ভ্যাম্পায়ার_কুইন# #সিজন_2# পর্বঃ৪৮ .

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
#সিজন_2#
পর্বঃ৪৮
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমি বসা থেকে দাড়ালাম। পিঠের ছয়টা ডানা কিছুটা ঝাপটা দিলো। তাতে করে ডানা থেকে কয়েকটা পালক নিচে পরে গেলো। ডানা গুলো থেকে একটা সাদা আলো বের হচ্ছে, যেটা মুক্তার মতো জ্বলজ্বল করছে। পালক গুলো মাটিতে পরার পর সেগুলো এমনিতেই অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি ছয়টা ডানার মানে বুঝতে পারলাম। যেহেতু আমি আমার এন্জেল সত্ত্বার শরীর ব্যবহার করেছি তাই তার ফর্ম ও আমি পেয়েছি। আর আমার আগের দুনিয়াতে একপাশে ছয়টা ডানা থাকার কারনে এখন একপাশে আমি ছয়টা ডানা পেয়েছি। সমস্যা হলো আমার দুই সত্ত্বা, এন্জেল এবং ডেভিল এর ক্ষমতা মিলিয়ে আমার পিঠে বারোটা ডানা থাকতো। ডান পাশে ছয়টা এন্জেল ডানা ছিলো এবং বাম পাশে ছিলো ছয়টা ডেভিল ডানা। কিন্তু এই দুনিয়ায় আমার শরীরে কোনো সত্ত্বা বাস করতে পারবে না। বরং আমার একটা চেতনাই সবগুলো সত্ত্বাকে কন্ট্রোল করে। আর সেই চেতনা আমার মানুষের সত্ত্বার। যদিও বাকি সব সত্ত্বার চেতনাও এখন একত্রিত হয়েছে।।
।।।
।।।
আমি আমার এন্জেল সত্ত্বার শরীরে আসার পর মানসিক কিছুটা পার্থক্য লক্ষ করলাম। যেহেতু আমার সকল সত্ত্বার চেতনা একত্রিত হয়ে আমার মানুষ সত্ত্বার মধ্যে অবস্থান করছে এখন, তারপরও আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এবং চিন্তা ভাবনাও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যেহেতু আমি এখন একজন এন্জেল এর রূপ পেয়েছি তাই আমার চিন্তা ভাবনা গুলোও একজন এন্জেল এর মতো হয়েছে। এন্জেল রা কি রকম কল্পনা করে সেটা আমি বুঝতে পারলাম। সব সময় পরিস্কার থাকা এন্জেলরা পছন্দ করে। এবং বিশেষ করে ছেলে এন্জেলরা চাই তার উপরে অধিক মেয়েরা ক্রাসিত হোক। আর মেয়ে এন্জেলরা চায় সব ছেলেরাই তার জন্য পাগল হোক। অবশ্য এন্জেলরা বাকি গোত্রদের নিজেদের থেকে অনেক কম মনে করে সবকিছুতে। যেটা এই রূপে থাকলে আমিও করবো। মানসিক চিন্তা ভাবনা চেন্জ করার কোনো সহজ উপায় দেখছি না। তবে সেটা সময়ের সাথে চেন্জ হয়ে যাবে। আমার এন্জেল সত্ত্বা মৃত হলেও সেটার চেতনা একত্রিত আছে আমার প্রধান চেতনার সাথে। যার কারনে তার সব রকম মানসিক মনের ইচ্ছা আমারও ইচ্ছা হবে।
।।।
।।।
এই জিনিসটাকে সহজ করে বলতে চাইলে জিনিসটা এরকম হবে। আমার শরীরে মোট পাঁচ সত্ত্বা ছিলো। প্রথমত ডিম্যান সত্ত্বা এবং এন্জেল সত্ত্বা, যেটা আমি আমার বাবা এবং মায়ের থেকে পায়। তারপর আসে ডেভিল সত্ত্বা। যেটা ডেভিল কিং এর বংশধর এবং নিজে ডেভিল কিং হওয়ার ফলে পায়। এরপর ভ্যাম্পায়ার সত্ত্বা যেটা আমি এনার ব্লাড খাওয়ার ফলে পায়। আর সবশেষে মানুষ সত্ত্বা। যেটা মানুষের সাথে পৃথিবীতে পনেরো বছর কাটানোর ফলে পায়। এই এক একটা সত্ত্বা আমার শরীরে বাস করতো আগের দুনিয়ায়। যার মধ্যে মানুষ সত্ত্বা খুব দুর্বল থাকার কারনে তার অস্তিত্ব বোধ করা যেতো না। তবে সব গুলো সত্ত্বায় আমার শরীরকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা ছিলো। তখন আমার সত্ত্বাদের মধ্যে লড়াই চলছিলো। যেটা আমাকে অনেক দুর্বল করে দিয়েছিলো। সত্ত্বাদের আলাদা একটা চেতনা থাকে। সেটা আমার সাথে মিলে না। তাদের একটা সত্ত্বা যদি আমার শরীরকে পুরোপুরি ভাবে দখল করে নিতো তাহলে আমি সেই সত্ত্বার গোত্রে রূপান্তর হতাম। এবং আমার ভাবনা সেই গোত্রের মতো হতো। যেমন উদাহরন স্বরূপ আমার ডেভিল সত্ত্বা যদি আমার শরীর দখল করতো আগের দুনিয়ায় তাহলে আমি আগের ডেভিল কিং দের মতো ব্যবহার করা শুরু করতাম। আমি তখন অন্য কিছু ভাবতাম না আর। তখন একটা সত্যিকারের ডেভিল কিং এর মতোই চিন্তা করতাম। আবার এন্জেল সত্ত্বা আমার শরীর দখল করলে আমি একটা এন্জেল এর মতো চিন্তা করতাম। যদিও বিষয়টা আমার কাছে অনেক সহজ মনে হচ্ছে। তবে এটা অন্য সবার জন্য পেচালো অনেক।
।।।
।।।
আমি বাকি চিন্তা বাদ দিলাম। ছয়টা ডানা একপাশে আমাকে মোটেও ভালো দেখাচ্ছে না। ডানা গুলো ভিতরে প্রবেশ করালাম না। আমি গডহ্যান্ডের ব্যবহার করতে চাইলাম। কারন তাতে করে অন্যন্ত বাম পাশে আরো পাঁচটা ডানার আকার দিতে পারবো। তবে চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। কারন এই এন্জেল সত্ত্বার শরীর ব্যবহার করে আমি গডহ্যান্ড ব্যবহার করতে পারছি না। বিষয়টা খারাপ লাগলো। তাই আপাতোতো সময়ের জন্য আমি আমার ডানা ছয়টা পিঠের মধ্যেই ঢুকিয়ে রাখলাম। যদিও এই দুনিয়ার সব এন্জেল বেশীরভাগ সময় তাদের ডানা বের করেই রাখে, কারন তারা যে এন্জেল সেটা দূর থেকে দেখানো তাদের পূর্বকালের অভ্যাস। যদিও আমার ডানা বের করে রাখার কোনো ইচ্ছা নাই। কারন ছয়টা ডানায় আরো খারাপ লাগবে। এতো দিন আমি আমার মুখে মাস্ক পরলেও জিনিসটা এখন খারাপ লাগছে। তাই খুলে আমি ব্যাগের মধ্যে রেখে দিলাম। এন্জেল রূপে আসার পর থেকে কেনো জানি স্টাইলের ব্যাপারে আমার চিন্তা বেশী বেড়ে গেছে। আমি এতোক্ষন নিজের নতুন রূপ চিন্তায় থাকার ফলে এতোক্ষন আমার সামনে প্রিন্সেস ছিলো সেটা ভুলে গেছি। আমার এন্জেল সত্ত্বার শরীর নেওয়ার পর থেকে আমার মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যেটা আমার অনেক স্বভাবও চেন্জ করেছে এখন। আমি হাটতে গিয়ে সেটা লক্ষ করলাম। আগের থেকে অনেক সুন্দর করে হাটছি আমি। আগে হাটতে গেলে জুতার ময়লা প্যান্টের উপরে উঠে যেতো। কিন্তু এখন খুব সুন্দর করে পা ফেলছি। আর আমার মাথায় এখন চিন্তাও চলছে ভিন্ন। আমি আগে এরকম ভাবি নি। এখন তো প্রিন্সেস এর সাথে কিছুটা রোমান্টিকতা করতে মন চাচ্ছে। যেটা আগে কখনো চিন্তা করতাম না আমি। যদিও আমি জানি তাকে ধরলে আমার উপরে তার শরীর থেকেই আঘাত আসবে তারপরও আমি তার কাছে এগিয়ে গেলাম।
।।।।
।।।।
আগের বার তাকে স্পর্শ করার ফলে আমার উপরে অনেক ভয়ানক লাইটনিং এর আঘাত আসে তার শরীর থেকে। আমি সেটা জেনেও তার কাছে এগিয়ে গেলাম। কেনো জানি এক দিক দিয়ে নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে প্রিন্সেস এর কাছে গেলাম। সে এখনো হাওয়ায় উড়তেছে। তার কাছে যাওয়ার ফলে তার শরীরের আশে পাশে লাইটনিং তার শরীর থেকে বের হতে শুরু করলো। আমি সেটা দেখে পিছনে আসলাম না। বরং তার একটা হাত শক্ত করে ধরে ফেললাম। বরাবরের মতো এবারো আমার শরীরে অনেক ভয়ানক লাইটনিং আঘাত করলো। কিন্তু এবার আমার কিছুই হলো না। পুরো লাইটনিং আমার শরীর দিয়ে মাটিতে পৌছে গেলো। আমি কিছু ফিল করলাম না এটায় অবাক হলাম না। বরং এখন কিছুটা হাসি পেলো। আমি প্রিন্সেসকে টেনে আমার কোলে তুললাম। এবং তার কপালে হাত দিলাম। আমি নিজেও জানি না কি করতেছি, কিংবা কি করতে পারি আমি। শুধু পদক্ষেপ নিলেই মনের মধ্যে ধারনা আসে এটা করলে এরকম কিছু হতে পারে। আর সে অনুযায়ীই আমি কাজ করছি। এন্জেলদের ক্ষমতা সম্পর্কে আমার তেমন ধারনা ছিলো না আগের দুনিয়ায়। তাই এখন যা করছি সেটা আমার চেতনায় থাকা কিছুটা হিন্টের মাধ্যমেই করছি।
।।।।
।।।।
।।।।
আমি প্রিন্সেস এর কপালে হাত দিলাম। যেটার ফলে তার শরীর থেকে যে ম্যাজিক পাওয়ার চলে গিয়েছিলো ব্লাড কন্ট্রাকের সময় সেটা আমার শরীর থেকে তার শরীরে যাচ্ছে। অবশ্য তার লাইটনিং এখনো বের হচ্ছে। কিন্তু তাতে আমার কিছুই হচ্ছে। বরং আমি তাকে কোলে করে নিয়েছি এখন। তার শরীরে ম্যাজিক পাওয়ার দেওয়ার আরো সহজ একটা স্পেক রয়েছে। যেটা খুবই কাজে দেই। সেটা হলো এন্জেল এর কিস স্পেল। এটা চুমুর মাধ্যমে কাজ করে। তাই দেরী না করে আমি প্রিন্সেসকে কোলে নেওয়া অবস্থাতেই তার ঠোটে চুমু দিয়ে দিলাম। অবশ্য এটার উদ্দেশ্য আমার ছিলো না। তবে আমি চেন্জ হয়েছি আমার সত্ত্বার শরীরেরও সাথেই।
।।।।
।।।।
।।।।
চুমুতে একটা প্রচন্ড আলো দেখা গেলো এখানে। আমার পিঠের ছয়টা ডানা বেরিয়ে গেলো। এবং সেগুলো আগলে ধরলো প্রিন্সেস এবং আমাকে সহ। কয়েক সেকেন্ড পরেই প্রিন্সেসের চোখ খুলে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম তার ম্যাজিক পাওয়ার ফুল হয়ে গেছে এখন। তাই আমিও আমার মুখ সরিয়ে নিলাম। অবশ্য প্রিন্সেস প্রথমে কি হচ্ছে সেটা দেখার চেষ্টা করছে। অনেকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। পরে যাবে কোলে থেকে এই ভয়ে এক হাত দিয়ে আমার গলার পিছন দিয়ে হাত দিয়েছে এবং আরেকটা দিয়ে আমার কলার ধরেছে। এরপর পরিস্থিতি বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
.
–জ্যাক এটা তুমিই?(প্রিন্সেস)
.
–হ্যা। প্রিন্সেস এলিনা।(আমি)
.
–হঠাৎ করে তোমাকে আলাদা লাগছে অনেক। তোমার শরীরের রংটা হালকা ফর্সা থেকে গাঢ ফর্সা লাগছে। ম্যাজিক পাওয়ার কিছুটা অনুভব করতে পারলেও এখন একদম নতুন ম্যাজিক পাওয়ার অনুভব করছি তোমার। সেটা এন্জেলদের মতো হলেও, এন্জেলদের থেকে আলাদা।(প্রিন্সেস)
.
–এইটা তেমন কিছু না। হয়তো গডহ্যান্ডের ক্ষমতা পুরোপুরি আনলক হয়েছে। তো আপনি কেমন বোধ করছেন প্রিন্সেস?(আমি)
.
–আমি তো ভালোই ছিলাম। কিন্তু এভাবে তোমার কোলে আমি থাকবো সেটা ভাবি নি। অনেক লজ্জা লাগছে।(প্রিন্সেস লজ্জায় লাল হয়ে)
.
–আমি তো আপনার রয়েল গার্ড তাই না প্রিন্সেস। আপনার সব সময় খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব। ক্লান্ত হলে আপনাকে কোলে নেওয়াও তো আমারই দায়িত্ব।(আমি)
.
–একটু আগে তুমি আমাকে কিস করেছো?(প্রিন্সেস)
.
–ঔটাকে কিস বলে না প্রিন্সেস। ঔটা ভালোবাসার ম্যাজিক স্পেল ছিলো।(আমি)
.
–সেটা আবার কি?(প্রিন্সেস)
।।।
।।।
প্রিন্সেস এর সাথে আমি কথা বলতে লাগলাম। আমি তাকে কোলে নিয়েই লাফ দিয়ে পাশের একটা গাছের উপরে উঠে পরলাম। আমার এন্জেল শরীরে আসার পরে লাফ দেওয়ার ক্ষমতা অনেক বেরে গিয়েছে। তাই গাছের একটা উচু ডালে যেতে সমস্যা হলো না। আমি ডালে বসে পরলাম। প্রিন্সেসকে আমার কোলেই বসালাম। প্রিন্সেস অবাক হচ্ছে। কারন আমি এরকম কখনো করি না তার সাথে। সে হয়তো ভাবছে আমি হয়তো ড্রাকুলার মাইর খাওয়ার পরে অনেকটা চেন্জ হয়ে গেছি যাইহোক সে কি ভাবছে সেটা ড্রাকুলা ছাড়া কেউ জানতে পারবে না।
.
–কি করছো? এখানে আনলে কেনো?(প্রিন্সেস)
.
–না সেখানে অনেক আলো। আলোতে একজন প্রিন্সেস এর ত্বকের কতটা ক্ষতি হবে সেটা তো বুঝতেই পারছেন। তাই একটু ছায়ার নিচে চলে আসলাম। আর জায়গাটাও সুন্দর দুজনে বসে কিছুক্ষন গল্প করার।(আমি)
.
–আজকে তোমাকে পুরোই চেন্জ মনে হচ্ছে। তুমি তো আমার সাথে এরকম ব্যবহার করো না কখনো।(প্রিন্সেস)
.
–কেনো সেটা মনে হলো কেনো?(আমি)
.
–এমনি সময় আমি তোমার হাত ধরে হাটতে চাইলেই তো তুমি সরে যাও। হাত ধরতে দাও না। কিন্তু আজ হঠাৎ করে সরাসরি আমাকে কোলে তুলে নিলে। এটাই বুঝতে পারছি না।(প্রিন্সেস)
.
–মনের ভাবনা প্রকাশ না করে থাকাটা বোকামি। তাই এখন সেটা প্রকাশ করছি।(আমি)
।।।।
।।।
৷।

(((চলবে)))

।।
।।।
।।।।
অপেক্ষা করুন পরবর্তী পার্টের জন্য। ছোট হওয়ার জন্য দুংখিত। কালকে ঈদ উপলক্ষে বড় করে দিবো পার্ট। আজকে হালকা রোমান্টিক করার চেষ্টা করেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here