সংগোপনে’ পর্ব-৩৬

0
1490

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৩৬
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

এই আমি কিছু দেখিনি, কিছু দেখিনি।

এমন একটা সময়ে হঠাৎ কারও শব্দ পেয়ে আলেখ আর কুহেলি প্রায় ছিটকে সরে গেল দুদিকে। কুহেলি বেচারি তো লজ্জায় কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না, আলেখের অবস্থাও তথৈবচ। আর এদিকে দিঠি বেচারিও লজ্জায় পড়ে গেছে, তবে লজ্জার থেকে মজা পেয়েছে বেশি, কুহেলির পিছনে লাগার জন্য বেশ জব্বর একটা বিষয়বস্তু পেয়ে গেছে। যাই হোক, দিঠি ওদের জন্য জলখাবার নিয়ে এসেছিল, দরজাটা ভেজানো ছিল আলতো একটু ঠেলতেই খুলে যায় আর তারপরের ঘটনা তো জানা। আচ্ছা মেয়ে বটে! আরে এমন নব দম্পতিদের ঘরে যে নক না করে ঢুকতে নেই এটুকু সাধারণ জ্ঞান থাকবে না! দিঠি জলখাবারের ট্রে টা নিয়ে পিছন ঘুরে দাড়িয়ে আছে, কুহেলি একটু সামলে নিয়ে বলল,

আরে দিঠি আয়।

আলেখ ততক্ষণে আবার গিয়ে খাটের উপর বসে ফোনে মন দিয়েছে, মানে দেখাতে চাইছে যে সে ফোন নিয়েই মহা ব্যস্ত অন্যদিকে একেবারেই খেয়াল নেই। দিঠি জলখাবারের ট্রে টা ঘরের ছোট্ট টি টেবিলটায় নামিয়ে রেখে কুহেলির কাছে এসে বলল,

মাসি তোদের জল খাবার পাঠাল।

তুই খেয়েছিস?

হুম, খেয়েছি তো।

বলে দিঠি ফিক করে হেসে বলল,

আমি কিন্তু সত্যিই কিছু দেখিনি।

কুহেলি ওর বড় বড় চোখ দুটো আরও বড় করে বলল,

দিঠি!

চোখ রাঙিয়ে লাভ নেই, বুঝেছিস।

তারপর ওর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,

বেশি কথা বললে বাড়ির সবাইকে বলে দেব বুঝেছেন ম্যাডাম?

কুহেলি পড়ল মহা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে, একি যন্ত্রণা! ইশ, কি লজ্জার ব্যাপার। আর এই দিঠির কোনও ভরসা নেই, হয়তো সত্যিই গোটা বাড়িময় রাষ্ট্র করে বেড়াল। দিঠি কুহেলির মনের অবস্থাটা কিছুটা আন্দাজ করে হেসে বলল,

ভয় নেই, তোদের এই প্রেমালাপের সংবাদ আপাতত কাউকে জানাচ্ছি না, তবে বলছিলাম কি, দরজাটা একটু বন্ধ করে নিলেই তো হত, তাহলে তো আর কোনও সমস্যাই হত না। এটা সাবেকি জমিদার বাড়ি বলে কথা, একেবারে পাকাপোক্ত খিল দেওয়ার ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত বহাল আছে। সেটার একটু ব্যবহার করতে পারতিস তো! ভাগ্যিস আমি এসেছিলাম অন্য কেউ এলে!

কুহেলির মনে হল মাটিতে মিশে যেতে পারলে ভালো হত। আর আলেখ… দিঠি যতই আস্তে বলুক না কেন সবই তার কানে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে তার কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই। যেন সে এখানে উপস্থিতই নেই! এক মনে ফোন নিয়ে বসে রয়েছে। তাই দেখে কুহেলির মনে মনে ভিষন রাগ হল, সব নষ্টের গোড়া উনি আর এখন এমন ভাবে বসে আছে যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। দিঠি আবার একটু ফিচেল হাসি হেসে দৌড় লাগাল। দিঠি চলে যাওয়ার পরে কুহেলি একরকম অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

তোমার কোনও আক্কেল নেই? যখন তখন….. ইশ, কি যাচ্ছেতাই ব্যাপার।

আরে আমি কিকরে জানব দিঠি হঠাৎ করে এসে পড়বে।

কুহেলি রাগের চোটে একটা প্লেট তুলে নিয়ে দুম করে আলেখের সামনে রেখে দিয়ে বলল,

তোমার কিছুই জানতে হবে না, এখন তাড়াতাড়ি এটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।

বলে নিজের প্লেট টা নিয়ে এমন ভাবে খেতে শুরু করল যেন খাচ্ছে না, বেচারা শান্ত শিষ্ট লুচি গুলোকে খুন করছে। আলেখ একটু ভয়ে ভয়ে বলল,

কুহেলি, সরি নেক্সট টাইম দরজা লক করতে ভুলব না।

কুহেলি এই কথায় যেমন অবাক হল তেমন রাগও হল, এক চোট বিষমও খেয়ে ফেলল। কোনরকমে জল খেয়ে শান্ত হয়ে ভাবল, কি আশ্চর্য্য! মানুষটার মুখে কি কোনও লাগাম নেই! বিস্ময় আর রাগের সংমিশ্রণে এমন একটা দৃষ্টি উৎপন্ন হল যা দেখে আলেখ আর একটি কথাও বলার সাহস পেল না। খাওয়া শেষ করে কুহেলি প্লেট দুটো নিয়ে নীচে যাওয়ার সময় বলে গেল,

আমি মণ্ডপে যাচ্ছি, ইচ্ছে হলে আসতে পার, দাদু ওখানেই আছে। একবার দেখা করে আসতে পার।

কুহেলি কথাগুলো বলে একদন্ড দাড়ালো না, আলেখ বুঝল বেশ ভালই রাগ হয়েছে, নাকি অভিমান হয়েছে? কি জানি কি হয়েছে! মেয়েদের যে কখন কি হয় সেটা বোঝার ক্ষমতা মনে হয় না এই জগৎ সংসারে কোনও পুরুষের আছে। যাই হোক সেও কুহেলির পিছন পিছন নেমে এল নীচে, মণ্ডপে পা দিয়েই যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি হল আলেখের। জীবনে প্রথমবার সে দুর্গাপূজা দেখছে, মায়ের মূর্তির সামনে দাড়িয়ে যেন একটা অসীম অনন্য প্রশান্তিতে মনটা ভরে উঠল। আচ্ছা, সবার কি এমন অনুভূতি হয়! কুহেলি নীচে নামার সঙ্গে সঙ্গেই রাগ অভিমান লজ্জা সব ভুলে গেল। একে দুর্গা পূজা তায় আবার নিজের বাড়ির পুজো, ওসব ছোটোখাটো ব্যাপার কি আর পাত্তা পায় তার কাছে! কুহেলি মণ্ডপে এসে আগে প্রাণ ভরে মায়ের মুখখানা দেখল। বিশ্বাস অবিশ্বাস, সংস্কার কুসংস্কার এসবের তর্কে কুহেলি কোনদিনও যায়নি। সত্য মিথ্যার বিভেদেও কুহেলি নিজের চিন্তা গুলোকে অযথা জড়ায়নি। শুধু জানে, এমন একজন স্নেহরূপিনী আবার প্রয়োজনে দুর্গতিনাশিনী রূপা মায়ের বরাভয়ের ছায়ায় তার সন্তানরা সত্যিই সমস্ত বিপদ থেকে সুরক্ষিত। কুহেলি করজোড়ে প্রণাম করল, ওকে দেখে আলেখও প্রণাম করল। স্বরূপ বাবু সকাল থেকেই মন্ডপেই বসে আছেন, কুহেলি আর আলেখকে দেখে বললেন,

আরে কুহু, এসে গেছিস তোরা? আয় আয়, এদিকে আয় দেখি।

কুহেলি হাসিমুখে এগিয়ে গেল ওনার দিকে, সঙ্গে আলেখ। কুহেলি আর আলেখ দুজনেই ওনাকে প্রণাম করলে উনি ব্যস্ত হয়ে বললেন,

এই এই করছিস কি! মায়ের সামনে অন্য কাউকে প্রণাম করতে নেই।

কুহেলি হেসে বলল,

দাদান, উনি তো মা, মায়েরা সব বোঝে বুঝলে! এইসব ছাড় বলো কেমন আছ?

যতটা ভালো থাকা যায়।

উফ্, তোমার এই সোজা কথার বাঁকা উত্তর দেওয়ার স্বভাবটা আর গেল না।

স্বরূপ বাবু হেসে বললেন,

সারা জীবন তো এই কাজটিই করে এসেছি কীকরে আর স্বভাবটা বদলাবে বল দেখি। আর আলেখ কেমন আছ বলো।

ভালো আছি আপনি ভালো আছেন তো?

এই যে চলে যাচ্ছে, আর তোমার বিজনেস কেমন চলছে?

ভালই।

স্বরূপ বাবু আর আলেখ বেশ ভালই গল্পে মজে গেলেন আর কুহেলি… তাকে এখন পায় কে! মামা, মামী, বড় মাসি, তার মেয়ে, ছোট মাসি, তার ছেলে ছেলের বউ, কত লোক! আর ক্ষুদে সদস্য দেরও অভাব নেই। ওর এখন আর টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না, কোথায় কোথায় যে কি কি করে বেড়াচ্ছে সেই জানে। আলেখ অনেক খুঁজেও একবারও কুহেলিকে দেখতে পায়নি, শেষে দুপুরে খাওয়ার সময় তার দেখা পাওয়া গেল। বাড়ির সব ক্ষুদে সদস্য আর পুরুষ মানুষ দের আগে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢালাও মেঝেতে পাত পেড়ে কলার পাতায় খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। কুহেলি সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিবেশনে নেমেছে, আলেখকে দেখে ফাঁক বুঝে এক পাশে টেনে এনে বলল,

তোমার যদি অসুবিধা হয় তাহলে ঘরে গিয়ে বসো আমি তোমার জন্য আলাদা করে খাবার নিয়ে আসছি।

অসুবিধা হবে কেন?

না, আসলে তোমার তো আর নীচে বসে খাওয়ার অভ্যাস নেই আর তাছাড়া এভাবে কলার পাতায় খাওয়ারও অভ্যেস নেই। তাই বলছিলাম যদি…..

আমার কোনও অসুবিধা হবে না, সবাই পারছে আমি কেন পারব না? আগে কখনও করিনি বলে এখনও করা যাবে না এমন কোনও কথা আছে নাকি! বরং একটা নতুন এক্সপিরিয়েন্স হবে।

কুহেলি হেসে বলল,

বেশ, তাহলে আর কি বসে পড়।

আলেখ আর চিরন্তন মানে কুহেলির মামা পাশাপাশি বসল। আলেখের মন্দ লাগছে না এইভাবে সবার সাথে বসে খেতে, সত্যিই একটা নতুন অভিজ্ঞতা। কুহেলির সঙ্গে দিঠিও পরিবেশন করছে, কুহেলি নিজেই সবটা আলেখকে পরিবেশন করছে, থেকে থেকেই জিজ্ঞেস করছে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা! আসলে এভাবে খাওয়াটা আলেখের কাছে একেবারেই নতুন তাই কুহেলি একটু খেয়াল রাখছে আর কি। কিন্তু সে কথা দিঠি বুঝলে তো! কুহেলি যতবার আলেখকে কিছু দিতে আসছে ততবার দিঠি এমন ভাবে কাশতে শুরু করছে যে বাকিরাও ওদের দেখে হাসছে। শৈলজা দেবী একটা পাশে বসেছিলেন, উনি এইসব দেখে একটু হাসলেন, তারপর মুখে একটা মেকি গাম্ভীর্য এনে বললেন,

আহা দিঠি তুই এত কেন জ্বালাচ্ছিস বলতো আমার কুহু কে! না হয় একটু ভালোবেসে নিজের বর কে দেখেশুনে খাওয়াচ্ছে, তাতে এত হাসাহাসির কি আছে বাপু!

ব্যাস, আগুনে ঘি পড়ল আর সবাই আরও বেশি হাসতে শুরু করে দিল। শৈলজা দেবী নিজেও হাসতে লাগলেন, কুহেলি এমন লজ্জা পেল যে সব ফেলে কোথায় যে পালাল কে জানে! আলেখ বেচারা আর কি করে চুপচাপ মাথা নিচু করে খাওয়া শেষ করে সোজা ঘরে চলে এল। শৈলজা দেবী আর চৈতালী দেবী দুজনেই মনে মনে খুব খুশি হলেন। ওনাদের অভিজ্ঞ মায়ের মন, বুঝতে বাকি রইল না তাদের কুহু আলেখের সঙ্গে সুখ সংসারের পথে অগ্রসর হয়েছে। আলেখ ঘরে এসে দেখল কুহেলি এখানে আসেনি, কে জানে কোথায় গেল! আলেখ সবটা বেশ উপভোগ করছে, মুচকি একটা হাসি ওর ঠোঁট জুড়ে আপনিই খেলে গেল। আপাতত ওর কিছুই করার নেই তাই একটু শুয়েই পড়ল, আর আহার টাও নেহাৎ মন্দ হয়নি। এমনিতেই জামাই মানুষদের খাওয়ানোর লোকের অভাব হয় না, আর এখানে তো সত্যিই লোকের অভাব নেই ফলে একটু বেশিই খাওয়া হয়ে গেছে। শুয়ে একটু চোখটা বন্ধ করে রেখেছিল, সবে একটু তন্দ্রা মত এসেছিল। এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজে তন্দ্রার ঘোরটা কেটে গেল, চোখটা খুলে দেখল কুহেলি এসেছে। ওর মুখখানা দেখে বোঝা যাচ্ছে তখন পালিয়ে গিয়েও বেচারি রেহাই পায়নি, সদ্য সদ্য ওকে লাজুকলতায় পরিণত করার চেষ্টায় কোনও ঘাটতি হয়নি। আলেখ অল্প হেসে উঠে বসলে কুহেলি বলল,

ঘুমিয়ে পড়েছিলে? ডিস্টার্ব করলাম?

উহু, তোমার আগমনে আমি বিরক্ত হতে পারি?

কুহেলি তেমনই লাজুক লতার প্রতিনিধিত্ব বজায় রেখেই সামান্য হেসে বলল,

ঢং।

এই শব্দটি কুহেলি বাংলাতেই বলল, ফলে আলেখ বুঝতে না পেরে বলল,

কি?

কিছু না, তুমি রেডি হয়ে নাও রাত্রিকে আনতে যেতে হবে তো, ওর ফ্লাইটের টাইম হয়ে এসেছে। আর একটু আগেই বেরোতে হবে না হলে ঠিক সময়ে পৌঁছানো যাবে না কিন্তু। যত বেলা পড়বে ততই ভিড় বাড়বে, আর ততই জ্যাম হবে।

হুম, আচ্ছা তুমি আর শুধু শুধু যাবে কেন? আমি একাই ওকে নিয়ে আসতে পারব। তুমি বরং বাড়িতেই থাকো।

তুমি পারবে?

এতে না পারার কি আছে?

না আসলে, কলকাতার রাস্তা ঘাট তো তোমার চেনা নয়।

শোনো, এত আন্ডারএস্টিমেট করো না। চিনিনা, চিনে নিতে কতক্ষন? আর এই জি ম্যাপের যুগে আলাদা করে রাস্তা চেনার কি দরকার?

হুম, বুঝলাম। তাহলে তুমি এখনই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়, তিনটে বাজে। ওর ফ্লাইট তিনটে পঞ্চাশে ল্যান্ড করার কথা। জ্যাম থাকলেও টাইমে পৌঁছে যেতে পারবে আশা করি।

আলেখ ঝট করে তৈরি হয়ে চৈতালী দেবীর গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। চৈতালী দেবী একটু চিন্তা করছিলেন, কুহেলিকে মৃদু বকলেনও। ছেলেটা এখানে কিছুই চেনে না, এভাবে একা ছেড়ে দেওয়াটা কুহেলির একদম উচিৎ হয়নি। এইসব আর কি। কিন্তু কুহেলি এটা কিছুতেই বোঝাতে পারল না যে তাদের আদরের জামাই নিজেই জোর করে একা একা গেছে। যাইহোক, সবাই একটু রেস্ট নিয়ে আবার লেগে পড়ল পুজোর কাজে। কুহেলি আর দেবাঞ্জলি সহ আরও কয়েকজন মিলে গেল মণ্ডপে ওদিকের কাজ গুছাতে আর চৈতালী দেবী চৈতী দেবী সহ আরো অনেকে মিলে রাতের খাবারের জোগাড় যন্ত্র শুরু করলেন। এতগুলো লোকের খাওয়া দাওয়া কি মুখের কথা! রান্নার ঠাকুর আছে যদিও কিন্তু তাকে তো সব গুছিয়ে দিতে হবে। ওদিকে আলেখ কোনরকম অসুবিধা ছাড়াই পৌঁছে গেছে একটু জ্যামে পড়েছিল তবে খুব একটা দেরী হয়নি। ঠিক সময় মতই রাত্রির ফ্লাইট ল্যান্ড করল, সব নিয়ম কানুন সেরে যখন রাত্রি শেষমেশ আলেখের কাছে পৌঁছাল তখন প্রায় সাড়ে চারটে বাজতে চলেছে। রাত্রি তো আলেখকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল,

উফ্, ফাইনালি। কত মিস করেছি তোকে ইয়ার।

মি টু, বাট বাকি কথা পরে হবে আগে বাড়িতে চল না হলে রাস্তায় ভিড় বেড়ে যাবে।

ওকে চল।

রাত্রির লাগেজ গাড়িতে তুলে ওরা রওনা হল মঞ্জরীর উদ্দেশ্যে। রাত্রি সারা রাস্তা বক বক করে গেল, সে মহা উৎসাহিত। মোটামুটি প্রায় এক ঘন্টা লেগে গেল ওদের পৌঁছাতে, ইতিমধ্যে রাস্তায় ঠাকুর দেখার ভিড় জমতে শুরু করে দিয়েছে। এইসব কিছুই রাত্রির কাছে একদম নতুন, পারলে জানালা দিয়ে বেরিয়েই যায়। মঞ্জরী তে পৌঁছে রাত্রির মুখ হা হয়ে গেল, এত বিশাল বাড়ি তাও এত পুরনো এই প্রথম দেখছে সে। আলেখ ওকে নিয়ে ভিতরে ঢোকার আগে বলল,

ওরে পরে দেখিস, আগে আমার কথা শোন।

হ্যা? বল।

বলছি এখানে প্লিজ আমাকে আলু বলে ডাকিস না। বুঝতেই পারছিস শ্বশুর বাড়ি বলে কথা, একটা প্রেস্টিজের ব্যাপার।

রাত্রি মুখ বেঁকিয়ে হেসে বলল,

উনহ, এলেন আমার প্রেস্টিজ ওয়ালা জামাই সাহেব!

এই সত্যি বলছি, প্লিজ এই কটা দিন আমাকে আলু বলিস না।

ওকে ওকে ফাইন। বলব না, এখন চল তো, আর পারছি না।

আলেখ ওকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই সামনে দিঠিকে দেখতে পেল। ওকে ডেকে আলেখ বলল,

দিঠি শোনো।

হ্যা জিজু বলো।

একটু তোমার কুহু দি কে ডেকে দাও না।

দিঠি একটু দুষ্টুমি ভরা হাসি ফুটিয়ে বলল,

কেন গো? দি কে না দেখে থাকতে পারছ না বুঝি?

আলেখ পাল্টা হাসি দিয়ে বলল,

সত্যিই গো, একদম থাকতে পারছি না। তবে এই মুহূর্তে প্রয়োজন টা অন্য, আমাদের গেস্ট এসেছে ওর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

দিঠি এতক্ষণ রাত্রিকে খেয়াল করেনি, এখন দেখল। পরমা সুন্দরী আধুনিকা রাত্রিকে দেখে দিঠির কিছুক্ষণের জন্য যেন হারিয়ে গেল। কি সুন্দর দেখতে! একটা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট অ্যাবস্ট্রাক্ট প্রিন্টের জাম্পস্যুট পরিহিতা রাত্রির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর দিঠি চলে গেল কুহেলিকে ডাকতে। সারা বাড়িতে সবাই ব্যস্ত, এরমধ্যেই চৈতালী দেবী ওদের দেখে বললেন,

আরে আলেখ এসে গেছ? আর এই বুঝি রাত্রি?

হ্যা মা, ও হল রাত্রি অহুজা আমার ছোটবেলার বন্ধু আর রিতু, উনি আমার মা ডক্টর চৈতালী বাসু।

চৈতালী দেবী আলেখের কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন, উনি জানতেন আলেখ নিতান্ত ভদ্র এবং সম্ভ্রান্ত রুচি সম্পন্ন ছেলে কিন্তু এতটাও উনি ভাবতে পারেননি। অন্য যে কেউ হলে এখানে কুহেলির মা হিসেবেই পরিচয় করাতো কিন্তু আলেখ নির্দ্বিধায় ওনাকে নিজের মায়ের মর্যাদায় পরিচিত করালো। রাত্রি ততক্ষণে একগাল মিষ্টি হাসি নিয়ে চৈতালী দেবীর পা ছুয়ে প্রণাম করে ফেলেছে। চৈতালী দেবী আদর করে চিবুকে একটা হাত ছুঁইয়ে বললেন,

খুব সুখী হও, আর জীবনে যা চাও তাই যেন পাও।

থ্যাঙ্ক ইউ আন্টি।

আন্টি বলছ, আবার থ্যাঙ্ক ইউও বলছ? দুটো তো একসঙ্গে হবে না।

রাত্রি হেসে ফেলল, এরমধ্যেই কুহেলিও এসে পড়ল। পুজোর মণ্ডপে গরমে কাজ করে বেচারি একদম ঘেমে নেয়ে গেছে। রাত্রি কুহেলিকে দেখেই আনন্দে জড়িয়ে ধরতে যেতেই কুহেলি বাধা দিয়ে বলল,

এই রাত্রি, আমি একদম ঘেমে গেছি গো।

তাতে কি হল? আমিও জার্নি করে এসেছি।

বলে সোজা জড়িয়ে ধরল কুহেলিকে। তারপর সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলল,

আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি হ্যাপি টু সি ইউ।

আমিও, তবে এখন ওসব কথা থাক। আগে চল তোমাকে তোমার ঘর দেখিয়ে দিই। এতোটা পথ জার্নি করে এসেছ আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর তোমাকে মণ্ডপে নিয়ে যাব।

চৈতালী দেবীও সায় দিলেন। কুহেলি রাত্রিকে নিয়ে তিনতলায় উঠে এল, ওদের ঘরের ঠিক দুটো ঘর পরেই রাত্রির জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাত্রি চারপাশটা দেখতে দেখতে উঠছিল, যত দেখছে ততই অবাক হয়ে যাচ্ছে শেষে একসময় বলেই ফেলল,

আচ্ছা কুহেলি এই বাড়িটায় টোটাল কতগুলো রুম আছে?

বিয়াল্লিশটা।

হোয়াট! ইউ মিন ফর্টি টু?

ইয়েস।

কি বলছ?

ঠিকই বলছি, আসলে এটা একটা পুরনো জমিদার বাড়ি। অন্যান্য জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ীর তুলনায় এটা কিন্তু ছোট। এমন অনেক বাড়ি আছে যেখানে একশো টার বেশি ঘর আছে।

রাত্রি হা করে তাকিয়েই আছে, কুহেলি সেদিকে তাকিয়ে বলল,

এত অবাক হয়ে কাজ নেই, এই যে তোমার রুম আর ওই দেখো আমাদের রুম। কোনও অসুবিধা হলেই চলে আসতে পারবে। এখন তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি।

ওকে।

কুহেলি রাত্রিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে আবার নীচে ফিরে যাচ্ছিল কিন্তু আলেখ বাধা দিয়ে বলল,

কুহেলি শোনো না, একটু ঘরে এসো তো।

কেন? আমার কাজ আছে তো মণ্ডপে।

দু মিনিট, আমার ব্লু শার্ট টা খুজে পাচ্ছি না। একটু খুঁজে দিয়ে যাও।

উফ্, কি মুশকিল, এখন অন্য কোনও শার্ট পরে নাও আমি পরে খুঁজে দেব।

না, এখন ওই ব্লু শার্ট টাই পরতে ইচ্ছে করছে।

কি ছেলেমানুষী করছ?

এতক্ষণ কিন্তু তুমি শার্ট টা খুজে দিতে পারতে।

কুহেলি বাধ্য হয়ে ঘরে ঢুকেই সোজা আলমারি খুলে খুঁজতে শুরু করল। দু মিনিট কেন, দু সেকেন্ডও লাগল না ওর। ব্লু শার্ট টা হাতে নিয়ে বলল,

কি খুঁজে পাচ্ছিলে না! এইতো একদম সামনেই রাখা ছিল।

হুম জানি তো।

কুহেলি অবাক হয়ে বলল,

মানে! জান তাহলে শুধু শুধু আমাকে ডাকলে কেন?

আলেখ এগিয়ে এসে দুহাতে কুহেলির কোমর জড়িয়ে ধরে একদম নিজের বুকের কাছে টেনে এনে বলল,

এইজন্যে।

কুহেলি এতক্ষণে বুঝতে পারল পুরোটাই আলেখের মস্তিষ্ক প্রসূত দুষ্টুমির ফল। কুহেলির গাল দুটোয় আবার লালের ছোয়া লাগল, আজ কুহেলি নিজের দীর্ঘ চুল গুলোকে আলতো বেণী করে ছেড়ে রেখেছিল। সামনের দিকের কিছু অবাধ্য কেশরাশি সেই বেণীর বাঁধন ভেঙে ওর মুখের দুপাশে ঈষৎ অবিন্যস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আলেখ আলতো হাতে তাদের সরিয়ে দিয়ে বলল,

এখানে এসেছি একদিনও হল না, আর তুমি এর মধ্যেই আমাকে ভুলে গেছ, এরকম জানলে আসতামই না।

কুহেলি লজ্জা মেশানো একটা হাসি ঠোঁটের কোণায় এনে বলল,

তোমাকে ভুলে যাওয়া এত সহজ নাকি?

মনে তো হচ্ছে, না হলে এইভাবে এত কিছু করে তোমাকে কাছে পেতে হয়?

পুজোর বাড়ি, কাজের কি অভাব বলতো?

কাজ করো, আমি কি বারণ করেছি? কিন্তু আমাকে ভুলে গিয়ে! সেই যে সকালে হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলে আবার দুপুরে দেখতে পেলাম আবার হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে আবার কতক্ষন পরে দেখা দিলে। এরকম করে আমাকে কষ্ট দিতে বুঝি খুব ভালোলাগছে?

কুহেলি আলতো হেসে বলল,

আচ্ছা বেশ আমার ভুল হয়েছে, আর হবে না। কিন্তু এখন তো ছাড়ো, নীচে সত্যিই অনেক কাজ আছে।

উহু, এমনি এমনি ছাড়া পাবে না।

মানে?

মানে ভুল করেছ তার মাশুল দেবে না?

মাশুল?

হুম।

আচ্ছা কি করছ বলতো? আমার কিন্তু সত্যিই দেরী হয়ে যাচ্ছে।

মাশুল টা দিয়ে দাও তাহলেই তো যেতে পারবে।

আচ্ছা বেশ, কি মাশুল লাগবে আপনার শুনি।

আলেখ মুখে কিছু না বলে ওর ডান গাল টা এগিয়ে দিল ওর দিকে। কুহেলি লজ্জা জড়ানো সুরে বলল,

তুমি না… সত্যি.. ছাড়ো আমাকে।

আলেখ ছাড়লো তো নাই উল্টে ওকে আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল,

দেখো, এখন দেরী হলে আমাকে দোষ দিতে পারবে না।

কুহেলি নানা ভাবে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না, শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বলল,

বেশ, চোখ বন্ধ করো।

কেন?

আহ্, যা বলছি করো না।

আলেখ একটু মুচকি হেসে চোখ দুটো বন্ধ করল। কুহেলি ধীরে ধীরে ওর ঠোঁট দুটো আলতো করে ছুইয়ে দিল আলেখের গালে। আলেখ চোখ খুলে দেখল কুহেলি লাজে একেবারে রাঙা হয়ে চোখ দুটো নামিয়ে রেখেছে। অল্প হেসে ওর কপালে একটা ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে ছেড়ে দিল। আর কুহেলি যেন তড়িৎ গতিতে ছুটে পালিয়ে গেল ঘর থেকে। কুহেলি নীচে নেমে এসে কিছুক্ষণ দম নিল, একছুটে সোজা নীচে এসে থেমেছে তো, তাই হাপিয়ে গেছে আর কি। যাই হোক, সন্ধ্যারতির কিছু আগে কুহেলি রাত্রির ঘরে গিয়ে ওকে নিয়ে আবার নীচে নেমে এল। আরতি হয়ে যাওয়ার পর আর বিশেষ কোনও কাজ নেই মণ্ডপে। কুহেলি একে একে রাত্রিকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। প্রাণবন্ত রাত্রিকে সবারই খুব ভালোলাগল, তবে ওই যে সব জায়গাতেই দু এক জন থাকে না যাদের সবেতেই একটু খুঁত না বের করলেই নয়। এখানেও তেমন কয়েকজন আছেন, তারা অবশ্য এই বাড়ির সদস্য নন, আশেপাশের প্রতিবেশী বৃন্দ। তারা একটু নাক কুচকে মুখ বেকিয়ে সমালোচনা করতে ছাড়লেন না, যদিও সবটাই অগোচরে। যাই হোক, অমন লোক থাকবেই এদের অত গুরুত্ব না দেওয়াই ভালো। আজকের মত পুজো শেষে সবাই একযোগে গোল হয়ে বসে শুরু হল আড্ডা। কুহেলি একে একে সবার জন্য আনা গিফট গুলো তুলে দিল সবার হাতে। এত লোক, কে আসবে আর কে আসবে না সঠিক কেউই জানত না অথচ কুহেলি ঠিকই সবার জন্যই কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। কথায় গল্পে বেশ কাটল বাকি সময় টুকু, রাত্রির তো ভিষন ভালোলাগছে। এত লোক একটা বাড়িতে এ তার জীবনে প্রথম, আর সবাই কত সহজে আপন করে নিয়েছে ওকে। একবারের জন্যেও মনে হচ্ছে না ও এই বাড়ির সদস্যা নয়। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর্ব সেরে যে যার ঘরে চলে গেল, সবাই ক্লান্ত। আবার কাল ভোর থেকেই শুরু হয়ে যাবে পুজোর অনুষ্ঠান, তাই অযথা রাত জাগার কোনও মানে হয় না। সপ্তমীর সকালটা বেশ মিষ্টি আবেশে শুরু হল কুহেলির। প্রতিদিনের মত আজও ঘুমন্ত আলেখের বুকের মাঝেই ঘুম ভাঙ্গল কুহেলির তবে সকালটা মিষ্টি হওয়ার অন্য কারণও আছে। আজ ঘুম ভেঙেছে একটা বহু পরিচিত সুমধুর সুরে, যে সুর প্রতিটা বাঙালি হৃদয়ের মাঝে সৃষ্টি করে এক অনন্য আনন্দের। ঢাকের কাঠিতে যে কি মন্ত্র আছে, সেটা কুহেলি আজও বুঝতে পারে না। কিন্তু যতবার ওই পরিচিত সুরটা কানে আসে ততবারই একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়। আজও ভোর থেকেই শুরু হয়ে গেছে মন্ত্রপাঠ আর সঙ্গে ঢাকের বাদ্যি। কুহেলি ধীরে ধীরে আলেখের ঘুম না ভাঙিয়ে উঠে পড়ল, স্নান সেরে আজও একটা শাড়ি পড়ল। ঠিক করেই রেখেছিল এবার পুজোয় রোজ শাড়ি পরবে। আজ একটা কচি কলাপাতার রঙের তাতের শাড়ি পরল, কালো পাড়ের সাথে মিলিয়ে পরল একটা কালো ব্লাউজ। ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছে, কুহেলি একবার আলেখের দিকে তাকাল, এখনও ঘুমাচ্ছে। ওকে না ডেকে একসেট ড্রেস বের করে খাটের ওপর রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। নীচে যাওয়ার আগে একবার রাত্রির দরজায় মৃদু শব্দ করল, কোনও সাড়া এল না। তার মানে রাত্রিও এখনও নিদ্রার অতলেই রয়েছে, কুহেলি আর ডাকল না। থাক, ঘুমাক অনেকটা জার্নি হয়েছে, আর এত তাড়াতাড়ি উঠে করবেই বা কি?

কুহেলি নীচে নেমে এসে বাকিদের সাথে কাজে হাত লাগাল। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য একবার ঘরে ঘুরে এসেছে। আলেখ উঠে পড়েছিল, এখন স্নান সেরে নীচে এসে চিরন্তন আর বাকিদের সাথে হাত মিলিয়ে টুকটাক কাজ করছে। ওদিকে রাত্রির একটু দেরীতে ঘুম ভাঙ্গল, উঠে ফ্রেশ হয়ে একটা লং ফ্রক পরে নীচে নামার কথা ভাবছিল এমন সময়ে দিঠি এসে দাড়াল। রাত্রি হেসে বলল,

হাই, তুমি দিঠি রাইট?

দিঠিও মিষ্টি করে হেসে বলল,

ইয়েস।

গ্রেট, আমি নীচে যাব ভাবছিলাম, কিন্তু বুঝলে তো, এত বড় বাড়ি তোমাদের। ভয় হচ্ছিল, যদি হারিয়ে যাই।

রাত্রির এমন সরল কথায় দিঠি হেসে ফেলল, ওর ভারী পছন্দ হয়েছে রাত্রিকে। কালকে দেখেই চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু ঠিক চিনতে পারছিল না, পরে যখন কুহেলির কাছে শুনল এই সেই বিখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল মডেল রাত্রি অহুজা তখন আর চিনতে অসুবিধা হয়নি। আসলে ব্যাপারটা হল এই দিঠির আবার ফ্যাশনের দিকে ভীষণ ঝোঁক, মানে মনে মনে একদিন মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর তাই ফ্যাশন দুনিয়ার কোনো সংবাদ তার নজর এড়ায় না, সেখান থেকেই রাত্রিকে চিনতে পেরেছে। স্বভাবতই একটা আলাদা আকর্ষণ অনুভব করছে দিঠি, আর রাত্রি এমনিতেই খুব মিশুকে তাই আলাপ জমতে খুব একটা দেরী হল না। দিঠি রাত্রিকে নিয়ে নীচে নেমে এল, দিঠিকে অবশ্য কুহেলিই পাঠিয়েছিল রাত্রিকে নিয়ে আসার জন্য। এইমাত্র অঞ্জলি শেষ হল, এখন জল খাবারের পর্ব শুরু হয়েছে। কুহেলি রাত্রিকে বলল,

কোনও অসুবিধা হয়নি তো?

একদম না।

কুহেলি নিজে ওকে জল খাবার সাজিয়ে দিল, খেতে খেতে টুকটাক গল্প চলতে লাগল। রাত্রি কালকে তেমন ভাবে মণ্ডপ টা ঘুরে দেখার সুযোগ পায়নি, আজ দিঠিকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখল। সবকিছুই ওর ভিষন ভালোলাগছে, বিশেষ করে মায়ের এই সপরিবারের মূর্তি। মণ্ডপ দেখা হলে দিঠি রাত্রিকে গোটা বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাল। এত ঘর এত আঁকা বাঁকা গলিপথ, রাত্রির সত্যিই মনে হচ্ছিল এ যেন এক গোলকধাঁধা। আজকে দুপুরেও খাওয়ার সেই একই ব্যবস্থা, কুহেলি রাত্রিকে বলেছিল ডাইনিং টেবিলে বসে খেতে কিন্তু রাত্রিও নাছোড় বান্দা, সে ওদের সঙ্গে বসেই খাবে। আজকের মেনুতে গরম গরম ধোয়া ওঠা খিচুড়ি আর সঙ্গে বেগুনি, কুমড়োর ছেচকি, বাঁধাকপি আর শেষ পাতে চাটনি, পাঁপড়, দই, মিষ্টি এসব তো আছেই। কুহেলির দৌলতে আলেখের ইতিমধ্যেই খিচুড়ির সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে আর বেশ জমিয়ে খিচুড়ি প্রেমীও হয়ে গেছে। তবে রাত্রি এইসব পদ আজ প্রথম দেখল, একটু মুখে দিয়েই মহা উচ্ছ্বাসের একটা তীব্র প্রকাশ ঘটিয়ে বলল,

ওয়াও, কি দারুন! ইটস সো টেস্টি, ড্যাম গুড ইয়ার কুহেলি। কি নাম বললে ডিশ টার?

খিচুড়ি।

খি – চু – ড়ি , ওয়াও আই লাভ ইট।

রাত্রি সত্যিই বেশ খানিকটা খেল, কোথায় ওর ডায়েট প্ল্যান! সব যেন এই কয়েকদিনের জন্য বাক্সবন্দী করে তুলে রেখে এসেছে। আজকের সন্ধ্যেটাও হৈ হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়েই পেরিয়ে গেল। রাত্রি দারুন মিশে গেছে সবার সঙ্গে, যেন কুহেলির মত সেও এই বাড়িরই মেয়ে। মণ্ডপে বসেই কুহেলিরা সব ভাইবোনেরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিল। সবাই যদিও নেই, অনেকেই বেরিয়ে পড়েছে ঠাকুর দেখতে। তবে যারা আছে তাদের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়, কুহেলি আলেখ আর রাত্রি পাশাপাশি বসে বাকিদের সঙ্গে কথা বলছিল, এমন সময় কুহেলির ফোনটা বেজে উঠল। কুহেলি দেখল স্ক্রীনে ভাসছে নিশীথ আগরওয়ালের নাম। এত আওয়াজের মধ্যে যে কিছু শোনা যাবে না সেটা বলাই বাহুল্য তাই ফোনটা হাতে নিয়ে উঠে মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় এসে কলটা রিসিভ করল।

বলুন মিস্টার আগরওয়াল।

ডিস্টার্ব করলাম না তো?

একেবারেই না বলুন, কালকে সকালেই আসছেন তো?

সেই ব্যাপারে কথা বলার জন্যই ফোন করলাম।

বলুন।

কালকে তো অষ্টমী রাইট?

হুম।

কি যেন বলে…হ্যা, অঞ্জলি.. অঞ্জলি কটার সময় কালকে?

অঞ্জলি তো দশটায় শুরু হবে।

ওকে তাহলে আমি অঞ্জলির আগেই পৌঁছে যাব, আপনিই বলেছিলেন অষ্টমীর অঞ্জলিটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

হ্যা, সে তো নিশ্চয়ই কিন্তু আপনার ফ্লাইট তো এখানে সাড়ে এগারোটায় ল্যান্ড করার কথা ছিল। তাহলে?

অ্যাকচুয়ালি আমি অলরেডি কলকাতায়।

হোয়াট! মানে, কখন?

আজ দুপুরে, লাস্ট মোমেন্টে একটা মিটিং ফিক্স হল এখানে, তাই আসতে হল।

আপনি এখন কোথায় আছেন?

নভোটেল।

মানে! আপনি এখন কলকাতায় থেকে হোটেলে আছেন? আর আমাকে বলছেন কালকে সকালে আসবেন! দ্যাটজ নট ফেয়ার। আমি আপনাকে আমার বাড়িতে ইনভাইট করেছিলাম।

হ্যা, বাট সেটা তো কালকের জন্য।

কে বলল? আমি গোটা পুজোটাতেই আপনাকে ইনভাইট করেছিলাম, আপনি বলেছিলেন অষ্টমীতে আসবেন। এখন যখন একদিন আগে এসেই পড়েছেন তাহলে শুধু শুধু হোটেলে কেন থাকবেন?

কিন্তু…..

আমি কোনও কিন্তু শুনতে চাই না, আপনি আজকেই আমাদের বাড়িতে আসছেন এটাই ফাইনাল। আপনার যদি অসুবিধা হয় বলুন আমি আর আলেখ গিয়ে আপনাকে নিয়ে আসছি।

নিশীথ ব্যস্ত হয়ে বলল,

নো নো, ইটস ফাইন। এত ব্যস্ত হতে হবে না, আমি নিজেই পৌঁছে যেতে পারব।

গ্রেট, তাহলে আর দেরি না করে এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ুন।

নিশীথ হেসে বলল,

ওকে ম্যাডাম।

কুহেলি কথা শেষ করে পিছন ফিরতেই দেখল আলেখ এদিকেই আসছে।

কি হল কুহেলি? কার ফোন ছিল?

মিস্টার আগরওয়ালের।

আলেখ ভ্রূ টা ঈষৎ কুচকে বলল,

হঠাৎ? না মানে ওনার তো কালকে আসার কথা, আজকে হঠাৎ ফোন করলেন?

উনি আজকেই আসছেন।

হোয়াট? আজকেই? কেন?

এটা কিরকম কথা? একজন গেস্ট আসছেন আর তুমি জিজ্ঞেস করেছ কেন?

বাট ওনার তো কালকে আসার কথা ছিল, হঠাৎ আজকে নিজে থেকে ফোন করে বললেন আজকেই আসছেন? এটাও বা কিরকম কথা হল?

আলেখ, কি বলছ তুমি? উনি নিজে থেকে আজকে আসছেন না, আমি আসতে বলেছি তাই আসছেন। উনি তো এখন হোটেলে আছেন, আজকে হোটেলেই থাকবেন ঠিক করেছিলেন।

তাহলে তোমাকে ফোনটা করার দরকার টাই বা কি ছিল? একেবারে কালকে এলেই তো পারতেন।

আলেখের গলায় ধীরে ধীরে বাড়ছে অভিমানের সুর, কুহেলি সেটা বুঝতে পেরে হেসে বলল,

তোমার এই সমস্যার যে কি সলিউশন কে জানে! আচ্ছা তোমার কী অ্যালার্জি আছে নাকি? মিস্টার আগরওয়ালের নাম শুনলেই এরকম করো কেন?

আলেখ মুখটা একটু অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,

জানি না।

কুহেলি আরেকটু হেসে বলল,

আচ্ছা বেশ, জানতে হবে না। কিন্তু মিস্টার আগরওয়াল আসলে আবার এরকম করো না যেন। বুঝলে কিউটি?

কিউটি?

হুম, কিউটি। তোমাকে বলেছি তো, রাগলে তোমাকে ভীষণ কিউট লাগে। তাই আজ থেকে তুমি যখনই রাগ করবে তখনই আমি তোমাকে কিউটি বলেই ডাকব। বুঝলে কিউটি?

বলে আলেখের গাল টা টিপে দিয়ে কুহেলি এক দৌড়ে আবার মন্ডপে চলে গেল। আর আলেখ ওখানে কিছুক্ষণ হতভম্বের মত দাড়িয়ে থেকে অল্প একটু হেসে আবার ফিরে গেল মন্ডপে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পরে নিশীথ এসে পৌঁছাল, ওর আসার কথাও কুহেলি আগে থেকেই সবাইকে বলে রেখেছিল। তাই নিশীথের জন্যও একটা ঘরের ব্যবস্থা আগে থেকেই করা আছে, ঠিক রাত্রির পাশের ঘরটা। সবাই জানলেও রাত্রি জানত না যে নিশীথও এখানে নিমন্ত্রিত, আবার নিশীথও জানে না রাত্রি ইতিমধ্যেই এখানে রয়েছে। এখন হঠাৎ নিশীথ কে দেখে যেন রাত্রি একটু চমকে উঠল। সেদিন সেই কুহেলির বার্থডে পার্টির পর থেকে নিশীথ কে একটু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। হাজার হোক দোষটা ওরই ছিল, সে কনট্র্যাক্ট এর ক্ষেত্রেই হোক বা সফ্ট ড্রিংকের সেই ঘটনাটার ক্ষেত্রেই হোক। রাত্রি তো লন্ডনে ফিরে গিয়েও প্রথম দিন বেশ ভয়ে ভয়েই শ্যুটিং করতে গিয়েছিল। না জানি কি না কি বলে বসে, কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে নিশীথ একটা কথাও বলেনি। যেন চেনেই না, কাজের প্রয়োজনে যেটুকু কথা বলার প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই। রাত্রির বিশেষ ভালোলাগে না এই নিশীথ আগরওয়ালকে, কেমন যেন নিরস প্রকৃতির। সবসময় এমন একটা ভাব যেন সব উনিই জানেন, আর বাকি কেউ কিছু জানেই না। তবে হ্যা, প্রফেশনালিজমের দিক থেকে দেখতে গেলে সত্যিই ওনার মত কাউকে দেখেনি রাত্রি। এটা স্বীকার করতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই ওর, বরং সেদিক দিয়ে বেশ একটু সন্মানও করে। তবে, তার বাইরে মোটে পছন্দ করে না, কিকরে যে ওই নিশীথ আগরওয়াল কুহেলির বন্ধু হল সেটাই ভেবে পায় না। যাই হোক, রাত্রি ভাবল, কি আর করা যাবে এড়িয়ে চললেই হল। আর নিশীথ… সেও একেবারেই আশা করেনি এখানে এসে রাত্রিকে দেখতে পাবে। মেয়েটা নিজের কাজের ক্ষেত্রে সেরা হলেও নিশীথের ওকে কেন যেন ভালোলাগে না। সেদিন পার্টির পরে খোজ নিয়ে জেনেছিল রাত্রি আলেখের ছোটবেলার বন্ধু, কিন্তু তাই বলে এখানেও যে উপস্থিত থাকবে এটা আশা করেনি, একটু যেন বিরক্তই হল। কিন্তু নিশীথের মনের খবর ওর ইচ্ছা ব্যতীত অন্য কারোর পক্ষে জানা এক প্রকার অসম্ভব। তাই ওর হাসি মুখটা দেখে ওর বিরক্তির কথা কেউ বুঝতেই পারল না। কুহেলি সবার সঙ্গে নিশীথের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল, আর নিশীথও বেশ হাসি মুখেই সবার সঙ্গে আলাপ করছিল। রাত্রি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল নিশীথের দিকে, কাজের সুত্রে একেবারে কম বার দেখা হয়নি ওদের। কিন্তু একদিনও নিশীথের মুখে হাসি দেখেনি সে, আর এখন যেন মুখ থেকে হাসি সরছেই না। সবার সঙ্গে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে, বিশেষ করে কুহেলির সঙ্গে, যেন দুজন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ! সবার সঙ্গে আলাপ পর্ব সেরে কুহেলি নিশীথ কে নিয়ে ওর ঘরটা দেখিয়ে দিল।

এটা আপনার ঘর, আগে ফ্রেশ হয়ে নিন তারপর আমি আপনার ডিনার টা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

কেন? এখানে সবাই ঘরেই ডিনার করে?

না, মানে…..

কুহেলি আমার জন্য আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা করতে হবে না। আমি স্পেশ্যাল কেউ নই।

নিশীথ না জানলেও রাত্রি দেখল ওর ঘরের পাশেই নিশীথের ঘর। মনে মনে বেশ বিরক্ত হল, উফ্, বিয়াল্লিশ টা ঘরের মধ্যে আর কোনও ঘর ছিল না! এটাই দিতে হল? নিশীথ কে ওর ঘর দেখিয়ে দিয়ে বাকিরা সবাই আবার নীচে নেমে এল। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীচে রাতের খাওয়ার আয়োজন শুরু হয়ে গেল, কুহেলি ভিষন ব্যস্ত, এটা সেটা করেই যাচ্ছে। নিশীথ কে এখন ডাকা প্রয়োজন কিন্তু হাতের কাজ টা ছেড়ে যেতেও পারছে না। এদিকে আলেখকেও কোথাও দেখতে পাচ্ছে না, সেই যখন থেকে নিশীথ এসেছে তারপরে আর আলেখের দেখা পায়নি। কি করবে ভাবতে ভাবতেই দেখল রাত্রি উপরে যাচ্ছে, কুহেলি খুশি হয়ে রাত্রিকে ডাকল,

রাত্রি, একবার এদিকে আসবে প্লিজ।

রাত্রি সবে সিড়িতে একটা পা রেখেছিল, কুহেলির ডাকে এগিয়ে এসে একটু হেসে বলল,

বাবা, আবার প্লিজ বলছ কেন? পর করে দেওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?

একদম না, শোনো না বলছি আমার একটা কাজ করে দেবে?

এত ফর্ম্যালিটি করছ কেন বলতো? এবার রাগ করব কিন্তু, সোজা বলো কি করতে হবে।

কুহেলি হেসে বলল,

আচ্ছা বেশ, একটু মিস্টার আগরওয়াল কে ডেকে নিয়ে এস। ডিনার রেডি হয়ে গেছে, আমিই যেতাম কিন্তু হাতের কাজটা না সেরে যেতে পারছি না।

রাত্রি একটু যেন থমকে গেল, এখন ওই নিশীথ আগরওয়ালকে ডাকতে যেতে হবে! কোথায় ভেবেছিল একেবারে এড়িয়েই চলবে কিন্তু… কি আর করা যাবে এখন তো আর না করা যায় না। রাত্রি একটু হেসে তিনতলায় উঠে এল, নিশীথের ঘরের দরজাটার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাড়াল। মনে মনে একটু ঠিক করে নিল, দরজা খুললেই সোজা ডিনারের কথা বলেই চলে যাবে। বন্ধ দরজায় দুবার নক করে দাড়িয়ে রইল রাত্রি। একটু পরেই নিশীথ দরজা খুলে সামনে রাত্রি কে দেখে একটু অবাক হল আর সঙ্গে কিছুটা বিরক্ত। বেশ ভালো মুড নিয়ে পুজো উপভোগ করতে এসেছে এখন এই মেয়েটার সঙ্গে কথা বলে নিজের মুড টাকে বিগড়ানোর কোনও ইচ্ছে নেই। কিন্তু রাত্রি হঠাৎ ওর কাছে এসেছে কেন! যতটা সম্ভব নিজের বিরক্তি টা গোপন করে নিশীথ বলল,

কোনও দরকার ছিল?

দরকার না থাকলে শুধু শুধু কেন আসব?

নিশীথের বিরক্তি টা আরও বেড়ে গেল, এই মেয়ে কি সোজা ভাবে কথা বলতে শেখেই নি নাকি! এবার আর বিরক্তি গোপন করার কোনো রকম আগ্রহ না দেখিয়ে নিশীথ বেশ রুক্ষ স্বরেই বলল,

তাহলে শুধু শুধু দাড়িয়ে থেকে আমার সময় নষ্ট না করে দরকার টা বলে ফেলুন।

রাত্রিরও মেজাজ টা গরম হয়ে গেল, উফ্, কেন যে কুহেলি ওকে এই খিটখিটে লোকটাকে ডাকতে পাঠাল! রাত্রিও এবার কিছুটা রুক্ষ স্বরেই বলল,

আমারও এখানে দাড়িয়ে সময় নষ্ট করার কোনও ইচ্ছে নেই, নেহাৎ কুহেলি বলল তাই না হলে…. এনিওয়ে, ডিনার রেডি কুহেলি আপনাকে নীচে ডাকছে।

রাত্রি কথাগুলো বলে সোজা নিজের ঘরে ঢুকে গেল। নিশীথ একটু সেদিকে তাকিয়ে বিরক্ত মুখে আবার ঘরে ঢুকে গেল। বেছে বেছে রাত্রির পাশের ঘরটাই হতে হল! রাতে খাওয়ার সময় আবার নিশীথ কে সবার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে রাত্রির যেন গা জ্বলে যাচ্ছিল। ওর সঙ্গে কথা বলার সময় যেন সব হাসি উধাও হয়ে যায়, কোনটা আসল রূপ কে জানে! রাত্রি যদি একটু খেয়াল করত তাহলে বুঝত ওর নিজের অজান্তেই তারও দুটো ভিন্ন রূপের সৃষ্টি হয়েছে ঠিক নিশীথের মতই। একটা ওর প্রানবন্ত উচ্ছ্বল রূপ, যেরূপে বাকি সবাই ওকে চেনে আর অন্য একটা রূপ যেটা শুধুই নিশীথের সামনে প্রকাশ পায়। কিছুটা রাগী, রুক্ষ আর কিছুটা অহংকারী যেটা মোটেই ওকে মানায় না। রাতের খাওয়া দাওয়ার পর্ব টা বেশ ভালই কাটল সবার, কুহেলি একবার কাজের ফাঁকে লক্ষ্য করে দেখেছে আলেখ আর নিশীথ একটা পাশে চিরন্তন আর আরও কয়েকজনের সঙ্গে দাড়িয়ে বেশ হেসে হেসেই কথা বলছে। দৃশ্য টা দেখে কুহেলিও অল্প না হেসে পারেনি, এখন আলেখকে দেখলে কে বলবে যে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও নিশীথের নাম শুনেই কি ছেলেমানুষী টাই না করছিল। সবার আহারাদি সম্পন্ন হলে টুকটাক কিছু গল্পের পরেই সবাই যার যার ঘরে গিয়ে পাড়ি জমাল ঘুমের দেশে। কাল যে অষ্টমী, ভোর রাতেই শুরু হয়ে যাবে সব আচার উপাচার, এত মানুষের গুঞ্জরনে মুখরিত মঞ্জরী তাই দেখতে দেখতে নিঝুম হয়ে এল। তবে বাইরের কোলকাতায় তখন সবে সন্ধ্যে, যত রাত গভীর হবে ততই শহরের অলিতে গলিতে বাড়বে মানুষের কোলাহল। দুর্গাপূজা বলে কথা, এই কটা দিন কোলকাতায় রাতের ক্লান্তি নামে না, বরং রাতের গভীরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুখরিত হতে থাকে চির সুন্দরী তিলোত্তমা।

ক্রমশ__________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

কেমন লাগল আজকের পর্ব জানাতে ভুলবেন না। অপেক্ষায় রইলাম। দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here