যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:16
লেখনিতে :মৌসুমী
উঠবেনা নাকি আজ,আটটা বেজে গেছে,নতুন বৌ তুমি এখন,এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমালে চলে।কোথায় বাড়ির কাজ কাম করবে,বাড়ির মানুষদের কাজে সহযোগিতা করবে তা না পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
আয়নার সামনে দ্বাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে আর নিরাকে কথাগুলো বলছে ফারহান।নিরা ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।শাড়ির অবস্থাও যাচ্ছে তাই।দুই হাত দিয়ে চোখ দুটি কচলিয়ে শাড়ি ঠিক করতে করতে নিচে নামলো নিরা।
ফারহান আয়না দিয়ে দেখছে নিরার অবস্থা।
শাড়িটা কোন রকম পেঁচিয়ে দরজার কাছে গেলো ।দরজা খুলে সে যেই ঘরে থাকতো সে ঘরে গিয়ে দরজা লাগালো।ফারদিন সব দেখলো কিছু বললোনা।কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো নিরা।সালোয়ার কামিজ পড়েছে সে।চু্লগুলো বেঁধে মাথায় ঘোমটা দিয়েছে।বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে আছে ফারদিন।সে নিচে যাইনি।নিচে যেতে কেমন মেয়েদের মত তার ও লজ্জা লাগছে।কাল যা হয়ে গেলো।কারো সাথে কথা বলা দূর চোখে চোখ রেখে তাকাতেও পারবেকি সেটায় সন্দেহ লাগছে তার।
ফারদিনকে পাশ কাটিয়ে নিচে চলে গেলো নিরা।রান্নাঘরের সামনে মাহফুজা বেগম,ফজিলা বেগম বসে আছে।উৎস আর সিফাত বারান্দায় বসে মোবাইলে কি যেনো গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে।নিরা নিচে নামতেই জমিলা বেগমের সাথে তার দেখা।জমিলা বেগম নিরাকে দেখে একটা হাসি দিলো তারপর আবার গম্ভির হয়ে গেলো।
কলতলা থেকে তুলতুলকে বকতে বকতে নিয়ে আসছে নিহা।বকার কারণ সে নাকি উঠানের কাঁদা হাত দিয়ে নাড়ছিলো আর খেলছিলো,সারা গাঁয়ে কাঁদা মেখে ভূত হয়ে গেছিলো।নিহা এখন তাকে পানি দিয়ে ধুইয়ে নিয়ে আসছে।
নিরাকে দেখেই তুলতুল খালামণি বলে ডাকলো।নিরা একটা হাসি দিয়ে তুলতুলের কাছে এগিয়ে গেলো।উপরের বারান্দা থেকে ফারদিন সব দেখছে।
তুলতুলের খালামণি ডাক শুনে সবাই সেদিকে তাকালো।কেউ কিছু বললোনা সবাই চুপচাপ।মাহফুজা বেগম এখনো খুব রেগে আছে,কোন কথা বললেন না তিনি নিরার সাথে।ফজিলা বেগম নিরাকে বললেন,তোমাদের দুজনের খাবার টেবিলের ওপরে আছে,ঘরে নিয়ে গিয়ে ফারদিনকে দিও আর নিজেও খেয়ে নিও যাও।
আর শোনো সব গুছিয়ে নাও,আমরা আজ বিকেলেই চলে যাবো বাড়িতে।
নিরা মুখে কিছু বললোনা ঘাড়টা কাত করে সেখান থেকে টেবিলের কাছে গেলো।
যদি খেতে চান তাহলে ঘরে আসেন।ফারদিনকে কথাটা বলেই খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলো নিরা।টেবিলের ওপর রেখে জগটা নিয়ে পানি আনার জন্য আবার বের হলো সে।
পানি নিয়ে এসে দেখে ফারদিন রুটি মুখের ভিতর নিয়ে চাবাতে ব্যস্ত।
হ্যাঁ হ্যাঁ আমি এক্ষুনি বের হয়ে যাচ্ছি।না দেরি হবেনা,আমার সাথে গাড়ি আছে।আপনারা অপারেশনের জন্য সব ব্যবস্থা করে রাখেন।ওকে তাহলে রাখছি।
নিরা শোনো আমার এখুনি হসপিটালে যেতে হবে।আমার জামাকাপড় গুলো আম্মাকে নিয়ে আসতে বলো আমি এখুনি বের হয়ে যাচ্ছি।
তাড়াহুড়ো করে গাড়ির চাবিটা নিয়ে জমিলা বেগমকে বলে আর ফজিলা বেগমকে কোনরকম বলে ফারদিন বেড়িয়ে গেলো।আর থাকা যাবেনা ও কাল ই যেতো কেউ না গেলেও।ওদের ওভাবে বিয়ে হয়ায় সবাই আজ বিকেলেই চলে যাবে।হসপিটাল থেকে ফারদিনের ডাক আসায় এখুনি যাচ্ছে সে।
নিরা বুঝতে পারছেনা সে কোন বাড়ি যাবে।কেউ তাকে কিছু বলছেও না।নিহাও সেভাবে কথা বলছেনা তার সাথে।গাড়ির জানালায় হেলান দিয়ে বসে ভাবছে কাউকে জিঙ্গেস করবে কিনা ।মনে মনে সে চাইছে নিজের বাড়িতেই যেতে।দেখা যাক কি হয়।কাউকে জিঙ্গেস করা যাবেনা নাহলে সবাই অন্যকিছু ভাবতে পারে।
গাড়ি এসে থামলো নিরাদের বাড়ির সামনে।নেওয়াজ সাহেব প্রথমে নামলেন গাড়ি থেকে তারপর উৎস নেমে আসলো।মাহফুজা বেগম আস্তে আস্তে বের হলেন গাড়ি থেকে।নিরা সবার দিকে একবার তাকালো সবাই চুপচাপ বসে আছে,কেউ কিছুই বলছেনা।নিরা আর কিছু না ভেবে নেমে আসলো গাড়ি থেকে।নিরা নামার পর ই গাড়িটা আবার চলতে শুরু করলো মিরের চকের উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে ঢুকেই নিরা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।তারপর কাঁন্নায় ভেঙে পড়লো।নেওয়াজ সাহেব,মাহফুজা বেগম,উৎস তিনজনি শুনতে পাচ্ছে নিরার কান্নার আওয়াজ কিন্তু কেউই দরজার কাছে গিয়ে তাকে স্বাত্বনা দিলোনা।ওরাও নিরার ওপর রেগে গেছে।আর লজ্জায় তাদের মুখ দিয়ে কোন কথাও বের হচ্ছিলোনা সেখানে নিরাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা কিভাবে বলতো তারা ফারদিনের বাবা মাকে।
রাত একটা বেজে ত্রিশ মিনিটে ফারদিনের গাড়ি এসে থামলো বাড়ির গেটের সামনে।ক্লান্ত ভঙ্গিতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুললো।বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চয়।কেমন শান্ত শান্ত হয়ে আছে পুরো বাসাটা।আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো ফারদিন।ডেসিংটেবিলের ওপর মোবাইল,ঘড়ি ,গাড়ির চাবি আর মানিব্যাগটা রেখে ওয়াসরুমে গেলো ফ্রেস হয়ার জন্য।ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে না খেয়েই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।ঘুমে চোখ মেলে তাকাতে পারছেনা ।এমন সময় হঠাৎ নিরার কথা মনে পড়লো,তাদের বিয়ের কথা মনে পড়লো,এতক্ষণ কাজের চাপে আর ক্লান্তিতে নিরার কথা মনে পড়েছিলোনা ফারদিনের।সাড়া ঘর একবার চোখ বুলিয়ে উঠে বসলো সে বিছানার ওপর।মনে মনে বললো,নিরা কোথায়,এ ঘরে নাই,মনে হয় গেস্টরুমে আছে।নিরা এ বাড়ি আসলে গেস্টরুমেই ঘুমাতো।নিরা গেস্টরুমে ঘুমিয়েছে এটা ভেবেই আবার ফারদিন শুয়ে পড়লো।কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়েও পড়লো।
”
”
”
”
-মা কেমন আছো?
-এইতো বাবা আলহামদুলিল্লাহ,
-মা খালাদের বাসায় গিয়েছিলে?
-নারে তাসিফ যাওয়া হয়নি,কদিন ধরে খুব ব্যস্ত আছি।যাবো একদিন সময় করে।তুই আয় তারপর একসাথে গিয়েই বিয়ের বিষয়ে তোর খালা-খালুর সাথে আলাপ করবো।সেটাই ভালো হবে।
-নিরাকে ফোন দিচ্ছি ধরছেই না,দেখি পরে আবার ফোন দিবো।আচ্ছা ভালো থাকো ।
”
”
”
”
ভোরের আলো ফুটে উঠছে চারিদিকে।পাখির কিচির মিচির ডাক শুনতে শুনতে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে নিরা।ফজরের নামাজ পড়ে আর না শুয়ে কফি বানিয়ে ছাদে চলে এসেছে নিরা ভোর হয়া দেখতে। রাতে অনেক কাঁদার ফলে মাথা ব্যাথা করছিলো তার।এখনো একটু একটু আছে।ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তাসিফ ফোন দিয়েছে।কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা বলে ফোনটা একপাশে রেখে দিলো।রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে কয়েকটা পথচারী হেঁটে যাচ্ছে রাস্তার ফুটপাত ধরে।দূরে দেখা যাচ্ছে কয়েকটা রিক্সা প্যাডেল মেরে আসছে এদিকেই।নিরারো ইচ্ছা করলো হাঁটতে তাই সে ছাদ থেকে নেমে নিজের ঘরে গেলো তারপর বোরখাটা আর হিজাপটা পড়ে বের হলো রাস্তায়।হাঁটতে হাঁটতে সে এখন যাবে স্টেশনে।রাজশাহী স্টেশন সাগরপাড়া থেকে বেশি দূরে না।হেঁটে গেলেও বেশি দূর হবেনা।
”
”
”
”
ফারদিন রুম থেকে বের হয়ে দেখে বাড়ির সবাই টেবিলে বসে নাস্তা করছে।ফয়েজকে দেখতে পাচ্ছেনা,সে হয়তো তার কাজে বেড়িয়ে গেছে।গুটি পায়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতেই ফজিলা বেগম বললেন ,বসে পড়,খেয়ে নে।ফারদিন একটা চেয়ার টেনে বসলো।জামান সাহেব ফারদিনকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলেন।যাওয়ার আগে নিহাকে বললেন,বৌমা আমার চা টা আর আজকের পেপারটা আমার রুমে পাঠিয়ে দাও।ফারদিন বাড়ির চারদিকে তাকিয়ে নিরাকে খুঁজছে।কাউকে নিরার কথা জিঙ্গেস করতেও পারছেনা লজ্জায়।চুপচাপ মাথা নিচু করে নাস্তা খেয়ে রুমে গেলো সে রেডি হতে।আজ দিনেই ডিউটি আছে তার হসপিটালে।এমনিতে দেরি হয়ে গেছে তাই নিরা কোথায় সেদিকে ধ্যান না দিয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে শুরু করলো।
চলবে।