ভ্যাম্পায়ার_কুইন# #সিজন_2# পর্বঃ৪৬

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
#সিজন_2#
পর্বঃ৪৬
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমার সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। প্রথমত আমি আমার শরীর অনুভব করতে পারছি না। দ্বিতীয়ত আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না, তৃতীয়ত আমি কোনো কিছু শুনতে পারছি না৷ এমন মনে হচ্ছে আমি মারা গিয়েছি, এবং আমার দেহ থেকে আমার আসল সত্ত্বা বের হয়ে এসেছে। আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। মাথায় শুধু একটায় চিন্তা, যেনো আমি মারা না যায়। আমার এখনো অনেক কিছু করার রয়েছে, যেটা আমি না করে মরতে পারি না। কিন্তু মৃত্যু যদি সত্যি লেখা হয়ে থাকে আমার এখন, তাহলে সেটা এড়ানোর কোনো উপায় আমি দেখছি না।
।।।
।।।
চারিদিক অন্ধকার থাকলেও হঠাৎ আমার পিছন থেকে দুটো আলো দেখতে পেলাম। আমি নরতেও পারছি না। এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি যেখানে বলতে গেলে আমার কোনো শরীর নেই, কারন আমি শরীরের কোনো অংশকে ফিল করতে পারছি না। তাই আমি নরতেও পারছি না। তবে পিছনের দুটো আলোতে সামনের কিছুটাও আলোকিত হলো। পিছন থেকে ডান পাশ দিয়ে লাল এবং বাম পাশ দিয়ে নীল আলো আসছে সেটা আমি বুঝতে পারছি। কারন আলো আমার সামনেও দেখা যাচ্ছে। আলোর সাহায্যে আমি সামনে দেখতে পারলাম তিনটা শরীর পরে আছে। যেগুলো পুরো মৃত হয়ে আছে। তবে তিনজনের চেহারায় আমার মতো। তাদের তিনজনের পাশে নোট লেখা রয়েছে, যেখানে তিনজনের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। প্রথম ডান পাশে রয়েছে এন্জেল জ্যাক, মাঝখানে রয়েছে ভ্যাম্পায়ার জ্যাক, এবং বাম পাশে রয়েছে ডিম্যান জ্যাক। তবে তাদের শরীর মৃত হয়ে আছে। একটুও নরাচরা কিংবা ম্যাজিক পাওয়ার আমি দেখতে পাচ্ছি না। যদিও আমি এতোক্ষন ভাবছিলাম আমি মনে হয় অন্ধ হয়ে গেছি। কিন্তু সেটা নয়, জায়গাটা অন্ধকার ছিলো। যদিও আমার পিছনের আলোতে আমি আশপাশ দেখতে পাচ্ছি, তবে আামার নিজের শরীর আমি দেখতে পাচ্ছি না। কারন আমি চোখ দিয়ে নিচে দেখতে পারছি না। মাথা স্থির রেখে যেভাবে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে হয়, ঠিক সেভাবেই দেখতে হচ্ছে আমাকে। আমি জানি না আদৌও আমার শরীর আছে কিনা। আর আমি কোথায় সেটাও জানি না। দেখার মতো শুধু এই তিনটা শরীর এবং পাশে লেখা তাদের নাম। আমি বুঝতে পারলাম তাদের ক্ষমতা পাওয়ায় আমার শরীরের মাঝে তারা আর জীবিত নেই, যেমনটা আগের দুনিয়াতে ছিলো। তবে জায়গাটা কি সত্যি আমার শরীরের ভিতরে নাকি সেটা বুঝতে পারছি না। নাকি ড্রাকুলা কোনো মাইন্ড স্পেলের মধ্যে আমাকে ফেলে দিয়েছে। যেটাই হোক আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি এটুকু সিওর এখানে আমার শরীর নেই, নাহলে আমি নিয়ন্ত্রন করে নরতে পারতাম। তাহলে কি আমি এখানে বন্ধী থাকবো এভাবেই?
।।।
।।।
হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। যেটা আমাকে বলতে লাগলো,
.
–স্বাগতম জ্যাক।
.
–কে আপনি?(আমি)
.
–আমি কেউ না।
.
–এটা কোনো কথা? আপনি কথা বলছেন আমার সাথে অবশ্যই কেউ তো হবেন।(আমি)
.
–আমাকে তোমার ব্রেইন ভাবতে পারো। যেখানে তোমার সকল জ্ঞান আবদ্ধ রয়েছে। আর এই জায়গাটা তোমার জ্ঞানের লাইব্রেরী।
.
–এটা কিরকম কথা? আমার ব্রেইন কিভাবে আমার সাথে কথা বলতে পারে?(আমি)
.
–অনেক কিছু সম্ভব হয়েছে এখন। যাইহোক আসল কথায় আসা যাক।
.
–প্রথমে বলেন আমি এখানে আসলাম কিভাবে আমি কি মারা গিয়েছি?(আমি)
.
–না। তুমি মারা যাওনি। কিন্তু তোমার শরীর ড্রাকুলার সেই আঘাত সহ্য করতে পারবে না, যেটা ড্রাকুলা রাগে তোমাকে করতে চাচ্ছে। তাই তোমাকে মারার পূর্বেই আমি তোমার কনসিয়াসনেস(চেতনা) কে এখানে নিয়ে আসি। যার ফলে তোমার শরীরের সাথে আপাতোতো তোমার কোনো সম্পর্ক নেই।
.
–বুঝতে পারছি না। আমাকে এখানে আনার কারন কি তাহলে?(আমি)
.
–দেখো তুমি হয়তো জানো না। বাট কিছু জিনিস আছে যেটার তথ্য তোমার ব্রেইনের মধ্যে থাকলেও সেটা তোমার চেতনার কাছে পৌছায় না। আর সেটা পৌছানোর জন্য আমি তোমাকে এনেছি।
.
–কি রকম তথ্য?(আমি)
.
–প্রথমত তোমার জন্ম হয় নি এই দুনিয়াতে। বরং তোমার কনসিয়াসনেস বা চেতনা যেটা বলো সেটা একটা মৃত মানুষের শরীরে ট্রান্সফার হয়েছে।
.
–মানে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি এখানে জন্ম নেই নি মানে? বুঝিয়ে বলেন ভালো করে।(আমি)
.
–এই দুনিয়াতে পাঁচটা লেজেন্ডারী বই ছিলো, যেটার মধ্যে অসীম ক্ষমতা লুকিয়ে ছিলো। কিন্তু কেউ জানতো না বই গুলোর মধ্যে কি ছিলো। অনেকে খোলার চেষ্টা করেও সেটা খুলতে পারে নি কখনো। এখন আশা যাক তোমার আম্মার ঘঠনায়। বিয়ের প্রতি আলাদা একটা নেশা ছিলো তার ছোট থেকেই। আর এই পাঁচ লেজেন্ডারী বই এর একটা বই তখন ইগড্রোলিয়াতেই ছিলো, যেটার মধ্যে ছিলো তোমার মানুষ সত্ত্বা। অবশ্য সবচেয়ে দুর্বল সত্তার মধ্যে একটা ছিলো সেটা, যেটা কোনো ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারতো না। ঠিক আগের দুনিয়ার মতোই। কারন তোমার পাচ সত্ত্বার মধ্যে মানুষের টা ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারতো না। তোমার বাবা আর আম্মার বিয়ের পর তোমার বাবা ঔ বইটা তোমার আম্মাকে দিয়েছিলো গিফট হিসাবে। তবে সে সেটার সিল খুলতে পারে নি। এভাবে দেখতে দেখতে তোমার বোন হলো দুটো। এবং আরেকটা ছেলে জন্ম নিলো। তবে সেই ছেলেটার পাঁচ বয়সের কিছুটা আগে আটশো দুই নং শহরের কিছু লোকেরা মিলে তাকে হত্যা করে ফেলে। আর তখনি একটা মিরাকেল ঘঠে। যেখানে তোমার আম্মার কাছে থাকা সেই বইটা উড়ে চলে আছে যেখানে সেই ছেলেটার মৃত শরীর পরে ছিলো। এবং সাথে সাথে বইয়ের সিল খুলে তোমার মানুষ সত্ত্বা সেই ছেলেটার শরীরে ঢুকে যায়। যেহেতু ছেলেটার শরীরে তার নিজের সত্ত্বা আর ছিলো না, তাই ছেলেটার শরীর তোমার হয়ে যায়। সবচেয়ে আজব করার বিষয় ছিলো ছেলেটার চেহারা একদম তোমার মতোই ছিলো এবং তার নামও জ্যাকই ছিলো। তাই তুমি তোমার নিজের জীবন পেয়ে যাও একটা পাঁচ বছরের ছেলের শরীরে। তবে সমস্যা ছিলো তোমার মানুষ সত্ত্বার মধ্যে তোমার কোনো স্মৃতি ছিলো না। কোনো ম্যাজিক ছিলো না। এজন্য তুমি সব কিছু ভুলে যাও। এবং কোনো ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারো না ঠিক পৃথিবীর মানুষের মতোই।
.
–তাহলে বলতে চাচ্ছো আমার এই দুনিয়াতে জন্মই হয় নি?(আমি)
.
–হ্যা। যেহেতু ছেলেটার মৃত শরীরে তোমার মানুষ সত্ত্বা প্রথমে জায়গা করে নিয়েছিলো, এরজন্য তোমার সমস্ত ক্ষমতা তোমার সেই সত্ত্বার ক্ষমতা অনুযায়ী দেখা যায়। তাছাড়া মৃত ছেলেটার কিছু এবিলিটিও তুমি অর্জন করেছিলে।
.
–আচ্ছা আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি এই দুনিয়াতে আমার সত্ত্বার জন্যই আসতে পেরেছি?(আমি)
.
–হ্যা। দুনিয়াকে ধ্বংস করে নতুন করে তৈরী করা স্পেলটা শুধু তুমি নিজেই ব্যবহার করতে পারতে, আর সেটার সুযোগ নিয়ে জেসি তোমার শরীরে প্রবেশ করে সেটা ব্যবহার করে। স্পেলটা ব্যবহারের জন্য কিছু মারাত্মক ক্ষতিও হয়।
.
–কিরকম ক্ষতি?(আমি)
.
–প্রথমত স্পেলটা তোমার শরীর ব্যবহার করতে পেরেছিলো কারন তোমার মধ্যে পাঁচটা সত্ত্বা ছিলো। আর ইতিহাসে এটার উল্লেখ ছিলো যেখানে পাঁচটা সত্ত্বার একজন আসবে, যে কিনা পুরো এগারো দুনিয়াকে একত্র করে নতুন একটা দুনিয়া তৈরী করবে। আর সেটার জন্য সেই লোকটার নিজের শরীরকে পরিত্যাগ করতে হবে। মানে পাঁচ সত্ত্বার শরীর থাকবে না। সেই শরীর ধ্বংস হয়ে যাবে এবং পাচঁ সত্ত্বা পাচঁটা বইয়ের মধ্যে সিল হয়ে নতুন দুনিয়ার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যাবে।
.
–তার মানে জেসি আমার শরীরে ঢুকে যে স্পেলটা ব্যবহার করেছে সেটার কারনে আমার শরীর ধ্বংস হয়ে গেছে?(আমি)
.
–হ্যা। স্পেলটা এন্জেল এবং ডেভিল পাওয়ার এর সম্বনয়ে ছিলো। যার কারনে সেই শরীর ধ্বংস হয়ে নতুন একটা ম্যাজিকের তৈরী হয়েছিলো। যেটার নাম গডহ্যান্ড।
.
–গডহ্যান্ড তাহলে আমার শরীরের বিনিময়ে তৈরী হয়েছে?(আমি)
.
–হ্যা। তবে গডহ্যান্ডকে পুরোপুরি ভাবে ব্যবহার করতে পারবে না যতদিন না পর্যন্ত তোমার কাছে ডেভিল সত্ত্বার ক্ষমতা না আসে। কারন গডহ্যান্ড তৈরীই হয়েছিলো ডেভিল এবং এন্জেল এর ম্যাজিক পাওয়ার থেকে।
.
–আচ্ছা বুঝতে পারলাম। তবে আমার তিন সত্ত্বা এখানে মৃত হয়ে পরে আছে কেনো?(আমি)
.
–এগুলোর মধ্যে জীবন নেই। তবে এগুলো তোমার কাজে আসতে পারে। যদিও এখানের একটা সত্ত্বাও আগের মতো তোমার এই শরীরের উপরে কোনো ভেদ ফেলবে না। তবে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো তুমি এই সব শরীরের ব্যবহার করতে পারবে।
.
–কিভাবে? আমার তো একটা শরীর আছেই।(আমি)
.
–একটু আগে হয়তো ইগড্রাসিল এর ক্ষমতাটা দেখতে পেরেছো। যেটা তোমার ডান অংশে ড্রাগন স্কেল এর আর্মার তৈরী করেছিলো। হয়তো আগের দুনিয়ার বডি ট্রান্সফরমেশন এর কথাও মনে আছে তোমার। যেখানে সবাই স্বাভাবিক মানুষের মতো দেখতে ফর্মও নিতে পারতো এবং নিজেদের আসল মনস্টার ফর্মেও যেতে পারতো। তবে এই দুনিয়াতে সেটা কাজ করে না। যদিও জেসি সেটা কিভাবে করেছে আমি জানি না। তবে এই তিনটা শরীরের মাধ্যমে তুমি নিজেও তিনটা ফর্মে আসতে পারবে।
.
–সেটা কিভাবে?(আমি)
.
–এতোদিন তুমি মানুষের সত্ত্বার শরীর ব্যবহার করছিলে। যেটা এতোদিন তোমার ডিম্যান, ভ্যাম্পায়ার এবং এন্জেল সত্ত্বার ক্ষমতা ব্যবহার করছিলো। তবে তুমি যেকোনো সময়ে তোমার সত্ত্বার শরীর চেন্জ করতে পারবে। তোমার চার সত্ত্বার মধ্যে তিনটাই মৃত রয়েছে আপাতোতো। তবে যে জ্যাকের শরীরে তুমি আপাতোতো রয়েছো সেটার মধ্যে তোমার মানুষ সত্ত্বার চেতনা জীবত রয়েছে। আর সেই চেতনার মধ্যে তোমার ডিম্যান, ভ্যাম্পায়ার এবং এন্জেল এর চেতনাও যোগ হয়েছে। যার কারনে তুমি আগের সব স্মৃতি মনে করতে পেরেছো।
.
–তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি আমার সত্ত্বার যে কোনো রূপে আসতে পারবো এখন?(আমি)
.
–হ্যা। তবে সেটা তোমার এই শরীরের চার সত্ত্বার শরীর চয়েজ করার উপর নির্ভর করবে।
.
–চার শরীর?(আমি)
.
–হ্যা। উপরে তাকাও।
।।।
।।।
আমি উপরে চোখ উচু করে তাকালাম। উপরে একটা শরীর দারিয়ে আছে, যেটার পাশে লেখা রয়েছে মানুষ জ্যাক। আমি বুঝতে পারলাম আমার চারসত্ত্বার শরীর এখানে পরে আছে। এখন শুধ তাদের শরীর চয়েজ করলেই আমি এক একটা আলাদা ফর্মে যেতে পারবো। তবে আমি সেটা সম্পর্কে সিওর না।
.
–আমি সত্ত্বার শরীর বদলাবো কিভাবে?(আমি)
.
–সেটার জন্য তোমার শুধু ভাবতে হবে। আমি তোমাকে এখানে জোর করে এনেছি। এজন্য তোমার নিজস্ব শরীর উপরে ঝুলে আছে। কিন্তু তুমি নিজে থেকে এখানে আসলে যে সত্ত্বার শরীরে তুমি থাকবে সেটার মধ্যেই তুমি এখানে আসবে। এবং তখন তুমি এখানে ইচ্ছামতো নরতে পারবে।
.
–কিন্তু এখানে আসবো কি করে আমি?(আমি)
.
–এখানে আসার জন্য শুধু তোমার চেতনাকে ট্রান্সফার করবে। আর এখানে এসে তুমি দেখতে পারবে বাকি তিনটা শরীর এখানে পরে আছে। তখন যেকোনো একটা শরীরের হাত ধরলেই তুমি সেটার মধ্যে ঢুকে যাবে। এবং অন্যটা এখানে শুয়ে যাবে।
.
–ওওও।(আমি)
।।।
।।।
আরো কিছুটা কথা বলে নিলাম আমার ব্রেইনের সাথে। অবশ্য এতো কিছু একটা ব্রেইন তার চেতনাকে বলতে পারে সেটা আমি জানতাম না। অনেক কিছুই আমার জন্য নতুন। তারপরও আমি নতুন কিছু শিখতে পেরে অনেক আনন্দিত। তবে আমি এখনো ভালো করে বুঝতে পারি নি আমার ব্রেইন আমাকে কি বললো তা। তবে কিছুটা হলেও আমার মাথায় ঢুকেছে। আর সেটা হলো আমি এই দুনিয়ায় জন্ম নেই নি। বরং বই থেকে মৃত জ্যাকের শরীরে আমার মানুষ সত্ত্বার চেতনা বা কনসিয়াসনেস ঢোকার ফলে আমি এই দুনিয়া এসেছি। অনেকটা বলা যায় আমার এই দুনিয়াতে আসাটাও অনেকটা ড্রাকুলা, থর এবং লোকির মতই। বিষয় টা আগের দুনিয়া সম্পর্কে আমার স্মৃতি না থাকলে অনেক গুরুতর মনে হতো। তবে এখন এটা খুবই স্বাভাবিক।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
কেমন লাগলো জানাবেন। অপেক্ষা করুন আগামী পার্টের জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here