ধ্রুবতারা
পর্ব_২০
পুষ্পিতা_প্রিমা

অপরিচিত ঘরটার দেয়ালে তাকাতেই নোহা দেখলো রাত বারোটার ঘর ছুঁয়েছে ঘড়ির কাঁটা। নোহার বিরক্ত বাড়লো তরতর করে। তার বরবাবু আসবে কখন? আজ আসুক। শুরুতেই এমন টাইট দেবে, শিক্ষা হয়ে যাবে। বেড থেকে নেমে খালি পায়ে রুমের এপাশ থেকে ওপাশ হাঁটলো সে কোমরে হাত দিয়ে। অপেক্ষার অবসান ঘটলো ঠিক তক্ষুণি। ঘাড়ে হাত ম্যাসাজ ম্যাসাজ করতে করতে সোয়েভ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল
‘ আরেহ ওয়াশরুমে যান। এভাবে পায়চারি করছেন কেন? আমার ঘরটা বরবাদ করবেন না।
রেগে গেল নোহা।
কেমন বেশরম মার্কা কথা? সে ঘর বরবাদ করবে মানে কি? কি বুঝাতে চাচ্ছে এই লোক?
নোহা এগিয়ে গেল। বলল
‘ কি বললেন?
সোয়েভ বলল
‘ কিছুনা। ওই আরকি?
নোহা বলল
‘ ওই আর কি আবার কি? আপনি জানেন কতক্ষণ ধরে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।
সোয়েভের গাল যেন লাল হয়ে উঠলো যদি ও তা সে দেখলোনা। নোহা ও দেখলো না। অনুমান আর কি।
নোহা বলল
‘ শোনেন।
সোয়েভ মাথা তুলে বলল
‘ বলেন।
নোহা বলল
‘ আমি চেঞ্জ করব। এই ভারী শাড়ি নিয়ে আর থাকা যায় না।
সোয়েভ বলল
‘ তো আমি কি করব?
নোহা বলল
‘ কি করব মানে? আপনার জন্যই তো শাড়ি পড়ে বসে আছি।
সোয়েভ বলল
‘ আপনার কথা স্পষ্ট না৷
নোহা বলল
‘ আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না। আপনার পা দুটো বাড়ায় দিন। সবাই যে কানের উপর ঘ্যানঘ্যান করে গেল তোমার জামাই ঘরে আসলে সালাম করবা। দু রাকাআত নফল নামাজ পড়বা তারপর বাকিসব।
সোয়েভ কেশে উঠলো। নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ ওহ ওহ বুঝেছি বুঝেছি। এসব ওই মুরব্বিদের শেখানো। বুঝেছি।
নোহা বলল
‘ এদিকে আসেন।
সোয়েভ গেল না। বলল
‘ এদিকে আসেন।
নোহা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। বলল
‘ যাব না। আপনি এদিকে আসেন।
হেসে ফেললো সোয়েভ। তাকে হাসতে দেখে নোহা ও হেসে ফেললো। ধুরর জামাই মানুষ, শরম রাখা ভালো না। যদি দেখায় শরম লাগছে তাইলে জামাই আর ও শরম দিবো। সোয়েভ নোহাকে হাসতে দেখে ভাবল
‘ এই মেয়ে না আসার সময় কান্নাকাটি করে সাগর বানায় ফেললো?
আর এখন দাঁত খেলিয়ে হাসছে। নতুন বউ মানুষ কই ঘোমটা টেনে বসে থাকবে। সে থুঁতনি ধরে মুখ তুলে একটু আদুরে গলায় বলবে, ওগো বউ সুন্দরী তোমারে প্রথম দেখায় আমার হৃৎপিণ্ড নাচতে নাচতে বেঁহুশ। এখন তো আর ও বেশি।
কিন্তু না পোড়া কপাল নিয়ে জন্মালো সোয়েভ। যাইহোক তারা মুরব্বিদের শিখিয়ে দেওয়া কাজকর্ম শেষ করলো।

নোহা সুতি শাড়ি গায়ে দিল। তার জট পাকানো চুল দেখে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল
‘ আপনার জন্য আমার চুলগুলো এই অবস্থা। এইগুলো আগের মতো করে দেন তার আগে ঘুম নেই।
সোয়েভ বলল
‘ আমি কি করব? এগুলো কি আমি পারি? আহা প্রথম দিন জ্বালানো শুরু করছেন?
নোহা বলল
‘ তো? আপনার জন্যই তো ভাল্লুকের মতো সাজছি, আপনারে বিয়ে করার জন্য। এখন পালায় থাকলে হব্বে না। নেন চিরুনি নেন, আমার চুল গুলো আগের মতো করে দেন। যদি একটা চুল ছিঁড়ে আমি চিল্লায় চিল্লায় কাঁদব। আপনার ইজ্জত সম্মানের বারোটা বাজাবো।
সোয়েভ বলল
‘ ছিঃ ছিঃ নতুন বউ চিল্লায় কাঁদছে এটা ভারী লজ্জার। এমন কথা শুনলে ও কান গরম হয়।
নোহা হেসে ফেলল। আহা বরবাবুকে জ্বালানো দেখি ভারী মজার।
সোয়েভ ভারী গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করে বলল
‘ দেখুন মজা না। আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।
নোহা বেডের উপর গিয়ে ধপ করে বসলো। বলল
‘ চুল আগের মতো করে দেন।
সোয়েভকে অগত্যা চিরুনি হাতে নিতে হলো। কে বলল তাকে বিয়ে করতে? এত প্যারা? মানুষের মতো আজাইরা আর কিছু নেই, এই রাত নিয়া নাকি আকাশ পাতাল কত ভাবনা থাকে। ফালতু।
নোহার চুলে চিরুনি লাগাতেই নোহা চিল্লিয়ে উঠলো। চুল ছিঁড়লে খবর আছে। সোয়েভ আঁতকে উঠে আবার চিরুনি চালাতে গিয়ে আটকে গেল। চুলগুলো এত জট? বাপরে বাপ? তার বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টি ও এমন বিপদে পড়েনি বোধহয়?
সোয়েভ ভাবলো,
না এই মহিলাকে জব্দ করা দরকার। কোথায় একটু ভালোবাসা টালোবাসা হবে। তা না।
নোহা সোয়েভকে থেমে থাকতে দেখে বলল
‘ কি হলো?
সোয়েভ একটু নোহার কাছে গিয়ে বসলো। চুলে হাত দিয়ে চুল টেনে এনে চিরুনি বসালো।
মৃদু মৃদু হাসতে থাকা নোহা তার হাতের দিকে তাকালো। ভাবলো এত শীত কেন লাগতেছে? একেবারে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে পড়েছে। পরক্ষণেই বুঝতে পারলো এক পুরুষ মানুষের হাত বিচরণ চলছে তার চুলের ভাঁজে ভাঁজে। নোহাকে চুপ করে থাকতে দেখে সোয়েভ বলল
‘ হচ্ছে না? দেখুন এসব কি আমার কাজ?
নোহা ফিরলো। চিরুনি কেড়ে নিয়ে রেখে দিয়ে বলল
‘ যথেষ্ট হয়েছে। ধন্যবাদ। সরুন সরুন।
সোয়েভ একটু পিছু গেল। নোহা কম্বল টেনে নাকমুখ ঢেকে ফেলল। সোয়েভ তার অমন ব্যবহারে ভারী অবাক হলো। নোহা মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে সোয়েভের প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করলো। সোয়েভের চোখাচোখি হয়ে যাওয়ায় আবার কম্বল টেনে নিল। সোয়েভ ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইলো পরক্ষণেই ব্যাপারটা বুঝতেই হো হো করে হেসে ফেললো সোয়েভ। বালিশ টেনে শুয়ে পড়ে বলল
‘ আমার বিছানায় ভাগ বসাইছেন ভালো কথা কিন্তু কম্বলটা একা নিয়ে বসে আছেন কেন?
নোহা কম্বলের ভেতর থেকে জবাব দিল
‘ আমি ঘুম।
সোয়েভ আবার ও হাসলো। কম্বল গায়ের উপর টেনে নিয়ে বলল
‘ আমি জানি আপনি ঘুম।
নোহা নাকমুখ কুঁচকে বলল
‘ আমি ঘুম না। আমার কম্বল। আমার ঘর। আমার বিছানা। আপনি কেন। দূরে যান। ঘুমায় শান্তিতে।
সোয়েভ গলা অব্ধি কম্বল টেনে নিল। নোহার দিকে ফিরে বলল
‘ তাই নাকি?
নোহা মুখ মোচড় দিয়ে পাশ ফিরে গেল।

সোয়েভ তার একহাত দিয়ে উদর টেনে এনে নোহার পিঠ মিশালো তার বুকের সাথে। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল
‘ ঘর আপনার। বিছানা আপনার। কম্বল আপনার। বরটা ও আপনার। ভালো কথা। কিন্তু আপনিটা সম্পূর্ণ আমার।
নোহা কাঁপতে কাঁপতে ভাবলো
‘ মাগো মা আজ রাজ্যের সব শীত কি এই ঘরে চলে এল নাকি?
কানের কাছে হাত রেখে সোয়েভকে আটকিয়ে বিড়বিড় করল নোহা।
‘ আমি মরে গেছি।
হাসলো সোয়েভ। হাত সরিয়ে দিয়ে বলল
‘ ইন্না-লিল্লাহ।

_____________

নোহার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য সবাই রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো। সবাই রেডি। কিন্তু তাননা আর রাহা রেডি হতে পারেনি এখনো। রোয়েন জিশানকে কোলে করে নিয়ে চলে আসলো। মামা ভাগিনা ম্যাচিং করে ব্ল্যাক পাঞ্জাবি পড়েছে। ঈশানকে দেখে রোয়েন বলল
‘ গাড়িতে উঠে বসুক সবাই।
ঈশান বলল
‘ জিন্নাত আর রাহার এখনো হয়নি।
মেজাজ খারাপ হলো রোয়েনের। মেয়ে মানুষকে নিয়ে মানুষ ও আবার কোথাও যায় নাকি? দশঘন্টা লাগে সাজতে।
তবে রোয়েনের রাগ কমে এল তাননাকে আসতে দেখে। তাননা ঈশানের কাছে এসে দাঁড়ালো। নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল
‘ ভালো লাগছে? শাড়ি পড়েছি অনেকদিন পর।
ঈশান বলল
‘ উহুম। একটু ও ভালো লাগছে না।
গাল এলিয়ে হাসলো তাননা। বলল
‘ আপনাকে ও পঁচা লাগছে।
ঈশান গলা কাত করে হাসলো।

রোয়েন তাননাকে ডেকে বলল
‘ গাড়িতে উঠে বোস। আর কে?
তাননা বলল
‘ আর কেউ নেই রাহা ও এসে পড়েছে।
রোয়েন তাকালো সিঁড়ির দিকে। চোখ সরিয়ে নিল দ্রুত। জায়িদ বলল, যাওয়া যাক। সবাই তো রেডি।
রোয়েন কপট রাগ দেখিয়ে বলল
‘ কেউ রেডি নাহ। তাননা গিয়ে শাড়ি পাল্টে আয়। শাড়ি পড়েছিস কেন? যাহহ।
তাননা নিজের দিকে তাকালো। বলল
‘ আমি তো হিজাব ও পড়েছি। সমস্যা কোথায়? আমি নোহার বড় বোন নাহ?
রোয়েন বলল
‘ এত কিছু জানিনা। শাড়ি পাল্টে আয়। নইলে যাব না আমি। তোরা যাহ।
তাননা মুখ ফুলিয়ে ঈশানের দিকে তাকালো। ঈশান হাসলো। বলল
‘ কেমন ভাই আপনার? কি করবেন আর? যাবে না বলছে। পাল্টে আসুন।
সোরা আর নাহিল দূরে দাঁড়িয়ে চেয়ে রইলো।

তাননা রাহার দিকে তাকালো। রাহা শাড়ির সাথে মাথার হিজাবটার পিন লাগাতে লাগাতে তাকালো তাননার দিকে। চোখ নামিয়ে নিল। আনহা বলল
‘ মারে মা। এসব কোনো কথা মুননা?
তাননা ধপাধপ পা ফেললো। রোয়েনের গলায় ভেসে আসল বেশ রাশভারি কন্ঠে।

‘ সবাইকে বলেছি আমি।

তাননা বলল

‘ সবাই কে কে? মামুনি আর ফুপী তো শাড়ি পড়বেই। দাদু আর নানু ও কি থ্রিপিছ পড়বে?

রোয়েন বলল

‘ ওদের ছাড়া বাকি সবাই।

সোরা, নাহিল আর জায়িদ বের হয়ে গেল বাড়ি থেকে। রাহা ও তাদের পিছুপিছু হাঁটা ধরলো। জিশান রাহার কাছে দৌড়ে গিয়ে বলল

‘ মামা শাড়ি পড়লে বকে কেন খালামুণি?

রাহা হাসলো শুধু। কিছু বললো না। রোয়েন তাননাকে বলল

‘ এসব শাড়ি কেউ পড়ে? বিচ্ছিরি লাগে দেখতে।
রাহা থেমে গেল। ভাবলো
‘ সে সুন্দর ছিল কবে?
তাননা চলে গেল উপরে। এমন গাদ্দার ভাই না থাকুক কারো।
তাননা শাড়ি পাল্টে এল। নতুন কেনা থ্রিপছটা পড়েছে।
গায়ের উপর বোরকা জড়ালো। রোয়েনকে এসে বলল
‘ শান্তি হয়েছিস?
রোয়েন বলল
‘ যাব না আমি। তোরা যাহ।
তাননা বলল
‘ আবার কি হয়েছে?
রোয়েন বলল
‘ আমি সবাইকে শাড়ি পাল্টাতে বলেছি।
তাননা বলল
‘ আমি বোন হই তোর। তাই আমার উপর অধিকার দেখাচ্ছিস ভালো কথা। কিন্তু রাহার উপর দেখাতে যাস না। ও কেউ হয় না তোর।
রোয়েন বলল
‘ যাব না আমি। রাহা আস্ত একটা বেয়াদব। কথা ডিনাই করে চলে গেল। আমার কথা কথার মতো মনে হয়নি? আমি যাব না মানে যাব না।

রোয়েন বের হলো না বাড়ি থেকে। জায়িদ কপাল চাপড়ে বলল
‘ আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছ এই ছেলেকে?
সোরা গিয়ে রাহাকে ডাকলো। বলল
‘ শাড়ি পাল্টে এসো।
রাহা বলল
‘ আপু পড়তে বলেছে শাড়ি। কেন পাল্টাবো?
সোরা গম্ভীর গলায় বলল
‘ রাহা মুখে মুখে কথা বলতে শিখেছ কখন?
রাহার চোখে জল জমে এল। ধুপধাপ পা ফেলে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লো সে। তব্দা মেরে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখলো। হনহনিয়ে চলে গেল। কালো গোলাপি রঙের থ্রিপিছ পড়ে এলো। মাথায় গোলাপি হিজাব। সে বাড়ি থেকে হনহনিয়ে বেরোতেই রোয়েন আঁড়চোখে তাকালো। রাহা তাননার পাশে গিয়ে বসলো। তাননা বলল
‘ তোকে এখন আর ও ভারী মিষ্টি লাগছে।
রাহা বলল
‘ ডিভোর্সির মতো লাগছে না?
তাননা চমকে উঠলো।

সোরা গাড়ির বাইরে থেকে শুনে ডাক দিল
‘ রাহা?
রাহা চুপ করে বসে থাকলো। রোয়েন এসে বসলো গাড়ির ড্রাইভিং সিটে। জায়িদ আর নাহিল স্বস্তি পেল। জাহেদা বলল
‘ ভাই তুই কি সাজগোছ করতে দেরী করলি নাকি? ওখানে কি তোর বউ আসবে?
মেজাজ চটে গেল রোয়েনের। জায়িদ বলল
‘ আহা আম্মা কিসব বলো?
জিশান তাননার কোলে বসা। সে বলল
‘ মামার বউ আছে।
জাহেদা বলল
‘ কুথায়?
জিশান রাহাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল
‘ ওততো। খালামুণি মামার বউ।
তাননা মুখ চেপে ধরলো জিশানের। রোয়েন গাড়ির হর্ন বাজালো। নাহিল বলল
‘ ড্রাইভার কোথায় জায়িদ ভাই?
জায়িদ এসে বলল
‘ মুননা চালাবে বলল। ওই গাড়িতে আনহা আর সোরা বসেছে, তুই ও চল। ঈশান চলো। এরা চলে যাক এই গাড়ি করে।
রোয়েন গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে অন্য গাড়িটাতে গিয়ে বসলো। তাননা গাড়ির কাচ ভেদ করে মুখ বের করে দেখলো। ঈশানকে ইশারায় বলল
‘ দেখেছেন?
ঈশান বলল
‘ ঠিক হয়ে যাবে।

____________

সবাইকে দেখে নোহা আরেক দফা কান্নাকাটি শুরু করলো। জায়িদকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ আব্বা আমাকে আজ নিয়ে যাবে। আমি যাবই। নাহলে তোমাকে যেতে দেব না।। জায়িদ আর আনহা হাসলো। নোহা আনহাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল
‘ আম্মা ও আম্মা আমাকে নিয়ে যাবে না?
আনহা বলল
‘ নিয়ে যাব তো। নিয়ে যাওয়ার জন্যই তো এসেছি ।
নোহা খুশি হলো। আনহা বলল।
‘ কি সুন্দর দেখাচ্ছে মা টাকে।
নোহা গাল এলিয়ে হাসলো। বরবাবু তাহলে ঠিক কথা বলেছে। তাকে সুন্দর লাগছে। তাননা আর রাহাকে দেখে নোহার খুশির অন্ত নেই। রাহা ও নোহাকে পেয়ে খুশি। তাননা চুপিসারে জিজ্ঞেস করল
‘ নুহু তোর বর তোকে কি দিয়েছে রে কাল?
নোহা লজ্জা পেয়ে বলল
‘ দেয়নি কিছু।
রাহা বলল
‘ ওররে লজ্জাবতীরে। লজ্জা পেতে হবে না বলতে ও হবে না।
নোহা বলল
‘ তোমার বিয়ে হলে আমি ও এমন বলব রাহাপু দেখো।
রাহার হাসি হুট করে নিভে গেল। তাননা বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা। আমাদের বসতে দে। খেতে দে ভাই।
নোহা বলল
‘ আসো না। রোয়েন ভাইয়া কোথায়?
তাননা বলল
‘ আর বলিস না। আসার সময় কত কান্ড করলো সে। শাড়ি পড়লাম আমি আর রাহা। পাল্টাতে হইছে তারজন্য। শাড়ি পড়লে নাকি তার ইজ্জত সম্মান খুঁইয়ে পড়ে যাচ্ছে।
নোহা বলল
‘ ভাইটা এমন। বুঝে ও বুঝোনা তোমরা। রাহাপু তো একদম বুঝে না।
রাহা কানে নিল না সেকথা। তাননা তাকে দেখে আর ভাবে
‘ ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেললে তাদের অবস্থা বুঝি এমন হয়?

______

একমাত্র ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান। সোয়েভের মা বাবার আত্মীয় স্বজনে ভরপুর পুরো বাড়ি। নোহা রাহার সাথে খুনসুটিতে ব্যস্ত। সবাই দেখতে আসলো নোহাকে। রাহা বলল
‘ সবাই তোকে দেখতে আসছে আর তুই গল্প করতে বসে গেলি? যাহ।
নোহা বলল
‘ আমি বসে আছি। দেখে দেখে চলে যাবে। রাহা বলল, পাগলিটা তোর বিয়ে হয়ে গেছে এটা মানতে পারছিনা একদম।
নোহা বলল
‘ ধুরর তুমি মানো না মানো। বিয়ে হয়ে গেছে আমার। বাসর ও হয়ে গেছে।
রাহা বলল
‘ যাহ বেয়াদব মেয়ে। আমি তো বড় বোন নাহ?
নোহা ভেংচি কেটে গেল মাত্র একবছরের বড়। অতটা ও না।
রাহা বলল
‘ যাইহোক আমি তোর বড় বোন।

নোহার শ্বাশুরি এসে নোহাকে ডেকে নিয়ে গেল। সোয়েবের মামার বাড়ি থেকে আগত মানুষজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। জায়িদ দূরে দাঁড়িয়ে নোহাকে দেখে আনহাকে বলল
‘ আরেহ আমাদের না এইদিন বিয়ে হলো। এখন মেয়ে বিয়ে দিলাম?
আনহা হাসলো। বলল
‘ বুড়ো হচ্ছেন সেদিকে খেয়াল আছে অফিসার ?
জায়িদ বলল
‘ বললেই হলো। আমাকে দেখে কি বুড়ো মনে হয়?
আনহা বলল
‘ ধুরর। কথা কম বলেন। এটা মেয়ের শ্বশুরবাড়ি।

তাননার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো রাহা। জিশানের সাথে দুষ্টুমিতে ব্যস্ত। নাহিল আর সোরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। চোখ তাদের রাহার দিকে। সোরা রাহার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সোয়েবের পাশে দাঁড়ানো নোহার দিকে তাকিয়ে বলল
‘ আমি রাহাকে এমন হাসিখুশি দেখতে চেয়েছি। আমার মেয়েটা কতদিন হাসেনা।
নাহিল চুপ করে থাকলো। সোরা নাহিলের দিকে ফিরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
‘ সব আপনার দোষ। আমি ছাড়ব না আপনাকে। আপনি শেষ করে দিলেন সবটা।
নাহিল বলল
‘ আমি শেষ করেছি? রাহার ভালো চাইনি আমি?
সোরা সরে পড়লো দ্রুত। চোখ গাল মুছে এগোতেই রোয়েনের মুখোমুখি পড়লো। সোরার গাল ভেজা দেখে রোয়েন কৌতূহলী হয়ে তাকালো। ডাকল
‘ মামুনি?
সোরা পেছনে ফিরে নোহা আর সোয়েবকে দেখলো। তারপর রোয়েনকে বলল

‘ তুমি চলে যাও সুইজারল্যান্ডে। রাহাকে বিয়ে দেব আমি। তুমি থাকলে তা কখনোই সম্ভব না।

রোয়েন কিছু বলতে পারলোনা। শুধু ভাবলো
‘ চলে যাওয়ার জন্য কোনো কারণ লাগে না বরং থেকে যাওয়ার জন্য কারণ লাগে।

রাহা সোরা আর রোয়েনকে দেখলো দূর থেকে। কৌতূহল জাগলো কি কথা হচ্ছে আম্মার সাথে?
সোরার চোখাচোখি হলো রাহা। সরে গেল দ্রুত। রোয়েন চলে যাওয়ার আগে বলে গেল,

‘ আমি চলেই যাব। সেটা বললে ও না বললে ও।

সোরা রোয়েনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাল মুছলো আবার। আবার ও গাল ভিজলো। এই ছেলেকে আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছে? দূরে গিয়ে থাকতে কষ্ট হয় না? হয় না বোধহয়। হবে কেন? নিজের মা হলে হয়ত হতো।

__________

নোহার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলা মেয়েটিকে দেখে অনুষ্ঠানে আসা এক মহিলার চোখ গেল। নোহার শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করল
‘ ওই মেয়েটা কে রে?
নোহার শ্বাশুড়ি তানজিলা বেগম বললেন
‘ আমাদের বউয়ের বোন লাগে। রাহা।
মহিলা বলল
‘ ওহ আচ্ছা। বিয়ে হয়নি নাহ?
তানঝিলা বেগম বলার আগে গম্ভীর গলায় কেউ একজন বলল
‘ বিয়ে হয়নি, কিন্তু ঠিক আছে।
তানঝিলা বেগম রোয়েনকে দেখে হাসলেন বললেন
‘ রোয়েন তোমাকেই খুঁজছিলাম আমি। ভাই বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এত দেরীতে আসে?
রোয়েন বলল
‘ সবাইকে নিয়ে আসতে একটু দেরী হলো আন্টি।
তানঝিলা বেগম বলল
‘ ওহ আচ্ছা। রাহার বিয়ে কখন ঠিক হলো? কার সাথে?
রোয়েন বলল
‘ ওই মানে। কথাবার্তা চলছে শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।
তানঝিলা বেগম বললেন
‘ ওহ ভালো। খুব মিষ্টি মেয়ে তো। খুব সুখী হবে।
রোয়েন মাথা নাড়ালো।

মহিলা বিশ্বাস করলো না। রাহাকে একা পেয়ে গল্প শুরু করলো। এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করল
‘ তোমার নাকি বিয়ে ঠিক আছে রাহা?
রাহা বলল
‘ বিয়ে? কে বলেছে? আমি তো ডি,,,,
তার আগেই রোয়েন এল। রাহার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ সবকিছুর একটা লিমিট থাকে৷
মহিলা ভুরু কুঁচকে ভাবলো এ আবার কেমন ভাই?
রাহাকে অর্ধেক পথ নিয়ে গিয়ে হাত ছেড়ে দিল রোয়েন। ভুলে ও রাহার দিকে তাকালো না। সোজা চলে গেল। রাহা ভাবলো
‘ মাথা কি গেছে নাকি?

চলবে
গল্প শেষের দিকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here