যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:১৪

0
662

যে শ্রাবণে এলে তুমি❤❤
পর্ব:14
লেখনিতে: মৌসুমী

.
.
.

ফারদিন তুই কথা বলছিস না কেনো ?কি হয়েছে,এই মহিলা তখন থেকে আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছে সকলের সামনে আর তুই চুপচাপ শুনছিস?

তোমার ভাইয়ের মুখ আছে নাকি যে কথা বলবে..আর আমি আজেবাজে বকছি,ও তোমার ভাই শহর থেক্যা আসা নষ্টামি কর…

আপনি থামবেন ফয়েজ ধমকিয়ে সাকিবের মাকে থামালো,কিন্তু সাকিবের মা তো থামার মেয়ে না ,মহিলা অন্যরকম,কারো কিছু শুনলে বা দেখলে সে গোটা পাড়া না করে থামে না।তাই ফয়েজের কথা পাততা না দিয়ে আবার কথা বলতে শুরু করলো।

আশেপাশের অনেক মানুষ আরো চলে এসেছে বাড়িতে।বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলছে ,কেউ হাসাহাসি করছে,কেউ কানেমুখে একে অপরের সাথে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে।গ্রামে এমন বিষয় পাইলে হয় তখন সবাই ওই বিষয় নিয়েই পড়ে থাকবে।

জমিলা বেগম গেছিলো বাইরে,বাড়িতে এতকিছু ঘটে গেছে সে জানতোনা।বাড়িতে এত মানুষ দেখে আর এরকম কথা সকলের মুখে শুনে তার মাথা ঘুরে গেছে।এসব ব্যাপার খুব ই লজ্জাজনক।আগেও এরকম বিষয় শুনেছে সে কিন্তু নিজের পুতাকে নিয়ে যে এমন পরিস্থিতিতে পড়বে তা জমিলা বেগম কখনোই ভাবেননি।

নিরা ভয়ে জড়সড় হয়ে নিহাকে জাপটে ধরে আছে।তুলতুল এত মানুষ একসাথে দেখে সেও ভয়ে নিহার বুকের মধ্যে ঢুকে আছে।নিহা জানে তার দেবর কেমন আর তার বোন ও,তারা কোন নোংরামি যে করেনি সে নিশ্চিত কিন্তু এই সাকিবের মায়ের কথা শুনে তার কানে আগুন জ্বলছে।কোন মন্তব্য ই এ বিষয়ে সে বর্তমানে করতে পারছেনা।মহিলা প্রচুর সেয়ানা তার কাছে একটা স্মার্ট ফোন আছে সেটা দিয়ে সে আগে ফারদিন আর নিরার ওই অবস্থার ছবিও তুলে রেখেছে প্রমাণ হিসেবে।মান-সম্মান বলে আর কিছুই থাকলোনা।

ফয়েজ দুই হাত দিয়ে মাথার চুল টানছে,লজ্জায় তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে।

সাকিবের মা গ্রামের মেম্বার,মন্ডল যা আছে সবাইকে খবর দিয়েছে,তারা আসলে এই নোংরামির তিনি একটা ফয়সালা চান।এটা গ্রাম শহর না যে যা ইচ্ছা তাই করবে তাও আবার তার ই চোখের সামনে।ইতিমধ্যে অনেককেই তিনি ফারদিন আর নিরার একসাথে জড়িয়ে থাকার ছবি দেখিয়েছেন।

.
.
জামান সাহেবরা ছুটে আসছে বাড়ির দিকে অটোতে করে।সবাই থম মেরে আছে কেউ কোন কথা বলছেনা।মাহফুজা বেগমের চোখে মুখে রাগ ভেসে আছে।নিরাকে পাওয়া মাত্র ই তিনি ঠাস করে চড় দিবে তাকে।এত বেয়াদব কবে থেকে হয়েছে সে যে বেড়াতে এসে বাপ-মায়ের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।

অটো এসে বাড়ির সামনে থামতেই মাহফুজা বেগম নেমে আগে আগে ছুটতে শুরু করলো,নেওয়াজ সাহেব স্ত্রীর রাগ সম্পর্কে জানেন,তার রাগ কত আর এখন ঠিক কত ডিগ্রিতে আছে তাও তিনি ভালোমতোই জানেন।ভিড় ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতে যাবে মাহফুজা বেগম এমন সময় নেওয়াজ সাহেব পেছন থেকে মাহফুজা বেগমের হাত টান দিয়ে ধরে অন্য দিকে নিয়ে গেলেন যে এখন সবার সামনে কিছু করা ঠিক হবে না শান্তভাবে সবকিছু সামলাতে হবে।

ভীড় ঠেলে সামনে পৌছাতেই জামান সাহেবের সাথে হাত মেলালেন এই গ্রামের মেম্বার কুদ্দুস আলী।তারপর দুজন দুই চেয়ারে বসলো।কুদ্দুস আলীই কথা শুরু করলেন প্রথমে,
-ভাইসাহেব আপনি আমাদের এই গ্রামের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি,আপনি এই গ্রামের জন্য অনেক কিছুই করেছেন।তাই আপনার ছেলের পক্ষে কোন খারাপ কিছু রটুক এটা আমরা চাইনা ।আমরা একটা মিমাংসায় আসতে চাই,যেহেতু মেয়ে আপনার পর কেউ না,আপনার বড় ছেলের স্ত্রীর বোন সে।সে মেয়েমানুষ তার যাতে ভবিষ্যৎ এ কোন কলঙ্ক না থাকে তাই তারদিক বিবেচনা করে আমরা সিদ্বান্ত নিয়েছি তাদের বিয়ে দিয়ে দিবো আজ ই।
বিয়ের কথা শুনে ফারদিন,নিরা দুজন দুজনের দিকে একবার তাকালো।জামান সাহেব কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিরা সবার সামনে বলে উঠলো ,আমি বিয়ে করবোনা।আমরা এমন কোন নোংরামি করিনি যে এটার জন্য বিয়ে করতে হবে।
নিরার কথা শুনে সবাই নিরার দিকে তাকালো।
সাকিবের মা ওমনি বলে উঠলো,নো়ংরামি না তো কি হ্যাঁ আমি নিজে দেখ্যাছি তোমহারে দুজনকে ওই অবস্থায়,ছিঃ আমি মুখে আনতে পারবোনা।মেম্বার কাকা আপনি এই মেয়ের কথা শুনবেননা।এই মেয়ে শোনো এড্যা গেরাম।গেরাম এসব কেহু করে না আর করলে তাখে শাস্তিও দেয়া হয়।কাহুকে জরিপানা দেয়া লাগে।তোমরা দুজন আইভো আর বিহ্যার আগেই উঠানে যা করছো তাতে প্রেম করতে পারব্যা,আর বিহা করতে পারব্যানা।
-মেম্বার সাহেব হাত ইশারা করে সাকিবের মাকে থামতে বললো।
জামান সাহেব বললেন আমি আর কি বলবো।কিছু বলার নাই।যেই ছেলেকে নিয়ে এতদিন গর্ব করেছি সেই ছেলেই মুখে চুনকালি দিলো।ফয়েজ যখন ফোন করে আমাকে সব জানালো তখন আমার পা দুইটা মাটিতে আটকে গেছিলো।মনে হচ্ছিলো মাটি ফাঁক হোক আর আমি মাটির ভিতর ঢুকে যাই।আজ এত বছরের জিবনে কখনো এমন অসম্মানিত হতে হয়নি।আর আজ।আজ কোথায় থাকলো আমার সম্মান।ফারদিনের দিকে তাকিয়ে জামান সাহেব বললেন,আমাকে বা তোর মাকে বলতে পারতি তোরা সম্পর্কে আছিস আমরা বিয়ে দিয়ে দিতাম।নিরাকেতো আমরা কেউ অপছন্দ করতামনা তাহলে?বল ক্যান আমার সম্মান নষ্ট করলি,বলতে বলতে জামান সাহেব উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।ফয়েজ গিয়ে চুপ করতে বললেন জামান সাহেবকে।

শান্ত হোন আব্বা উত্তেজিত হয়েন না।বসেন আপনি।নিহা যাও আব্বার জন্য পানি আনো।

মেম্বার সাহেব জামান সাহেবের হাত ধরে বললেন,উত্তেজিত হোয়েননা ভাই,আমাদেরো সন্তান আছে ,আমরা আপনার অবস্থাটা বুঝছি কিন্তু কি আর করবেন সন্তানদের জন্য এরকম অনেক পরিস্থিতিতে পড়া লাগে।কিছু করার নাই।

ফারদিন চুপচাপ সকলের কথা শুনেই যাচ্ছে, এতক্ষণ অব্দি কোন কথায় বলেনি সে।কারণ তার কাছে বলার মত কোন ভাষা নাই।শয়তানে ধরেছিলো আজ তাকে যার কারণে ওর জন্য সবাইকেই ছোট হতে হচ্ছে।কি করতে যে নিরাকে ধরতে গেলো সে।দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছে বসে বসে সে এখন।
মাগরিবের সময় বাড়িটা ফাঁকা হয়েছিলো তারপর আবার বাড়িটায় মানুষ গিজগিজ করছে।বাড়ির সকলে চুপচাপ মাগরিবের নামাজটা আদায় করে বসেছিলো উঠানে।মেম্বার সাহেব আসার পর সাকিবের মা এসে তাকে সমস্ত কিছু জানিয়েছেন এবং প্রমাণসহ ছবিও দেখিয়েছেন।গ্রামের আরো মানুষ মিলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এই শহর থেকে আসা ছেলে-মেয়ের তারা বিয়ে দিয়ে দিবে।নাহলে ছেলেটার কিছু না হলেও মেয়েটার বদনাম হয়ে যাবে।আর তারা যদি না চাই তাহলে দুই ফ্যামিলীর মধ্যে কথা বলে মিটমাট করে দিবে।তাদের ব্যাপার তারা যা ইচ্ছা করবে।এটা তাদের ব্যাপার এই সিদ্বান্ত নিয়েছে মেম্বার সাহেবরা।

জামান ভাই মেয়েতো রাজিনা বিয়েতে তো কি করবেন বলছেন?মেম্বার সাহেব বলে উঠলেন কথাটা।

নেওয়াজ সাহেব স্ত্রীকে শান্ত করে এখানে এসে জামান সাহেবের পাশে বসলেন।নেওয়াজ সাহেব বরাবরি নিরীহ প্রকৃতির মানুষ,ঝামেলা পছন্দ করেননা।আজ নিজের মেয়ের জন্য তিনিও ভিষণ লজ্জিত।কিছু বলার ভাষা তিনি পাচ্ছেননা।আড়ালে কয়েকবার চোখের পানিও মুছেছেন তিনি।এই গ্রামে এসে নিজের মেয়ের জন্য অসম্মানীত হবেন এটা ভাবেননি তিনি।
-মেম্বার সাহেব নেওয়াজ সাহেবকে বললেন ,আপনিই মেয়ের বাবা?
-জ্বি,মাথা নিচু করে নেওয়াজ সাহেব বললেন।
-আপনার মেয়েতো বিয়ে করবেনা বলছে তো আপনি এ ব্যাপারে কি বলবেন?
নেওয়াজ সাহেব কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যেতেই পাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে ফারদিন বলে উঠলো,এ বিয়ে হবে।আমি রাজি।আপনারা ব্যবস্থা করেন।আমার জন্য যখন এতকিছু তো আমি এটার মিমাংসা করে দিলাম।
নিরা না করার জন্য মুখ খুলতে যাবে তার আগেই নিহা হাত দিয়ে নিরার মুখটা চেপে ধরলো।



-মা আমি সামনের মাসেই বাড়ি ফিরছি।তোমরা সব আয়োজন করো।খালামণিকে জানাও বিয়ের ব্যাপারে এবার।
-তুই আগে ভালোভাবে আই তাসিফ,আমি তোর খালামণির সাথে কথা বলবো।নিরাও বড় হয়ে গেছে।বিয়েতো দিবেই যেখানে হোক তখন আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে কোন সমস্যা হবেনা তোর খালার।
-হ্যাঁ মা,আমি সেই কবে থেকে অপেক্ষা করে আছি নিরার জন্য তুমিতো জানোই,আচ্ছা মা নিরার ফোনে কল যাচ্ছেনা কেনো?
-কিজানিরে।কদিন থেকে তোর খালার সাথে কথায় বলা হয়নি।
-ওহ,আচ্ছা মা রাখি এখন পড়ে কথা হবে।


চলবে।
গল্পটা কেমন লাগছে,আপনাদের অনুভূতিগুলো জানাবেন প্লিজ।আপনারা বললে লিখার একটা শক্তি পাবো নাহলে লিখতে তেমন ইচ্ছা করেনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here