ভ্যাম্পায়ার_কুইন# পর্বঃ০৩

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০৩
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
যত সময় যাচ্ছে তত আমার ভয় বারছে। আমি বাইরে থেকে সাহসী হওয়ার অভিনয় করে যাচ্ছি কিন্তু কোনো কিছুতেই লাভ হচ্ছে না। আমি ক্লাসের বাকি সবাইকে দেখে ঘামছি। সবাই আমার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ক্লাসে অনেক কিউট কিউট মেয়ে আছে তবে সবাইকে এখন কিউট লাগছে না। আমি মনে মনে ওদের আসল রূপ চিন্তা করতে লাগলাম। হয়তো এক এক জন এক এক রকম মনস্টার হবে। এখনো কোনো আসল মনস্টার দেখি নি আমি। আমার আসে পাশের সবাই নিজের মানুষের রূপে বসে আছে। ক্লাসের স্যার আর ম্যাম কি পড়াচ্ছেন সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই।
.
–মিস্টার জ্যাকসন।(ম্যাম হঠাৎ ডাক দিলেন)
.
–……(আমার সেইদিকে কোনো সাড়া নেই। আমি আমার পাশে থাকা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম)
.
–তোমাকে ম্যাম ডাকছে।(এনা আমাকে খোচা মেরে বললো)
.
–মিস্টার জ্যাকসন। আদৌও ক্লাসে আছো?(ম্যাম)
.
–জ্বী। সরি ম্যাম।((আমার নামটা ঝামেলায় ফেলে দিলো। জ্যাকসন বলে ডাকলে আমি কিভাবে সাড়া দিবো)
.
–মনযোগ কোথায়?(স্যার)
.
–সরি স্যার?(আমি)
.
–ক্লাস শেষে আমার সাথে দেখা করো।(স্যার)
.
–ওকে স্যার।(আমি)
.
–সিট ডাউন।(ম্যাম)
.
–ধন্যবাদ।(আমি বসে পরলাম)
।।।
।।।
আমি বসে যাওয়ার পর এনা আমার দিকে ঘুরে বলতে শুরু করলো,
.
–কি হলো তোমাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে?(এনা)
.
–ক্লাসের পরে কথা বলবো তোমার সাথে।(আমি)
.
–ওকে।(এনা)
।।।
।।।
মাথাটা হালকা ঘুরাচ্ছে। বুঝতে পারলাম এনা আমার রক্ত খেয়েছে সেটার জন্যই হয়তো। তাছাড়া আমার মাথায় এখন ভয় ঢুকে গেছে। আসলেই যদি আমি একজন মনস্টার হয় তাহলে কি হবে? আমার বাবা মা তারা কি আমাকে মেনে নিবে? আমার এখন এখান থেকে বের হতে হবে। যে করেই হোক। এখানে আমি থাকলে হয়তো এই মনস্টার গুলো আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে। তাছাড়া আমি একজন মনস্টার নয়। আমি একজন মানুষ। হয়তো ভুল করেই এসেছি আমি এখানে। আমার জায়গা এখানে না। ক্লাসটা শেষ হলো।
।।।
।।।
সবার নজর আমার দিকেই। বুঝতে পারতেছি না আমার দিকে এভাবে ওরা তাকিয়ে আছে কেনো? আমি মানুষ হয়তো ওরা বুঝতে পেরেছে তাই আমাকে মারবে বলে তাকিয়ে আছে। আমি সোজা ম্যাম আর স্যারের পিছনে চলে গেলাম। এনা আমাকে বললো ক্যাম্পাসে ও অপেক্ষা করবে। স্যার আমাকে তার রুমে নিয়ে গেলেন। ম্যাম চলে গেলেন নিজের রুমে। আমি দরজা দিয়ে ভিতরে ঢোকার পরই হঠাৎ করে দরজা লক হয়ে গেলো।
.
–অনেক দিন পরে দেখা হলো তোমার সাথে। তো এখানে আসতে কোনো সমস্যা হয় নি?(স্যার)
.
–মানে আপনি আমাকে চিনেন?(আমি)
.
–এটা কেমন কথা নিজের ভাতিজাকে চিনবো না।(স্যার)
.
–ভাতিজা মানে?(আমি)
.
–ভাতিজা মানে ভাইয়ের ছেলে, আজব তো এইটুকু ও কি জানো না?(স্যার)
.
–আপনি আমার?(আমি)
.
–হ্যা আমি তোমার বাবার ছোট, একদম ছোট ভাই।(স্যার)
.
–তাহলে আমার বাবা-মা কোথায়? তারা কি বেঁচে আছে? আর আমার একটা পরিবার থাকার পরও আমাকে কেনো ত্যাগ করেছে তারা?(আমি)
.
–জ্যাকসন ব্রিট একটা কথা শুনে রাখো সব প্রিয় জিনিসকে সব সময় আগলে রাখা যায় না। কিছু সময় আসে যখন তাকে ছেড়ে দিতে হয়।(স্যার)
.
–মানে?(আমি)
.
–তোমার আর আমার মধ্যে কি সম্পর্ক শুধু তোমাকেই বল্লাম। আশা করি এটা কাউকে জানাবে না। ক্যাম্পাসে অনেক বিপদ হবে তোমার উপরে। সাবধানে থেকো।(স্যার)
.
–আমি এখান থেকে যেতে চাই। আমি আমার সাধারন জীবনেই চলে যেতে চাই।(আমি)
.
–বাচ্চার মতো করছো। ভুলে যেয়ো না তোমার শরীরে তোমার বাবার রক্ত। আর তোমার মায়ের শেষ জিনিসটা তোমার হাতে কিছুই হবে না তোমার। নিজের পরিচয়টা খোজার চেষ্টা করো। এবং নিজের অধিকার নিজের করে নিয়ো।(আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো)
.
–আমার মাথায় কিছুই যাচ্ছে না। আপনি একটু ক্লিয়ার করে বলবেন?(আমি)
.
–উহু আমার এখানে আর কিছুই বলার নাই। প্রশ্ন গুলো তোমাকেই বের করতে হবে। এবং উত্তর ও তোমাকে বের করতে হবে।(স্যার)
।।।।
।।।।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। দরজা এমনিতেই খুলে গেলো। এবং আমি বাইরে বেরিয়ে আসলাম এমনিতেই। লোকটা আমার বাবার ভাই বলে পরিচয় দিলো। আমার আঙ্কেল। কিন্তু বড় আজব। নিজের ভাতিজাকে এভাবে কেউ ট্রিট করে। আমাদের দুনিয়া হলে জরিয়ে ধরে হয়তো কেদে দিতো। আমিও এমন কিছু একটা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার চাচা সে কোনো দিক দিয়ে মনে হয় না। আমি হাটতে হাটতে বাইরে চলে আসলাম। বাইরে এনা দাড়িয়ে ছিলো।
.
–কি বললেন মিস্টার অরিয়ান তোমাকে?(এনা)
.
–স্যারের নাম অরিয়ান?(আমি)
.
–হ্যা। তুমি তো তাকে চিনবে না। সে লংস্টার রাজ্যের ত্বিতীয় প্রিন্স।(এনা)
.
–কিইই? তিনি প্রিন্স হয়ে এখানে জব করছেন?(আমি)
.
–বল্লাম তুমি চিনবে না। আর কিছু জানোও না। একজন D Class monster কে ভালোবাসার জন্য লংস্টরার রাজ্যের রাজা অষ্টম ডিউক তাকে রাজ্য থেকে বের করে দিয়েছে।(এনা)
.
–ও এটা তো অনেক খারাপ ব্যাপার। একজন বাবা কি করে পারেন তার ছেলেকে রাজ্য থেকে বের করে দিতে।(আমি)
.
–রাজা অষ্টম ডিউক মিস্টার অরিয়ান এর বাবা নয়। বড় ভাই।(এনা)
.
–কি?(আমি)
.
–হ্যা। আমি শুনেছি তার আসল নাম জ্যাসন।(এনা)
.
–কার?(আমি)
.
–লংস্টার রাজ্যের রাজার।(এনা)
.
–ও।(আমি)
.
–আচ্ছা এসব পরেও বলা যাবে।(এনা)
.
–আমাকে একটা হেল্প করতে পারবা?(আমি)
.
–হুমমম তবে এক শর্তে।(আমার দিকে বাকা হয়ে তাকিয়ে এনা বললো)
.
–কি শর্ত?(আমি)
.
–আরেকটু রক্ত খেতে দিতে হবে।(এনা)
.
–কি? আমাকে মেরে ফেলবে?(আমি)
.
–একটু রক্ত খাবো শুধু।(এনা)
.
–না একদম ই না। আমি আমাকে কামড় দিতে দিবো না।(আমি)
.
–আসলে আমি কখনো কারো রক্তের স্বাধ নি নাই। তোমার টাই প্রথম। আর আমাদের মতো ভ্যাম্পায়ার যারা তারা একবার যাদের রক্ত খায় তাকেই….(এনা লজ্জা পেয়ে)
.
–তাকেই কি?(আমি)
.
–কিছু না। বাদ দাও।(এনা)
.
–ওকে আচ্ছা যদি সামান্য রক্তের বিনিময়ে আমাকে হেল্প করো তাহলে ঠিক আছে।(আমি)
।।।
।।।

এনা লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে আমার গলার বাম দিকে ওর দুটো দাত বসিয়ে দিলো। দাত দুটো তেমন বড় না। তবে স্বাভাবিক দাতের চেয়ে দুটো বড়। কামড়ে আমার শরীর শিরশির করে উঠলো। আমাকে একদম জরিয়ে ধরেছে। হয়তো কোনো ছেলের প্রথম এমন স্পর্শ পেয়েছে। আমিও এতো কাছ থেকে কোনো মেয়ের স্পর্শ পেলাম। দাত বসিয়েই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে। হাটতে হাটতে আমরা একটু লোকশূন্য জায়গাতেই চলে এসেছি। তাই আসে পাশে কেউ নেই। আমার ও এনাকে ছারতে মন চাচ্ছে না। ওকে আরো জরিয়ে ধরতে মন চাচ্ছে। কিন্তু মনে পরলো আমরা তো চুমু দিচ্ছি না। বরং এনা আমার রক্ত খাচ্ছে। আমি এনাকে ধাক্কা দিলাম একটা।
.
–বল্লা একটু খাবে? কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি আমার পুরো রক্ত খেয়ে ফেলেছো।(আমার মাথা এখন ঘুরতে লাগলো একটু)
.
–সরি। আসলে আমি ভাবি নি কারো রক্ত খেতে এতো সুস্বাদু হবে। প্রথম কারো রক্ত খাচ্ছি তো। তাই হারিয়েই গিয়েছিলাম।(এনা)
.
–কিন্তু জরিয়ে ধরলে কেনো আমাকে? আমি তো ওটার জন্য তোমাকে ছারাতেই পারি নাই।(আমি)
.
–জানি না। মন বললো একটু জরিয়ে ধরতে। তাই ধরেছিলাম।(এনা)
.
–আচ্ছা হয়েছে। বাদ দাও। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই।(আমি)
.
–কোথায়?(এনা)
.
–যেখান থেকে এসেছি।(আমি)
.
–সেটা সম্ভব নয়।(এনা)
.
–কেনো?(আমি)
.
–কারন এখানে আসলে এক বছরের আগে তুমি এখান থেকে কোথাও যেতে পারবে না। এই জায়গাটা মনস্টার দুনিয়া এবং মানুষের দুনিয়া থেকে আলাদা একটা জায়গায়। এক বছর না হলে তুমি কোথাও যেতে পারবে না।(এনা)
.
–কোনো উপায় নেই এখান থেকে যাওয়ার?(আমি)
.
–হ্যা আছে যদি তুমি কোনো রাজার ছেলে কিংবা মেয়ে হও। অবশ্য সেটার জন্য রাজার আদেশের প্রয়োজন হবে।(এনা)
.
–তাহলে মনে হয় না আমি এখান থেকে আর যেতে পারবো।(আমি)
।।।।
।।।।
আমার মাথা ঘুরতে ছিলো। আমি কখন বেহুস হয়ে পরে গেছি নিজেও জানি না। পুরো সুন্দর একটা স্বপ্নের মধ্যে ছিলাম। আমি আর এনা খোলা আকাশে পাখির মতো উড়ে বেরাচ্ছিলাম। হঠাৎ এনা কোথাও উধাও হয়ে গেলো। আমার সামনে সব হঠাৎ করেই সাদা হয়ে গেলো। আমি দূরে একজন মহিলাকে দেখতে পেলাম। পিছনে ফিরে দাড়িয়ে আছে। পিঠে দু পাশ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এমন মনে হচ্ছে তার পিঠে পাখা ছিলো এবং সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে কিংবা টেনে তুলে ফেলা হয়েছে। মহিলাটা হঠাৎ ফিরলেন আমার দিকে। এতো সুন্দর তার রূপ। খুব পরিচিত লাগলো তার চেহারাটা। কিন্তু আমি চিনতে পারছি না তাকে আমি। তার গলায় একটা নেকলেস দেখতে পেলাম। হ্যা ঠিক সেই চিঠিতে আসা নেকলেসের মতো। একদম একই রকম। কি জানি এক মায়ার টানে আমি দৌড়ে যেতে লাগলাম মহিলার দিকে। মুখ থেকে একটা কথায় বের হয়ে আসলো “মা”। তার কাছে যেতে যেতেই ধুলো হয়ে উড়ে গেলো। সাথে সাথে আমার স্বপ্ন ও ভেঙে গেলো। আমি আমার রুমের বিছানায় শুয়ে আছি। এটা কিরকম স্বপ্ন ছিলো। আমি আগে এরকম স্বপ্ন কখনো দেখি নি। সত্যি কি মহিলাটা আমার মা ছিলেন। তার কি হয়েছে। পিঠ দিয়ে ঔভাবে রক্ত পরছিলো কেনো?
.
–আমি তো ভয় পেয়েই গিয়েছিলাম তোমাকে নিয়ে। আমি ভাবছি আমি তোমার রক্ত খেয়ে তোমাকে মেরেই ফেলেছি।(এনা)
.
–ও এনা তুমি। ওয়েট এ মিনিট। তুমি আমার রুমে কি করছো?(আমি)
.
–কি করছি মানে? তোমাকে প্রোটেকশন দিচ্ছি। তোমাকে রুমে রেখে আমি চলে গিয়েছিলাম। তখন আমার রুমের জানালা দিয়ে দেখি একজন ছেলে তোমার রুমের দরজা খুলে ঢুকে পরেছে। তখন আমি আমার আসল রূপে এসে ছেলেটাকে ইচ্ছামত মারলাম। তারপর ভাবলাম তোমার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত এখানেই থাকি।(এনা)
.
–ও তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু ঔ ছেলে আমার রুমে কেনো ঢুকেছিলো?(আমি)
.
–কারন তোমাকে মারতে।(এনা)
.
–কি আমাকে মারতে?(আমি ভয় পেয়ে গেলাম)
.
–হ্যা। তুমি A class মনস্টার। আর তুমি নিজেই জানো না তুমি কি মনস্টার। এখন আমাদের নিচের বংশের মনস্টার রা চাইবে তোমাকে হত্যা করতে। কারন তোমাকে হত্যা করলে তারা অনেক টাকার মালিক হবে।(এনা)
.
–আচ্ছা আমাদের লাইব্রেরী টা কোথায়?(আমি)
.
–আমাদের ক্লাস রুমের দোতলায়।(এনা)
.
–ধন্যবাদ তোমাকে।(আমি)
.
–তুমি রেষ্ট নাও। আর কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকো। আর দরজা সব সময় লক করে রেখো।(এনা)
.
–ঠিক আছে।(আমি)
।।
।।
এনা চলে গেলো আমি দরজা লক করে বিছানায় এসে বসলাম। মাথায় হাত দিয়ে আমি বসে আছি বিছানায়। তাহলে আমার আসল বাবার নাম জ্যাসন। হ্যা হতে পারে। আমার নামটা জ্যাকসন, নামের দিক দিয়ে তো মিল রয়েছে। এনা বললো তিনি লংস্টার রাজ্যের রাজা। তাহলে কি আমি একজন প্রিন্স। নিজের কাছে ভালো লাগলো হঠাৎ নিজেকে প্রিন্স ভেবে। কিন্তু না আমি যদি সত্যিই প্রিন্স হতাম তাহলে আমাকে মানুষদের দুনিয়ায় কেনো পাঠাবে। না এসব মনস্টারদের মোটেও মন টন বলতে কিছু নাই। কিন্তু আমি এরকম নই। আমি একজন মানুষ। আর আমার পরিবার আছে। আমি তাদের কাছেই চলে যাবো।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৪র্থ পর্বের জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here