প্রিয়তমা পর্ব-৯

0
2367

#উপন্যাস
#প্রিয়তমা (৯ম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
লামিয়া ঘুম থেকে উঠে পাশ ফিরে দেখলো আনাস খাটে নাই। তার মানে উনি আরো আগে উঠেছে। লামিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুপুর সাড়ে বারটা বাজে। নিজে নিজে বলছে,, আমি এতক্ষন ঘুমালাম? ইয়া আল্লাহ সবাই কি ভাববে? বাড়ির নতুন বউ এতক্ষণ ঘুমিয়েছে? আমি না!!!!
উনি ও তো আমাকে জাগিয়ে দিতে পারতো? এসব ভাবনার মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো।লামিয়া ওদিকে তাকিয়ে দেখলো আনাস বেরুচ্ছে।
-আনাস লামিয়ার দিকে লক্ষ্য করে বললো,,, উঠে গেছো?
-লামিয়া বললো,,, আপনি আমাকে আরো আগে ডেকে দেননি কেন?
-আরে বাবা আমিও তো মাত্র উঠলাম তোমাকে কখন উঠাবো।
-কি??? এখন সবাই কি বলবে বলেন তো?
-আনাস মুখ মুছতে মুছতে বললো,,, কি আর বলবে? এরকম সবারই হয়। আমরা নব দম্পতী সবাই বুঝে নিবে।
আর তাছাড়া আজ রাতের ঘুমটা ও আমরা ঘুমিয়ে নিয়েছি একসাথে তাইনা ?
-লামিয়া একটু জোরে বললো,,, কি????
-আনাস মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,,, কই কি? কিছু হলে তো সবাই জানবে তাইনা?
-উফ!!! আপনি না!!!
-কি আমি?
– কিছুনা।
-আরে বলো বলো???
-আপনি একটা অসভ্য লোক।
-আনাস লামিয়ার দিকে আগাতে আগাতে বললো,, অসভ্যতামির কিছু তো এখনো করিনি। একটু অসভ্যতামি দেখাবো?
-লামিয়া খাটের অন্যপাশে সরে গিয়ে বললো,,, এই একদম কাছে আসবেন না।
-কেন কাছে আসলে কি হবে?
-প্লিজ না এখন কিছু করবেন না।
আনাস কাছে আসার আগেই লামিয়া দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ডুকে গেলো। লামিয়াকে এভাবে পালাতে দেখে আনাস শব্দ করে হেসে উঠলো।
বিকালের দিকে আরিবা একটা শাড়ি এনে লামিয়াকে বললো,,,, ভাবি আম্মু এটা তোমাকে রাতে পরতে বলেছে?
লামিয়ার শাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো রংয়ের উপর গোল্ডেন কালারের সুতার কারুকাজ করা একটা বেনারসী । নীল লামিয়ার পছন্দের কালার না হলেও বেনারসীটা অনেক সুন্দর। সাথে গোল্ডেন কালারের ফুল হাতার কলার দেওয়া একটা ব্লাউজ। তার সাথে নীল আর গোল্ডেন কালারের পাথরের গোল্ড প্লেটের একসেট গয়না।
আরিবা বললো,,,ভাবি শাড়িটা আমি চয়েজ করে কিনেছি। তোমার ছবি দেখে ধারনা করেছি এটাতে তোমাকে বেশ মানাবে।
কিন্তু আপু আমি তো শাড়ী….
সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দিবো। আর আজ আমি তোমাকে সাজিয়ে দিবো।
সন্ধ্যার দিকে অতিথিতে পুরো বাড়ি ভরে গিয়েছে। লামিয়াকে আরিবা শাড়ী পরিয়ে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়ে দিয়েছি।
আরিবা সাজানো চেষ করে বললো,,,, মাশাআল্লাহ্। কি সুন্দর লাগছে। ভাবি আমার ধারনার থেকে ও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে। ইশ!!!নজর না লেগে যায়!!
আজ তো ভাইয়া তোমার থেকে চোখ ফিরাতে পারবেনা। একেবারে ফিদা হয়ে যাবে। আমি ছেলে হলে কিন্তু তোমাকে জোর করে হলেও বিয়ে করে নিতাম বুঝলে বলে লামিয়ার দিকে একটা উড়ো কিস ছুড়ে মারলো।
লামিয়া বললো,,,আপু!!! কি করছো?? আর এভাবে বলছো কেন? লজ্জা লাগছে তো!!!
আচ্ছা ভাবি তুমি এতো লজ্জা কই পাও বলোতো?? কাল রাতে যখন ভাইয়ার সাথে ছিলে তখন তোমার এতো লজ্জা কই ছিলো।
-লামিয়া দুহাতে মুখটা ঢেকে বললো,,, আপু প্লিজ!!!!
আরিবা বললো আমরা বললে তো যত লজ্জা এসে ভর করে। থাক আর কিছু বলছিনা তুমি এখানে বসো আমি একটু আসছি। লামিয়া আয়নায় নিজেকে দেখছে এ যেন অন্য এক লামিয়া।
এদিকে আনাস বেচারা সেই দুপুরের পর থেকে বউটাকে খুঁজে পাচ্ছেনা। মহিলাদের মাঝে বসিয়ে রেখেছে লামিয়াকে। মেয়েদের ভিড়ের ভিতর দিয়ে ওদিকে যেতে ও পারছেনা। দুপুরের পর থেকে লামিয়া একবার ও রুমে আসেনি। আসেনি মানে আসতে দেয়া হয়নি। আরিবাকে কয়েকবার বলেছে লামিয়াকে ডেকে দিতে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আরিবা টা ও হয়েছে দুষ্টের হাড্ডি।
আনাস মনে মনে বলে,,, বিয়ে করে লাভ কি হলো। নতুন বিয়ে করেছি বউটা এখন একটু পাশে পাশে থাকবে তা না। আমার মা,, বোন কেউ বুঝেনা বউটাকে আটকে রাখছে এভাবে। আর এদিকে আমার কি যন্ত্রনা হচ্ছে সেটা তো আমি বুঝি। আনাস রেডি হচ্ছে আর এসব ভাবছে।
ফোনের রিংটোনের শব্দে আনাসের ভাবনা কাটলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো লামিয়ার বাবার নাম্বার থেকে ফোন।
-আনাস ফোন কানে নিয়ে বললো,,,, আসসালামু আলাইকুম আব্বু।
-ওয়ালাইকুম আস সালাম। কেমন আছো বাবা?
-জী আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন?
-এইতো আছি আলহামদুলিল্লাহ। মেয়েটা চলে যাওয়ার পর থেকে পুরো বাড়ি খালি খালি লাগছে।
-আব্বু আপনি চিন্তা করবেন না। লামিয়া আমাদের এখানে ভালো থাকবে।
-জানি বাবা। কিন্তু কি বলোতো অনেক আদরের মেয়ে তো তাই একটু চিন্তা হয়। বাবা ভুল ত্রুটি হলে বুঝিয়ে নিও।
-জী আব্বু আপনি চিন্তা করবেন না।
-আমার মেয়েটা কোথায় এখন?
-আব্বু ও বোধহয় আম্মুর রুমে । কথা বলবেন?
-হুম। কিন্তু সমস্যা হলে থাক আমি পরে ফোন দিবো।
-না আব্বু আমি লামিয়াকে ডেকে আনছি। আপনাকে একটু পরেই ফোন দিবো।
-আচ্ছা।
আনাস ফোন কেটে আরিবার ফোনে কল দিলো। আরিবা ফোন ধরলো। ওপাশ থেকে আনাস বললো,৷ তোর ভাবিকে একটু রুমে পাঠাতো?
-ভাইয়া তুই কিরে? এখানে অনেক মানুষ আছে এখন পাঠানো যাবেনা।
-একটা থাপ্পড় দিবো ফাযিল। আমি শখ করে ফোন করিনি। লামিয়ার আব্বু ওর সাথে কথা বলবে তাই আসতে বলেছি।
-ওহ আমি তো মনে করেছি…
-তুইতো কত কি মনে করিস। রাখ ফোন রাখ। তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দে ওকে আনাস ফোন কেটে দিলো।
লামিয়া রুম থেকে কোনভাবে বের হতে পারছেনা। পুরো বাসায় মানুষ গিজগিজ করছে। আধা ঘন্টা পর অনেক চেষ্টার পর ভালো করে মাথার কাপড় টেনে কেউ না দেখতেই লামিয়া একরকম দৌঁড়ে রুমে আসলো। রুমের দরজা খোলাই ছিলো। লামিয়া রুমে ঢুকে দরজাটা আটকে দিলো। একটা বড়সড় নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো,,,আল্লাহ বাঁচলাম!!!
বাব্বাহ!!! মানুষ যে নতুন বউ একটা পেলে কতরকম প্রশ্ন করতে পারে? এতক্ষণ নিজেকে সার্কাস সার্কাস লাগছিলো।
লামিয়া পুরো রুমে ভালো করে পরখ করলো কোথাও কেউ নেই। আপু তো বললো উনি নাকি বলেছে আব্বু ফোন করেছে। তাহলে কোথায় ফোন আর উনি বা কোথায় গেলো? লামিয়া সবেমাত্র মাথার কাপড় ফেলে একটু বসেছে তখনি পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মাথা রাখলো।
লামিয়া ভয় পেয়ে চমকে গিয়ে মাথায় কাপড় তুলতে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে আনাসকে দেখতে পেয়ে বললো,,, আপনি!!!! ভয় পেয়ে গেছিতো!!! এভাবে শব্দ না করে জড়িয়ে ধরার কোন মানে হয়??
আনাসের লামিয়ার কথায় কোন খেয়াল নেই। ও লামিয়াকে দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলো। এ যে আকাশ থেকে পরীদের রাণী নেমে আসলো। একেবারে অপ্সরা। না না ও অপ্সরাকে হার মানাবে। নীল পরী। মনে হয় আকাশের চাঁদটা মাটিতে নেমে এসেছে।
লামিয়া আনাসকে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,,,শুনছেন?? আপনি ঠিক আছেন তো?
-আনাস ধ্যান ভঙ্গের মত করে বললো হুম,,, হ্যা,,,হ্যা,, বলো,, কিছু বলেছো?
-না কিছু বলিনি। আপনি কি এতক্ষন ভিনগ্রহে ছিলেন?
-জী না লামিয়া গ্রহে ছিলাম?
-কি????
-না কিছুনা।
-এতক্ষন কোথায় ছিলেন আপনি? রুমে তো দেখিনি।
-বারান্দায় ছিলাম। তুমি এখন এভাবে সেজে আমার সামনে এসেছো কেন?
-লামিয়া ভয় পাওয়া কন্ঠে বললো,, কেন এভাবে সেজেছি বলে রাগ করেছেন। আসলে আপু জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে। আপনার ভালো না লাগলে সব মুছে ফেলছি।
-আনাস লামিয়ার হাত ধরে বললো,,,বেশি বুঝো কেন? আমি কিছু বলেছি? আসলে তোমাকে এভাবে মোহনীয় রূপে দেখে আমার চোখে নেশা ধরে যাচ্ছে উল্টাপাল্টা কিছু করতে ইচ্ছে করছে। মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। কেমন কেমন যেন করছে মনটা। ইচ্ছে করছে,,,,
লামিয়া আনাসের মুখে হাত দিয়ে বললো এই একদম না। প্লিজ না সরে যান। উল্টোপাল্টা কিছু করবেন না।
আনাস লামিয়ার হাত সরিয়ে দুহাত দিয়ে লামিয়ার মুখটা তুলে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ ছুঁয়ে দিলো। লামিয়া আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।তারপর লামিয়ার ঠোঁটি আস্তে করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো ম্যাডাম আমি অতোটা ও পাগল না। এখন কিছু করবোনা যা হবার রাতে হবে। ভালোবাসায় মাখামাখি হবো। কাছাকাছি আসা হবে একে অপরের অস্তিত্বে মিশে যাবো। এই রাত হবে তোমার আমার।
-লামিয়া বললো,,, আচ্ছা এভাবে লজ্জা দিয়ে কথা বলতে আপনার একটুও মুখে বাঁধেনা।
-না বাঁধেনা। বউয়ের সাথেই তো বলছি বাহিরের কোন নারীর সাথে তো না বলে ফোন নিয়ে শশুরের ফোনে ডায়াল করে লামিয়ার কানে দিয়ে বললো,,, নাও আব্বুর সাথে কথা বলো। ফোনটা লামিয়াকে দিয়ে আনাস আবারো ওকে জড়িয়ে ধরলো।
-লামিয়ার আব্বু ফোন ধরতেই লামিয়া সালাম দিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,,, আব্বু কেমন আছো?
-ভালো আছিরে মা। তবে তুই ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে। তুই কেমন আছিস মা?
-আলহামদুলিল্লাহ আব্বু। তবে তোমাদের ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আম্মু কেমন আছে?
-কেমন থাকবে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। নে কথা বল।
-লামিয়ার আম্মু ফোন ধরতেই মা মেয়ে দুজন দুপ্রান্ত থেকে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
-আম্মু তোমাদের ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে আমার, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে
-ওর মা কান্না থামিয়ে বললো,,, তুই কাঁদলে আমরা ভালো থাকবো কি করে। এমন জায়গায় মেয়ে বিয়ে দিয়েছি চাইলেও একটু দেখতে পারবোনা।
-লামিয়া আবারো হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।
-কাঁদিস না মা। এখন ওটাই তোর বাড়ি। আমাদের কাছে তো দুদিনের অতিথি হয়ে ছিলি। এখন ওরাই তোর আপনজন। তোর শশুর শাশুড়ির কথা মেনে চলিস মা। জামাইয়ের কথামতো চলার চেষ্টা করবি সবসময় ।তাহলে সংসারে সুখ আসবে মা।
-হুম। তোমরা দোয়া করো।
-আচ্ছা জামাইকে দে তো কথা বলবো।
লামিয়া ফোনটা আনাসের দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো আম্মু কথা বলবে।
আনাস ফোন কানে নিয়ে সালাম দিয়ে শাশুড়ির সাথে কথা বলতে লাহলো। কথা শেষ করে ফোন কেটে লামিয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো এখনো ফুঁপিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে।
-আনাস বললো,,, কাঁদছো কেন?
-লামিয়া জবাব না দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসলো।
– কাঁন্না করার কি আছে?এমনভাবে কাঁদছো মনে হচ্ছে আমরা তোমাকে মেরেছি,,, কষ্ট দিচ্ছি,,, বা খাবার দিইনি। দেখো এভাবে কান্নাকাটি করলে কিন্তু আর কখনো কথা বলতে দিবোনা একদম বলে দিলাম?
-লামিয়া টেনে টেনে বললো,,, আপনি,, কি,,করে,,, বুঝবেন আপনজন ছেড়ে আসার কষ্ট কেমন। আপনাকে কিছুই ছাড়তে হয়নি তাই এভাবে বলতে পারছেন।
-আনাস লামিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,, সরি,,,সরি আমি ওইভাবে বলতে চাইনি। দেখো এভাবে কাঁন্নাকাটি করলে কি হবে বলোতো?এটাই এখন তোমার বাড়ি। তোমার সংসার। আর তুমি এভাবে কান্নাকাটি করলে আব্বু আম্মু তো আরো বেশি কষ্ট পাবে। উনাদের কষ্ট দেওয়াটা কি ঠিক হবে বলো। কয়দিন পর আমি তোমাকে নিয়ে যাবো কেমন? প্লিজ এভাবে কেঁদোনা আমার ও কষ্ট হচ্ছে।
লামিয়া এবার আনাসকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো,,, বিশ্বাস করুন আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে আব্বু আম্মুর জন্য।
আনাস লামিয়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে বললো,,,, আমি বুঝতে পারছি তো।
লামিয়ার মুখে হাসি ফোটাতে বললো,,, আয়নায় গিয়ে দেখোতো কেমন পেত্নীর মত লাগছে তোমাকে? কাঁদলে একেবারে পেত্নী পেত্নী লাগে তোমাকে।
-লামিয়া কান্না থামিয়ে বললো,,,, কি!!আমি পেত্নী?
-হুম পেত্নি তো আমার পেত্নী।
-লামিয়া আনাসের বুকে নাক ঘষতে লাগলো
-আনাস বললো দেখোতো কেঁদে কেঁদে আমার শার্টটা ভিজিয়ে দিয়েছো। আর কখনো আমার সামনে কাঁদবেনা বলে দিলাম। কাঁদলে তোমাকে একটুও ভালো লাগেনা।
-লামিয়া বললো আচ্ছা আর কাঁদবোনা।
-হুম মনে থাকে যেন। বোকা মেয়ে!!! এভাবে বাচ্ছাদের মত কেউ কাঁদে!!! দেখোতো এতো সুন্দর করে সেজেছো সব নষ্ট করে দিয়েছো যাও মুখ ধুয়ে আসো আবার।
লামিয়া মুখ ধুয়ে রুমে আসলো। আনাস বললো দেখেছো নাক মুখ ফুলে কি অবস্থা। আচ্ছা শুনো আমি বাহিরে যাচ্ছি তুমি এখানেই থাকো । আরিবা না আসলে রুম ছেড়ে বের হবেনা। আর কোন পুরুষ মানুষের সামনে তোমাকে কেউ যেতে বললে যাবেনা। বলবে যে আমি নিষেধ করেছি কেমন?
-আচ্ছা।
আনাস বেরিয়ে যেতেই লামিয়া দরজা আটকে দিলো। কিছুক্ষণ পর আরিবা এসে ওকে নিয়ে গেলো। সবাই জানে ও পর্দা করে সেইজন্য কোন কারো সাথে দেখা করানো বা অন্য কোন ব্যাপারে ওকে কেউ জোর করেনি।
পুরো অনুষ্ঠান টা ভালো ভাবেই সম্পন্ন হলো। লামিয়া না খেয়ে শুয়ে পড়েছে। আনাস সবার সাথে কথাবাত্রা সেটে রাত এগারোটায় রুমে আসলো। ব্যস্ততায় খেতেও পারেনি। খাটের দিকে চোখ যেতে দেখলো লামিয়া গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।। ঘুমন্ত লামিয়ার মুখটা কেমন মায়াবী লাগছে। ঘুমালে নাকি মেয়েদের অন্যরকম সুন্দর লাগে যেমন এখন লামিয়াকে লাগছে। সত্যি এ সৌন্দর্য্যের কোন তুলনা হয়না। আনাস না চাইতে ও গিয়ে ওর কপালে হালকা করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। আসলে মেয়েরা এমন আকর্ষণীয় একটা জিনিস পুরুষরা চাইলেও তাদের থকে দূরে সরে থাকতে পারেনা৷ আর সেখানে লামিয়া তো আনাসের বিবাহিত স্ত্রী। আর স্বামি স্ত্রীকে যতবার ভালোবাসা দৃষ্টিতে দেখবে বা স্পর্শ করবে ততবারই নেকির খাতায় লেখা হবে। যেখানে অবিবাহিত নারী পুরুষের একটা চুমুতে যিনা করার মত কঠিন পাপের শাস্তি পাবে সেখানে বিবাহিত নারী পুরুষের একটা চুমুতে দশ নেকি অর্জন হবে। ইসলাম আমাদের কত সুন্দর একটা জীবন বিধান দিয়েছে তারপরও আমরা না জানার ভান করে যেনার মত অপরাধগুলোর সৃষ্টি করি। বিয়ের আগে ধৈর্য্য ধরে নিজের আবেগটাকে কন্ট্রোল থাকতে পারলে আল্লাহ মানুষকে উত্তম প্রতিদান দান করে। যেমন আজ লামিয়ার মত জীবনসঙ্গিনী পেয়েছে আনাস। এমন একজন সতীসাধ্বী নারীকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে আনাস মনে মনে রবের কৃতজ্ঞতা আদায় করলো তারপর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ভীষন ক্লান্ত লাগছে ঘুমানোর দরকার। এদিকে ক্ষিধায় পেটটাও ছোঁ ছোঁ করছে। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ানোর শব্দ হলো।
আনাস বললো,,, কে???
-ওপাশ থেকে আরিবা বললো,, ভাইয়া আমি!!! দরজাটা খোলতো?
আনাস দরজা খুলে দেখলো আরিবা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-ভাইয়া একটু ধরতো।
-কিরে এতো খাবার কার জন্য?
-তোর আর ভাবির জন্য।
-ও না খেয়ে ঘুমিয়েছে?
-হুম তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে মনে হয়। ডেকে তুলে খাইয়ে দিস।
-আচ্ছা দিবো। আরিবা চলে যেতেই আনাস দরজা আটকে দিলো। মনে মনে একটু খুশি হয়েছে আমার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বেডে বসে আনাস গ্লাস থেকে একটু পানি নিয়ে লামিয়ার চোখে মুখে ছিটা দিলো। লামিয়া আচমকা চোখে পানি পড়ায় ধড়মড় করে উঠে বসলো।
আনাসের দিকে বিরক্তি চোখে তাকিয়ে বললো,,,, কি হয়েছে?
আনাস হেসে বললো,,,না খেয়ে ঘুমিয়েছো কেন?
উঠো ভাত খাবে।
লামিয়া ঘুম চোখে খাবেনা বলে আবারো শুয়ে পড়লো।
আনাস আর জোর করেনি। ঘুমাচ্ছে যখন ঘুমাক। আনাসের নিজের ও ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এদিকে পেটে প্রচন্ড ক্ষিধে। কিছু না খেলে ঠিক করে ঘুমাতেও পারবেনা। কোনরকমে একটু খেয়ে রুমের লাইট অফ করে নিজেও শুয়ে পড়লো।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here