#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
#সিজন_2#
পর্বঃ৪২
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমার শহর থেকে আমি বেরিয়ে গেলাম। এবার থরের সাথে উড়ছি না। বরং নিজেই আমার আগুনের সাহায্যে উড়ছি। এটাকে আমি নাম দিয়েছি একটা। নাম না দিলে কি রকম আজব লাগে। যেহেতু জেট এভাবেই ফিয়ল দিয়ে আকাশে উড়ে, তাই আমি এটাকে নাম দিয়েছি জেট স্কিল/ক্ষমতা৷ ডান পা এবং তালু দিয়ে হাই স্পিডে আগুন বের করলে অনেকটা সুরসুরি লাগে। থর পুরো স্পিডে মিওনিরের সাহায্যে উড়ে যাচ্ছে। আর এদিকে আমি তার স্পিডের সাথে তাল মিলাতে পারছি না। আমার এই ক্ষমতাটা নিয়ন্ত্রন করতেও সমস্যা হচ্ছে অনেক। কারন এক হাত এবং এক পা দিয়ে আগুন বের হলে আমার এক সাইড নিয়ন্ত্রনে থাকে, কিন্তু অন্যটা থাকে না। অন্যটা নিয়ন্ত্রনে না থাকার ফলে আমি বাম সাইডের দিকে বেশী হেলে যাচ্ছিলাম৷ এতে আমার স্পিডের সাথে দিক নিয়ন্ত্রনটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আমার মাথায় হঠাৎ আরেকটা বুদ্ধি আসলো। আমি এর আগে আমার গডহ্যান্ডকে ব্যবহার করেছিলাম কিন্তু তাতে কোনো ফল আসে নি। আমি পিঠের পাঁচ টা হাতকে যেকোনো আকৃতি দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারি। একদম যেকোনো আকৃতিই দিতে পারি, শুধু আমাকে সেই জিনিসটার আকৃতি সম্পর্কে ভাবতে হবে। আমি গডহ্যান্ডকে এর আগেও ব্যবহার করেছিলাম আমার ডানার আকৃতি দেওয়ার জন্য। তবে সেটায় কোনো কাজ হয় নি। ডানা বানালেও সেটা উড়তে সাহায্য করে না আমাকে। শুধু দেখতেই ভালো লাগে। কিন্তু আমি এবার আমার উড়াটা নিয়ন্ত্রন করার একটা বুদ্ধি পেয়েছি। পৃথিবীতে উড়োজাহাজ তৈরী হতো দুই সাইডে দুটো পাখাসহ। অবশ্য প্লেন এর মডেলটা পাখির ডানাকে দেখেই বানানো হয়েছিলো। প্লেন এর ডানা প্লেনকে নিচ থেকে উড়তে এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন রাখতেই ব্যবহার হয়। তাছাড়া সেখানে আসল কাজ ফিয়লের হয়ে থাকে। যাইহোক আমি সেটাই করতে পারি এখন। আমি যদি আমার এই জেট ক্ষমতার সাথে গড হ্যান্ড দিয়ে ডানা বানিয়ে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমি আমার শরীরের দিক নিয়ন্ত্রন ঠিক করতে পারবো। দেরী না করে আমি আমার পিঠ থেকে দুটো দুটো হাত বের করলাম। দুটো হাত দিয়েই দুই সাইডে বড় বড় দুটো ডানার আকৃতি দিলাম। এতো লম্বা এবং বড় ডানা কারো হয় না। আর আমার ডানা পাখির পালকের মতোও দেখতে না। স্বচ্ছ সাদা ডানা তৈরী হয় গডহ্যান্ড থেকে, যেটার এইপাশ থেকে ঔপাশ কিছুটা দেখা যায়। যেহেতু আগের দুনিয়ায় আমি ডানাকে নিয়ন্ত্রন করেছি, তাই দুটো হাত দিয়ে ডানা বানিয়ে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রন করা কষ্টকর হলো না। আমি ভেবেছিলাম আমি এই ডানা দিয়েই উড়তে পারবো, কিন্তু এই রিয়েলিটিতে সেটা কাজ হয় না। আমি এবার আমার ডান হাত এবং পায়ের তালু থেকে আরো স্পিডে আগুন বের করতে লাগলাম। যেটা আমাকে আরো স্পিডে সামনে পাঠাচ্ছে। আর দুটো ডানা বানানোর ফলে এবার আমার দিক নিয়ন্ত্রনে থাকছে। আমার আর সমস্যা হচ্ছে না। থরকে আমি আমার এট্রিবিউটের আগুনের পুরো স্পিডেও ধরতে পারলাম না। থর আমার পাশে এসে বলতে লাগলো?
.
–কি হলো হাপিয়ে গেলে নাকি?(থর)
.
–আপনাকে ধরা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনার মিওনির এক ডাইমেনশন থেকে আরেক ডাইমেনশনে আলোর বেগ থেকে দশগুন দূরতে চলাচল করতে পারে। আর সেখানে আমি কিছুই না।(আমি)
.
–তোমার কাছে তো আরো একটা অস্ত্র রয়েছে যেটার সঠিক ব্যবহার তুমি জানো না।(থর)
.
–কি সেটা?(আমি)
.
–এক্সোনিয়া, শুধু ডাইমেনশন পোর্টালের জন্য ব্যবহার করা হয় না। বরং ডাইমেনশন স্পেস ব্যবহার করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়াও যায়।(থর)
.
–কিভাবে?(আমি)
.
–এটা ড্রাকুলা আমাকে বলেছিলো, যখন ওর হোটেলটা তোমার থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়।(থর)
.
–এই প্রশ্নটা আমারও। তার হোটেল কিভাবে অন্য জায়গায় গেলো?(আমি)
.
–ড্রাকুলার কাছে তার পুরো হোটেলকে টেলিপোর্ট করার ক্ষমতা রয়েছে। তুমি যখন পোর্টাল তৈরী করলে, তখন সেখানে এক্সোনিয়ার সাহায্যে একটা ডাইমেনশন স্পেস তৈরী হয়েছিলো। তুমি তখন যেখানের চিত্র সঠিক ভাবে মনে করবে সেখানেই টেলিপোর্ট হয়ে যাবে।(থর)
.
–আপনার কথা আমি বুঝতে পারি নি।(আমি)
.
–আচ্ছা তাহলে জিনিসটা আমি দেখিয়ে দিচ্ছি তোমাকে৷ তবে প্রথমে নিচে নামতে হবে।(থর)
।।।।
।।।।
আমি নিচে নেমে গেলাম থরের সাথে। এরপর থর আমাকে বলতে লাগলো।
.
–এবার একটা স্লাইস দিয়ে একটা পোর্টাল তৈরী করো।(থর)
.
–হ্যা।(আমি পোর্টাল তৈরী করলাম লিম্বোতে যাওয়ার জন্য)
.
–এবার তুমি মনে মনে লিম্বোর কথা ভাববে না। যেহেতু তুমি পোর্টাল তৈরী করেছো, তাই তুমি যেখানের কথা ভাববে সেখানেই তোমাকে পাঠিয়ে দিবে।(থর)
.
–আচ্ছা আমি ঔ পাশের গাছের উপরে যাওয়ার কথা ভাবছি।(আমি)
.
–আচ্ছা এবার যেখানে স্লাইস দিয়েছিলে, সেখানে আরেকটা স্লাইস দিয়ে প্লাস চিহ্ন করো। এতে তোমার জন্য ডাইমেনশম স্পেস তৈরী হবে। এবং সেটা তোমাকে তোমার ভাবনার জায়গায় টেলিপোর্ট করে নিয়ে যাবে।(থর)
।।।
।।।
থরের কথা আজব লাগলো। তারপরও চেষ্টা করে দেখলাম। আরেকটা স্লাইস দিয়ে প্লাস বানালাম। তখন গাড়ো মাটি কালারের মতো একটা রঙ ছিলো কিন্তু এবার পোর্টাল নীল রঙের হয়ে গেলো। আমি ঢোক গিলে সেটার ভিতরে ঢুকে পরলাম। এবং বের হলাম সোজা আকাশের উপর থেকে। নিচে দিকে পরতে লাগলাম। নিচে থর দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেখান থেকে পোর্টালে ঢুকেছি আমি তার অনেক উপর থেকে বের হয়েছি। আমি এবার জেট ক্ষমতার ব্যবহার করলাম না। বরং পাঁচটা হাত বের করলাম পিঠ থেকে, এবং তাদেরকে আমি নিচে পরার আগে আমার পায়ের নিচে মেঝের মতো বানিয়ে নিলাম। এবং হাত গুলো মাটিতে পরার আগেই আমি একটা লাফ দিলাম। এতে করে আমার স্পিড পুরো স্বাভাবিক হয়ে গেলো লাফ দেওয়ার ফলে, এবং আমি থরের সামনে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে গেলাম। এভাবে যত উপর থেকেই পরি না কেনো। নিচে আমার তৈরী গডহ্যান্ডের মেঝে স্পর্শ করার কিছুটা আগে যদি আমি লাফ দেই তাহলে আমার কাছে মনে হবে আমি এক ফিট উচ্চতা দেখে লাফ দিয়েছি। যাইহোক এটা অনেক ক্ষতিকর। একটু এদিক সেদিক হলেই সব শেষ।
.
–মনে হচ্ছে তোমার ট্রেনিং এর প্রয়োজন এটা নিয়ে। কিন্তু প্রথম বারে যে করতে পেরেছো এটাই অনেক।(থর)
.
–হ্যা। তবে আমি বুঝতে পারতেছি না ড্রাকুলা এটা ব্যবহার করেছিলো কিভাবে? আমি তো তখন ডাবল স্লাইস দিয়েছিলাম না।(আমি)
.
–তুমি কি জানো না? আগের দুনিয়ায় এগারো টা ডাইমেনশন ব্লেড ছিলো ঠিক এক্সোনিয়ার জন্য। আর এগারোটা এক এক দুনিয়ার এক একজনের কাছে সুরক্ষিত ছিলো।(থর)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–ড্রাকুলার কাছে মনস্টার ওয়ার্ল্ড এর ব্লাড সোর্ড লুকারিও রয়েছে।(থর)
.
–ওওও।(আমি)
.
–ড্রাকুলাকে দুটো স্লাইস দিতে হয় না। সে লুকারি এর ব্যবহার অনেক ভালো ভাবে করতে পারে, তার শুধু একটা স্লাইসই প্রয়োজন হয়।(থর)
.
–এখন বুঝতে পেরেছি কিভাবে ড্রাকুলা আগের রিয়েলিটি ধ্বংসের আগেই লিম্বোতে যেতে পেরেছে। কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। যদি তার কাছে এক্সোনিয়ার মতো ডাইমেনশন ব্লেড থাকে তাহলে সে তো এখানে অনেক আগেই আসতে পারতো। সেটা করলো না কেনো?(আমি)
.
–ডাইমেনশন ব্লেড যেটাকে বলা হয়, সেটা এগারোটার এক একটা ক্ষমতা রয়েছে। এবং সেই ক্ষমতা তাদের রিচার্জও করতে হয়। আমাদের এজগার্ডেও একটা ছিলে, যেটার নাম ছিলো হোফান্ড। সেটা হাইমডালের কাছে ছিলো। এবং বাইফ্রোস্টের ব্রিজ নিয়ন্ত্রন করা হতো সেটা দিয়ে। সেটা তার ব্যবহারকারীকে এরকম ক্ষমতা দিতো যে, সে পুরো দুনিয়ার সবাইকে দেখতে এবং শুনতে পারবে, কিন্তু এর বদলে ব্যবহারকারী সমস্ত জীবন তলোয়ারকে দিয়ে দিতে হতো। ঠিক বাকি তলোয়ারদের ব্যবহার করার জন্যও কিছু প্রয়োজন হয়।(থর)
.
–এটা তো আমি জানতাম না।(আমি)
.
–হ্যা। যেমন তোমার এক্সোনিয়া। এটা চাদের আলো থেকে তার ক্ষমতা গ্রহন করে এবং সেটা ব্যবহার করে। যদি তুমি রাতে চাদের আলোর নিচে এক্সোনিয়া ব্যবহার করো তাহলে সেটা অনেক ভয়ানক হবে।(থর)
.
–আর ড্রাকুলার লুকারিও?(আমি)
.
–সেটার নামই দ্যা ব্লাড সোর্ড। সেটার জন্য মানুষের রক্ত প্রয়োজন হয়। মানুষের এক ফোটা রক্তের মাধ্যমে একবার ডাইমেনশন স্লাইস ব্যবহার করা যায়। আর রক্ত না থাকলে সেটা ব্যবহার করা যাবে না। ড্রাকুলা সেটা ব্যবহার করতো না। তার জীবন পৃথিবীর ইংল্যান্ডে ভালোই যাচ্ছিলো। তবে ভয়ানক কিছু একটা হবে সেটা সে আগেই বুঝতে পেরেছিলো তার টেলিপ্যাথিক ক্ষমতার মাধ্যমে। তাই সে তারা তারি করে একজন মানুষের থেকে কিছুটা রক্ত লুকারিও কে দিয়ে তার পুরো হোটেলকে টেলিপোর্ট করে লিম্বোতে নিয়ে যায়।(থর)
.
–এখন আমি পুরো কাহিনী বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা তাহলে চলুন ড্রাকুলার কাছে যাওয়া যাক।(আমি)
.
–হ্যা।(থর)
।।।
।।।
থরের কাজ থেকে অনেক কিছুই জানতে এবং শিখতে পেরেছি। অবশ্য জ্ঞানই শক্তি। যার যত জ্ঞান আছে সে ততই শক্তিশালী। আমি এতোদিন এতোকিছু জানতাম না বলে এসব করতে পারবো এটা ভাবি নি কখনো। কিন্তু থরের সাহায্যে এখন নতুন কিছু জানতে পারলাম। এটা আমাকে ভালোই সাহায্য করবে সামনে। এবার আমি উড়ছি না বরং থরের হাত ধরেছি আমার পিঠ থেকে একটা গডহ্যান্ড বের করে। অনেকটা বলা যায় আমি ঝুলে আছি। মনে হচ্ছে আমার পিঠের সাথে কেউ দড়ি দিয়ে বেধে রেখেছে। থর এতো স্পিডে উড়ে যাচ্ছে যেটার কারনে আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। মিওনির এর এতো স্পিড আমি আজকে ভালো ভাবে বুঝতে পারলাম। আমাদের এই নতুন দুনিয়াটার আকার অনেক বড়। পৃথিবীর ভাষায় বললে এটা অনেক বড় গ্রহ। পৃথিবীর আকারের থেকে বিশগুন বড় একটা গ্রহ, যেটার মধ্যে এতোদিন তিনটা রাজ্য ছিলো। রাজ্যগুলোর সবচেয়ে ছোট শহর গুলোও অনেক বিশাল সাইজের। কিন্তু সেগুলো ক্যাপিটালের তুলনায় অনেক ছোট। যাইহোক এতো বড় গ্রহের ঘূর্নন দিতে থরের কিছু মুহুর্ত লাগবে যদি থর তার মিওনির এর পুরো স্পিডে উড়ে। তারপরও এখন যেভাবে উড়ছে সেভাবে মনে হচ্ছে এক ঘন্টা লাগবে পুরো গ্রহ একবার ঘুরে আসতে। আমাদের বেশীক্ষন লাগলো না ড্রাকুলার হোটেলে পৌছাতে। আরো আগে থরের হাত ধরে আসলে হয়তো আরো আগে চলে আসতাম। ড্রাকুলার হোটেলটা বিশাল একটা জঙ্গলের মাঝখানে অবস্থিত। যেটাকে দেখায় যাবে না পাশ থেকে। আমি এবং থর ঢুকে পরলাম ড্রাকুলার নতুন প্যালেসে। জানি না সে আমাকে কি বলবে।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
অপেক্ষা করুন পরবর্তী পার্টের জন্য। কেমন হলো জানাবেন।