ধ্রুবতারা পর্ব_২১ পুষ্পিতা_প্রিমা

ধ্রুবতারা
পর্ব_২১
পুষ্পিতা_প্রিমা

বিবেকের দোড়গোড়ায় গিয়ে মানুষ কখনো হোঁচট খায় না বরং মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। কিন্তু আবেগের বেলায় বিষয়টা উল্টো। তখন দোড়গোড়ায় পৌঁছানো তো অনেক দূর পা বাড়াতেই হোঁচট খায়। আর এই হোঁচট মানুষকে এই শিক্ষা দেয় সেই পথে পা না বাড়ানোটাই উত্তম। কিন্তু যারা জেনে বুঝে ও পা বাড়ায় তাদের অবস্থা এই রাহার মতোই হয়। ভালোলাগা, ভালোবাসা, প্রেম কিংবা প্রণয় এই শব্দগুলো আসে আবেগ থেকে। কারোটা আসে খানিক সময়ের জন্য আবার কারোটা স্থায়ী। কারোটা রঙ পাল্টায় কারোরটা সেইভাবেই থাকে তবে ধূসর রঙ ধারণ করে পরবর্তীতে, আবার কারোরটা থেকে যায় চিরঞ্জীব। এই যে চিরঞ্জীব বেঁচে থাকা প্রেমপ্রণয় গুলো জিইয়ে রাখার জন্য একে অপরের প্রতি বিশ্বাস শ্রদ্ধা সম্মান থাকা যেমন জরুরী তেমন জরুরী একটা মানুষ অপর মানুষটাকে ঠিক কতটা আগলে রাখতে চায় তার উপর। অনেক সময় দেখা যায় সবই ঠিকঠাক কিন্তু ওই আগলে রাখা, পাশে থাকা এটা সবাই পারেনা। বিশ্বাস তো আমরা রাস্তায় হেঁটে যাওয়া কুকুরের উপর ও খানিকক্ষণের জন্য রাখতে পারি কিন্তু নিশ্চয়তা দিতে পারিনা সে আমাকে কামড়াবেই না কখনো। খানিক সময়ের জন্য বিশ্বাস সবাই করতে পারে কিন্তু সেই বিশ্বাস, ভরসা, আশ্বাস যখন খুব শক্ত মজবুত হয় তখনই আসে ভালোবাসা শব্দটি।

কেউ আমাকে ভালোবাসে, আমার পাশে থাকতে চায়, একসাথে সারাটাজীবন কাটাতে চায় এই শব্দগুলোর প্রতি অবিশ্বাসই অপর মানুষটাকে ভালোবাসতে বাঁধা দেয়। যখন একটা মানুষ পরিপূর্ণ ভাবে বুঝে উঠতে পারেনা অপর মানুষটা তাকে ঠিক কতটা চায় তখন অব্ধি মানুষটা ভালোবাসা জিনিসটার উপর বিশ্বাস রাখতে পারে না। তখন ভালোবাসা শব্দটা হয়ে দাঁড়ায় নিছক একটা শব্দ, ক্ষণিকের আবেগ, কিছুটা মোহ, অল্প সময়ের পাগলামি।
এই ভুলভ্রান্তি ভেঙ্গে গেলে, মনের দরজা বন্ধ করে রাখা শিকল ঢিলে হয়ে গেলে ধীরেধীরে বসন্তের বাতাস ঘনীভূত হয়। সেই বাতাসের দাপটে দরজা খুলে গেলে হৃদয়গহীনে বসন্ত ঢুকে পড়ে হু হু পড়ে। এই শিকল খুলতে খুলতে একসময় দেখা যায় বড্ড দেরী হয়ে গেছে। কুক্ষণে খুলেছে প্রেমের দুয়ার। কি হয় তাতে? পরিণতি?

ভিসা সংক্রান্ত নানান ধরনের সমস্যার মুখোমুখি রোয়েন। পড়ন্ত বিকেলে সব ঝামেলা চুকিয়ে সে পা রাখলো বাড়ির চৌকাঠে। সোরা তখন সন্ধ্যার চা বসিয়েছে। রোয়েনকে ফিরতে দেখে গরম পানি বসালো। রোয়েন ফিরে এল মিনিট দশেক পর। কফি রেডি দেখে মগ নিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে এল সোফার কাছে। সালেহা বেগম বসেছিলেন। রোয়েনকে দেখে প্রশ্ন ছুঁড়লেন
‘ কবে যাচ্ছিস ভাই?
রোয়েন জবাব দিল ত্যাড়া।
‘ তাড়ানোর খুব তাড়া দেখছি।
সালেহা বেগম হেসে ফেললেন। বললেন
‘ আমার গুড্ডু কত ভালো ছিল জানিস? তুই কোত্থকে এরকম হলি?
‘ সেটা তোমার ছেলে আর ছেলের বউয়ের কাছ থেকে জেনে নিও।
‘ তাদের কি আর পাই কথা বলার জন্য? নইলে কবে জিজ্ঞেস করতাম। যাইহোক কবে যাচ্ছিস?
রোয়েন কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল
‘ এই সপ্তাহের পর ফ্লাইট।
সালেহা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন
‘ আমার জানাজার খাট কাঁধে তুলবিনা ভাই?
মেজাজ বিগড়ে গেল রোয়েনের।
‘ সবসময় আমার মাথা খারাপ না করলে ভাত হজম হয় না তোমার।
সালেহা বেগম হেসে বললেন
‘ হয় না। আজকাল ডাক্তারের দেওয়া গ্যাস্টিকের ঔষধ কাজে লাগে না কেন?
রোয়েন চুপ করে থাকলো।
সালেহা বেগম বলল
‘ পাঁচ বছর পর ফিরবি? বিয়ে কি ওখানকার কাউকে করবি নাকি?
রোয়েন শক্ত জবাব দিল।

‘ তোমরা এই বিয়ে ছাড়া কিছু বুঝোনা? এত বিয়ে বিয়ে করো কেন? মানুষের জীবনে বিয়ে ছাড়া কি অন্য কোনো শব্দ থাকতে পারে না? অবশ্য এই চারদেয়ালের মাঝে বসে কিই বা জানো তোমরা? জানো কত মানুষ দু বেলা দু মুঠো ভাত খাওয়ার জন্য লড়াই করছে। মহাকাশ মহাকাশ ইনভেন্ট করার জন্য কতশত লড়াই চেষ্টা পরিশ্রম দিচ্ছে। এরা কি তোমাদের মতো বিয়ে নিয়ে পড়ে থাকে? এরা কি সারাক্ষণ এসব ঘর সংসার নিয়ে পড়ে থাকে? কেন কানের উপর এসে সারাক্ষণ বিয়ে বিয়ে করো। দেখলে না বিয়ে করে আবার ডিভোর্স হলো। তাহলে কি হলো বিয়ে করে? সমস্যা সমাধান হলো কি? হলো না তো। বরং বাড়লো। বিয়ে না হলে তো কেউ রাহাকে ডিভোর্সি বলতো না। না আমাকে বলতো। রাহার বিয়ে হতে ও কোনো সমস্যা হতো না। মিথ্যে বলে রাহাকে বিয়ে দিলে রাহা কি সুখী হবে? দুদিন পর যখন রাহার ব্যাপারে সব জানতে পারবে তখন? আসলে মূলকথা হলো বিয়েকেই তোমরা সমাধান মনে করো সবসময়। ওখানে গিয়ে বিয়ে করব নাকি করব না সেটা কি আগে থেকেই জানি আমি? আমি কি ফেরেশতা? ওখানে গিয়ে আমার কাউকে ভালো লাগতেই পারে৷ অনেক কিছু হতে পারে, যা ভাবছি তা হতে ও পারে না ও হতে পারে। সব আগে আগে কেন ভেবে রাখব? আমি ওখানে পড়তে যাচ্ছি, বিয়ে করতে নয়। যত্তসব মাথা নষ্ট কথা বলো।
সালেহা বেগম বললেন
‘ সামান্য একটা প্রশ্ন করেছি আর তুই আমাকে কত কথা শুনায় দিলি মুননু।
‘ ওই নামে একদম ডাকবে না আমাকে। ভালো লাগেনা।
সালেহা বেগম হেসে ফেললেন। বললেন
‘ এটা তোর বাবাই দিয়েছে ভাই।
‘ চিনিনা কোনো বাবাইকে।
সোরা কান পেতে শুনে থাকলো সবটা। তাননা ও। সে এসে বলল
‘ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাহ। আর রাহার বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে না তোকে। রাহার ডিভোর্সি এটা জেনে ও যে ওকে বিয়ে করবে তার সাথেই বিয়ে দেব। দোয়া করিস মানুষটা যেন অন্তত তোর মতো না হয়।
নিজের বোনের মুখে অমন তিক্ত কথা সহ্য হলোনা রোয়েনের। কফির মগ ওই দূরে ছুঁড়ে মারলো সে। আঁতকে উঠলো সবাই। এত জোরে আওয়াজ শুনে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে ছুটলো রাহা। মেঝেতে কফির মগকে গড়াগড়ি খেতে দেখে রোয়েনের দিকে তাকালো।

সোরা এসে মগ কুড়িয়ে নিয়ে বলল
‘ তাননা ঘরে যাও।
তাননা চলে গেল। রোয়েন গটগট পায়ে হেঁটে চলে যাওয়ার সময় রাহার মুখোমুখি হলো। জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে চলে গেল। রাহা ভাবলো
‘ আমি কি করেছি?
রুমে গিয়ে তাননা ঘনঘন চোখ মুছলো। এ নাকি নিজের ভাই? চেনা যায় না আজকাল। সে থাকবে না এই বাড়িতে৷ একমুহূর্ত ও থাকবেনা।

ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে তাননা চলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিল৷ সবাই একে একে এসে কত বুঝালো তাকে। তাননা থাকার নয়। যার জন্য নিজের ঘর সংসার পেলে এখানে এসে থাকে সে তার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবে। কিসের ভাই টাই? কেউ আপন নয়।
রুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো রোয়েন। জিশান দৌড়ে এসে তার আঙুল টেনে বলল
‘ মামা আমি যাবু না। আম্মা কেন কাঁদে?
রোয়েন ঘরে ঢুকলো। তাননা বলল।
‘ কেউ যেন আমার ঘরে না আসে। দূর হোক।
রোয়েন ব্যাগটা নিয়ে ফেলল৷ চেইন খুলে সব কাপড় চোপড় উপুড় করে ফেলে দিল। জগের পানি দিয়ে সব চুবিয়ে ফেললো। তারপর বলল
‘ এবার যাহ।
তাননা রেগে তাকিয়ে থাকলো। তেড়ে গিয়ে ঠাসস করে চড় মেরে বসলো। রোয়েন নির্বিকার। আরেকটা মারতে যেতেই রোয়েন হাত ধরে ফেলল৷ আষ্টেপৃষ্ঠে বোনকে ধরে ফেলে বলল
‘ তোর মার খেয়েছি দেরী হয়েছে। আজ খেলাম। ভালো লাগলো।
তাননা তার হাতের বাহুতে দাঁত বসালো জোরে। কেঁদে উঠে ছেড়ে দিয়ে বলল
‘ তুই ভাই নয় আমার। মরে গেছে আমার ভাই। আমাকে আগের মতো ভালোবাসেনা। আমাকে না দেখে থাকতে তার কষ্ট হয় না।
রোয়েন বোনকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। বলল
‘ ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল কি করে করতে তা ভালো করে জানিস।
তাননা জোরে কেঁদে উঠলো। রোয়েন মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
‘ আহা তুই কি এখনো বাচ্চা তুননু? তুই মা হয়েছিস। একটু গম্ভীর সম্ভীর হ। ঈশান ভাইকে দেখছি জ্বালিয়ে মারিস। আমি কি দূরে কোথাও যাচ্ছি? ফোনে যোগাযোগ থাকবে আমাদের।
তাননা ফুঁপিয়ে উঠলো। বলল
‘ যাস না মুননু। তোর জন্যই তো আমি ছুটে আসি এই বাড়িতে। আমাকে ছেড়ে যাস না। আমাকে কষ্ট দিস না।
রোয়েন বলল
‘ কাঁদিস না।
তাননা আর ও কাঁদলো রোয়েনের কাছে উপযুক্ত জবাব না পেয়ে।

_________

সত্য যেমন চাপা থাকে না তেমন চেপেচিপে রাখা কোনোকিছুই বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যায়না। নাহিলের পরিচিত এক বন্ধুর ভাইপোর জন্য রাহাকে নিয়ে কথাবার্তা এগোলো। কিন্তু আর ও কিছুদূর কথাবার্তা এগোতেই বরপক্ষ জানালো মেয়েটার সাথে তার জ্যাঠাতো ভাইয়ের কিছু একটা আছে। এই কথাটা রোয়েনের কানে আসায় তুমুল চেঁচামেচি করে সে। তার মতে যারা একটা মেয়েকে নিয়ে ফালতু কথা বলতে পারে তারা আর যাইহোক ভালো মানুষ না অন্তত। ওসব মানুষের হাতে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। তা শুনে তাননা বলল
‘ তুই দে তাহলে। মেয়েটাকে মাঝপথে ফেলে রেখে পালাচ্ছিস কেন? লজ্জা হয় না তোর? তোর জন্যই তো ওর এই দশা।
রোয়েন বলল
‘ এখন সব আমার দোষ? রাহা তো ফেরেশতা।
সবাই চুপটি করে থাকলো। রাহা আড়ালে দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনলো। রোয়েন বলল
‘ নাহিল আহম্মেদ মেয়েকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। আমি দিয়েছি। ব্যস।
রাহার ভালো না থাকার কারণ কেন আমি হবো? আমি তো রাহাকে ভালো থাকার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। এখনো আমার দোষ? রাহাকে ডেকে জিজ্ঞেস কর, ডিভোর্স লেটারে সাইন আগে কে করেছিল? আমি না রাহা? ডিভোর্সের কথা কে তুলেছিল? আমি? এখন সব দোষ আমার হয়ে গেল?
সালেহা বেগম বলল
‘ তুই দিতে চাসনি? তো কি চেয়েছিলি।
রোয়েন বলল
‘ কিচ্ছু চাইনি। আর বললে ও কি করবে?
সালেহা বেগম বলল
‘ কিচ্ছু করার নেই। যদি পারিস ভালো একটা ছেলে দেখে মেয়েটাকে তুলে দে আর তুই যেখানে যাওয়ার যাহ।
রোয়েন বলল
‘ আমি আর পারব না। বলা যায় না রাহা আবার পালিয়ে যায় বিয়ের আসর থেকে। অতসব নাটকে আমি নেই। আমি রাহার ধারেকাছেও নেই। তোমরা যা করার করো।

বলেই চলে গেল রোয়েন। তাননা এসে সালেহার কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো। বলল
‘ দাদু মুননুকে বলো না,, যেতে। থেকে যেতে। আমরা ওর আর রাহার আবার বিয়ে দিই।
সালেহা বেগম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন
‘ এসব কি কথা? নাউজুবিল্লাহ। ওসব কথা মুখে আনা ও পাপ। ওদের তালাক হয়েছে। তালাক হলে আবার বিয়ে করা যায় না।
তাননার দু চোখ টলমলে করে উঠলো। বলল
‘ কেমন নিয়ম এগুলো?
সালেহা বেগম বলল
‘ এগুলো আমার কথা না। এগুলো হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
রাহা দাঁড়িয়েছিল সোরার পেছনে। সোরা ফিরতেই রাহা চলে গেল।
যেতে যেতে থামলো ছাদে উঠার সিঁড়ির কাছে। ওড়না টেনে নাকমুখ মুছলো। আবার ভিজে উঠতেই আবার মুছলো।
ছাদ থেকে ধপাধপ পা ফেলে নামা রোয়েন রাহাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করল
‘ এসব ন্যাকা কান্নার মানে কি রাহা? নিজেকে এত হেয় করছ কেন? নিজেকে সস্তা ভাবলে সবাই লুটে নেওয়ার চেষ্টা করবে।
রাহা বলল
‘ যেমনটা আপনি করেছিলেন। বিয়ে করে আবার ছেড়ে দিলেন, ছেড়ে দেওয়ার যখন ছিল বিয়ে কেন করলেন আমায়? দয়াটা দেখানোর কি দরকার ছিল? কলঙ্ক হিসেবে আমি চাইনি আপনাকে।
রোয়েন বলল
‘ ঠিক আছে। এবার আমাকে বলে দাও কি করা উচিত আমার। কি করলে তোমাদের দেওয়া দোষারোপ থেকে মুক্তি পাব আমি। বলো।
রাহা বলল
‘ আপনি চলে যান। অনেক দূরে। আমার সামনে কখনো আসবেন না। আমি দেখতে চাই না আপনাকে।
রোয়েন বলল
‘ ঠিক আছে।

রোয়েন সেই যে গেল বাড়িতে আর এল না। এক, দুই, তিন দিন পার হলে ও বাড়ি ফেরার নাম নেই তার। রাহা কিছু বুঝে ও বুঝে উঠতে পারলো না। গোঁয়ার লোকটা তার কথা শোনা শুরু করলো কখন থেকে। ফোনে ও পাওয়া গেল না রোয়েনকে। বাড়িতে একপ্রকার কান্নাকাটি চললো। কোনো বিপদআপদ হলো না তো।
প্রায় পাঁচদিনের মাথায় রাহার ফোন লাগলো রোয়েনের ফোনে। রাহা হ্যালো হ্যালো জিজ্ঞেস করতেই রোয়েন বলল
‘ একটু শান্তি দাও রাহা। তুমি কি পণ করেছ যে মেরে ছাড়বে আমাকে। এই জগতে এত এত পুরুষ মানুষ থাকতে জ্বালানোর জন্য তুমি আমায় কেন বেঁচে নিলে রাহা?
রাহা বলল
‘ আপনি তো অনন্য একজন। আপনাকে প্রথমবার পেতে হলে পাগল হতে হয়। মানসিক ভারসাম্য হারাতে হয়। দ্বিতীয়বার পেতে হলে একটা আস্ত স্বামীকে বিয়ে করে মারতে হয় নয়ত আবার ও তালাক। কিন্তু এখন ভীষণ ভয় হচ্ছে, আমি যদি আবার সেই মানুষটার প্রেমে পড়ে যাই? বিয়ে শব্দটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি আমি।

রোয়েন ফোন রেখে দিল পাশে। সে কক্সবাজারে হসপিটালে একটা কাজে এসেছে। সাথে বন্ধুদের সাথে সেন্টমার্টিন ও যাবে। ফেরার আগে একটু ঘুরাঘুরি। এই যে না জানিয়ে দূরে চলে এল। কারো কি তাকে নিয়ে চিন্তা ছিল? কারো গলায় কি কোনো উৎকন্ঠা ছিল? নাহ বিন্দুমাত্র ছিল না। তারমানে সে যেখানে যাক না কেন কারো কিচ্ছু যায় আসেনা। অবশেষে সেই মনগহীনের বসন্তের বাতাস আসাযাওয়া আবার থেমে গিয়ে দেখা দিল জ্যোষ্ঠের খাঁ খাঁ রৌদ্দুর।
কবি বলেছেন,
‘ যারে কভু নাহি পাবে।
তাহারে ভুলিয়া যাওয়াই মঙ্গল।
রোয়েন ভাবলো তবে এইবার মঙলময় কিছু হোক।
অতঃপর সে ফিরলো সবাইকে চমকে দিয়ে।
উপস্থিত হলো তার চলে যাওয়ার দিন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here