ভ্যাম্পায়ার_কুইন# #সিজন_2# পর্বঃ০৩

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
#সিজন_2#
পর্বঃ০৩
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমাকে মিলিটারি জোনের বাইরে বের হতে হবে, নাহলে আমি আমার পরিবারকে আর দেখতে পারবো না। আমি বুঝতে পারছি না এতো বিশাল জায়গা কিভাবে পার হবো। আমার ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে আসাতে অনেক দেরী হয়ে গেছে, আবার আমি একটু আগে জনগনের পায়ের নিচে পরে অনেকটা আহত হয়েছি। আমার শরীর সামনের দিকে চলছে না। কিন্তু আস্তে আস্তে বনের মধ্যে হাটতে হাটতে আমি কোথায় চলে এসেছি সেটা আমি নিজেও জানি না। কিন্তু আমি দিকটা ঠিক রেখে হাটছি এটা সঠিক জানি। জঙ্গলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো দিক ঠিক রাখা। এখানে দিক ভুল করলে এক জায়গা দিয়েই বারবার ঘুরতে হবে। আমি আমার মাথা কাজে লাগালাম। আমার কাছে একটা ম্যাজিকাল লম্বা পাথর আছে। এটা যেকোনো লৌহ জাতীয় বস্তুর সাথে লেগে থাকে। আমি এটার আরেকটা বিষয় লক্ষ করেছি, এটাকে সুতার সাথে বেধে দিলে দক্ষিন এবং উত্তর দিকে দু প্রান্ত গিয়ে থামবে। এটা দ্বারা দিক সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায়। পর্যটকদের ভালোই কাজে দিবে এটা। সে যাইহোক আমি টুকটো পাথরটাকে সুতোই করে বেধে হাটতে লাগলাম। আমার পা কিছুতেই চলছে না। আমি একজন অফিসারের মুখে শুনেছিলাম দক্ষিন দিক দিয়ে ছোট একটা পানির ধারা বয়ে গেছে। আমার এই জায়গা থেকে জীবিত ফিরার জন্য সেই পানির ধারায় প্রয়োজন। আমি কোনো ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি না। আর শারিরীক ভাবে আমি অনেক দুর্বল। আর বিশেষ করে আমি অনেক আহত হয়েছি। এভাবে আরেকটু হাটতে গেলে হয়তো আমি বেহুস হয়ে যাবো। এতোক্ষনে এক ঘন্টা হয়তো হয়ে গেছে। সময়ের খেয়াল এতোক্ষন ছিলো না আমার। কিন্তু দূরে চিল্লানোর আওয়াজে বুঝে গেলাম এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে। আর মিলিটারিরা এক এক করে সবাইকে মারা শুরু করে দিয়েছে এখন। আমাকে এখন আরো তারাতারি করতে হবে। আমি যতই আমার জীবনের ভয় করছি ততই আমার পা দুটো শক্ত হচ্ছে। নরতেই চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমি আস্তে আস্তে পাথর হয়ে যাচ্ছি। তারপর ও আমি চেষ্টা করছি। যেভাবেই হোক আমাকে এখান থেকে জীবিত ফিরতে হবে।
।।।
।।।
আমি হাটতে হাটতে পানির ধারার কাছে চলে আসলাম। পানিতে অনেক স্রোত। ছোট একটা ধারা কিন্তু স্রোত অনেক তীব্র। যে কেউ একটু খেয়ালিপনা করলে স্রোতে ভেসে যেতে পারে। এটাই আমার বাচার সবচেয়ে বড় রাস্তা। আমি ম্যাজিকের মাধ্যমে কিংবা শারিরীক শক্তি দিয়ে এখান থেকে বের হতে পারবো না। কিন্তু ঠিকই আমার মাথা ব্যবহার করে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবো। এই পানির স্রোতের সাথে গেলেই আমি এই জোন থেকে বের হতে পারবো। আর এটাই সবচেয়ে তারাতারি রাস্তা হবে। কিন্তু এখানেও একটা সমস্যা আছে। আমি সাতার কাটতে পারি না। পানিতে আমি নামতে পারবো না। আর হেটেও আমি যেতে পারবো না। আমি চারপাশে তাকালাম। কিছু বাঁশ গাছ দেখতে পেলাম। এগুলো ভিতরে ফাপা হয়, কিন্তু এদের ত্বক অনেক শক্ত থাকে, আর এগুলো সহজেই পানিতে ভাসতে পারে। এখন শুধু আমাকে এগুলো কয়েকটা কেটে একত্রে বেধে তারপর সেটার উপরে বসে এই পানির উপর দিয়ে ভেসে যেতে হবে। আমি সিওর তিনটা হলেই আমার ভর সহজে নিতে পারবে। কিন্তু সমস্যা হলো আমার কাছে কাটার মতো কিছু নেই। আমি বাঁশ কাটবো কিভাবে বুঝতে পারছি না। হঠাৎ পিছন থেকে আমি কিছু একটার শব্দ পেলাম। একজন দৌড়িয়ে এদিকেই আসছিলো। আমি ভয় পেয়ে গাছের পিছনে গিয়ে লুকালাম। কিন্তু আমার বয়সী একটা ছেলে এদিকে দৌড়িয়ে এসেছে। আমি ছেলেটাকে চিনতে পারলাম না। হয়তো অন্য কোনো একটা ইউনিটের হবে। সে যায়হোক আমি এবার বের হলাম গাছের আড়াল থেকে। ছেলেটা আমাকেও দেখে ভয় পেয়ে গেলো,
.
–আহ;;;; আমি তো প্রথমে ভয় পেয়েই গিয়েছিলাম। তুমি এখানে লুকিয়ে কি করছো? এই জোনের মধ্যে কোথাও লুকানোর মতো জায়গা নেই। মিলিটারিরা তাদের সার্চ ডগ নিয়ে আমাদের খুজছে।(ছেলেটা)
.
–আমি তো এখান থেকে খুব সহজে পালানোর প্লান বানাচ্ছিলাম।(আমি)
.
–এখান থেকে পালানোর কোনো রাস্তা নেই। পুরো মাইলের পর মাইল নিয়ে এই মিলিটারি ট্রেনিং জোন বানানো হয়েছে। এখান থেকে আমাদের বয়সী কেউই বের হতে পারবে না।(ছেলেটা)
.
–এই পানির ধারাটা একটা নদীতে গিয়ে মিশেছে। আর অফিসারদের মতে আমাদের জোনের মধ্যে কোনো নদী নেই। আমি চাচ্ছিলাম এই বাঁশ গুলোর মাধ্যমে ভেসে সোজা নদীতে চলে যেতে।(আমি)
.
–ওয়াও। এটা তো খুব ভালো একটা বুদ্ধি। আমি এরকম বুদ্ধি ভাবতে পারলাম না কেনো, পানির স্রোত দেখে যা মনে হচ্ছে এটার উপর দিয়ে ভেসে গেলে আমরা খুব সহজেই জোনের বাইরে চলে যেতে পারবো। কিন্তু কোনো সৈনিক আমাদের দেখে ফেললে অবশ্যই আমাদের মেরে ফেলবে।(ছেলেটা)
.
–অবশ্য আমি কোনো রকম ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি না। পারলে কোনো মিলিটারি আমাদের দেখলেও সমস্যা হতো না। পানিতে সাধারন বায়ুর চাপ সৃষ্টি করতে পারলে এই বাঁশ দিয়ে বানানো পানিযানের স্পিড দশগুন বেরে যাবে।(আমি)
.
–বায়ুর চাপ? কোনো সমস্যা নেই, আমাকে সাথে নাও তোমার যেসব কাজে ম্যাজিক প্রয়োজন আমি সাহায্য করবো।(ছেলেটা)
.
–(আমি তাকিয়ে রইলাম ছেলেটার দিকে, আজ পর্যন্ত যে শুনেছে আমি ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি না, সকলেই হেসেছে আমার প্রতি। কিন্তু আজ প্রথম কেউ আমাকে সাহায্য করতে চাইলো)
.
–কি হলো। ও আমি তো ভুলেই গেছি। আমার পরিচয়ই তো দেওয়া হলো না। আমার নাম হ্যারি। এবং আমি সাতশো আট থেকে এসেছি। আমার বাবা সাতশো আট নম্বর শহরের মিনিস্টার।(হ্যারি)
।।।
।।।
সাধারনত তিন রাজ্যের অনেক ছোট ছোট শহর রয়েছে। এগুলোকে নম্বর দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ছোট শহরের সংখ্যা অনেক তাই এদের নম্বরই এদের নাম হয়ে গেছে। অবশ্য আমাদের শহর আটশো দুই নম্বর। আবার বেশ কিছু বড় শহর রয়েছে ক্যাপিটাল শহর বাদে। এগুলোর জন্য আমার নির্দিষ্ট নাম রয়েছে। এগুলোতে রাজার রক্তের মানুষেরা পরিচালনা করে। মানে সে শহরগুলোর মিনিস্টার রাজার রক্তের কেউই হতে পারবে। সে যাইহোক আমি হ্যারির সাথে কথা বলতে লাগলাম। হ্যারিই প্রথম একজন যে কিনা আমার উপরে হাসলো না। তাই ওকে আমার বন্ধু বানাতে মন চাচ্ছে এখন। কিন্তু এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমরা পরেছি এখানে তেমন কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। যেহেতু হ্যারি আমাকে সাহায্য করবে তাই আমাকে এখন দ্রত মাথা চালাতে হবে।
.
–আমার নাম জ্যাক।(আমি)
.
–ঠিক আছে জ্যাক আজ থেকে আমরা দুজন বন্ধু। আর আমি প্রমিস করছি আমরা দুজন এখান থেকে জীবিত ফিরে বের হবো।(হ্যারি)
.
–হুমমম।(আমার হ্যারির কথা শুনে চোখ দিয়ে পানি আসতে চাইলো। এই প্রথম কেউ আমার সাথে বন্ধু হতে চাইলো বলে)
.
–তো কি করতে হবে আমাকে জ্যাক?(হ্যারি)
.
–আমাদের প্রথমে এই বাশ গুলোকে কাটতে হবে। মোট আটটা টুকরো লাগবে আমাদের। এরপর সেগুলোকে পাশাপাশি রেখে বাধতে হবে।(আমি)
.
–ওকে কাটার কাজটা একদম সহজ।(হ্যারি)
।।।
।।।
হ্যারি ওর এয়ার ম্যাজিক ব্যবহার করলো। একটা স্পেল যেটার নাম হলো এয়ার ব্লেড। এটা দিয়ে যেকোনো জিনিস কাটা সম্ভব। এটা মাধ্যমে আমরা পুরো আটটা বাঁশের টুকরো করলো মাঝারি সাইজের। তারপর সেটাকে পাশাপাশি রেখে বাধার চেষ্টা করলাম। আমি সেরকম কিছুই পারছি না, কিন্তু হ্যারি সব কাজ নিমিষেই করে দিচ্ছে। আমি কিছু পারছি না সেটার জন্য হ্যারি রাগও করছে না বরং হাসি মুখে আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে করতে হয় সেটা।।। আমরা বাঁশ গুলোকে বাধার পর সেটাকে পানিতে নামালাম। প্রথমে দুজনে দেখে নিলাম আমাদের ভর নিতে পারে কিনা। এরপর আমরা দুজনেই সেটার উপরে উঠে বসলাম। স্রোতে আমাদের অনেক স্পিডে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই স্পিড আমাদের এখান থেকে বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। দুইজন সৈনিক আমাদেরকে দেখে ফেললো। তারপর তারা আমাদের উপরে আক্রমন করতে লাগলো। একজনের হাতে ম্যাজিকাল ধনুক আর তীর। আরেকজনের হাতে একটা লাঠি। লাঠিওয়ালা লোকটা তার লাঠি দিয়ে আগুনের গোল গোল বল বানিয়ে আমাদের দিকে মারতে লাগলো, আর ধনুকওয়ালা লোকটা আগুনের তীর আমাদের দিকে মারতে লাগলো। অবশ্য আগুনের বলটা আমাদের স্পর্শ করতে পারে নি হ্যারির জন্য। হ্যারি ওর হাত পানিতে দিয়ে এয়ার প্রেসার সৃষ্টি করতে লাগলো, যার ফলে আমরা আরো স্পিডে যেতে লাগলাম্ কিন্তু ধনুকওয়ালা লোকটার আঘাত থেকে আমরা রক্ষা পেলাম না। দুইটা তীর আমার দিকেই আসতে ছিলো। কিন্তু আমার ধাক্কা দিয়ে বাঁশের উপরে ফেলে দিয়ে হ্যারি আমার সামনে চলে আসে। একটা তীর ঠিক আমার হাতের তালু সহ বাশের মধ্যে গেথে যায়। আরেকটা হ্যারির বুকের মধ্যে। আমি হ্যারির দিকে খেয়াল করলাম না। আমার হাতের যন্ত্রনা এবং রক্ত দেখে আমি আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। জোরে চিল্লাতে লাগলাম। হ্যারি কোনো রকম আমার হাতের কাছে এসে আমার তালুতে গাঁথা তীরটা টেনে বের করে দিলো। এরপর আমার উপরে পরে গেলো। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। কি থেকে কি হয়ে গেলো। আমার লাইফে এই প্রথম আমাকে কেউ বন্ধু বানালো, আর সেই বন্ধুই আমাকে বাচাতে গিয়ে নিজে মারা যাচ্ছে। আমি কিছুতেই এটা মানতে পারছি না। কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না। বাঁশের স্পিড এতো বেশী ছিলো যে এটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পানি থেকে উঠে একটা গাছের সাথে বারি খেলো। আর আমরা দুজন ছিৎরে গিয়ে পরলাম দূরে। আমি একটা গাছের সাথে বারি খেলাম। যার জন্য আমার ডান হাতটা ভেঙে গেলো। ব্যথায় আমি কান্না করে দিলাম। অনেক যন্ত্রনা হচ্ছে তারপরও আমি চিল্লাতে পারছি না। ভয় পাচ্ছি অনেক। আমার পাশেই হ্যারির শরীর পরে আছে। এখনো ও মারা যায় নি। ওর শরীর কাপছে। আমি জানি আমাকে কিছু করতে হবে, নাহলে ও মারা যাবে। কিন্তু কি করবো আমি বুঝতে পারছি না। আমি প্রথমে আমার কাপা কাপা হাত দিয়ে ওর পিঠ থেকে তীরটা টেনে বের করে ফেললাম
এবার ওকে চিৎ করে শুইয়ে দিলাম। আমি কোনো চিকিৎসা জানি না। তবে সবচেয়ে সাধারন যে জিনিসটা সেটা হলো প্রথমে রক্ত বন্ধ করা। আমার ডান হাত আমি নারাতে পারছি না। একটা কাপড় আমার ব্যাগ থেকে নিয়ে আমি বাম হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ওকে বেধে দিলাম। আমার ডান হাতের তালু দিয়েও রক্ত বের হচ্ছে। কিছু না করলে রক্ত বের হয়ে আমি মারা যাবো। ব্যথায় আমি আর শরীর নারাতে পারছি না। হঠাৎ আমার ব্যাগের দিকে নজর গেলো। আম্মা কিছু বই দিয়েছিলো। এগুলোকে পড়তে বলেছিলো পরে কোনো এক সময়। যেহেতু আমি একটু পরে মারা যাবো, তাই এখনি হয়তো ভালো সময়। চারটা বই মোট। অনেক মোটা বইয়ের আকার। দেখেই মনে হচ্ছে অনেক কিছু লেখা আছে এই বইগুলোতে। চারটা বইয়ের বিভিন্ন ধরনের রং রয়েছে। একটা লাল, একটা কালো, একটা সাদা, একটা হলুদ।
আমি লাল, হলুদ এবং কালো বইটা খুলতে চেষ্টা করলাম কিন্তু তিনটার মধ্যেই একটা শিকলের মতো কিছু দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছে এই তিনটা বই কেউ লক করে রেখেছে। কিন্তু শিকল গুলো খুলবো কি করে আমি বুঝতে পারছি না। সাদা বইটা খুলার চেষ্টা করলাম। প্রথম মোটা মলাট আমি উল্টালাম। আর সাথে সাথে ভিতর থেকে একটা উজ্জল আলো বের হলো। মনে হচ্ছিলো কিছু একটা বের হচ্ছিলো। কিন্তু কোনো কিছু বের না হয়ে আমিই সোজা বইয়ের মধ্যে চলে গেলাম। আমার হাত পা সব কিছু বইয়ের মধ্যে এক এক করে চলে যেতে লাগলো, ভিতরে প্রবেশ করার পর আমি খোলা একটা আকাশ দেখতে পেলাম। আর দূরে কাউকে বসে থাকতে দেখলাম। যেহেতু আমার অবস্থা একদম গুরুতর তাই আমি সাথে সাথেই পরে গেলাম মাটিতে। আর দূর থেকে একজন উড়ে আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি একটা ছেলেকে দেখলাম যার পিঠে বারোটা সাদা ডানা রয়েছে। সবই ঠিক আছে শুধু তার চেহারা দেখতে পেলাম না। মুখের জায়গায় এতো উজ্জল সাদা আলো ছিলো যে চেহারা দেখতে পাচ্ছিলাম না। ছেলেটা আমাকে বলতে লাগলো,
.
–তাহলে তুমিই আমাকে এই বদ্ধ কারাগার থেকে মুক্তি করতে এসেছো। আমি এখানে কত সময় ধরে বন্ধ আছি সেটা আমি নিজেও জানি না। কিন্তু আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে সেটা আমি বুঝতে পারছি।(ছেলেটা)
.
–কে আপনি?(আমি)
.
–আমি কে? হ্যা সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ন একটা প্রশ্ন। আমি কে সেটা আমি নিজেই ভুলে গেছি। আমি যখন প্রথম চোখ খুলি তখন থেকে আমি এখানে বন্ধ। আমার এখানে থাকা ছাড়া শুধু একটা জিনিসই মাথায় আছে, একদিন একজন আমাকে এই জায়গা থেকে মুক্ত করতে আসবে। আর সেদিন আমি তার একটা ইচ্ছা পূরন করে এখান থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় হয়ে যাবো।(ছেলেটা)
.
–ওওওও। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি একজন এন্জেল। কিন্তু দুইটা ডানার বেশী কোনো এন্জেল হয় আমি সেটা কোনো দিন শুনিনি। আর আপনার তো মোট বারোটা ডানা।(আমি)
.
–এটা ঠিক আমিও বলতে পারছি না। আমি আর সময় নষ্ট করতে চাই না। তোমার ইচ্ছাটা কি সেটা আমাকে জানাও। আমি আমার এই মুক্ত জীবন থেকে বিদায় নিতে চাই।(ছেলেটা)
।।।
।।।
ছেলেটা যেভাবে আমাকে একটা ইচ্ছার কথা বলছে, তাতে আমার পড়া একটা কাল্পনিক কাহিনীর কথা মনে পরে গেলো। এক ব্যক্তি একটা সোনার লকেট পাই গুহার মধ্যে। এবং সেটা ঘষা দেওয়ার পর ভিতর থেকে একটা অন্যরকম মনস্টার বের হয়। মনস্টারটা লোকটাকে তিনটা ইচ্ছা বলতে বলে, যে তিনটা সে পূরন করে দিবে। এখন আমার সাথেও মনে হচ্ছে এরকম হচ্ছে। আমি নরতে পারছি না। আমি ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি না। শারিরীক ভাবেও কিছু করতে পারি না। আমার জন্য আমার বানানো একমাত্র বন্ধু একটু পরেই মারা যাবে। সব কিছু হচ্ছে আমি দুর্বল বলে। আজ আমি শক্তিশালী হলে আমার অনেক বন্ধু থাকতো। আর আমি আজকে সিলেক্ট হওয়া পাঁচশো জনের মধ্যে থাকতাম।
.
–আপনি মজা করছেন কিনা আমি জানি না। আমি এবং আমার এক বন্ধু কিছুক্ষনের জন্য মারা যাবো। মিলিটারিরা আমাদের পনেরোশো জনদের খুজে খুজে হত্যা করছে। আমি এভাবে মারা যেতে চাই না। আমি কোনো ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি না। শারিরীক দিক দিয়েও আমি একদম দুর্বল। আমি পাওয়ার চাই। পাওয়ার চাই যাতে আমি সবাইকে রক্ষা করতে পারি।(আমি)
.
–ঠিক আছে। এখন আজ থেকে আমার সমস্ত ক্ষমতা তোমার হয়ে যাবে। অবশ্য আমার ক্ষমতা পুরোপুরি শিখতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু একদম প্রয়োজনে এমনিতেই ব্যবহার করতে পারবে। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে এই জেলখানা থেকে মুক্ত করার জন্য। আশা করি আমার পাওয়ার গুলো ভালো কাজে ব্যবহার করবে।(ছেলেটা)
।।।।
।।।।
ছেলেটা হঠাৎ উধাও হতে লাগলো। ওর শরীর আলোতে পরিনত হয়ে গেলো। এবং সেই আলো গুলো আমার শরীরের ভিতরে চলে আসতে লাগলো। হঠাৎ আমার শরীর অনেক হালকা মনে হচ্ছিলো। আমি আমার ডান হাতের তালুর ক্ষত এর দিকে তাকালাম। সেটা এমনি এমনি ঠিক হতে শুরু করলো। আমি ডান হাতটা নারাতে চেষ্টা করলাম। হাতটা নারাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মাথায় তেমন কাজ করছে না কি হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনে হলো। মনে হচ্ছে আমি নিজেও এখন ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারবো। হয়তো ছেলেটার মতো আমার ও ডানা হবে। আমিও আকাশ দিয়ে উড়তে পারবো। সে যাইহোক আস্তে আস্তে আমি বইয়ের ভিতর থেকে বের হতে লাগলাম। আমার পুরো শরীর সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু হ্যারি অনেক গুরুতর আহত। আমার হাতের সাদা বইটা আসতে আসতে উধাও হয়ে গেলো। আমি ব্যাগে বাকি তিনটা বই রেখে দিলাম। পরে এটা নিয়ে রিসার্জ করা যাবে। আপাতোতো আমাকে হ্যারিকে নিয়ে এখান থেকে বের হতে হবে। এখানে বেশী ক্ষন থাকলে হয়তো ও বাচবে না। এমনিতেই হ্যারি বেহুস হয়ে পরে আছে নিচে। আমি ব্যাগটা কাধে নিলাম। এবার হ্যারির হাতে আমার হাত দিলাম ওকে কাধে নেওয়ার জন্য। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো পারবো না। কিন্তু এন্জেল ছেলেটার কথা তাহলে সত্যি। আমি এখন শক্তিশালী হয়ে গেছি। আমি হ্যারিকে আমার কাধে তুলে নিলাম। আমার মনেই হচ্ছে না আমি কাউকে আমার কাধে নিয়েছি। বরং নিজের শরীর আরো হালকা মনে হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমার শরীরের স্পর্শে আশার সাথে সাথে হ্যারির শরীরের ক্ষতও ঠিক হচ্ছে আস্তে আস্তে।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
কেমন হলো জানাবেন। এই পার্টে কিছু আবিষ্কার করলে কমেন্টে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here