যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:12
লেখনিতে:মৌসুমী
.
.
তুলতুল পড়ে যাবে মা,আস্তে হাঁটো,দৌড়াচ্ছো কেনো?কেউ তোমাকে ধরছে কি তুলতুল?
বাবাই আমি আল খাবো না তুমি যাওতো।আমি এখন খেলবো,তুমি ওগুলো খেয়ে নাও বাবাই।খিচুলি খুব ঝাল,আহ আহ..কত ঝাল।
কৈ ঝাল আমি তো তোমার আগে খেয়েছি,খুব ভালো খেতে।আর এখন ঝাল না খেলে ঝাল খাওয়া শিখবে কিভাবে।এত বড় হয়ে গেছো এখুনি ঝাল না খেলে চলে?
আমি তো এখুনো ছোত বাবাই ,বল (বড়)তো তুমি।আমি এখুনো বাবু বুঝেছো বাবাই?
তুমি ছোট কে বললো তোমার বয়স সাড়ে তিন,আর কিছুদিন পর চার হবে।তারপর তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিবো।আর বলে ও বাবু।
বাবাই আমি ইস্কুলে যাবোনা।আমি পলবোনা।
তো কি করবে ,পড়বেনা তো?
বাবাই আমি বিয়ে কলবো,তোমার আর মাম্মামের মত।
কিহ?কি বললে বিয়ে?কি কথা বলেরে এই পাজি মেয়ে,ধরতো এই মেয়েকে।
খিল খিল করে হাসতে হাসতে ছুটে পালালো তুলতুল।ফয়েজ অবাক মেয়ের এমন কথা শুনে।এইটুকু মেয়ে বলে বিয়ে করবে পড়বেনা,ভাবা যাই।জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো ফয়েজ।
সবাই তৈরি হয়ে নাও ,সাহেদা ফোন করছে বার বার,জামান সাহেব উঠানে দ্বাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বললো সবাইকে।
জমিলা বেগম জামান সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো,হয়রে ব্যাটা যাবে তো,সব জামা-কাপড় পড়ছে কিন্তু আকাশে আবার যেই ম্যাঘ উঠ্যাছে,কখন আবার পানি ফুটতে শুরু করে।
সমস্যা নাই মা,গাড়ি আছে রেডি করা,বেশিক্ষণ তো লাগবেনা।তুমি চিন্তা করো না।
নিরা যাবিনা ক্যান বলতো,একা একা কি করবি ?চল ভালো লাগবে।
না আপু আমি যাবোনা,আমি দাদির সাথেই থাকবো।তারপর আরোতো কয়েকজন আছে বাড়িতে সমস্যা নাই।তোমরা ঘুরে আসো।
নিহা তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে,ওই না গেলে না যাবে।নিরার দিকে চোখ গরম করে বললো মাহফুজা বেগম।
নিরা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন টিপতে বসলো।মাহফুজা বেগমের চোখ গরম করাকে পাত্তা না দিয়ে।
বেড়াতে এসে ঘরে বসে থাকলে চলে ,যাবিনা যখন তখন আর কি বলবো।থাক তাহলে,দাদিকে বেশি জ্বালাসনা আবার।
ফারদিন যাবোনা যাবোনা করতে করতেও যাচ্ছে এখন।নাইমার জ্বালা আবার কিছুক্ষণ সহ্য করতে হবে।এখন সবার কথা ফেলতেও পারছেনা।সাহেদা বেগম ও বার বার বলে গেছে।সব ভেবে চিন্তে গাড়িতে বসলো সে।ফয়েজ গাড়ি চালাচ্ছে,পাশে ফারদিন,পেছনে নিহা,মিতু,তুলতুল আর নিহার আরো একটা পিচ্চি চাচাতো ননদ।ফয়েজের ছোট চাচার মেয়ে।আর বাকিরা অটোতে,কেউ বাইকে।
ফারদিন মনে মনে ভাবছে নিরার কথা,নিরা কৈ?পরে ভাবলো হয়তো অন্য গাড়িতে আছে,এই গাড়িতে যাবেনা তাই এটাতে বসেনি।নিহারা পেছনে বসে বসে গল্প করছে।এদিকে আকাশেও ঘন কালো মেঘ,কখন জানি মুষলধারে শুরু হয়ে যাই বৃষ্টি।
বর্ষাকালে বেড়াতে এসে শান্তিমত বেড়াতেও পারছেনা সব।সাহেদা বেগমের বাড়িতে সবাই পৌছানোর দশ মিনিটের মধ্যেই সেই জোরে ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।ভাগ্যিস রাস্তাতে থাকতেই শুরু হয়নি বৃষ্টি,নাহলে অটোতে যারা ছিলো তারা অর্ধেক ভিজে যেতো।
সাহেদা বেগম তার বিশাল বড় রান্নাঘরে মাটির চুলায় রান্না বসিয়েছে।সবাইকে পিঠা খেতে দিয়েছে।সকাল সকাল পাকোয়ান পিঠা ভেজে রেখেছিলেন সাহেদা বেগম।
টিনের চালের ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে,সেই শব্দের আওয়াজ কানে নিতে নিতে পিঠায় এক কামড়,দু কামড় করে দিচ্ছে আর পেটে পিঠা চালান করছে ফারদিন,দৃষ্টি তার বৃষ্টির এক একটা ফোটার দিকে।টিনের চাল থেকে গড়িয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। নাইমা আজকেও সাজের বাহার মুখে নিয়ে ফারদিনের সামনে সামনে ঘুরছে নাইমা।পড়নে টকটকে গোলাপি রঙের কামিজ।সহজেই চোখে পড়বে নাইমাকে যে কারো,কিন্তু যাকে দেখানোর জন্য নাইমার এই সাজ সেই ফারদিন একধ্যানে তাকিয়ে আছে উঠানের দিকে।
ফারদিন ভাবছে নিরার কথা,নিরা কোথায়,এখানে সবাইকেই দেখা যাচ্ছে, শুধু নিরাকে দেখতে পারছেনা সে।নিরা কি আসেনি এখানে?
গাড়ি থেকে নেমেও দেখেনি তাকে।কাউকে জিঙ্গেসো করতে পারছেনা নিরার কথা।
ফারদিন ভাইয়া পিঠ্যা লেন,নাইমার কথায় ফারদিন চোখ ঘুরিয়ে নাইমার দিকে তাকালো।ঝকঝুকে সাদা দাঁত বের করে হাসি হাসি মুখে দ্বাঁড়িয়ে আছে নাইমা,ঠোঁটে আজ গোলাপী লিপস্টিক।
না আর নিবো না,তুমি অন্যদের দাও।
একটা লেন ফারদিন ভাইয়া..
না নাইমা আর নিবো না।
আচ্ছা লিবেন না যখন তাহিলে থাক।
নাইমা চলে গেলো পিঠা নিয়ে,নাইমা যেতেই ফারদিন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
দূরে একটা চেয়ারে বসে থেকে এখন নাইমা ফারদিনকে দেখছে।ফারদিন দেখেও না দেখার ভান করে উৎস আর সিফাতের সাথে কথা বলছে।নাইমার দিকে তাকাচ্ছেনা।তবু একটা কেমন অস্বস্থি লাগছে ফারদিনের।
পানি তো ভালোই হছেরে বোহিন,কিছু খাব্যা নাকি?মুড়ি দিই চানাচুর আর ত্যাল দিয়া ম্যাখ্যা?
না দাদি আপনি বসে থাকেন।আচ্ছা দাদি আপনি কখনো ভূত দেখেছেন?গভীর আগ্রহ নিয়ে জমিলা বেগমের কাছে জানতে চাইলো নিরা।
ভূত বুল্যা কিছু নাই তবে জ্বিন আছে।কত দেখ্যাছিরে বোহিন।আগেতো কারেন টারেন ছিলোনা।আমরা ছোট থাকতে রাতের বেলা দেখতু বিলের মধ্যে দিয়্যা আগুনের গুলা চল্যা যাছে।আমার বাপের বাড়ি ছিলো বিলের ধারে।মেলা রাতে গরমে ঘুম না আসলে আমরা সব উঠ্যানে থাকতু বস্যা।আর আমার বাপ অত ধণি ছিলোনাতো তাই বাড়িডাও ভালো করে ঘিরা ছিলোনা।পায়খানাও তেমন ছিলোনা আগে বাড়ি বাড়ি তয় থাকলেও বাড়ির বাহিরে পায়খানা করতো সব।রাতের বেলা ভয়ে একা যাতু না ভয়ে।আবার মেলা ওসব লিয়্যা গপ্প ও শুন্যাছি ।একদিন দফরবেলা আমরা কজন খেলার লেগ্যা বিলের দিকে যাছি,খাড়া দফর আর বড় দিন।বাহিরে তেমন কেহু ছিলোনা।দেখছি এক জাঘাতে বড় বড় সাদা চুল মেল্যা সাদা শাড়ি পড়ি গাছের ওপর বস্যা আছে একটা জ্বিন,আমরা চার পাঁচজন ছিনু ,পিছন থেক্যা দেখ্যাই এক দৌঁড় সব।তারপর থেক্যা খাড়া দফরবেলা আমরা খেলতে বারহাতু(বের হতাম না)।
মুখ দেখেননি দাদি?
না বোহিন দেখিনি।
বৃষ্টি এখন আর হচ্ছেনা।সাহেদা বেগমের রান্নাবান্নাও শেষ।ছেলেদের বসিয়ে দিয়েছে আগে খাওয়ানোর জন্য।সবাই মাটিতেই খেজুরের পাটির ওপর বসেছে।ছেলেদের হয়ে গেলে মেয়েদের খাওয়ার পালা।গরুর গোশত,হাঁসের গোশত,পুকুরের বড় রুই মাছ,আলুর ভাজি,ডিম ভুনা,শসার সালাদ,কালায়ের ডাল।গরুর দুধের পায়েশ রান্না করেছেন সাহেদা বেগম।তার অনেকগুলো রাজ হাঁস,পাতি হাঁস আছে ।একটা রাজ হাঁস রান্না করেছেন।আর নিজের পুকুরের ই রুই মাছ।গরুও আছে তার,সেই গরুর দুধ দিয়েই পায়েস রান্না করেছেন।ভাইটা তার অনেকদিন পর এসেছে তারপর আবার সাথে বেয়াই,বেয়ানকে নিয়ে।তাই তিনি যতটুক পেরেছেন আয়োজন করেছেন।
নাইম খেতে খেতে নিহাকে বললো ,ভাবি আপনার বোন আসলোনা ক্যান?
নিহা একপাশে বসে তুলতুলকে খাওয়াচ্ছে।নাইম ও ওদিকেই বসেছে তাই নিহাকে নিরা কথা জিঙ্গেস করলো সে।
নাইমের কথা শুনে এখানের একজন চোখ গরম করে তাকলো তার দিকে,খাওয়া থামিয়ে।
- চলবে..