ভ্যাম্পায়ার_কুইন# পর্বঃ০৪

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০৪
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
চিন্তায় আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। অবশ্য আমি কখনো এতো চিন্তা করি না। তবে আজ আমি বিশাল চিন্তিত। কারন একটা দিনে আমার সাথে এতো কিছু হয়ে যাবে আমি কখনো চিন্তা করতে পারি নাই। একটা অন্য দুনিয়ায় চলে আসবো এটাও কখনো চিন্তা করি নাই। সন্ধা হওয়ার পথে। আমার খুব ক্ষুধাও লেগেছে। এখন মনে পরেছে সেই কাল থেকে তেমন কিছুই খাওয়া হয় নি আমার। চিন্তায় আমার খাওয়ার কথা মনেই ছিলো না। আবার এনা আমার শরীর থেকে রক্ত চুষে খেয়েছে, তাই আমার মাথা বার বার ঘুরাচ্ছে। এনা ক্লাসে যাওয়ার সময় বলেছিলো এখানের ক্যান্টিনে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা হবে রোজ। তাহলে আমার এখন ক্যান্টিনের দিকে যাওয়া দরকার। ক্ষুদায় আমার দম বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে৷ হঠাৎই দরজায় কেউ নক দিলো।
.
–কে?(আমি চমকে?)
.
–আমি এনা।(এনা)
.
–ও এনা। তুমি। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।(আমি)
.
–একদম ভিতু তো তুমি। আমার মনে পরেছে তুমি দুপুরে কিছু খাও নি। তাই এখন এক সাথে খাবার খাওয়ার জন্য তোমাকে ডাকতে এলাম।(এনা)
.
–ওও। আচ্ছা দাড়াও আমি আমার শার্টটা চেন্জ করি।(আমি)
।।।
।।।
আমি আমার ব্যাগ থেকে একটা টিশার্ট বের করলাম এবং আমার সকালের ইউনিফর্মের শার্ট খুলে টিশার্টটা পরলাম। এনা লজ্জিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
–তোমার পিঠে এই দাগগুলো কিসের?(এনা)
.
–ও এইগুলো তেমন কিছু না। এটা আমার পিঠে ছোট থেকেই।(আমি)
.
–আমি শুনেছি যাদের শরীরে এরকম দাগ থাকে তারা কিছু স্পেশাল ম্যাজিক পাওয়ার এর ক্ষমতাশালী হয়।(এনা)
.
–ম্যাজিক পাওয়ার?(আমি)
.
–হ্যা। আচ্ছা বাদ দাও চলো আমরা ক্যান্টিনের দিকে যায়।(এনা আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো)
।।।।।
।।।।।
এনার সাথে ক্যান্টিনে গিয়ে এক সাথে খেয়ে নিলাম। তারপর লাইব্রেরী থেকে এই দুনিয়া সম্পর্কে জানার জন্য কিছু বই নিয়ে আমার রুমে আসলাম। আমার জায়গাটা তেমন খারাপ লাগছে না। মাথার মধ্যে আসলেই অনেক প্রশ্ন আসছে। কে আমি? কি আমার পরিচয়? আমি কি? আমার আনা বই গুলো আমি টেবিলে রেখে পড়তে লাগলাম। এই দুনিয়ার নিয়ম কানুন এক এক করে পড়তে লাগলাম। সব কিছু জানা যাবে না। তারপরও হালকা ধারনা ঠিকই হবে আমার। বাকিটুকু এনার থেকে শুনে নিয়ে যাবা। দুটো বই শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো।
।।
হঠাৎ এনার কথা মনে পরলো। মেয়েটার সাথে একদিনেই আমার অনেক ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে। জানি না কতদিন টিকবে আমাদের ভালোবাসা। আমি আমার জানালা খুললাম। আজ পূর্নিমা রাত । পুরো আকাশ ভরা তারা। বিশাল রুটির মতো একটা উজ্জল চাঁদ দেখা যাচ্ছে আকাশে। অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘুম পাচ্ছিলো জানালা আটকিয়ে আমি ঘুমাতে যাবো তখনি হঠাৎ করে দূর থেকে একটা আলো জ্বলতে জ্বলতে আমার দিকে আসতে লাগলো। এরকম সাদা আলো দেখে ভয় লাগলো। হয়তো কেউ দূর থেকে আমাকে হামলা করেছে। আমি জানালা আটকিয়ে দিলাম। আটকিয়ে বিছানার নিচে চলে আসলাম। ভাবলাম জানালা ভেঙে আলোটা চলে আসবে। কিন্তু না দেওয়ালের মধ্য দিয়েই আলোটা বেরিয়ে আসলো। পুরো একটা ফুটবলের মতো গোল একটা জিনিস থেকে আলো বের হচ্ছে। খালি চোখে তাকিয়ে থাকা যায়না জিনিসটার দিকে। হঠাৎ জিনিসটা থেকে কথা বের হলো,
.
–এতো বছর পর আমি আমার শরীরের সন্ধান পেলাম তাহলে।(গোল আলকিত বলটা কথা বলতে লাগলো)
.
–কে তুমি? আর এখানে কি করছো?(আমি ভয়ে বল্লাম)
.
–ও তাহলে ভয় পাইয়ে দিয়েছি তোমাকে? আচ্ছা একটা মানুষের রূপেই কথা বলি।(বলেই বলটা একটা মানুষের রূপ নিলো কিন্তু এখনো আলো বের হচ্ছে তার শরীর থেকে)
.
–আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আগে?(আমি টেবিলে থাকা স্কেলটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলাম)
.
–ও তাহলে আমার শরীর এতোটা দুর্বল হবে ভাবি নি কখনো। হ্যা অবশ্য আমি নাই বলেই এতো দুর্বল। শুনো তাহলে আমার নাম জ্যাকসন ব্রিট। লংস্টারের রাজা জ্যাসন এর সুযোগ্য সন্তান।(একটু হেসে বললো)
.
–তুমি জ্যাকসন তাহলে আমি এখানে তোমার জায়গায় কি করছি?(আমি)
.
–কারন আমি ভূত আমি তো মনস্টারদের সাথে থাকলে ভয় পাবে তারা।
.
–কি? তুমি ভূ-ভূ-ভতততত?(আমি পেয়ে)
.
–আমি জানতাম তুমি একটা গাধায় হবে। আমার এতো সুন্দর শরীর তোমার মতো গাধার কাছে থাকলে যা হয়।
.
–আমার শরীর তোমার মানে?(আমি ভয়ে কেদে দিলাম)
.
–আহারে ছোট বাচ্চা কাদে না থাক। সহজ কথায় আসি। আমি তোমার শরীরের একটা অংশ। আমি তোমার সকল ক্ষমতা এবং তোমার মনস্টার ফর্ম ধারন করি। একটা কথা বলতে গেলে আমি ছাড়া তুমি একটা সাধারন মানুষ।
.
–এটা কিভাবে সম্ভব আমার শরীরের একটা অংশ যে আমার ক্ষমতা ধারন করে সে জীবিত হতে পারে কিভাবে?(আমি)
.
–এটা সেই বুড়ো দাড়ী ওয়ালার দোষ। তোমার জন্মের পরেই তোমার শরীর থেকে আমাকে আলাদা করে জীবিত করেছে।
.
–দাড়ী ওয়ালা লোক মানে?(আমি)
.
–দেখো এইসব কিছুর উত্তর দেওয়ার মতো সময় আমার নেই। দেরী করলে আমি কোনোদিন আমার শরীর পাবো না। তুমি চুপ করে দাড়াও আমি ঢুকে পরি তোমার শরীরে।
.
–এই দাড়াও দাড়াও।(আমি)
।।।
।।।
আমি স্কেল হাতে নিয়ে নিজেকে বাচানোর চেষ্টা করতে গেলাম কিন্তু জিনিসটা আমার শরীরের ভিতরে চলে গেলো। আমার মাথা আসতে আসতে ঘুরতে লাগলো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি আমার শরীর হারিয়ে ফেলেছি। সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে আমি ফ্লোরে পরে গেলাম।
।।
সকালে আমার ঘুম ভাঙলো। আমি ফ্লোরে পরে আছি। হাত দিয়ে চোখ মুছতে লাগলাম। হঠাৎ নজরে পরলো আমার পুরো হাত ভরেই কেমন একটা দাগ দাগ হয়ে গেছে৷ দেখে পিঠের দাগের মতোই মনে হচ্ছে। জানি না এটা কিসের দাগ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কালকের ঔ আজব জিনিসটার জন্যই হয়েছে। আমি ফ্রেস হয়ে নিলাম। সকালের খাবার দরজার সামনে রেখে যাবে শুনেছি তাই দরজা খুলে খাবার নিয়ে আসলাম। খাবার খেয়ে রেডী হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হলাম। ক্লাসে গিয়ে বসে পরলাম। এনা ভিতরেই ছিলো।
.
–কেমন লাগলো বই?(এনা)
.
–ভালোই। অনেক কিছু জানতে পারলাম।(আমি)
.
–ও তোমাকে আমার এক বান্ধুবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দি। ওর নাম জেসিকা।(একটা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললো)
.
–হাই।(আমি)
.
–হাই আমি জেসিকা। তুমি আমাকে জেসি বলে ডাকতে পারো।(জেসি)
.
–ওকে জেসি। আমি জ্যাকসন ব্রিট। তুমি চাইলে আমাকে হৃদয় বলে ডাকতে পারো।(আমি)
.
–জ্যাকসন ব্রিট?(অবাক হয়ে জেসি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো)
.
–আমার নাম শুনে অবাক হওয়ার কি আছে?(আমি)
.
–তুমি একজন Classified মনস্টার তোমার নাম পুরো ক্যাম্পাস জানে। তাই হয়তো অবাক হয়েছে ও।(এনা)
.
–না। আচ্ছা হৃদয় যদি তুমি মাউন্ড না করো আমি কি তোমার হাতটা দেখতে পারি?(জেসি)
.
–হাত আমার হাত দেখবে কেনো?(আমি)
.
–না শুধু একটা জিনিস কনফার্ম করার জন্য।(জেসি)
.
–ওকে।(আমি)
।।।
।।।
আমি আমার হাত আগালাম জেসিকার দিকে। ও আমার বাম হাতের তালুর পাশে ওর ডান হাত রাখলো। হঠাৎ দুই হাতের সব রেখা গুলো জ্বলতে থাকলো।
.
–কি হচ্ছে এসব?(আমি)
.
–আমি তোমার সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই।(জেসি)
.
–আমার সাথে আলাদা?(আমি আমার আশে পাশে তাকালাম। সবাই যে রকম ছিলো সেরকমই দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ সময় আটকে দিয়েছে)
.
–অবাক হওয়ার কিছু নেই। সময় এবং জায়গা এই দুটোকে আমি কন্ট্রোল করতে পারি।(জেসি)
.
–কে তুমি?(আমি)
.
–আমি তোমার যমজ বোন হৃদয়।(জেসি)
.
–কি আমার যমজ বোন!(আমি অবাক হয়ে জেসিকে বললাম)
.
–হ্যা। আমি তোমার আপন যমজ বোন।(জেসি)
.
–এটা কিভাবে সম্ভব? আমার তো এসব বিষয়ে কিছুই মনে পরছে না।(আমি)
.
–হ্যা পরবে না। কারন আম্মা তোমার স্মৃতি সব মুছে দিয়েছিলো।(জেসি)
.
–মুছে দিয়েছিলো? কিন্তু কেনো?(আমি)
.
–আমি এখনো সব জানি না। তবে দাদাভাই আমাকে বলেছে আমি নিজে যতটুকু জানি সেটা তোমাকে বলতে।(জেসি)
.
–তো কি জানো তুমি বলো আমাকে?(আমি)
.
–সব ঝামেলা শুরু হয় আমাদের জন্মের এক মাস পর থেকে। লংস্টার রাজ্যের একটা নিয়ম আছে। রাজার সবচেয়ে শক্তিশালী ছেলেটাই পরের রাজা হতে পারবে৷ তখন দাদাভাই রাজ সিংহাসনে ছিলো। আমাদের বাবা আর তার দুই ভাইয়ের মধ্যে আমাদের বাবাই পরের রাজা হওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু বাবা তোমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো।(জেসি)
.
–আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো মানে?(আমি)
.
–তোমার জন্মের পর থেকেই তুমি অনেক দুর্বল ছিলে। সবাই ভেবেছিলো হয়তো আস্তে আস্তে তোমার ক্ষমতা গুলো তুমি পাবে কিন্তু না তুমি একজন সাধারন মানুষের মতো ছিলে। আর তখনি বাবার কি জানি হয়ে গেলো। বাবা সন্দেহ করতে লাগলো আম্মার উপরে। তিনি বলতে শুরু করলেন এই বাচ্চা একটা অভিশাপ তার কাছে। আর দিন যখন আরো কয়েকটা গেলো বাবা রাজা হয়ে গেলেন। কিন্তু রাজা হয়েই বাবা পুরো পাল্টে গেলেন। যে বাবাকে আমরা চিন্তাম সে আর সে ছিলো না। রাজা হওয়ার পরের দিনই তিনি দাদাকে জেলে আটকে দিলেন। এবং এর বিরুদ্ধে যে বলেছে সবাইকে মেরে ফেলেছে। তোমাকে মারার হুকুম ও তিনি দিয়েছিলেন। তখন আম্মা আমাকে দাদাভাইয়ের কাছে রেখে দিয়ে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে আসে।(জেসি)
.
–….(জেসির কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে এমনি এমনি পানি পড়তে লাগলো)
.
–তার দুইদিন পর আম্মার মৃত শরীর নিয়ে কিছু সৈন্যরা রাজ দরবারে আসে। তারা তোমাকে খুজে পাই নি। রাজ্যের অবস্থা খারাপ দেখে দাদাভাই আমাকেও একটা নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দেই। দাদাভাইয়ের থেকে শেষ চিঠিতে যখন জানতে পারলাম তুমিও এই কলেজে পড়তে আসবে সেটা শুনে আমি কত খুশি হয়েছি জানো?(জেসি)
.
–একটা বাবা হয়ে তিনি কিভাবে পারলেন এটা করতে?
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
।।।।।
অপেক্ষা করুন ৫ম পর্বের জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here