা মাঝে মাঝে ঝগড়া করবো কেমন?
লামিয়া মনে মনে বললো,,, আল্লাহ রক্ষা করো আমাকে।
আনাসকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,, আমি চেষ্টা করবো আপনার কথা মেনে চলার ।
আনাস বললো,,, এইতো আদর্শ স্ত্রী বলে লামিয়ার মুখটা দুহাতে ধরে কপালে চুমু খেলো।
আর শুন আজ রাতে কোন ঘুম হবেনা শুধু ভালোবাসা বাসি হবে। আজ রাত আমাদের ভালোবাসার রাত। একে অপরকে আপন করে নেবার রাত। ভালোবাসার রঙে একে অপরকে আজ রাঙাবো।
লামিয়া নিজেকে আরো গুটিয়ে নিলো। কি লজ্জা!!! কি লজ্জা!!! মানুষ এভাবে কথা বলে নাকি? নির্লজ্জ একটা!!! লোকটার মুখের কোন ব্যালেন্স নেই।তারউপর আবার এভাবে স্পর্শ করলো।
আনাসের ঠোঁটের স্পর্শে লামিয়ার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।বুকের ভিতর ধড়াম ধড়াম করে আওয়াজ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন বুকের ভিতর খুব জোরে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। এই প্রথম কোন পুরুষ ওকে স্পর্শ করলো। এই স্পর্শ ভালোবাসার স্পর্শ যার মধ্যে কোন নোংরামির ছোঁয়া নাই।
আনাস আবারো লামিয়ার দুচোখের পাতার উপর চুমু খেলো লামিয়া আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। এই মুহুর্তে কেমন কেমন জানি করছে মনটা। কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে এটাই কি ভালোবাসা?
আনাস বললো এখন আমি তো আমার অধিকারটা আদায় করে নিতে পারি তাইনা। আমার ডাকে সাড়া প্রস্তুত হোন প্রিয়তমা স্ত্রী।
লামিয়া আনাসের ডাকে সাড়া দিলো। বিবাহিত দুজন মানব মানবী একাকী একান্তে একসাথ হলে সাড়া না দিয়ে থাকা যায়না। চুম্বকের মত একজন আরেকজনকে টানে। এ দুনিয়াতে যদি বেহেশতের একটুখানি সুখ থেকে থাকে সেটা হলো বিবাহিত দুজন মানব মানবীর মিলনের সুখ।
আনাস এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট দ্বারা লামিয়ার ঠোঁটজোড়া দখল করলো। একে একে লামিয়ার ঘাড়ে পিঠে আনাস নিজের স্পর্শ ছোঁয়াতে লাগলো নিজের অস্তিত্বের সাথে ওকে মিশিয়ে নিলো। শুরু হয়ে হলো দুজন মানব মানবীর জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের। আমরা আর ওদিকে দৃষ্টি না দিলেই ভালো ।
চলবে……….

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (৮ম পর্ব )
লেখা – শারমিন মিশু
পরদিন সকালে আনাস নামাজ পড়তে মসজিদে চলে যাওয়ার পর লামিয়া নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লো। প্রচন্ড মাথা ধরে আছে৷ আর কাল রাতে উনি একটু ও ঘুমাতে দেয়নি। আনাস নামাজ পড়ে বাসায় আসতেই দেখলো সবাই এখনো ঘুমে পুরো বাড়ি নিরব হয়ে আছে। ও নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। লামিয়া মাত্র বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে আনাসের পায়ের শব্দ শুনতেই তড়িগড়ি করে উঠে বসলো। লামিয়া শাড়ী পড়তে জানেনা কখনো সেভাবে পরা হয়নি। এখন কোনভাবে পেঁচিয়ে রেখেছে তাই খাট থেকে নামতে ও পারছেনা। খাট থেকে নামলেই খুলে পড়ে যাবে এমন অবস্থা। তাই পায়ের উপরে কাঁথা দিয়ে বসে পড়লো।
আনাস ওকে উঠতে দেখে বললো,,, নামাজ পড়োনি এখনো?
-লামিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল,,, জী পড়েছি। আসলে কাল রাতে উনি যা করেছে না এখন লজ্জায় উনার দিকে তাকাতেও পারছেনা । পুরো ঠোঁট ফুলে আছে। গলার দিকে দাগ হয়ে গেছে। এখন প্রচন্ড ব্যথাও করছে জায়গাগুলোতে।
-কি হলো নিচের তাকিয়ে কথা বলছো কেন?
-না এমনি।
-আমার দিকে তাকাতে লজ্জা করছে নাকি? কাল রাতে তো আপনার সব লজ্জা চলে যাওয়ার কথা।
-লামিয়া হাত দুটো কচলাতে কচলাতে মনে মনে বলে,,,, ইশ!!! মানুষটা কেমন রে? দেখছে লজ্জায় তাকাতে পারছিনা তার উপর মুখের সামনে এগুলো বলছে একটু লজ্জাও লাগছেনা। মুখে কোন বেড়া নাই। পুরুষ মানুষ এতো নির্লজ্জ কেমনে হয়।
-বাব্বাহ লজ্জায় দেখছি লাল,, নীল,,,, বেগুনি হয়ে রংধনুর সাত রং ধারন করেছে মুখটা বলে লামিয়ার পাশে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁথার নিচে নিজের পা টা ঢুকিয়ে লামিয়ার পায়ের সাথে পা দিয়েখোঁচা দিচ্ছে।
-লামিয়া সরার চেষ্টা করে না পেরে বলে উঠলো উফ!!! কি শুরু করেছেন!!!
-আনাস মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে বললো,,, কি শুরু করছি
-পায়ে শুড়শুড়ি লাগছে তো!!!!! আর এভাবে চেপে ধরে থাকলে তো দম বন্ধ হয়ে যাবে।
-ম্যাডাম!!! আমি অতোটা ও জোরে ধরিনি। আপনি নড়াচড়া না করলেই তো হয়।
-প্লিজ ছাড়ুন না।
-আমার দিকে তাকাওনা একটু দেখি মায়াবী মুখটা?
-সারারাত দেখে মন ভরেনি?
-রাতে তোমাকে দেখার সুযোগ পেয়েছি নাকি রাতে তো অন্যকিছু…..
-আপনি কি বলেন তো? নির্লজ্জ একটা!!!
-নির্লজ্জতা দেখানোর মাধ্যম পেয়েছি। এতোদিন কেউ ছিলনা আজ যখন তাকে পেয়ে গেছি তখন একটুখানি নির্লজ্জ হলে ক্ষতি কি?
দেখিনা একটু লজ্জাবতীর লজ্জা মাখা মুখটা বলে লামিয়ার মুখটা হাত দিয়ে তুলে আনাস নিজের দিকে ঘুরালো। মাশাআল্লাহ!!!! সত্যিই ধন্য আমি তোমাকে পেয়ে।
লামিয়ার ঠোঁটের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো অনেকটা ফুলে আছে। এজন্য তাকাচ্ছো না তাইনা।
-হুম।
-ইশ!!! তখন আসলে খেয়াল করিনি। কেটে গেছে মনে হচ্ছে?
-হুম
-ঔষধ আছে লাগিয়ে নিও। আর আরেকটু আদর করলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে বলেই হেসে দিল আনাস।
-ফাযলামি করবেন না তো । আমি এভাবে বাহিরে কি করে যাবো?
-বাহিরে কে যেতে দিচ্ছে? সারাদিন আমার সামনে বসে থাকবে।
-কি বলছেন এসব?
-জী ঠিক বলছি। আচ্ছা এগুলো বাদ দাও তো। ুকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
-বলুন
-তুমি কোরআন পড়তে জানোতো?
-জী জানি।
-সব সময় পড়ো।
-জী প্রতিদিন পড়ি।
-আজ পড়েছো?
-না আসলে কোরআন শরীফ কোথায় আছে আমি জানিনা?
-আমার টেবিলের ডান দিকের উপরের ড্রয়ারটা তে আছে। আচ্ছা আজ আমি পড়ছি তুমি শুনবে কেমন?
-আপনি পড়েন নিয়মিত?
-জী পড়ি।
একদিন আমি তোমাকে তেলাওয়াত করে শুনাবো আরেকদিন তুমি আমাকে শুনাবে কেমন?
-ইনশাআল্লাহ!!!
আনাস লামিয়ার কোলে মাথা রেখে পা দুটো মেলে দিয়ে মনোমুগ্ধকর কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করছে আর লামিয়া মুগ্ধ হয়ে তা শুনছে। কত সুন্দর সহি শুদ্ধ করে সুরেলা কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করছে আনাস। আনন্দে লামিয়ার চোখে পানি চলে আসলো। সারাজীবন এমন একজন সঙ্গী চেয়ে এসেছে মহান রবের কাছে। আজ আল্লাহ তার চাওয়াটা পূর্ন করেছে। লামিয়া আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে মনে মনে বললো,,, লাখো লাখো শুকরিয়া মহান রবের দরবারে যিনি এমন একজন জীবন সঙ্গী আমাকে দিয়েছেন। হে আল্লাহ,,সবসময় যেন এমনি থাকে মানুষটা। আনন্দে লামিয়ার চোখের পানি গড়িয়ে আনাসের মুখের উপর পড়লো। আচমকা মুখে পানি লাগায় আনাস চমকে উপরের দিকে তাকাতেই দেখলো লামিয়ার চোখে পানি।
-কোরআন পড়া শেষ করে লামিয়াকে বললো তখন কাঁদছিলে কেন?
-না এমনিতেই।
-কিছুতো একটা হয়েছে।
-সত্যি বলবো?
-হুম অবশ্যই।
-আসলে আপনার কুরআন তেলাওয়াত শুনে আনন্দে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। আল্লাহর কাছে সব সময় এমন একজন মানুষ চেয়েছি যে আমাকে নিয়মিত নামাজের তাগিদ দিবে,, সঠিকভাবে ইসলামের নিয়ম কানুন মেনে চলতে উৎসাহিত করবে আজ আমি সেই মানুষকে মনে হয় পেয়ে গেছি। তাই রবের প্রতি কৃতজ্ঞতায় পানি চলে এসেছে চোখে। কখনো বদলে যাবেন না এমনি থাকবেন।
-জী ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের তার পথে কবুল করুক।
-আমিন।
-এখন একটু ঘুমিয়ে নাও না হলে অসুস্থ হয়ে যাবে। পরে আমারি বিপদ।
-না এখন ঘুমাবোনা।
-কেন?
-কেউ যদি কিছু বলে?
-কেউ কিছু বলবেনা সবাই বুঝবে আমাদের সবে মাত্র কাল বিয়ে হয়েছে। সবাই তো আপনার মতো না।
-আমার মতো না মানে?
-কিছুনা। একটু ঘুমাও ভালো লাগবে।
কিছুক্ষণ পর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। লামিয়া উঠতে নিলেই আনাস থামিয়ে দিলো। খুলতে হবেনা ঘুমাও।
-ছাড়েন না!!! আপনার না হয় লাজ লজ্জা নেই।
-কি আমার লজ্জা নেই?
-প্লিজ?
-আচ্ছা গিয়ে দেখুন আপনার ননদিনী হবে মনে হয়।
-আপনি গিয়ে দরজাটা খুলুন না।
-কেন?
-আমি নামতে পারছিনা শাড়িটা কোনমতে পেঁছিয়ে রেখেছি নামলেই খুলে যাবে।
-তাই আপনি এতক্ষণ খাটে বসে ছিলেন। আমাকে বললেই তো হতো পরিয়ে দিতাম।
-কি!!! আপনি শাড়ি পরাতে জানেন?
– এতো আশ্চর্য্য হওয়ার কি আছে। না জানলেও চেষ্টা করতাম। আপনি একজন মেয়ে মানুষ হয়ে না পারলে আমাকে তো শিখে নিতে হবে। কারন আমি আমার বউটাকে মাঝে মাঝে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতে চাইবো তখন তো নিজেকেই পরিয়ে দিতে হবে।
-প্লিজ দরজাটা খুলুন না।
আনাস গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। আরিবা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
-আনাস বললো কি চাই?
-ভাইয়া ঘুমাচ্ছিস নাকি এখনো?
-দেখতেই পাচ্ছিস জিজ্ঞেস করছিস কেন?
-ভাবিও কি ঘুমে?
-হুম কেন?
মা বললো যে ভাবিকে ডেকে নিতে পাশের বাসার আন্টিরা আসছে ভাবিকে দেখতে তাই।
কথাটা শুনে লামিয়া ভেতর থেকে বললো,,, আপু একটু এদিকে আসবেন ?
আরিবা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে রুমের ভিতরে আসলো। লামিয়া আরিবাকে দেখেই সালাম দিলো।
আনাস লামিয়াকে ইশারায় চোখ রাঙিয়ে বিছানার অপর পাশে গিয়ে আবারো শুয়ে পড়লো।
-আরিবা সালামের জবাব দিয়ে বললো কোন সমস্যা নাকি?
-লামিয়া মাথা নেড়ে বললো,,, হুম বিরাট সমস্যা।
-কি?
-লামিয়া অসহায়ভাবে বললো,,, আপু আসলে শাড়ি পরতে পারিনা তো,,, একটু পরিয়ে দিবেন। কোনরকমে পেঁচিয়ে রেখেছি। এজন্য এতক্ষন রুম থেকে বের হতে পারছিলাম না।
-ও আচ্ছা এই সমস্যা। আচ্ছা আসো আমি পরিয়ে দিচ্ছি।
লামিয়া শাড়ি হাত দিয়ে ধরে খাট থেকে নামলো। আরিবা শাড়ি হাতে ধটে খুলতে নিলেই লামিয়া ইশারায় আনাসকে দেখালো। আপু উনাকে একটু বেরিয়ে যেতে বলনা?
আরিবা হাসি দিয়ে বললো,,, ভাইয়া তুই একটু বের হ তো।
-আনাস ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,,, কেন?
-তোর বউ তুই থাকলে শাড়ি চেন্জ করতে পারবেনা তাই। লজ্জা পাচ্ছে তো তাই।
-আনাস বিরক্তি ভরা কন্ঠে,,, আমি কি তাকিয়ে আছি নাকি ওইদিকে। বিরক্ত করিসনা ঘুমাতে দে বলে আবারো শুয়ে পড়লো অন্য দিকে ঘুরে। আনাস মাথা তুলে আবারো বললো,, আরিবা,,, শাড়ি পরাটা একটু ভালো করে শিখিয়ে দিসতো তোর ভাবিকে।
লামিয়া লজ্জায় নাথা নামিয়ে নিলো। মনে মনে,, এভাবে না বললে কি হতোনা উনার। এখন হয়তো পারিনা একসময় তো অবশ্যই পারবো
আরিবা শব্দ করে হেসে উঠলো।
এই মেয়েটা ও না কথায় কথায় হেসে উঠে। সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকে। অবশ্য হাসলে আরিবাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে।
লামিয়াকে শাড়ি পরিয়ে আরিবা ওকে বাহিরে নিয়ে আসলো। লামিয়াকে দেখে ওর শাশুড়ি এগিয়ে এলো। লামিয়া শান্ত কন্ঠে সালাম দিলো।
রাহেলা সালামের জবাব দিয়ে লামিয়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,, কেমন আছিস মা?
-জী আলহামদুলিল্লাহ।
-কাল তোর সাথে ঠিক করে কথাও বলতে পারিনি। লামিয়ার হাত ধরে ড্রয়িংরুমে দিকে নিয়ে গেলো। ওখানে কিছু মহিলা বসে ছিল। লামিয়ার শাশুড়ি বললো মা এনারা তোমার আন্টি হবে।
লামিয়া সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিল। এক মহিলা সালামের জবাব দিয়ে বললো বউমা আমার কাছে এসে বসো।
-কেমন আছো মা?
-আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আপনারা ভালো আছেন?
হুম ভালো।
লামিয়া বসতেই ওর মুখটা দেখে ওই আন্টিটা লামিয়ার শাশুড়িকে বললো,,, মাশাআল্লাহ!!!! ভাবি বউ তো পেয়েছেন লাখে একটা। কি মিষ্টি মেয়ে। দেখেই মায়ায় পড়ে গেছি।
একজন বললো দেখেছেন কত শালীনতা বউটার মাঝে। আজকাল বউদের মাথায় কাপড় দেয়া তো দূরের কথা ভদ্রতার ছিটেফোটা ও নেই তাদের মাঝে।
রাহেলা চৌধুরী অনেকটা আনন্দের সাথে বলে উঠলেন ভাবি দোয়া করবেন মেয়েটার জন্য।
অনেকক্ষণ আলাপের পর সবাই চলে যেতেই লামিয়ার শাশুড়ি ওকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। লামিয়ার শশুর রুমেই ছিল। লামিয়া শশুরকে গিয়ে সালাম দিলো।
আকরাম চৌধুরী সালামের জবাব দিয়ে বললো,, কিরে মা কেমন আছিস?
-আলহামদুলিল্লাহ আব্বু
-একদম মন খারাপ করা যাবেনা এটা নিজের বাড়ি মনে করে চলবি কেমন?
-জী আব্বু।
-ওর শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো মেয়েটাকে সকাল থেকে কিছু খেতে দিয়েছো নাকি শুধুই কথা বলে যাচ্ছো?
-না এখনো কিছু দেইনি।
-কি বলছো? কত বেলা হলো তোমার খবর আছে? ওকে নাস্তা দাও। কাজ আছে বলে আকরাম চৌধুরী বেরিয়ে গেলো
রাহেলা চৌধুরী লামিয়াকে বললো,, মা আজ থেকে আমার বউমা নয় মেয়ে হিসাবে থাকবি। এ বাড়ি আজ থেকে তোর নিজের বাড়ি। নিজের বাড়িতে যেভাবে থাকতি ওভাবেই থাকবি। যখন যা করতে ইচ্ছে হবে তাই জরবি সব ব্যাপারে আমার অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই কেমন?
আর আমার ছেলেটার একটু খেয়াল রাখিস মা। নিজের ছেলে বলে বলছিনা আজকাল এরকম ছেলে পাওয়া যায়না। তুই জানিস বিয়ের আগে ও তোর ছবি একবার ও দেখেনি। শুধু আমার পছন্দের উপর বিশ্বাস রেখে ও বিয়েটা করেছে। আমার বিশ্বাসটার কখনো অমূল্যায়ন করিস না মা।
লামিয়া অবাক হলো!!! না দেখেই উনি আমাকে বিয়ে করলো? অথচ কাল রাতে এমন আচরন করেছে মনে হয়েছে আমি তসর অনেক দিনের চেনা কেউ। শুধু মায়ের পছন্দের উপর বিশ্বাস রেখে বিয়ে!!! সত্যি আজ এমন মানুষ পাওয়া যায়না। আরো একবার উপরওয়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করলো।
রাহেলা চৌধুরী বললেন মা আজ রাতে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান আছে তোদের বিয়ে উপলক্ষে। ছোট ছেলের বিয়ে অথচ কাউকে সেভাবে দাওয়াত করা হয়নি তাই।
রাহেলা আরিবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? মেয়েটা কাল থেকে কিছু খায়নি। এখনো না খাইয়ে রাখবি নাকি?
বাব্বাহ!!! মা বউয়ের জন্য এতো আদর আমরা খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস ও করোনি। এইনা হলে মা।
তুই থামতো তোদের আর কি খাওয়াবো অনেক করেছি। যা মেয়েটাকে নাস্তা দে।
আরিবা লামিয়াকে নাস্তা দিলে লামিয়া বললো,,, আপু উনি উঠলে পরে খাবো এখন থাক।
-আপনার উনি এখন ডাকলে ও দুপুরের আগে উঠবেনা। উনার অপেক্ষায় থাকলে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হবে।
-লামিয়া একটু নরম কন্ঠে বললো তখন না হয় খাবো।
-ভাবি খেয়ে নাও। এখন তোমার একটু ঘুমানো দরকার। মায়ের সাথে কথা বলার সময় লক্ষ্য করেছি ঘুমে তোমার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছিলো। কাল রাতে যে একটু ও ঘুমাওনি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আর তোমার বরতো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
-লামিয়া অসহায়ের দৃষ্টিতে আরিবার দিকে তাকালো।
-হুম সত্যি বলছি ভাবি সব পুরুষ গুলাই এমন। যত জ্বালা মেয়ে মানুষের। আমার বিয়ের পরদিন ও আমাকে এভাবে সার্কাস সাজিয়ে বসে রেখেছিলো ঘুমে আমার অবস্থা খারাপ আর আপনার দুলাভাই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলো। তখন মনে হয়েছে ওকে গলা টিপে ধরি।
আর বললে লজ্জা পাবে তাই এতক্ষণ কিছু বলিনি।তোমার ঠোঁট অনেক ফুলে আছে ৷ কানের পাশে লাল হয়ে আছে।
-লামিয়া এবার সত্যি অনেক লজ্জা পেলো এই ভয়টা এতক্ষণ পাচ্ছিলো।
-আমি দেখেছি সমস্যা নেই আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এ অবস্থায় অন্য কারো সামনে পড়লে আরো বেশি লজ্জা পেতে হবে। তাই ভালোর জন্য বলছি খেয়ে গিয়ে একটু ঘুমাও।
লামিয়া কোন রকমে একটুখানি খেয়ে ধীর পায়ে রুমের দিকে আগালো। দরজা আটকে খাটের একপাশে বসে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললো। এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিঃশ্বাসটা আটকে রেখেছে। এভাবে আরিবার কাছে লজ্জা পেতে হবে ভাবনায় ছিলনা। আর উনি কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। শান্তি আছে উনাদেরই।
লামিয়া খাটে পিঠটা লাগাতেই আনাস ওকে হেঁচকা টানে দুই হাত দিয়ে নিজের বুকে জরিয়ে ধরল

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here