বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর) পর্ব :১২

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :১২

(জানি পার্টটা ছোট হয়েছে দুদিন খুব ব্যস্ততার মধ্যে আছি , একদম লেখার সময় হচ্ছে না।ইনশাআল্লাহ আগামী কাল থেকে বড় করে তাড়াতাড়ি পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ )

লিয়ার আকদের বেশ কয়েকদিন হলো । আজ শুক্রবার ছুটির দিন।বেলা করে সেহেরের ঘুম ভাঙে।এই কয়েকদিন পড়াশোনা ক্লাস নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলো।লেট নাইট স্টাডি করায় শরীর বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল,গতরাতের গভীর ঘুম সব ক্লান্তি মিটিয়ে শরীর মন একদম সতেজ করে দিয়েছে।ফ্রেশ হয়ে ফুরফুরে মনে সেহের নিচে নামে। ব্রেকফাস্ট টেবিলের সামনে যেতেই দেখে সেখানে বাড়ীর কেউ নেই। সবাই কোথায়? ছুটির দিন সবার তো বাড়ী থাকার কথা! ঘুম থেকে উঠতে খুব দেরী করে ফেলেছে কি? সেহের হাতের ঘড়ির দিকে চোখ বুলায়।ঘড়ির কাটা নয়ের ঘর পাড়ি দিয়ে দশের দিকে টিক টিক করে দৌড়চ্ছে! খুব একটা দেরী তো নয়।সেহের ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসতে বসতে কাজের খালাকে প্রশ্ন করল,”বাড়ীর অন্য সবাই কোথায় খালা? ”
“আম্মা! বাগানে সবাই , সাংবাদিকরা আইছে! ”
সেহের ভ্রু কুঁচকে নিলো।বিরবির করে বলল,”বড়লোকের বিরাট কারবার ”
নিউজ পেপার হাতে নিয়ে সেহের অলস ভঙ্গিতে চা পান করছে।পাতা উল্টাতেই চোখ আটকায়।সেই রাতে অচেতন অবস্থায় আরহামের বুকে হেলে পড়া ছবি ।উপরে বড়বড় অক্ষরে হেডলাইন “আরহাম খাঁনের প্রেমকথন ,পাঁচ তারকা হোটেলে রাত্রি যাপন “। নিচে বিস্তারিতে আরহাম সেহেরের সম্পর্কের কথা বিকৃত ভাবে তুলে ধরেছে। যা পড়ে সেহের থমকে যায়। এমন সময়ই ফোনটা বেজে উঠে। সেহের ভয়ে কেঁপে উঠে ফোনটা রিসিভ করতেই ।অপর পাশ থেকে পিয়ালের উত্তেজিত আওয়াজ ভেসে আসে,”এখনি মেসেঞ্জার চেক করো ,একটা ভিডিও পাঠিয়েছি ”
সেহের কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে ফেসবুকে লগইন করে।মেসেঞ্জারে পাঠানো লিংকে ঢুকতেই আরেক দফা ধাক্কা খায়। ফেসবুকে আরহাম সাথে তার বিশ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।আরহাম তাকে কোলে করে হোটেল রুমে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ভাইরাল করেছে। ভিডিওটা কোন এক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে। কমেন্টবক্স দেখে সেহের পুরোপুরিভাবে ভেঙে পরে।আপত্তিকর ভাষায় বাজে বাজে কমেন্ট!
সেহেরের আর বুঝতে বাকি রইল না বাগানে কিসের প্রেস কনফারেন্স চলছে।মোবাইল ফেলে দ্রুত পায়ে বাগানের দিকে ছুটে যায়।

” জনগনের সামনে আমাদের ফ্যামিলি রেপুটেশন নষ্ট করার জন্য গতরাতের ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে,এটা আমাদের বিরুদ্ধে কারো সুচারু চক্রান্ত। বিষয়টা যেভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছে তা মোটেও এমন নয়।সেহের কোন আশ্রিতা নয়! আমাদের বাড়ীর হবু বউ,আরহামের বাগদত্তা । আরহাম সেহেরের সম্পর্কটা অনেক দিনের।খুব তাড়াতাড়ি তারা বিয়ে করছে। ”
সারির মধ্যমণি দিশা আওয়াজ করে বলল। বাম
পাশে আরহাম। ডানপাশে আশরাফ খাঁন , মালিহা খানম বসে। সবার মুখ মেঘগম্ভীর ।আশরাফ খাঁন রাগে কাঁপছে।মাটি কামড় দিয়ে কোন রকম চুপ করে আছে।নিজেকে শান্ত রাখার যথাযথ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।শেষ বয়সে কিনা বাহিরের মেয়ের জন্য বাড়ীর মানসম্মান নিয়ে টানাটানি চলবে? আরহামের উপর ভীষণরকম মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এসবের কি দরকার ছিল? সামনে সাংবাদিকরা বসে। একের পর এক গাঁ জ্বালা করা প্রশ্ন করছে।দিশা সবটা সামলাচ্ছে। ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দিচ্ছে।আরহাম চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে।সাংবাদিকদের মধ্যে একজন বলল,”আরহাম স্যারের কাছে প্রশ্ন , সেহের ম্যাডাম যদি সত্যিই আপনার বাগদত্তা হয় তাহলে খবরটা এভাবে লুকিয়ে রাখলেন কেন? আর সেদিন ফাইভ স্টার হোটেলে কি করছিলেন? ”
আরহাম টেবিলের উপর হাত রেখে সামান্য ঝুঁকে সাংবাদিকে দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।এসব সাংবাদিকদের কাজ তিলকে তাল করা।অন্যকোন সময় হলে আরহাম বরাবরের মত এবারো ইগ্নোর করে যেত।কিন্তু এখানে প্রশ্নটা সেহেরকে নিয়ে। আরহামের এড়িয়ে যাওয়া সেহেরের চরিত্রের উপর প্রশ্ন তুলবে।এমনিতেই যা বদনামী ছড়ানোর তা কাল রাত থেকে হয়ে গেছে।এই জঘন্য কাজটা যে এই বাড়ীর কেউ একজন করেছে তা আরহাম নিশ্চিত । কে করেছে তাও সে জানে। যদি এখানে সবকিছু মিটমাট না হয় তাহলে এসব নিয়ে আরো গভীর তদন্ত চলবে ।সেই রাতে নিতানের সাথে সেহেরের দেখা করার ব্যাপারটা সামনে আসবে যেখানে আরহাম না ফাঁসলেও সেহের ঠিক ফাঁসবে ।
আরহাম স্বাভাবিক স্বরে বলল ,” সেহের আমার বাগদত্তা এটা কি পুরো শহরে ঢোল পিটিয়ে শুনাতে হবে? আর আমি আমার বাগদত্তাকে নিয়ে ডিনারে যাতেই পারি। হ্ঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পরে আর বাহিরে বৃষ্টি থাকায় সেই রাতটা আমাদের সেখানে কাটাতে হয়েছে।এসব নিয়ে এতো মাতামাতি কেন? এখন কি আমার পার্সোনাল লাইফের সমস্ত ডিটেল’স মিডিয়াকে দিতে হবে? মিডিয়া এতোটাই বেকার যে এখন আমাদের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে পরে থাকবে? ওয়ান ডে ,জাস্ট একদিনের সময় দিলাম এর মাঝে এসব কিছু ডিলিট চাই! সকল ভিডিও নিউজ সব । চাই মানে চাই ।ক্লিয়ার? ”
আরহাম শেষের কথা গুলো জোর গলায় বলল।প্রশ্ন করা সাংবাদিক ভয়ে কিছুটা কেঁপে উঠলো।সেহের দূর থেকে আরহামের কথা গুলো শুনলো।রাগে তার গাঁ কাঁপছে। আরহাম এসব মিথ্যা কেন বলছে? তাদের বাগদান হলো কবে? এভাবে ঝামেলা বাড়ানোর কোন প্রশ্নই উঠে। মিডিয়ার সামনে সবটা ক্লিয়ার করা দরকার। আরহামের কাছে এই মিথ্যা বাগদানের খবরটা ছোট ব্যাপার হলেও সেহেরের কাছে অনেক বড় কিছু! সেহের মিডিয়ার সামনে সত্যিটা বলতে তেড়ে আসছিল।সেহেরকে এভাবে তেড়ে আসতে দেখে লোকজনের মাঝে কানাঘুষা শুরু হয় । সবার সামনে সেহের কিছু বলতে তার পূর্বেই দিশা আটকে ফেলে। চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলে।সেহের মায়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।সাংবাদিকরা সেহেরকে প্রশ্ন করে চাইলে আরহাম কঠিন স্বরে বলে,”সেহের কোন জবাব দিতে বাধ্য নয়,সে অসুস্থ । প্রেস কনফারেন্স এখানেই সমাপ্তি! ”

দিশা মেয়ের দিকে অশ্রুস্নাত চোখে তাকিয়ে । সেহেরের রাগ আকাশ চুম্বী ।রাগে বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল ,”আমার অনুমতি ছাড়া ওই লোকটার সাথে বিয়ে ঠিক করলে? এসব করার আগে একবারের জন্য আমার বা বাবার কাছে জিগ্যেস করার প্রয়োজন বোধ করলে না? ”
“সেহের শান্ত হও মা ,”
“এতো কিছুর পর আমি কি করে শান্ত থাকবো ?বলতে পারো? ”
“আমার কাছে অন্য কোন উপায় ছিলো না। বাড়ীর রেপুটেশনের জন্য এমটা বলতে হয়েছে ,করতে হচ্ছে! ”
“তোমার শ্বশুরবাড়ির রেপুটেশন বজায় রাখতে তুমি আমার বলি দিবে? ”
“বলি কই দিলাম? আরহাম যথেষ্ট ভালো ছেলে। টাকাপয়সা অর্থ সম্পদ ক্ষমতা কোনটার কমতি নেই । দেখতে বেশ সুদর্শন! তাহলে সমস্যা কোথায়? ”
“এসব টাকাপয়সা অর্থ সম্পদ ক্ষমতা নিয়ে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই! আমার তাকে অপছন্দ ,ঘৃণা করি তাকে! শুনেছ? ”
“যদি তাই হয় তাহলে হোটেলে তার সাথে কি করছিলে? ”
মায়ের কথায় সেহেরের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো এই কথা শোনার আগে তার মৃত্যু কেন হলো না! মাও তাকে বুঝল না? ছিঃ ,মায়ের তার সম্পর্কে এই ধারণা? সেহের তেতো মুখ করে বলে,”আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তোমার কাছে আসা! মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে আমি তোমার মেয়ে তো? ”
দিশা মেয়ের হাত ধরে অসহায় স্বরে বলল,” ভুল বুঝো না আমি ওই সব কিছু মিন করিনি! এই মুহূর্তে আমার মাথা ঠিক নেই কি থেকে কি বলছি! ..উফফ ,সেহের জিদ করো না, প্লিজ রাজি হয়ে যাও । ”
“আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল! ওই লোককে কিছুতেই বিয়ে করবো নাহ।যাকে এক মুহূর্তের জন্য সহ্য করতে পারি না তার সাথে সারাজীবন কি করে কাটাবো ? ”
“মানিয়ে নিবে! বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“তুমি পেরেছিলে মানিয়ে নিতে? ”
মেয়ের কথা দিশা চুপ হয়ে যায়।পুরো ঘর জুরে পিনপতন নীরবতা ।নীরবতা ভেঙে সেহের বলল,”চিটাগাং বাবার কাছে ফিরে যাবো ,ব্যবস্থা করে দেও! ”
মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে…❣️

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন😊😊😊।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here