Monday, December 15, 2025
Home Blog Page 2037

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১৮

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৮

আমি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। ধ্রুবর কথা শুনে থেমে যেতে হলো। ও খুব আফসোস করে বললো,”তুমি এত বেরসিক কেন নিশাত?” আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। একটু আগে যাকে এত রোমান্টিক রোমান্টিক ফিলিংস নিয়ে সালাম করলাম সে এখন আমাকে বেরসিক বলছে? কেন? ধ্রুব সিরিয়াস সিরিয়াস মুখ করে বললো,”দুদিন বাদে আমার সাথে তোমার বিয়ে অথচ তুমি আজকে খালি হাতে চলে এলে? তা
ওপর আজকে ঈদ! আর কিছু না পারো অন্তত একটু পায়েস তো রান্না করে নিয়ে আসতে পারতে? একটু তো রোমান্টিক হও।”

লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেলো। এই কথা আমার মাথায় একেবারেই আসে নি। কিন্তু তাই বলে ও যে এভাবে মুখের ওপর লজ্জা দিয়ে বসবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। নিরুপায় হয়ে বললাম,”আমি পায়েস রান্না করতে পারি না।” ও বললো,”শিখে নিতে? আমার জন্য নাহয় একটু কষ্ট করতে? যাই হোক! বাদ দাও!”
আমি বুঝতে পারলাম ও আমাকে এত সহজে ছাড়বে না। এই নিয়ে বেশ খোঁচাখুঁচি চালাবে! ঈদের দিনটাতেও শান্তি নেই! রাগে দুঃখে, দাঁতেদাঁত চেপে বললাম,”তুমি জীবনে পায়েস খাও নি?” আমার রাগত মুখের দিকে চেয়ে ও হেসে ফেললো। বললো,”খেয়েছি। কিন্তু একটা কথা বলতো, তুমি একবার বাথরুমে গেলে কি আর যাও না?”

আমি হতাশ! পুরোপুরি হতাশ! পায়েসের সাথে বাথরুম! ইয়া আল্লাহ,আমাকে ধৈর্য দাও! আমি যেন সুস্থভাবে বাসায় ফিরে যেতে পারি! এই ছেলে আমাকে সুস্থ থাকতে দেবে না! তোমার কাছে বিচার দিলাম খোদা!

আমার কাঁদোকাঁদো মুখের দিকে চেয়ে ধ্রুব হো হো করে হেসে উঠে বলল,”তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে! পায়েস খেতে চেয়েছি তোমার চোখের পানি না!” আমি রেগে বেরিয়ে গেলাম। বাসায় চলে যাবো ভাবতেই মনে পড়লো চুলায় বিরিয়ানি বসানো। রাগ সামলে রান্নাঘরে গেলাম। আন্টি বেরোনো পর্যন্ত রান্নাঘরে বসে বিরিয়ানি পাহারা দিলাম, তিনি বেরোতেই তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে এলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত আর নিচে নামলাম না।

বিকেলের দিকে মা আমার হাতে দুটো টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে ধ্রবদের বাসায় নিয়ে যেতে বললেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি আছে আছে এতে?”
মা পায়েস, হালুয়া, জর্দাপোলাও, ফিরনি সহ আরো অনেকগুলো নাম বললো। আমার কানে গেলো না! আমার মন অন্য দিকে। মা পায়েসের কথা মনে বলতেই ধ্রুবর ওপর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। দুপুর থেকে যতবার মনে পড়েছে ততবারই মেজাজ খারাপ হয়েছে! কিন্তু যতই মেজাজ খারাপ করি না মনের মধ্যে খানিকটা খচখচানিও হচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিৎ, ধ্রুবর জন্য পায়েস রান্না করে নিয়ে যাবো নাকি নিবো না! অবশেষে মনের খচখচানিরই জয় হলো। মায়ের রান্নাকরা পায়েস রেখে নতুন করে নিজে হাতে রান্না করলাম। রান্না শেষে পায়েস নিয়ে দোতলায় গেলাম। দরজা খুললো ধ্রুব। আমি খুব ভাব নিয়েই ওকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম। ও পেছন পেছন এলো। আন্টির ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলাম তিনি নামাজ পড়ছেন।

বাটিতে পায়েস নিয়ে ধ্রুবর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,”ধরো!” ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে সরু চোখে চেয়ে থেকে বললো,”তুমি রান্না করেছো?”

—“হ্যাঁ! আমি রান্না করেছি!”

ও সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,”খাওয়া যাবে? চিনি লবণ সব ঠিকমত দিয়েছো তো?”

—“খেয়েই দেখো সব দিয়েছি কি না!”

—“ঠিক আছে। যদি ভালো হয় তবে আমার তরফ থেকে তোমার জন্য একটা গিফট আছে!”

গিফটের বিষয়ে যদিও আমার কোন আগ্রহ নেই কিন্তু আজকে ছাড়া যাবে না। অসভ্যটা আমাকে পায়েসের খোঁটা দিয়েছে। সুতরাং গিফট তো আমি নিবোই! তাড়া দিয়ে বললাম,”তাহলে তাড়াতাড়ি খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে?”

ধ্রুব পায়েসের বাটিটা নিলো। চামচে করে একটুখানি মুখে দিতেই সেটা গলাধঃকরণ করার আগেই আমি তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করলাম,”কেমন হয়েছে?” আমার এক্সাইটমেন্ট দেখে ওর ভাব বেড়ে গেলো। বেশকিছুক্ষন সময় নিয়ে প্রতিউত্তরে ওর শয়তানি হাসিটা দিয়ে বললো,”বুঝতে পারছি না!” ভয় পেয়ে গেলাম। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, “ভালো হয় নি?”
কিন্তু এবার ওর মুখচিপে হাসা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না ইচ্ছে করে শয়তানি করছে! আরেক চামচ মুখে দিয়ে বললো,”চিনি কম হয়েছে, বাট চলবে।” আমি রাগে কটমট করে ওর দিকে চাইলাম। জানতাম এমন কিছুই বলবে। জীবনেও আমার প্রশংসা করবে না! রাগ উঠে গেলো! ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে পায়েসের বাটিটা নিয়ে নিতে চাইলাম। বললাম,”আমি জামি তুমি ইচ্ছে করে এসব বলছো। লাগবে না তোমার খাওয়া! আমার পায়েস আমি খাবো! দাও বাটি দাও!” ধ্রুব বাটি সরিয়ে ফেললো। পরপর আরো দুই চামচ পায়েস মুখে দিয়ে বললো,”আচ্ছা সরি! সরি! ভুল হয়ে গেছে!”
আমার হাতের নাগাল থেকে সরে গিয়ে বললো,”এভাবে মুখের সামনে থেকে নিয়ে যাচ্ছো কেন? জানো না কারো মুখের খাবার কেড়ে নেওয়া অভদ্রতা?”
আমি বললাম,”বেশ করেছি। তুমি উল্টোপাল্টা কথা বলছিলে কেন?”
ও মুখের শয়তানি হাসিটা বজায় রেখে চুপচাপ পুরো পায়েসটুকু শেষ করলো। এবং খাওয়া শেষে ভালো ছেলের মত নিজের ঘরে চলে যাচ্ছিলো, আমি পথ আগলে দাঁড়লাম। কোমরে হাত রেখে কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন করলাম,”ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছো কোথায়? আমার গিফট কে দেবে?”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ও ঝড়ের বেগে চুমু খেয়ে নিয়ে বলল,”ডান! গিফট পেয়ে গেছো? এবার যাও!”
আমি হতভম্ভ! কিংকর্তব্যবিমূঢ়! তব্দা খেয়ে গেলাম!
ভাবছি এবার থেকে হেলমেট পরে ওর সামনে আসবো! আর রিস্ক নেওয়া যাবে না! সম্বিৎ ফিরতেই দেখলাম নেই হয়ে গেছে!
আমিও কোমর বেধে রেডি হলাম ওর সাথে ঝগড়া করার জন্য, কতবড় অসভ্য আমাকে পায়েসের খোঁটা দিয়ে এখন নিজে গিফট না দিয়ে পালাচ্ছে!
অবশ্যম্ভাবী ঝড়ের ঠিক পূর্বমুহূর্তে আন্টি বেরিয়ে এলেন। ধ্রুবও তাঁর পেছন পেছন বেরোলো। আন্টি জানালেন বাসা থেকে মায়ের ফোন এসেছে। আমাকে জলদি যেতে হতে। বাসায় মেহমান এসেছে। অগত্যা আমি ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে,’তোমাকে দেখে নেবো টাইপ’ একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ বাসায় চলে এলাম। এবং বরাবরের মতই সে তার গা জ্বালানো হাসিটা দিলো।

বাসা গিয়ে বাবার বন্ধু আর বন্ধুর ওয়াইফ এসেছেন। তাদের জন্য নাশতাপানির আয়োজন করতেই আমাকে ডেকে আনা হয়েছে। সারাদিনের খাটাখাটনিতে মা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অতএব মেহমানদের সমাদরের দায়িত্ব আমার!

আমি কিচেনে ঢুকে অন্যান্য নাশতার সাথে আমার বানানো পায়েসও বাটিতে নিলাম। বাটিতে নেওয়ার পর অভ্যাসবশতই চামচে লাগা অবশিষ্ট পায়েসটুকু মুখে দিতেই আমার আক্কেলগুড়ুম! স্বাদহীন বিশ্রী হয়েছে! বাটি থেকে বেশি করে নিয়ে মুখে দিলাম! কিন্তু এবারো সেইম টেস্ট!
ধ্রুব বলেছিলো পায়েসে চিনি কম হয়েছে। মুখে দেওয়ার পর বুঝতে পারলাম পায়েসে চিনি কম হয় নি বরং চিনিই দেওয়াই হয় নি! ওকে এই পায়েস খাইয়েছি ভাবতেই লজ্জা লাগলো। কিন্তু ও খেলো কেন? ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই রোমান্টিক রোমান্টিক একটা ফিলিংস এলো! আহা! ধ্রুব আমার জন্য চিনি ছাড়া পায়েস খেয়েছে! ভালোবাসা!আহা!

কিন্তু ব্যাপার যাইহোক আমি যে বুঝতে পেরেছি পায়েসে চিনি হয়নি সেটা যে ওকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না। কারণ বুঝতে পারলেই নিজের স্বরূপে ফিরে আসতে ওর একসেকেন্ডও সময় লাগবে না! আমার রোমান্টিক ফিলিংস নাম নিশানা সহ উড়িয়ে দেবে! কাজেই আমি কিছু জানি না!

মেহমানরা চলে যাওয়ার পর আবার নিচে নামলাম। উদ্দেশ্য পায়েস সম্পর্কে ধ্রুবর গূঢ় কি মতামত জানা!
দরজা খোলা ছিলো। ভেতরে ঢুকতেই আন্টির গলার আওয়াজ পেলাম। তরুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন। আমি খুব সন্তর্পণে ধ্রুবর ঘরের দিকে গেলাম। ও মুভি দেখছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওর পাশে গিয়ে বসলাম। হাসিহাসি মুখে প্রশ্ন করলাম,” কি মুভি দেখছো?”

আমার আওয়াজ পেয়ে ও মুভি পজ করে সোজা হয়ে বসলো। আবারো আমার ভেতরে অস্বস্তি শুরু হয়ে গেলো। ধ্রুব পায়েস নিয়ে কিছু বললেই আমিও গিফট ওকে খোঁটা দেবো ভেবে রেডি হয়ে নিলাম! কিন্তু না! ও কিছুই বললো না। চোখে চোখ রেখে নিরুত্তরভাবে হাসলো। মনে মনে খুশি হলাম। ও হয়ত ভেবেছে আমি কিছু জানি না! স্বস্তি পেলাম। এবার একটু রোমান্টিক হওয়া যায়! মিষ্টি হেসে বললাম,”মাঝে মাঝেই তো পাঞ্জাবি পরতে পারো! পাঞ্জাবিতে তোমাকে দারুণ লাগে!”
ও অবাক হয়ে বললো,”উদ্দেশ্য কি তোমার?” আমি নিরীহ বোকা বোকা চেহারা বানিয়ে বললাম,”এভাবে কেন বলছো?”
ও পলকহীন ভাবে আমার দিকে চেয়ে রইলো। বেশ বুঝতে পারলাম আমার মাসুম চেহারা ওকে খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলেছে। সন্দিগ্ধ কন্ঠে প্রশ্ন করলো,”হঠাৎ প্রশংসা?”

ওর রিয়েকশন দেখে মনে মনে রাগ হলেও সামলে নিলাম। বেচারা আমাকে খুশি করার জন্য চিনিছাড়া পায়েস খেয়েছে ওর সাথে রাগ করতে মন সায় দিলো। গদগদ টাইপ একটা ভাব নিয়ে বললাম,”সত্যি বলছি! সকালে দেখে আমি তো চোখই ফেরাতে পারছিলাম না।”
কথাগুলো সত্যি হলেও ধ্রুবর জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত! অনেক সময় মন চাইলেও ইচ্ছে করে বলি না। কারণ বললেই অসভ্যটার ভাব বেড়ে যায়!” কিন্তু আজকে বলার পরেও ধ্রুব যতটা অবাক হওয়ার কথা ছিলো ওকে দেখে মনে হচ্ছে না ততটা অবাক ও হয়েছে। নিরুত্তরভাবে হাসলো কেবল। শয়তানি হাসি! রহস্যের গন্ধ পেলাম! কথা বলতে বলতেই হঠাৎ খেয়াল করলাম ধ্রুব মুভি বন্ধ করে নেট অন করেছে। ইউটিউব এর লোগো দেখা যাচ্ছে! উপরে হেডলাইন লিখা হাউ টু কিস আ গার্ল প্যাশোনেটলি!”

আমার হৃদযন্ত্রে অশনীসংকেত বেজে উঠলো! ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,” পালা নিশাত! ধ্রুবর লক্ষণ ভালো নয়!”

একমুহূর্তও দেরি করলাম না। এক দৌঁড়ে দিলাম পালানোর জন্য কিন্তু শয়তানটা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। লাফ দিয়ে উঠে আমার হাত ধরে ফেললো। দরজার সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বললো,”পালাচ্ছো কোথায়?”
ধরা খেয়ে ভেতরে ভেতরে অসহায় বোধ করলেও মুখ দিয়ে গোলা বর্ষণ করলাম। ঝাড়ি মেরে বললাম,”এসব কি অসভ্যতা ধ্রুব? ছাড়ো আমি ব্যথা পাচ্ছি!” কিন্তু কোন লাভ হলো না! ধ্রুবকে দেখা মনে হচ্ছে না সে বিন্দুমাত্রও বিচলিত হয়েছে। বরং অনেক বেশি কনফিডেন্ট দেখাচ্ছে। ভ্রু জোড়া দুষ্টুভাবে নাচালো।

আমাকে উদ্দেশ্য করে নিজের কুখ্যাত গাত্র জ্বলুনিদায়ক হাসিটা দিয়ে বললো ,” একে তো আমাকে চিনি ছাড়া পায়েস খাইয়েছো। এখন আবার ভাগছো? কি ভেবেছো মিষ্টি মিষ্টি কথা বললে আমি ছেড়ে দেবো? নো ডার্লিং! এত সহজে তো তুমি ছাড় পাবে না!”
বুঝতে পারলাম ধ্রুবর সাথে রেগে কথা বলে কোন লাভ হবে না। সে আমাকে আরো রাগিয়ে দিয়ে। অতএব অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে! কাঁদোকাঁদো গলায় বললাম,”বিশ্বাস করো, আমি ইচ্ছে করে করি নি। তাড়াহুড়োতে চিনি দেওয়ার কথা ভুলে গেছিলাম। তোমাকে ছুঁয়ে বলছি!

কিন্তু এবারও ধ্রুবর কোন হোলদোল হলো না। আমার সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো। ও একহাতে আমার দুটো হাত ধরে রেখে অন্যহাত দিয়ে ট্রাউজারের পকেট থেকে ফোন বের করে ফেইসবুকে ঢুকলো। স্ক্রিনে কিছু লেখা দেখা যাচ্ছে। ও বেশ জোরে জোরেই লেখাগুলো পড়তে শুরু করলো,”ফিলিং পাঙ্খা! আপুরা, আজকে রেস্টুরেন্টে সবার সামনে এক্স আমার পা ধরে মাফ চেয়েছে! খুব খুশি লাগছে! জীবন স্বার্থক!”

আতংকে আমার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললাম। ধ্রুব যেদিন রেস্টুরেন্টে আমার ছেঁড়া জুতো নিয়ে টানাটানি করেছিলো এটা সেদিনের পোস্ট! ওর সাথে তরুর বিয়ে হয়ে যাবে ভেবে রাগে দুঃখে অন্য একটা আইডি থেকে পোস্টটা করেছিলাম! কিন্তু ধ্রুব পেলো কি করে সেটাই বুঝতে পারছি মা। খেয়াল করে দেখলাম ওর হাতে আমার ফোন। সেই সকালে যে ফেলে গেছিলাম তারপর আর নিজেরই মনে নেই। হাতখালি থাকলে এবার নিজের গালে কষে দুটো চড় বসিয়ে দিতাম!

কিন্তু এখন আমার কি হবে! ধ্রুব তো আমাকে কাঁচা গিলে ফেলবে! ভয়ে ওর দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না। ও হাতের তালুতে আমার মুখটা তুলে ধরে বলল,”তো মিস পাঙ্খা নিশাত, এবার তুমিই বলো তোমার এক্সের কি করা উচিৎ?”

আমি করুণমুখে ওর দিকে চেয়ে রইলাম। ও নিজের জিরাফের মত মাথাটা নিচু করে একেবারে আমার মুখের কাছে নিয়ে এলো। ওর তপ্ত নিশ্বাস এসে আমার মুখে বাড়ি খেলো। ভয়ে অটোমেটিক চোখ বন্ধ হয়ে করে ফেললাম। ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপতে শুরু করলো। হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেলো। এভাবে বেশকিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ কপালে ধ্রুবর ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করলাম। হৃদযন্তের ভাইব্রেশন দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে গেলো। এবার আর ভয়ে নয়! ভালোবাসার পবিত্রতম স্পর্শে! পিটপিট করে চোখ খুলতেই ধ্রুব আলতোভাবে আমার নাক টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,”বাসায় গিয়ে তোমার আপুদের জন্য আরেকটা পোস্ট করবে, ‘তোমার এক্স তার পাঙ্খা নিশাতকে খুব ভালোবাসে!’
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১৭

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৭

পরেরদিন সকালে আন্টি আমাকে নিয়ে শপিংয়ে বেরোলেন। ঈদ উপলক্ষ্যে তরুর জন্য, তরুর বরের জন্য, ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের জন্য ছাড়াও বেশকিছু আত্মীয়স্বজনের জন্য কেনাকাটা করতে হবে। তাই সকাল সকাল বাসার কাজকর্ম শেষ করে দুজনে বেরিয়ে পড়ললাম। ধ্রুবও আমাদের সাথে বেরোলো। শপিং করতে নয়! ওর বন্ধুদের সাথে ইফতার পার্টি আছে সেই উপলক্ষ্যে। শুনলাম অ্যারেইঞ্জম্যান্ট ওরা নিজেরাই করবে। সেইজন্যই তাড়াতাড়ি বেরিয়েছে।

ও আলাদা হয়ে যাওয়ার পর আমি আর আন্টি মার্কেটে ঢুকলাম। শপিং শেষ হতে হতে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো। মার্কেট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবো এমনসময় হঠাৎ করেই পায়ে খোঁচা লাগলো। তখনো ঠিক বুঝতে পারি নি যে অসাবধানতায় জুতোর নিচে পেরেক আঁটকে গেছে। তাই বিশেষ গুরুত্ব দিলাম না। কিন্তু যেই এক পা বাড়ালাম অমনি টুক করে পেরেকেটা জুতো ভেদ করে একেবারে পায়ে গেঁথে গেলো। তীব্র ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলাম। গলগল করে রক্ত বেরোনো শুরু হলো।

রক্ত দেখে আন্টি হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন! হিমোফোবিয়া আছে উনার। অতএব তাঁর অবস্থা আমার চাইতেও খারাপ! তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে এখুনি বেহুঁশ হয়ে যাবে! আমি তাঁকে সরে যেতে বললাম। তিনি শুনলেন না! টেনে পেরেক বের করার চেষ্টা করলেন। আমি ভয়ে পা সরিয়ে ফেললাম। উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি মার্কেটের সামনে একজন পথচারী মহিলাকে সাহায্যের জন্য ডাক দিলেন। অবশেষে ঐ মহিলার সহায়তায়-ই আমরা স্থানীয় একটা হস্পিটালে যেতে পারলাম!
নতুবা একা একা আন্টির পক্ষে আমাকে সামলানো মুশকিল হয়ে যেতো।
হস্পিটালে যাওয়ার পথে ব্যথা ক্রমশ বাড়তে শুরু করলো! সারা রাস্তা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছি ! হস্পিটালে পৌঁছানোর পর ডাক্তার ঝটপট ব্যথানাশক স্প্রে করে পেরেক বের করে ফেললেন। তারপর খুবই যত্নসহকারে পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। আন্টি পাশে দাঁড়িয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন আর সান্ত্বনামূলক কথাবার্তা বলছিলেন।। ব্যথানাশক স্প্রে করায় ব্যথা কিছুটা কমলো। কিন্তু কান্না পুরোপুরি থামলো না। তারপরও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না চলছিলো।

কিছুক্ষন বাদে ডাক্তার এসে জানালো টিটেনাস ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ইঞ্জেকশনের কথা শুনে আমার কান্নার বেগ এবার হাউমাউ আকার ধারণ করলো। দিশেহারা হয়ে আন্টি ধ্রুবকে ফোন করলেন। ওকে ফোনে পাওয়া গেলো না । কিন্তু তিনি হাল ছাড়লেন না! দুইমিনিট বিরতি দিয়ে কল করা জারি রাখলেন। এভাবে পাঁচবার কল হওয়ার পর অবশেষে ফোন রিসিভ হলো।
রিসিভ করতেই আন্টি ওকে আমার পায়ে পেরেক ঢুকে যাওয়া থেকে শুরু করে কান্নার বর্ণনা পর্যন্ত সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করলেন। এর মাঝে আমার ইঞ্জেকশন দিতে রাজি না হওয়ার ঘটনা বাদ পড়ার কোন চান্সই রইলো না। বরঞ্চ তিনি ঘটনার গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য নিখুঁতভাবে ডাক্তারের কথা তিনচারবার করে কোট করলেন!

সব শুনে ধ্রুব তাঁকে কড়াভাবে নিষেধ করে দিলো তিনি যেন ভুলেও আমার কথা না শোনেন। যেভাবেই হোক ইঞ্জেকশন যেন দেওয়া হয়! দরকার পড়লে আমার হাত পা চেপে ধরতে বলা হলো! অর্থাৎ আমি রাজি হলাম কি না হলাম কিন্তু ইঞ্জেকশন কোনভাবেই মিস হওয়া যাবে না! আন্টির মনে মনে আশংকা ছিলো আমি তাঁর কথা শুনবো না। তাই তিনি ফোন আমার কানে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,”ধ্রুব কি বলছে শুন্?”

ফোন হাতে নিয়ে ধ্রুব কিছু বলার আগেই আমি সাফ জানিয়ে দিলাম আমি ইঞ্জেকশন দেবো না। ও প্রথমে খুব শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলো কেন দেবো না। আমি ভয়ের কথা খুলে বললাম। এবারও খুব সুন্দর করে ইঞ্জেকশন না দিলে কি কি ক্ষতি হতে পারে আমাকে সব বোঝালো। কিন্তু আমি নিজের সিদ্ধান্তে অনড়! ফলাফলস্বরূপ ফোনের ওপাশে তুফান শুরু হয়ে গেলো।ধমকের ওপর ধমক তো আছেই। রাগ করে ফোন কেটে দিলাম। ফোন রাখার সময়টুকুও পেলাম না,সাথে সাথেই ও কল ব্যাক করলো। আমি ফোন আন্টির কাছে দিয়ে দিলাম। তিনি রিসিভ করে স্পিকারে অন করে দিলেন। উদ্দেশ্য আমি যেন ধ্রুবর কথা শুনতে পাই।
পুনরায় ফোন রিসিভ হওয়ার পর ধ্রুব কোনরকম হ্যালো, হাই ছাড়াই ডিরেক্ট আমাকে উদ্দেশ্য করে সতর্ক করে বললো,”ট্রাস্ট মি নিশাত, আমি যদি বাসায় এসে জানতে পারি তুমি ইঞ্জেকশন দাও নি তাহলে কিন্তু খবর হয়ে যাবে বলে দিলাম। ইঞ্জেকশন তো আমি তোমাকে দিইয়েই ছাড়বো কিন্তু তারপর তোমার কি অবস্থা হবে তুমি বুঝতে পারছো? ভালোয় ভালোয় বলছি ইঞ্জেকশন নিয়ে নাও। তুমি বাচ্চা নও যে তোমাকে এক কথা বারবার বলতে হবে! এখানে ডাক্তার আছেন নার্স আছেন, আস্তে দিবেন। তুমি মোটেও ব্যথা পাবে না।”

আমিও জানি ইঞ্জেকশনের ব্যথা পিঁপড়ে কামড়ের চাইতে বেশি না। বড়জোর কাঁটার খোঁচা! কিন্তু তবুও সুঁই দেখলেই ভয়ে কলিজা কেঁপে ওঠে। হ্যাবিচুয়্যাল ফোবিয়া বলা যায়! মনে হয় বুঝি সুঁই ভেতরে ঢুকে হাড়সুদ্ধ ফুঁড়ে দেবে! এই ভয় থেকেই অসহায় মুখ করে আন্টির দিকে তাকালাম। আন্টি করুণ মুখ বানিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি কোনরকম সহযোগিতা করতে পারবেন না।

শেষমেশ ধ্রুবর কথামত ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় আন্টি এবং নার্স মিলে আমাকে চেপে ধরলেন। গায়ের জোরে ওদের সাথে পারলাম না। তবে মোচড়ামুচড়ি আমিও কম করলাম না! ইঞ্জেকশন দেওয়া শেষে আন্টি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ক্লান্ত কন্ঠে বললেন,”হ্যাঁরে তোর সাথে কি জ্বীনটিন আছে? নইলে তোর গায়ে তো এত জোর থাকার কথা না?” নার্সও বিরক্তমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বুঝিয়ে দিলো সে আন্টির সাথে সহমত! আমি হেসে ফেললাম!

পাঁচমিনিট পরই ধ্রুব আবার ফোন করলো। ইঞ্জেকশন পরবর্তী খোঁজখবর জানতে চাইলো! আন্টি সংক্ষেপে ওর সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইশারায় আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ধ্রুবর সাথে কথা বলবো কি না? আমি না করে দিলাম। এত ধমক খাওয়ার পর পুনরায় ওর কন্ঠ শোনার কোন ইচ্ছে আমার নেই।

ধ্রুব বাসায় ফিরলো একেবারে ডিনারে সময়।আমি সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম। পায়ে ব্যান্ডেজ থাকায় পা তুলে বসেছিলাম। ও এসে আমার পাশে বসলো। আমার পায়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বললো,”ব্যথা কি এখনো আছে?” আমি জবাব দিলাম না। ওর কাছ থেকে সরে বসলাম।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম সরি না বলা পর্যন্ত ওর সাথে কথা বন্ধ। গম্ভীরমুখে একেরপর এক চ্যানেল চেইঞ্জ করতে শুরু করলাম। এর তর্জমা করলে দাঁড়ায়,”দরদ দেখানোর কোন প্রয়োজন নেই। তোমার দরদ আমার চাই না! সো, প্লিজ স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি!” ও আমার কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলো। বললো,”শুনলাম তুমি নাকি চিৎকার করতে করতে গলা ফাটিয়ে ফেলেছো? সত্যি?” আমি এবারও পাত্তা দিলাম না। তবুও সে নিজের মুখ বন্ধ রাখলো না। ফের ঠাট্টা করে বললো,”সামান্য পেরেকের ব্যথা সহ্য করতে পারো না, ডেলিভারির পেইন সহ্য করবে কি করে?”

ওর কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেলো। চোখদুটো অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় জ্বলে উঠলো! ব্যথায় অলরেডি গায়ে জ্বর চলে এসেছে আর শয়তানটা বলছে সামান্য ব্যথা! রাগ আর কত সামলাবো আমি? একে তো সরি বলে নি তারওপর আমার ব্যথা নিয়ে মশকরা করছে? খপ করে ওর চুল টেনে ধরলাম। দুহাতের মুঠোয় নিয়ে ইচ্ছেমত টানতে শুরু করলাম। ও ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো। ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে চেঁচিয়ে আন্টিকে ডাকতে শুরু করলো,” মা, আমার চুল। আমার চুল! আমার চুল! মা!”

আন্টি রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে এসে হায় হায় করে উঠে বললেন,”আমার ছেলের চুল! আমার ছেলের চুল। নিশাত মা ছেড়ে দে! ছেড়ে দে মা! আর করবে না!”
আন্টি বহু কষ্টে আমার হাত থেকে ধ্রুবর চুল ছাড়ালো। ছাড়া পেয়ে ধ্রুব মাথা ডলতে ডলতে বললো,”বাপরে বাপ! গায়ে কি জোর তোমার!”
আমি রাগে কটমট করে উঠতেই আন্টি ওকে সরিয়ে দিয়ে নিজে আমার পাশে বসলেন। ওকে ধমক দিয়ে বললেন,”তুই সর!” তারপর আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললেন,”এত রাগ করতে নেই মা! শরীর খারাপ করবে!”
ধ্রুব আবারো সেই গা জ্বালানো হাসিটা দিয়ে বললো,”শরীর খারাপ হবে কি বলছো, গায়ে অলরেডি জ্বর চলে এসেছে কিন্তু জোর কমে নি!”
আমার চোখমুখ আবারো লাল হয়ে গেলো। আন্টি সেটা পর্যবেক্ষণ করে ধ্রুবকে চোখ রাঙিয়ে বললেন,”তুই গেলি? এবার মার খাবি কিন্তু ! যা বলছি!” ধ্রুব হাসতে হাসতে নিজের ঘরে চলে গেলো। ও চলে যাওয়ার পর আন্টি আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাকে শান্ত করলেন।

দুদিন বাদে যখন মা বাবা ফিরে এলে ধ্রবদের বাসা থেকে আমারও শিফট হলো। পায়ের অবস্থা মোটামুটি। ক্ষত পুরোপুরি না সারা পর্যন্ত শেষ কয়েকদিন আর নিচে নামলাম না। আন্টি প্রায়ই এসে দেখা করে যেতেন কিন্তু ধ্রুবর সাথে দেখা হলো না। ফোনে অবশ্য কথা হতো! বেশিরভাগ ঝগড়াই হতো। আমি যতবারই ভাবতাম আর ঝগড়া করবো না, এবার থেকে ভালোভাবে কথা বলবো অসভ্যটা কিছু না কিছু করে ঠিক আমাকে রাগিয়ে দিতো!

ঈদের দিন খুব ভোরে ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। বাসার কাজকর্মে সেরে ভেবেছিলাম কিছুক্ষন ঘুমাবো। বিছানায় শুতে না শুতেই মায়ের বকাবকি শুরু হয়ে গেলো। তিনি বিরতিহীন ভাবে আমাকে রেডি হয়ে আন্টিকে সালাম করতে যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে গেলেন। আমি ভেবেছিলাম ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ মুডে আন্টির সাথে দেখা করবো। মায়ের তাড়াতে ঘুম আর হলো না। বাধ্য হয়ে গোসলে ঢুকলাম। গোসল শেষে রেডি হয়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে কিছুক্ষন দেখলাম! গায়ের জামাটা ঈদ উপলক্ষ্যে আন্টি গিফট করেছে! মা বললো,” বেশ মানিয়েছে তোকে!” নতুন জামা পরে বাবা মা, বাসার সবাইকে সালাম ধ্রুবদের বাসায় গেলাম আন্টিকে সালাম করার জন্য।
দরজা খুলে তিনি আমাকে দেখে মিষ্টি করে হাসলেন। আমার চিবুকে আঙুল ঠেকিয়ে চুমু খেয়ে বললেন,”মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর লাগছে তোকে। আয় ভেতরে আয়!” আমি ভেতরে ঢুকে তাঁকেও সালাম করলাম। সালাম শেষে তিনি আমাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন। খাটের ওপর ধ্রুব মিষ্টি জাতীয় কিছু একটা খাচ্ছে। আমাকে দেখে একপলক তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। ওর পরনে চকলেট কালারের একটা পাঞ্জাবি আর ব্ল্যাক জিন্স!অ্যাজ ইউজুয়্যাল দুর্দান্ত লাগছে! আড়চোখে বারবার ওকে দেখছিলাম। চোখাচোখি হতেই দাঁত বের করে বিচ্ছিরি হাসি দিলো। চক্ষুলজ্জায় আর তাকালাম না!

আন্টি আলমারি থেকে একটা লকেটসহ স্বর্নের চেইন বের করে আমাকে পরিয়ে দিয়ে ফের চুমু খেলেন। আঙুলের ডগায় আমার মুখখানা তুলে ধরে বললেন,”এটা তোর ঈদের গিফট! পছন্দ হয়েছে?” আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম। খুব পছন্দ হয়েছে!

ধ্রুব খাওয়া বন্ধ করে সোজা হয়ে বসলো। চোখ বড়বড় করে বললো,”সালামি হিসেবে স্বর্নের চেইন? বাহ!” আন্টি হাসলেন। আমিও হেসে ফেললাম। ধ্রুব আমার হাসির বারোটা বাজিয়ে দিয়ে বললো,”আমি সালাম করে ওর বাবাকে বলবো, বাড়িটা আমার নামে লিখে দিতে!” আমি কিছু বলার আগেই আন্টি হেসে উঠে ওকে আলতো চড় মেরে বললেন,”বদমাশ ছেলে, খালি বদমাইশি!”
ধ্রুব হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ও বেরিয়ে যাওয়ার পর আন্টি আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললেন,”ভেবেছিলাম বলবো না। কিন্তু পরে ভাবলাম বলেই ফেলি, লকেট কিন্তু আমার পছন্দ করেছে!” আমি লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিলাম। তিনি হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন। চুলায় বিরিয়ানি বসিয়েছেন। সেটা চেক করতেই রান্নাঘরে গেছেন। আমি তাঁর ঘরে বসে ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল হলো,তিনি এখনো রেডি হোন নি।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম কিন্তু চুলার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে হাসলেন। জিজ্ঞেস করলাম এখনো রেডি হোন নি কেন? তিনি মুখের হাসিটা বজায় রেখেই বললেন,”এই তো যাবো। বিরিয়ানি হয়ে যাক! তারপরই যাচ্ছি!” আমি বললাম,”আপনি গোসল সেরে আসুন। বিরিয়ানি আমি দেখছি!” আন্টি প্রথমে রাজী হলেন না। আমার জোরাজুরিতে বাধ্য হলেন।

তিনি গোসল করতে চলে গেলে আমি ঢাকনা সরিয়ে দেখলাম বিরিয়ানি হতে খানিকটা সময় লাগবে। ভাবলাম এই ফাঁকে ধ্রুবকে সালাম করে আসি! কাল রাত থেকেই ভেবে রেখেছিলাম ওকে সালাম করবো। যদিও লজ্জা লাগছিলো তবুও ওর রিয়েকশন কি হবে ভেবে মনে মনে কৌতূহল বোধ করলাম। ইতস্তত করে ওর ঘরে উঁকি দিলাম। ও ওয়াশরুম থেকে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়েছে! পাঞ্জাবি বদলে টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে ফেলেছে। আমাকে উঁকি মারতে দেখে বলল,”কি চাই?”

আমি কালবিলম্ব না করে নির্দ্বিধায় ভেতরে ঢুকে গেলাম। কারণ উঁকি মেরেছি বুঝতে পারলে আবার কতগুলো বেহুদা কথা শুনিয়ে দেবে আমাকে। ঈদের দিন ওর সাথে কোনরকম ঝগড়া করতে চাইলাম না। তাই সোজা ভেতরের ঢুকে গেলাম। দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে চট করে ওর পায়ের কাছে বসে ওকে সালাম করে ফেললাম। ও হাতে টাওয়েল নিয়ে হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় বড় করে ফেলেছে। কিছুক্ষন আমার মুখের দিকে চেয়ে থেকে হেসে ফেললো। ওর রিয়েকশন দেখে আমারও অস্বস্তি লাগছিলো। তাড়াতাড়ি উঠে উঠে দাঁড়ালাম। ও আমার দিকে একটু সরে এলো। আমার নাকটা টেনে দিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,”সালামির বদলে চুমু হলে চলবে? আমার কাছে কিন্তু টাকাপয়সা নেই!”
আমার মুখ কালো হয়ে গেলো। আমি সালাম করলাম কি জন্য আর সে কি বুঝলো! রাগে মন চাচ্ছিলো সালাম আবার ফিরিয়ে নিয়ে নেই। অসভ্য ছেলে! এর সাথে ভালো ব্যবহার করতে যাওয়াটাই বোকামি! আমারই ভুল! সালাম করার জন্য আর কাউকে খুঁজে পেলাম না আমি! ঝাড়া মেরে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,”সেদিন তো চুল টেনেছি আজকে ঈদের দিন না হলে তোমার নাক বরাবর কামড় দিয়ে মাংস তুলে নিতাম, আমি! অসভ্য, নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে!” ও ফের হেসে উঠে বলল,”নাক থেকে দুইঞ্চি নিচে হলে কিন্তু আমার আপত্তি নেই, দিতে পারো!”

আমি হাল ছেড়ে দিলাম। কারণ লাভ হবে না! আমি যতই গলা ফাটাই না কেন ওর গায়ে লাগবে না। গন্ডারের চাইতেও মোটা হয়ে গেছে ওর চামড়া। অতএব নিজের এনার্জি লস করার কোন মানে হয় না। তারচেয়ে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে!
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১৬

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৬

রমজান মাস, পনেরো রোজার মত অলরেডি শেষও হয়ে গেছে! আমার ভার্সিটি বন্ধ, ধ্রুব বাসায় আছে। বাবা মা গ্রামে গেলেন দাদুর জন্য মিলাদ পড়াতে! আমার শরীর খুব একটা ভালো ছিলো না তাই আন্টি জোর করে আমাকে তার কাছে রেখে দিলেন। দুই তিন ধরেই মাথাব্যথা এবং গায়ে জ্বর অনুভূত ছিলো। মা নিজেও এই অবস্থায় আমাকে সাথে নিয়ে যেতে ভরসা করলেন না। অতএব আমাকে আন্টির কাছে রেখে যাওয়া হলো।

মা বাবা যাওয়ার পর, প্রথম দিন কোন সমস্যা হলো না। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে আমার ইউটেরাস এর রিভেঞ্জ শুরু হয়ে গেলো! লজ্জায় আন্টিকে জানাইনি। কিন্তু তিনি বুঝে গেলেন। সেহেরিতে আমাকে উঠতে নিষেধ করে দিলেন। বাসায় যেহেতু ধ্রুব আছে তাই আমার লজ্জা লাগছিলো। আন্টির কড়া বারণ সত্ত্বেও আমি সেহেরিতে উঠলাম। তিনি প্রথমে খুব রাগ করলেন শেষে অনেক অনুনয় বিনয়ের মাধ্যমে তাঁকে শান্ত করতে সক্ষম হলাম। নামাজের সময় যেহেতু ধ্রুব মসজিদে চলে যায় তাই সেহেরির পর আর তেমন কোন সমস্যা হলো না।

কিন্তু আন্টি আমাকে সমস্যাহীন থাকতে দিলেন না। সকালে ধ্রুব ঘুম থেকে উঠার আগেই তিনি আমাকে নাশতা করতে বসিয়ে দিলেন। সেহেরিতে খাওয়ার পর সকালে আর খাওয়ার রুচি হচ্ছিলো না। তবুও বাধ্য হয়ে খেতে হলো। ব্রেকফাস্ট শেষে দুপুর দুইটা পর্যন্ত না খেয়েই ছিলাম। কিন্তু দুইটার পর আন্টি আমার উপোষ থাকা নিয়ে বাধ সাধলেন। তাকে কোনভাবেই ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। তাঁর কড়া নির্দেশ ভাত খেতেই হবে নতুবা তিনি কাল থেকে আমাকে সেহেরিতে উঠতে দেবেন না। আমি তাঁকে যতবারই বলি ধ্রুব বাসায় আছে আমার লজ্জা করবে তিনি ততবারই আমাকে সজোরে ধমক দেন।

অতঃপর আমার মতামতের অপেক্ষা না করেই তিনি রান্নাঘরে আমার জন্য খাবার তৈরী করতে চলে গেলেন। আমি বুঝলাম তার সাথে জোরাজুরি করে কোন লাভ হবে না। তিনি আমাকে খাইয়েই ছাড়বেন! হাল ছেড়ে দিয়ে সোফায় ওপর হাত পা তুলে গোঁজমুখে বসে রইলাম। ধ্রুব তাঁর ঘরেই ছিলো। পাঁচসাত মিনিট বাদে হঠাৎ করেই দেখলাম রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো। একবার ভাবলাম জিজ্ঞেস করবো কোথায় যাচ্ছে পরে ভাবলাম দরকার নেই। এইমুহূর্তে ও বাসায় না থাকলেই আমার জন্য ভালো!

ধ্রুব বেরিয়ে যাওয়ার পর আন্টি আমাকে ভাতের প্লেট নিয়ে বসিয়ে দিলেন। এবং খুবই কঠোর ভাবে হুকুম করলেন প্লেটে যেন ভাত অবশিষ্ট না থাকে। ভাত তরকারির পরিমান দেখে আমার পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। প্লেটে ভাত তরকারি দিতে দিতে তিনি পিরামিডের মত উঁচু বানিয়ে ফেলেছেন! কিন্তু আমি উপায়হীন! তার শীতল চাহনি আমাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলো না খাওয়া পর্যন্ত এই জাঁদরেল মহিলা আমাকে ছাড়ছেন না! উপরন্তু খাওয়া শেষ হওয়ার আগে ধ্রুব যদি চলে আসে তাহলে আরেক কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে! তাই কোনরকম তর্কে না গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব খাওয়া শেষ করলাম। চুপিচুপি ভাত ফেলে দিতে পারি ভেবে তিনি পুরোটা সময় পাশে বসে আমাকে পাহারা দিলেন। অধিকন্তু খাওয়া শেষে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা স্বরুপ বেশ বড়সড় সাইজের একটা কাঁচের গ্লাসে গ্লাসে দুধ নিয়ে হাজির হলেন।
আমি অসহায় ভাবে তার দিকে চেয়ে রইলাম। ফলাফলস্বরূপ তিনিও তার ছেলের মত গা জ্বালানো হাসি দিলেন। এবার অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। এর মানে ‘এইমুহূর্ত থেকে আমি আপনার সাথে কথা বলতে অনিচ্ছুক!’ কিন্তু ভদ্রমহিলার দয়া হলো না। বরং জোর গলায় নিজের প্রভাব খাটিয়ে বললেন, “তুই যতই আমার ওপর রাগ করিস না কেন কোন লাভ হবে না। তোর সুস্থতার সাথে আমার ছেলের জীবন জড়িয়ে আছে। অতএব তোকে তো খেতেই হবে! মা হয়ে আমি তো আর আমার ছেলের সর্বনাশ করতে পারি না? কি বলিস?” আমি সজোরে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলাম। তিনি এবারও হাসলেন।

আমার খাওয়া শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেকের মাথায় ধ্রুব ফিরলো। হাতে বাজারের ব্যাগ। রাগ করে মুখে না বললেও মনে মনে আন্টিকে ধন্যবাদ দিলাম। আমার বুঝতে বাকি রইলো না আমার অস্বস্তির কথা ভেবেই তিনি বাজারের অযুহাতে ধ্রুবকে বাইরে পাঠিয়েছেন।

সেদিন আর কোনরকম ঝামেলা হলো না। আমি আগের দিনের মতই সেহেরিতে উঠলাম। ধ্রুবও কিছু টের পেলো না। দুপুরের দিকে ওর কোন বন্ধুর সাথে দেখা করতে বেরিয়ে গেলো। ফিরলো একেবারে ইফতারের আগে। আন্টিও যথারীতি সকাল থেকেই আমার ওপর ফুড টর্চার চালালেন। খেতে খেতে আমার বেহাল দশা! কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো এত খাওয়ার পরেও ধ্রুবর সামনে আমাকে জোরপূর্বক চুপসে যাওয়া মুখ করে থাকতে হয়।

সেদিন বাইরে প্রচন্ড গরম পড়েছিলো, রান্নাঘরের ইফতারি বানানোর সময় আমি এবং আন্টি দুজনেই ঘেমে চুবচুবে হয়ে গেলাম। আমি যদিও একটু পরপর পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম আন্টির অবস্থা পুরো কাহিল! ধ্রুবর অবস্থাও একই রকম! মুখটা শুকিয়ে পাঁঁচবছরের বাচ্চাদের এতটুকুন হয়ে গেছে! তবে এর মাঝেও কিউট লাগছিলো ওকে!

ইফতার শেষে অনেক ইফতারি নষ্ট হলো। অত্যাধিক গরমের কারণে শরবত ছাড়া কারোরই তেমন কিছু খাওয়া হলো না! আমি সব গুছিয়ে রাখছিলাম, নামাজ শেষ করে ধ্রুব আমাকে চা করতে বললো। গরম হোক কিংবা ঠান্ডা ইফতারের পর ওর চা খাওয়া মিস হবে না।

ও সোফায় বসে চা খাচ্ছিলো। আন্টি ডাইনিং টেবিলে বসে ছিলেন। রান্নাঘরের কাজ শেষে আমি আন্টির পাশে বসে ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললাম,”আজকে এত টায়ার্ড লাগছে মনে হচ্ছে যেন আমিও রোজা রেখেছি।” কথাটা মুখ ফস্কে বেরিয়ে যেতেই বিব্রতমুখে আন্টির দিকে তাকালাম। আন্টি ফিসফিস করে বললেন,” যা দিলি তো ফাঁস করে!”

আমি ধ্রুবর দিকে তাকালাম। ও মুখ টিপে হাসছে। মৃদু হাসির চোটে ওর বাহু হালকা কাঁপছে! বোঝাই যাচ্ছে অট্টহাসি ঠেকিয়ে রাখার জোর চেষ্টা চলছে! লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেলো। শেষে কি না নিজেই বলে ফেললাম। চোরের মত মুখ করে একবার আন্টির দিকে একবার ধ্রুবর দিকে তাকালাম! দুজনেই হাসছে! আমার অবস্থা দেখে ধ্রুবর মায়া হলো কি না জানিনা হাসতে হাসতে নিজের ঘরে চলে গেলো।

রাত্রি বেলা খাওয়ার সময় আন্টি আমাকে টেনে রুম থেকে বের করে আনলেন। টেবিলে বসিয়ে তিনি গেলেন কিচেনে খাবার গরম করতে। আমি চুপচাপ বসে ছিলাম। ধ্রুব ধীরে সুস্থে খাবার টেবিলে এসে বসলো। আমাকে দেখেই হাসলো। ওর হাসিটা দেখে আমার মনে হলো সাক্ষাৎ আলিফ লায়লার সেই ভয়ংকর জল্লাদ জ্বীন আমার মানসম্মানের মুন্ডুপাত করার জন্য সামনে এসে হাজির হয়েছে। মাথানিচু করে বসে রইলাম। ভাবছিলাম আজকে যেন ব্যতিক্রম কিছু ঘটে! অস্বাভাবিক কিছু ঘটার অপেক্ষায় ছিলাম। বাট, নো মিরাকলস হ্যাপেইন্ড! ধ্রুবর স্বভাবের একচুল নড়চড় হলো না। আমার মান সম্মানের তুলোধুনা বানিয়ে ফিসফিস করে বললো,”আজকে কি সেহেরিতে উঠবে নিশাত?”

আমার এত লজ্জা লাগছিলো বলার বাইরে। ইচ্ছে করছিলো ছুটে টেবিল থেকে পালিয়ে যাই। যেই ভাবা সেই কাজ! টেবিল ছেড়ে উঠে চলে যেতে চাইলাম কিন্তু ধ্রুব চট করে আমার ডানহাতটা ধরে ফেললো। ও বোধহয় আগে থেকেই এর জন্য প্রস্তুত ছিলো। লজ্জায় আবারো মাথা নিচু করে ফেললাম। ও আমাকে বসতে ইশারা করে মিষ্টি করে হাসলো। আমি অবাক হলাম। আমার অবাক হওয়ার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো ওর আদুরে বকুনি শুনে। বললো,”স্টুপিড মেয়ে! তুমি এই ব্যাপারটা লুকানোর জন্য এত অস্থির হয়ে যাচ্ছো কেন? এটা তো নরমাল একটা বায়োলজিক্যাল প্রসেস! হাইড করার মত কোন ঘটনা না! আর সবচেয়ে বড় কথা হলো,দিজ ডেইজ আর আলসো গিভেন বাই দ্যা ক্রিয়েটর! দ্যা অলমাইটি হ্যাজ স্পেশালি অ্যাপয়েন্টেড দিজ ডেইজ ফর ইউ পিপল,ইউ ক্যান বি প্রাউড অফ ইট কজ দিজ ডেইজ হ্যাভ গিভেন ইউ দ্যা অপরচুনিটি টু বি অনার্ড অ্যাজ আ মাদার!”
আমি অবাক হয়ে ওর কথা শুনে যাচ্ছিলাম। ও
আবারো আমাকে বসতে ইশারা করলো।
আমি লজ্জানত মুখে বসে পড়লাম। এবার লজ্জার কারণটা ঠিক ইউটেরাস এর রিভেঞ্জ নয়। লজ্জা পাচ্ছি কেবল এই ভেবে যে এত লুকোচুরি করে শেষে নিজের মুখ দিয়ে ফাঁস করে দিলাম! ধ্রুব আমাকে পর্যবেক্ষণ করছিলো আর মুচকি মুচকি হাসছিলো। প্লেটে ভাত তুলে দিতে দিতে বললো,”ফাঁস যখন হয়েই গেছে, তখন আর লজ্জা পেয়ে লাভ কি?” আমি চুপ করে রইলাম। ও ভ্রু জোড়া দুষ্টুভাবে নাচিয়ে ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,”বাই দ্যা ওয়ে, আমি কিন্তু আগে থেকেই জানতাম। মা আমাকে আগেই বলেছেন তুমি রোজা রাখতে পারবে না।” আমি এবার চূড়ান্ত অবাক হলাম। বিস্মিত কন্ঠে বললাম,”আন্টি?”
ধ্রুব হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ালো। বললো,”তুমি বিব্রত হবে ভেবে জানাই নি!”

লজ্জার ভাবটা অনেকখানিই কেটে গেলো। তবে সেটা প্রকাশ করলাম না। কারণ আমি জানি, আমি লজ্জা পাচ্ছিনা বুঝতে পারলেই ধ্রুব নিজের স্বরূপে ফিরে আসবে। শুরু হয়ে যাবে ওর খোঁচাখুঁচি! অতএব আমার জন্য চুপচাপ খাওয়া শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব আন্টির ঘরে যাওয়াটাই নিরাপদ হবে! খাওয়া শেষে আর একমুহূর্তও দেরী করলাম না। সোজা আন্টির ঘরে ঢুকে গেলাম। রান্নাঘরের কাজ শেষে আন্টিও এলেন। তার পেছন পেছন ধ্রুব। আমার চোখে চোখ পড়তেই পুনরায় ওর স্বভাবসুলভ গাত্রদাহী হাসিটা দিলো। আন্টি সেটা দেখতে পেয়ে ওকে রুম থেকে ঠেলে বের করে দিতে দিতে বললেন,”এই বাঁদর! যা বেরো! অনেক জ্বালয়েছিস, এবার হয়েছে। যা শুতে যা!” ধ্রুব হাসতে হাসতেই বেরিয়ে গেলো। আমি কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে আন্টির দিকে তাকাতেই তিনি হেসে উঠে বললেন,”খুব জ্বালায় তোকে না?”
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১৫

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৫

মেহমানদের সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে আমি ধ্রুবকে খুঁজছিলাম। অনেক্ষন যাবত ওকে দেখতে পাচ্ছি না। মিস করছিলাম! দোতলার সিঁড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম রাফি ভাইয়ার সাথে নিচে নামছে। হাতের ছোট একটা ব্যাগ। আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,”এটাতে আমার ক্যামেরা আর ফোনের চার্জার আছে। তোমার কাছে রাখো।”
আমি হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা নিলাম। রাফি ভাইয়া সরে গেলেন। ধ্রুব আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ সীমা সুমাইয়াসহ আরো তিনচারটা মেয়ে এসে ধ্রুবকে বললো,”আপনার সাথে তো ছবি তোলা হয় নি, ভাইয়া।”
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো,”হয় নি?” জবাবের অপেক্ষা না করে রাফি ভাইয়ার নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠলো। রাফি ভাইয়া ঘুরে ঘুরে সবার ছবি তুলছিলেন। ডাক শুনে এগিয়ে এলেন। ধ্রুব ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে রাফি ভাইয়ার হাতে দিয়ে বলল,”আমাদের কয়েকটা ছবি তুলে দে তো।”
মেয়েরা সবাই যার যার পজিশন নিয়ে নিলো। ধ্রুব সোজা গিয়ে মেয়েগুলোর মাঝখানে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকালো না পর্যন্ত! আমি ‘তোমার খবর আছে’ টাইপ দৃষ্টি নিয়ে ওর কান্ড দেখে গেলাম। রাফি ভাই আমার মুখ দেখে ধ্রুবকে খোঁচা মেরে বললো,”নিশাত আজকে তোর বারোটা বাজাবে।”

ধ্রুব বিড়বিড় করে বললো,”কঠিন জিনিস ভাই! আমি একশোটার সাথে ঘুরলেও পাত্তা দেয় না!”
তারপর সীমা সুমাইয়া ওদের দিকে তাকিয়ে খুব খুশিখুশি টাইপ মুখ করে বললো,” ওদের দাবি সবার আগে। আমি তো ওদেরই! ঠিক বলেছি না গার্লস?”

ওর কথা শুনে সবগুলো মেয়ে একসাথে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। আমি রাগে কটমট করে ধ্রুবর দিকে চাইলাম। প্রতিউত্তরে ও সচরাচর যা করে আজও তাই করলো। আমার সারা গা জ্বালিয়ে বিশ্রী একটা হাসি দিলো।”

রাফি ভাই ক্লিক করার আগে ধ্রুব ক্যামেরার ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার চলে গেলো। আমি হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছু বলতেও পারছিলাম না সহ্য করতে পারছিলাম না। ক্যামেরা দিয়ে ওর মুন্ডুটা ফাটিয়ে দিতে মন চাইছিলো!

ছবি তোলা শেষে ধ্রুব রাফি ভাইকে নিয়ে চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই মেয়েগুলো ধ্রুবকে নিয়ে একে অন্যের সাথে হাসাহাসি শুরু করে দিলো। আমি জানি আমার কথাটা হয়ত সম্পূর্ণ হাস্যকর এবং ভিত্তিহীন শোনাবে কিন্তু তবুও কোথাও না কোথাও যেন কিঞ্চিৎ ঈর্ষাবোধ করছিলাম! মেহমানদের পাশ থেকে সরে ধ্রুবকে মেসেজ করলাম,”এক্ষুনি আমার সাথে দেখা করো!”

মিনিটপাঁচেক অপেক্ষা করার পর ধ্রুব এলো। হাতের ছোট একটা কোকের বোতল। আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। কোক খেতে খেতে বললো,”তোমার চেহারার এমন বারোটা বেজে আছে কেন?”

আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,”এখন তো আমার চেহারায় তুমি বারোটা, বারো দুগুণে চব্বিশটা, চব্বিশদুগুণে আটচল্লিশটা আরো কতকিছু দেখবে!এটাই স্বাভাবিক। তুমি তো এখন সার্বজনীন হয়ে গেছো!”

ধ্রুব খাওয়া থামিয়ে আমার দিকে চোখবড় বড় করে চেয়ে থেকে বললো,”কি হয়েছে তোমার? ”

আমি জ্বালাভরা কন্ঠে বললাম,”আমার কি হয়েছে সেটা পরে জানলেও চলবে। তুমি আগে বলো তোমার কি হয়েছে? তুমি কয়জনের?”

—“মানে?”

—“মানে তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি?”

ধ্রুব উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটা শুরু করলো। বললো,”তোমার মাথা গরম হয়ে আছে। আমরা পরে কথা বলবো!”

মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো! রাগে দুঃখে হাতের টিস্যুটাকে হাতুড়ি ভেবে ওর মাথা বরাবর টার্গেট করে সজোরে ছুঁড়ে মারলাম। ওর পিঠে গিয়ে লাগলো। ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে আবারো সেই বিটকেল হাসিটা দিলো। আমার মেজাজ খারাপের মুহূর্তে ওর প্রধান কাজই বোধহয় এটাই! আমার মেজাজ আরো খারাপ করে দেওয়া! ওর হাসিটাকে ইগ্নোর করে মুখ ভার করে নিচে নেমে গেলাম। ওকেও নেমে আসতে দেখলাম। ইচ্ছে করেই ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে চুপসে যাওয়া মুখ করে এদিক ওদিক ঘুরতে শুরু করলাম। ফর্মুলা কাজে দিলো! অনেক্ষন যাবত আড়চোখে আমাকে লক্ষ্য করে অবশেষে ফিরে এলো। ধৈর্যহারা কন্ঠে বললো,”এসব কি নিশাত? তুমি কি পাগলামি শুরু করেছো! আমি জাস্ট ওদের সাথে মজা করেছি! প্লিজ মুখটাকে স্বাভাবিক করো। আমার অস্বস্তি লাগছে।”
আমি জবাব না দিয়ে নতমুখে ওর পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। ও আমাকে আটকে দিলো। ওর চেহারা দেখে মনে মনে খুব খুশি হলাম। বেশ হয়েছে! এবার ঘোরো আমার পেছন পেছন!

ও আমাকে টেনে বারান্দার দিকে নিয়ে গেলো। দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে নিজে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো! ওর তপ্ত নিশ্বাস আমার চোখেমুখে লাগছিলো। নিশ্বাস চেপে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছিলো! ধ্রুব আমার আরো কাছে সরে এসে চোখে চোখ রাখলো। ঘোর লাগানো নিঃশব্দ চাহনী! আমি কিছু বলার জন্য খুলছিলাম আমার ঠোঁটে আঙুল রেখে কথা বলতে নিষেধ করে দিলো। ধীরে ধীরে আশেপাশের সবকিছু আমার কাছে ঝাপ্সা হতে শুরু করলো! অ্যান্ড ওয়ান্স অ্যাগেইন, আই ওয়াজ বিয়িং হিপনোটাইজড বাই হিম! চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ঘোরের মাঝেই আন্দাজ করতে পারছিলাম এরপর কি হবে!
কিন্তু অনেক্ষন হয়ে যাওয়ার পরেও ধ্রুবর কোন সাড়া না পেয়ে চোখ খুলে দেখলাম ও হাসছে। ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,”চুমু খাওয়ার খুব শখ হয়েছে না?” লজ্জায় আমার গাল লাল হয়ে গেলো। ও সেটা বুঝতে পেরে সেদিনের ঘটনাকে ইঙ্গিত করে ফের হেসে উঠে বললো,”দাঁড়াও পানি খেয়ে আসি!”
এরপর আর আমার মেজাজ ঠিক রাখা সম্ভব হলো না! ঠেলে ওকে সরিয়ে দিলাম! ও হাসি থামানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু থামছিলো না। আমি ওর হাতের বাঁধন খুলে সরে আসতে চাইলাম। আমার রাগের পরিমান আন্দাজ করতে পেরেই বোধহয় আশেপাশের সবকিছু ভুলে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,”সরি। সরি। সরি! আর কখনো এমন হবে না!” আমি আবারো দুর্বল হয়ে গেলাম! রাগ পড়ে গেলো! দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম। ও মিষ্টি করে হাসলো। আচমকা গলা খাঁকারির আওয়াজ শুনে দুজনেই চমকে উঠলাম। ধ্রুব আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেলো। ছোটচাচু ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকে আসছিলেন আমাদেরকে দেখে আবার ব্যস্তভাবে বেরিয়ে গেলেন। আমি তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে রুমে ঢুকে গেলাম। ধ্রুবও বেরিয়ে গেলো! দুজনেই লজ্জা পেয়েছি! আর ছোটচাচু যে কি ভেবেছেন আল্লাহই জানে! আপন মনে সব দোষ ধ্রুবর ঘাড়ে চাপালাম। ও যদি তখন মেয়েগুলোর ঢং করে ছবি না তুলতো তাহলে এসব কিছুই হতো না! আবার গিয়ে মেহমানদের ভীড়ে ঢুকে পড়লাম।যেহেতু এখন বিয়ে হচ্ছে না তাই দুপক্ষের সম্মতিতে এংগেইজম্যান্ট অনুষ্ঠান বেশ বড়সড় ভাবে আয়োজন করা হয়েছে। মেহমানে ভর্তি চারদিক। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেও একেবারে শাহী আয়োজন!
মেয়েদের খাবার প্রোগ্রাম শেষে অনেকেই বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হতে শুরু করলো। আমিও হালকা পাতলা যেই গয়নাগুলো পরেছিলাম সেগুলো খুলে মেকাপ তুলে ফেললাম। ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দরজার সামনেই ধ্রুবকে দেখলাম। ওর পুরো পাঞ্জাবি মাংসের ঝোলে মাখামাখি! হাতের ফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিরক্ত মুখে বললো,”দেখোতো,ফোনেও পড়েছে বোধহয়! টিস্যু দিয়ে মুছে দিও!” তারপর গা ভর্তি ঝোলমাখা পাঞ্জাবির দিকে ইঙ্গিত করে বলল,” আমি এগুলো পরিষ্কার করে আসি!”

আমি টিস্যু দিয়ে ওর ফোন ভালো করে মুছে দিলাম। অন করে দেখলাম, ঠিক আছে! ভাবলাম এই ফাঁকে ওর গ্যালারি, ইনবক্স সব চেক করে নেই। যে ভাবা সেই কাজ! লক খুলে প্রথমেই ওর গ্যালারিতে ঢুকলাম। ছবি তেমন নেই। বেশিরভাগ কাগজপত্রের ছবি। আমার সাথে দু একটা পুরোনো ছবিও আছে। হঠাৎ একটা জিনিসে আমার চোখ আটকে গেলো। আমার হস্পিটাল রিপোর্টের ছবি! এক এক করে সব ছবি দেখলাম। ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট, এলবিউমিন টেস্ট, আইজি ‘ই’ টেস্ট, সব আমার টেস্টের রিপোর্ট!
আনন্দমিশ্রিত শিহরণ বয়ে গেলো শিরদাঁড়া বেয়ে!
আমি দ্রুত ডাটা অন করে ওর ইমোতে ঢুকলাম।ছবিগুলো ডা.সিনহার নাম্বার থেকে এসেছে। হস্পিটালে ডা.সিনহাই আমার কনসালটেন্ট ছিলেন। ধ্রব সাথে যেদিন তরুর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো ঠিক সেই তারিখেই রিপোর্টের ছবি গুলো পাঠানো হয়েছে। ডা.সিনহার সাথে ওর কনভারসেশন গুলো সব পড়লাম। পড়ে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ধ্রুব আমার রিপোর্ট নিয়ে উনাকে বেশ জ্বালিয়েছে। আর ভদ্রলোক প্রতিবারই ধৈর্যসহকারে ওকে আশ্বস্ত করে গেছেন। একই কথা ঘুরেফিরে বারবার বলেছেন,রিপোর্টে কোনরকম ঝামেলা নেই। রিপোর্ট পুরোপুরি নরমাল!
ফোন হাতে নিয়ে সম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। অত্যাধিক খুশিতে চোখের কোনে কিছু আনন্দাশ্রু জমা হলো। বেশ বুঝতে পারছিলাম আমার ভেতরের উত্তেজনা ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে! ধ্রুবর ভালোবাসার গভীরতা আমার সমস্ত হৃদয়ে ভরাডুবি লাগিয়ে দিয়েছে! হৃদপিন্ড দুপদাপ আওয়াজে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে,আমার বিট মিস হচ্ছে! ফোন বন্ধ করে ধ্রুবর বেরোনোর অপেক্ষায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
ধ্রুব যখন ওয়াশরুম থেকে বেরোলো ওর পাঞ্জাবি প্রায় পুরোপুরি ভেজা। আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো,”এদের সার্ভিস খুবই বাজে! আরো দুটো টেবিলে একই ঘটনা ঘটেছে!” আমি আচ্ছন্ন হয়ে ওর দিকে চেয়ে ছিলাম। ওর কন্ঠস্বরে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে মুচকি হাসলাম। ও চুলের গোড়ায় আঙুল চালাতে চালাতে বলল,”হাসছো কেন?”
ওর সেদিনের কথাটাই আমার আজকে মনে পড়লো। মিষ্টি হেসে বললাম,”তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো তা তুমি নিজেও জানো না ধ্রুব! ও প্রথমে বিস্মিত হলেও পরে হেসে ফেললো। চোখ পাকিয়ে আদুরে হেসে বললো,”চুপিচুপি আমার গ্যালারি চেক করা হয়েছে না?” প্রতিউত্তরে আমি হাসলাম। ও কিছুক্ষন ভেবে চিনতে বলল,” লক জানলে কি করে?”
ও লক খোলার সময় আমি প্রায়ই ওর অলক্ষ্যে আড়চোখে লক প্যাটার্ন লক্ষ্য করেছি। খুবই সিম্পল! একটা চতুর্ভুজ! কিন্তু সত্যিটা বললাম না। রহস্যজনক ভাবে হেসে উঠে বললাম,”বলবো না!”
ও হাসলো। ওর হাসিহাসি মুখখানার দিকে চেয়ে থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা করলাম,”হে! খোদা ওর ভাগের সব কষ্ট তুমি আমাকে দিও! কিন্তু ওর হাসিহাসি মুখটাতে কখনো দুঃখের বোঝা চাপতে দিও না। অন্তত আমি বেঁচে থাকতে না!”
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১৪

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৪

ড্রয়িংরুমে বসে বাবা, মা আন্টিসহ অন্যান্য মুরুব্বীরা সবাই মিলে বিয়ের দিন তারিখ, দেনমোহর এসব নিয়ে আলোচনা করছিলো। আমি নিজের ঘর থেকে কান পেতে রইলাম। ধ্রুব আসে নি। বড়দের আলোচনা তাই নিশ্চই থাকতে চায় নি! কিন্তু আমি কৌতূহল দমন করে রাখতে পারছিলাম না। এদিকে মুরুব্বীদের সামনে বেরোতেও লজ্জা লাগছিলো। অগত্যা রুমের দরজা বন্ধ করে কান খাড়া করে রইলাম ওদের কথা শোনার জন্য। সবটা শোনা না গেলেও মোটামুটি ভালোই শুনতে পাচ্ছিলাম।

আন্টি জানালো সামনে ঈদ। ঈদের পরেও বিয়ের অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব জানালেন তিনি। বাবাও রাজি হয়ে গেলেন। অবশেষে দুপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের তিনদিন পর আমাদের বিয়ের দিন নির্ধারণ করা হলো। এখন শুধু এংগেইজম্যান্ট করে রাখা হবে। সেই সাথে আরো একটা খুশির খবর আছে। বাবা মায়ের অনুরোধে আন্টি বিয়ে পর্যন্ত এই বাসায় থাকতে রাজি হলেন। আমি তো মহাখুশি। বিয়ের বাকি এখনো দেড়মাস। আরো দুমাস বাবা মায়ের সাথে থাকতে পারবো। ভাবতেই খুশি লাগছিলো। ধ্রুবকে কল দিলাম। কেটে দিলো। আবার দিলাম। রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে হ্যালো বললো। আমি খুশিতে গড়গড় ওকে সব বলতে শুরু করলাম। ওপাশ থেকে কোন সাড়া এলো না। আমার মনে হলো সে ফোন কানে রেখেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে আর ডিস্টার্ব করলাম না। আন্টির কাছে শুনেছি এমনিতেই নাকি খুব কম ঘুমায় ও। তাই বিরক্ত করলাম না।

তারপর থেকে বাসায় ধ্রুবর সাথে দেখা করা বন্ধ। ধ্রুবই চাইতো না। তাই ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতাম।
ইদানীং একটা সমস্যা হচ্ছিলো। রোজ ভার্সিটি যাওয়ার পথে একটা ছেলে আমাকে বেশ ডিস্টার্ব করছে। সাথে সঙ্গী হিসেবে দুজন থাকে। ধ্রুবকে সেকথা জানাতেই বললো,” সেজেগুজে ক্যাম্পাসে না গেলেই তো পারো।”

—“সাজুগুজু তো তোমার জন্য করি।”

—“দরকার নেই। সাজলে তোমাকে ভূতের মত দেখায়।”

আমি ভেংচি কেটে বললাম,”খুব ভালো!…তোমার কাছ থেকে আমি এর চেয়ে বেশি কিছু এক্সপেক্টও করি না।”

—“তাই?”

—“ইয়েস!”

—“ওকে ফাইন। এবার থেকে তোমাকে সুন্দর না লাগলেও বলবো খুব সুন্দর লাগছে।একেবারে সোফিয়া লরেন।”

—“লাগবে না গো। আমার হজম হবে না। তুমি এভাবেই ঠিক আছো।”

আমার বলার ধরন দেখে ধ্রুব হেসে ফেললো। ওর হাসিটা আমাকে মনে মনে খুশি করে দিলেও প্রকাশ করলাম না। মুখে এমন একটা ভাব ধরলাম যেন আমি ওর ওপর খুব বিরক্ত। ও হাসি থামিয়ে বলল,” ছেলেটা কি তোমাদের ভার্সিটির?”

—“না।”

—“পাত্তা দিও না। দেখবে দুচারদিন ঘুরে বিরক্ত হয়ে আর আসবে না।”

আমি ঠাট্টার সুরে বললাম,”থ্যাংকস ফর ইউর সাজেশন। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো আপনার উপদেশ মেনে চলার জন্য।”

ধ্রুব আমার ঠাট্টা গায়ে মাখলো না। বললো,”তারপরেও যদি ডিস্টার্ব করে আমাকে জানাবে!”

—“জি জানাবো! এবার আমি উঠি? আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।”

—“চলো আমিও তো যাবো।”

পরেরদিন সকালে বাসার সামনে রিক্সার জন্য ওয়েট করছিলাম। দশমিনিট মত অপেক্ষা করার পর একটা খালি রিক্সা দেখতে পেয়ে উঠে পড়লাম ভার্সিটির জন্য। কিছুদূর যাওয়ার পর ধ্রুব হঠাৎ লাফ দিয়ে চলতি রিক্সায় উঠে গেলো। আমি ভয়ে চমকে উঠলাম। ওর মুখটা দেখে মনে হচ্ছিলো কিছুই হয় নি। বললো,”ছেলেটা যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে , তার কাছাকাছি এলে আমাকে বলো। আমি নেমে যাবো।”

আমি আতঙ্কে চোখ বড় বড় করে বললাম,”তুমি কি ওদের সঙ্গে মারপিট করবে? প্লিজ ধ্রুব কোনরকম বাড়াবাড়ি করো না। দোহাই তোমার!”

—“করবো না।”

—“সত্যি তো?

—“একদম সত্যি! আমি তো ওদের আদর করে বোঝাবো। গালে চুমু খেয়ে বলবো,’এই যে শ্রদ্ধেয় ভাইয়া একটু শুনবেন? রোজ আপনি এখানে দাঁড়িয়ে যেই সুন্দরী মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করেন তিনি আমার হবু বউ। অতএব আপনার কাছে বিনীত প্রার্থনা এই যে অনুগ্রহ করে তার দিকে নজর দিবেন না। তিনি এসব পছন্দ করেন না।’ কথা শেষ করে আবার চুমু খাবো। ঠিক আছে না?”

আমি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইলাম। লাভ হলো না। ও আমার বিরক্তি বিন্দুমাত্র ধার না ধেরে বললো,”আমাকে দেখার অনেক সময় পাবে। ভার্সিটির কাছাকাছি চলে এসেছি। খেয়াল রাখো!”
ওর কাছ থেকে ভালোভাবে কোন জবাব পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকালাম।

রিক্সা আরো কিছুদূর এগোলে আমি ভয়ে ভয়ে ধ্রুবকে বললাম,”সামনেই ওরা তিনজন দাঁড়িয়ে থাকে।”
ধ্রুব লাফ দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে গেলো। ইশারায় রিক্সাওয়ালা মামাকে এগোতে বলে রিক্সার আগে আগে হেঁটে সামনে চলে গেলো। আমি মামাকে আস্তে চালানোর অনুরোধ করলাম। ভেতরে ভেতরে টেনশন হচ্ছিলো। ধ্রুবর যা রাগ! যদি ছেলেগুলোর সাথে সত্যিই মারামারি শুরু করে দেয়? ওরা তিনজন ধ্রুব একা। কেন যে ধ্রুবকে জানাতে গেলাম সেটা ভেবেই রাগ হচ্ছে। ধ্রুব ঠিকই বলেছিলো, কয়েকদিন ইগ্নোর করলেই ওরা পিছু ছেড়ে দিতো। মনে মনে দোয়া করলাম ছেলেগুলো যেন আজকে না থাকে। ধ্রুবর সাথে যেন ওদের দেখা না হয়।

রিক্সায় বসেই স্পষ্ট দেখলাম ঐ তিনজন আজকেও যথারীতি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে! রিক্সাওয়ালা মামাকে দ্রুত চালাতে অনুরোধ করলাম। রিক্সা ওদেরকে ক্রস করার সময় এতকাল যাবত ওরা যা করে নি আজকে তাই করলো। হুড় হুড় করে দৌড়ে এলো তিনজন। রিক্সা ব্লক করে দাঁড়ালো। ভয়ে আমার হাতপাঁ কাঁপতে শুরু করলো। আমি এদিক ওদিকে তাকিয়ে ধ্রুবকে খুঁজতে লাগলাম। আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছিলাম। ঠিক তখনই মুখে একটুকরো ভরসার হাসি নিয়ে ধ্রুবকে উলটো দিকে থেকে হেঁটে আসতে দেখা গেলো। ওর এই হাসিটার মানে ‘ আমি আছি তো। ভয় পেয়ো না।’ আমার জানে পানি ফিরে এলো। খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। আনন্দে আমি পারলে কেঁদে ফেলি!

ধ্রুব রিক্সার কাছে এসেই ছেলেগুলোকে দেখে থমকে গেলো। অবাক হয়ে বলল,”শান্ত?” তিনটে ছেলের মধ্যে যেই ছেলেটা আমাকে বিরক্ত করে তাকে দেখলাম ধ্রবকে দেখে মুখ লুকাচ্ছে। আমি হাঁ করে একবার ধ্রুবর মুখের দিকে একবার ছেলেটার মুখের দিকে তাকালাম। ছেলেটা কাঁচুমাচু করছে। ধ্রুব কিছুই করলো না। আমার পাশে রিক্সায় বসে রিক্সাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বললো,”মামা টানো!”

সারাটা রাস্তা ধ্রুব মিটমিট করে হেসেছিলো। আমার একটা প্রশ্নেরও জবাব দেয় নি। এরপর থেকে অবশ্য ছেলেগুলোকে আর দেখি নি। ধ্রুবকে যতবারই জিজ্ঞেস করেছি ও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা। মনে হয় যেন আমি কোন মহা কৌতুকের কথা জিজ্ঞেস করেছি। তাই রাগ করে আর জিজ্ঞেস করি নি।

আমাদের এংগেইজম্যান্ট এর দিন ধ্রুবর এক বন্ধুর সাথে শান্ত নামক ছেলেটাকে দেখে আমি অবাক হয়ে ধ্রুবর মুখের দিকে তাকালাম। বদমাইশটা তখনও মিটিমিটি হাসছিলো। পরে অবশ্য আমি ওর হাসির কারণ জানতে পারলাম। শান্ত আমার ছয়বছরের ছোট। তাইজন্যই ও মজা নিচ্ছিলো!

এংগেইজম্যান্ট শেষে এক কোনায় বসে মেহমানদের সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ ধ্রুব আমাকে ডাক দিয়ে একপাশে নিয়ে গেলো। ওর সাথে শান্ত। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো,”শান্ত, তোমার ভাবি। খেয়াল রাখবা কেমন?”

আমাকে দেখে ছেলেটার অবস্থা খুবই খারাপ। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। ব্যর্থভাবে নিজের মুখ লুকানোর চেষ্টা করলো। ধ্রুবর চোখেমুখে কৌতুক। আমিও বিব্রত বোধ করলাম। নিজের চেয়ে ছয়বছরের ছোট একটা চ্যাংড়া ছেলে এতদিন আমার পেছনে পেছন ঘুর ঘুর করেছে ভাবতেই লজ্জা লাগছিলো। তবে ছেলেটাকে দেখলে বোঝাও যায় না তার বয়স এত কম। ধ্রুব আমাকে উদ্দেশ্য করে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,”চিনেছো নিশাত? শান্ত,আমার ছোটভাই। ওই এতদিন তোমার খেয়াল রাখতো!”

আমি হাঁ করে ধ্রুবর মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। ধ্রুবর মশকরাতে ছেলেটার অবস্থা শোচনীয়! দিশেহারা হয়ে বলল,”ভুল হয়ে গেছে ভাবি। মাফ করে দেন। আমি বুঝতে পারি নি।”

ছেলেটা এবং ধ্রুব দুজনেই উত্তরের অপেক্ষায় আমার দিকে চেয়ে রইলো। ছেলেটার চোখে লজ্জা,অনুশোচনা, অস্বস্তি আর ধ্রুবর চোখে কৌতুক! খুব মজা পাচ্ছে সে! আমি কোনরকম সময় নিলাম না। তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,”ইটস ওকে! আমি কিছু মনে করি নি।”

কাঁচুমাচু চেহারা নিয়ে দ্রুত প্রস্থান করলো শান্ত। ও চলে গেলে আমি রাগী চোখে ধ্রুবর দিকে তাকালাম। জিজ্ঞেস করলাম,”এসব কি?” ধ্রুব জানালো শান্ত ওর কলেজ ফ্রেন্ড আসিফের ছোটভাই। মাঝখানে কিছু বাজে ছেলেপেলের পাল্লায় পড়ে বখে গেছিলো।এখন ঠিক আছে। ধ্রুব মিনিট খানেক চুপ থেকে হাসতে হাসতে বললো,”আই এম প্রাউড অফ ইউ নিশাত! এই বয়সেও তোমার পেছনে একটা বাচ্চা ছেলে ঘুরঘুর করে। আই রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ! হোয়াট আ বিউটি ইউ আর!” বলেই ও হাসি থামানোর বৃথা চেষ্টা করলো। আমার বুঝতে বাকি রইলো না ধ্রুব এই নিয়ে কম করে হলেও ছয়মাস আমাকে খোঁচাবে! অসভ্যটা আমাকে খোঁচানোর একটা সুযোগও মিস করে না। কিছু একটা পেলেই হলো। অসহ্য লাগছিলো! কিচ্ছু বললাম না, গটগট করে হাঁটা ধরলাম! কিন্তু কিসের কি! ধ্রুবর হাসি কি থামে! শয়তানটা আমার সারা গা জ্বালিয়ে কেবল হেসে যাচ্ছিলো। আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। এক কোনায় একটা সোফায় বসে রইলাম। কিছুক্ষন পর ধ্রুব আমার পাশে এসে বসলো। হাসি থামিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করে বললো,”শান্ত এমনিতে খারাপ না। সঙ্গদোষে গুলিয়ে গেছে। তুমি কিছু মনে করো না।”

আমি জবাব দিলাম না। ধ্রুব আমার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে বললো,”সিরিয়াসলি তোমার তো খুশি হওয়া উচিৎ। ইউ আর স্টিল ভেরি ইয়াং!”

—“ধ্রুব দয়া করে আমার মেজাজ খারাপ করো না প্লিজ! আজকের দিনটা অন্তত রেহাই দাও।”

—“আচ্ছা সরি! তবুও বলছি তোমার কিন্তু খুশি হওয়া উচিৎ। আমি হলে এই উপলক্ষ্যে পার্টি দিতাম!”

আমি বুঝতে পারছিলাম আমার মেজাজ ক্রমাগত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন লাভ নেই। ধ্রুব সেটা বুঝবে না। প্রসঙ্গ বদলানোর চেষ্টা করে বললাম,”শান্তর কথা তুমি আমাকে এতদিন বলো নি কেন?”

—“আর বলো না, বেচারা সেদিনের পর থেকে পাগলের মত আমার পেছন পেছনে ঘুর ঘুর করছে আমি যেন ওর বাসার কাউকে এসব না জানাই। হাতে পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করলো। ভাবলাম একটা সুযোগ দিয়েই দেখি।”

—“আমাকে তো বলতে পারতে?”

—“তুমি সেদিন ওদের জন্য খুব মায়া দেখাচ্ছিলে তাই বলি নি।”

—“আমি ওদের জন্য মায়া দেখাচ্ছিলাম?”

—“আলবাত দেখাচ্ছিলে!”

আমার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছিলো। ধ্রুব ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,”তোমাকে ভয়ংকর দেখাচ্ছে নিশাত! তুমি কি আমার ওপর রেগে যাচ্ছো?”

এই মুহূর্তে ধ্রুব নাক বরাবর একটা ঘুষি মারতে পারলে আমার মাথাটা ঠান্ডা হতো। কিন্তু আফসোস সেটা সম্ভব না। পুরো সেন্টার ভর্তি লোকজন। এত লোকের সামনে ধ্রুবর নাক ফাটিয়ে নিজেকে ডাকুরানী প্রমাণ করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। অতএব এইমুহূর্তে ওর পাশ থেকে সরে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আমি উঠে যেতে নিলাম। ধ্রুব আমার হাত চেপে ধরে বললো,” এইমুহূর্তে আমার একটা গান মনে পড়ছে নিশাত। শোনাবো?
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই গাইতে শুরু করল ও,
“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়!
সে কি মোর অপরাধ?
হেরিতে তোমার রূপ-মনোহর
পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর।
মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর
নয়নের সেই সাধ।
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়
সেকি মোর অপরাধ?”

শত চেষ্টা করেও একটু আগের সেই রাগ, ক্ষোভ, অভিমান ধরে রাখতে পারলাম না। হেসে ফেললাম। ধ্রুবও হাসলো। এক ঝটকায় আমাকে ওর পাশে বসিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,”শান্তকে আর দোষ দিয়ে লাভ কি বলো? আমি নিজেও তো এর শিকার! ইট’স অল ইউর ফল্ট! তুমি এত সুন্দর কেন? হোয়াই আর ইউ সো বিউটিফুল ব্রো?” বলেই চোখ মারলো। আমি আলতো করে ওর হাতে চড় মেরে উঠে গেলাম। ও একটু চেঁচিয়ে উঠে বলল,”কোথাও যাচ্ছো? আশেপাশে কিন্তু অনেক সুন্দরীরা ঘুরঘুর করছে!” আমি ভেংচি কেটে বললাম,”তোমার দৌড় আমার জানা আছে।”
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১৩

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৩

আমি অনুযোগ করে বললাম,”তুমি সবসময় এমন থাকতে পারো না? কেন আমার সাথে ঝগড়া করো? তরুর সাথে যখন ছিলে তখন তো একেবারে কুল এটিটিউড নিয়ে ঘুরতে! যত ঝগড়া কেবল আমার সাথে!”

ধ্রুব থেমে গেলো। আমার দিকে পলকহীনভাবে চেয়ে থেকে মিষ্টি করে বললো,” বাব্বাহ্ এতকিছু নোটিশ করেছো তুমি?”

আমি লজ্জা পেলাম। কারণ ওর সাথে আমার ভাবখানা অনেকটা ডোন্ট কেয়ার টাইপ। আমি খুব সহজে ওর কাছে নিজের ফিলিংস প্রকাশ করি না। তার অবশ্য একটা কারণও আছে। আগেই বলেছি ওর খোঁচানোর অভ্যেস আছে।সুযোগ পেলেই খোঁটা দেয় সে। সেই ভয়েও অনেকসময় কিছু বলি না। ধ্রুব দুষ্টু হেসে বললো, “তুমি ঠিকই বলেছো আমি তরুর সাথে খুবই কুল ছিলাম। তার কারণ তরু গার্লফ্রেন্ড হিসেবে খুবই কুল!”

—“আর আমি?”

—“তুমি? ওরে বাবা!”

বলেই ধ্রুব হো হো করে হাসতে শুরু করলো। আমি রাগে মুখ বিকৃত করে বললাম,” তরুর সাথে তোমার বিয়ে হলেই ভালো হতো। আমিও অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলতাম, তখন দেখতাম তুমি কি করতে?”

—“কি আর করতাম? তোমাদের বাসাটা ছেড়ে দিতাম। তোমার বাবা ভাড়া অনেক বেশি নেয়!”

আমি চুপ করে গেলাম। ধ্রুবকে আর কিছু জিজ্ঞেস করে নিজের মেজাজ খারাপ করতে চাইলাম না। কারণ আমি এখন যে পরিমান রেগে আছি তার চেয়ে হাজারগুন বেশি রাগিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ধ্রুবর আছে। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই এত নিখুঁতভাবে ও কি করে মানুষকে রাগাতে পারে?

সুতরাং আমি মুখ ভার করে রইলাম।পাঁচতলায় উঠে ধ্রুব আমাকে কোল থেকে নামিয়ে বেল চাপলো। দরজা খুললো মা। ধ্রুব সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো। আমার পা মচকানো ঘটনা খুলে বলে তাড়াতাড়ি আমাকে ভেতরে নিয়ে যেতে বললো।

মা আর সুলতানা মিলে অনেক কষ্টে আমাকে ভেতরে ঢোকালো। মায়ের চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে ধ্রুবকেও ভেতরে ঢুকতে হলো। ধ্রুবকে দেখে খুশিতে আত্মহারা মা। নাশতা পানি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জামাই আদর যাকে বলে! ধ্রুব কেবল মুখচিপে হাসছে। সুলতানা আমার পায়ের হলুদ পোড়া লাগিয়ে দিলো। আমি টিভি চালু করে সোফায় বসে মায়ের আদিক্ষেতা দেখছিলাম। আর ধ্রুব আমাকে দেখছিলো। যতবার চোখে চোখ পড়লো আমি ততবারই জোরালো ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। এর মানে ‘আমি তোমার ওপর ভীষণ রেগে আছি।’

ধ্রুব বেরিয়ে যাওয়ার সময় মা আমাকে ইশারায় এগিয়ে দিতে বললো। আমি খোঁড়া পা নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। ধ্রুব মিষ্টি হেসে বললো,”আসি?”

ওর এই হাসির পর রেগে থাকা আমার পক্ষে কেবল অসম্ভবই নয় অকল্পনীয়! আমি বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়িয়ে বললাম,”এসো।” ধ্রুব গেলো না। আমার মুখোমুখি চেয়ে রইলো। আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম,”কি?” ও মাথা নাড়ালো। দুষ্টু হেসে বলল,”আমি কিন্তু একদম মিথ্যে বলি নি। তরু সত্যিই ভীষণ কুল! কিন্তু কি করবো বলো, ঠান্ডায় আবার আমার এলার্জি আছে। আমার পছন্দ হট, স্পাইসি অ্যান্ড আ লিটল বিট সসি! দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে! ঠিক তোমার মত!”
আমি মনে মনে খুশি হলেও মুখ প্রকাশ করলাম না। তাড়া দিয়ে বললাম,”হয়েছে এবার যাও। আর কতক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো?”
ধ্রুব চলে গেলে আমি দরজার দাঁড়িয়ে আপনমনে কতক্ষন হাসলাম। ধ্রুব কি সব বলে গেলো! হট, স্পাইসি, সসি! ধ্যাৎ!

পরেরদিন সকালে আন্টি আমাকে ডেকে পাঠালেন তরুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্ল্যান করার জন্য। আমি আর ধ্রুব মিলে খুব ভালোমতই সব কিছু প্ল্যান করলাম। সন্ধ্যার দিকে তরুকে ওর হাজবেন্ডের সাথে মার্কেটে পাঠিয়ে দিলাম। সেই ফাঁকে ধ্রুব আর আমি ভালোমত ঘর সাজিয়ে ফেললাম। তরুর ওপর আমার রাগ আছে সত্যি। আবার নেইও। বেচারি ছোটবেলাতেই নিজের বাবা মাকে হারিয়েছে। আপন বলতে আছে কেবল ধ্রুব আর আন্টি। তাই আমার জন্য আন্টির কিংবা ধ্রুবর সাথে ওর সম্পর্ক খারাপ হোক সেটা আমি চাই না!

তরু মার্কেট থেকে ফিরে এসে এতসব কিছু দেখে অবাক। খুশিতে কেঁদে ফেলার মতন অবস্থা। আন্টি জানালেন সব আমি আর ধ্রুব মিলে করেছি। তরু আমার হাত ধরে টেনে আড়ালে নিয়ে গেলো। দুঃখ প্রকাশ করে বললো,” তোমার ওপর আমার অনেক রাগ ছিলো নিশাত।ধ্রুব ভাইয়া যেদিন তোমার জন্য আমাকে বিয়ে করতে রাজী হলো না সেদিন তোমার ওপর আমার খুব রাগ হয়েছিলো। ইচ্ছে করছিলো তোমাকে খুন করে ফেলি। কিন্তু আস্তে আস্তে আমি বুঝতে পারলাম তোমার ওপর রাগ করা বৃথা। যে আমার ছিলোই না তারজন্য তোমার ওপর রাগ করে কি লাভ! বিশ্বাস করো এখন তোমার ওপর আমার কোন রাগ নেই। তুমিও আমার ওপর কোন রাগ রেখো না বোন।”

—“তারমানে তুমি আগে থেকেই আমার এবং ধ্রুবর সম্পর্কের কথা জানতে?”

—“কিছুটা । তবে সিউর ছিলাম না। কিন্তু হলুদের সিউর হয়ে গেলাম।ধ্রুব ভাইয়া কিসের টানে নিজের হলুদ অনুষ্ঠান ফেলে তোমার কাছে ছুটে গেছিলো সেটা আর কেউ না বুঝতে না পারলেও আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি।”

আমি হাসলাম। এখন আর তরুর ওপর একটুও রাগ নেই। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ও আমার সাথে যা করেছে পুরোটাই জেলাসি থেকে করেছে। একসময় ধ্রুব হারানোর ভয়ে আমিও জেলাস হয়ে গেছিলাম। তাই ওর কষ্টটা আমি বুঝি।

কেক কাটার সময় আন্টি ধ্রুবকে ভিডিও করতে বললো। খেয়াল করলাম ধ্রুব আমাকে বাদ দিয়ে বাকি সবাইকেই ভিডিও করছে। কেবল আমিই বাদ পড়ছি। আমি যতবারই ক্যামেরার সামনে গিয়ে দাঁড়াই শয়তানটা উলটো ঘুরে যায়। মনে মনে ভাবলাম কি কপাল আমার! সারাজীবন মুভিতে দেখে এসেছি বয়ফ্রেন্ড কেবল গার্লফ্রেন্ডকে ভিডিও করছে আর আমার বয়ফ্রেন্ড!.ধ্রুবকে চোখ দিয়ে শাসালাম। এর মানে ‘আমি তোমাকে দেখে নেবো!’ কিন্তু তার ফলাফল যে এমন হবে আমি ভাবতেও পারি নি।

তরুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে ছবি দেখতে বসলাম সবাই মিলে। ধ্রুব অনুষ্ঠান শেষেই বাইরে গেলো ওর কি জরুরী কাজ সারতে। আমি আন্টি, সুমাইয়া, তরু সবাই সোফায় বসে ছবি দেখছিলাম। ছবি দেখতে গিয়ে খেয়াল করলাম সব ছবিতে আমি অর্ধেক। আমার অর্ধেক দেখা যাচ্ছে বাকি অর্ধেক কাটা পড়েছে। মেজাজ খারাপের পরিমান বলার বাইরে। ধ্রুব ইচ্ছে করেই এমন করেছে। অসভ্য ছেলে! আমার একটা ছবিও ভালো আসে নি। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো। সবার মাঝখান থেকে উঠে গিয়ে বাসায় চলে গেলাম। দরজা বন্ধ করে ধ্রুবর নাম্বারে ডায়াল করলাম।

—“হ্যাঁ বলো।”

—“শয়তান। বদমাশ, অসভ্য! কেন করছে এমন?”

ধ্রুব চেপে চেপে হাসছে। ওর হাসিতে রাগ আরো বেড়ে গেলো। ফোন কেটে দিলাম। সাথে সাথেই কল ব্যাক করলো ও। রিসিভ করতেই বললো,”তোমার ভালো ছবি আমার কাছে আছে। তুমি চাইলে তোমাকে দেখতে দিতে পারি। কিন্তু নিতে পারবে না।”

কাউকে দেখাতে না পারলে সেই ছবি দিয়ে আমি কি করবো। রাগে অভিমানে চেঁচিয়ে উঠে বললাম,”তুমিই দেখো। লাগবে না।”

ফোন কেটে সুইচড অফ করে দিলাম। এত কষ্ট করে সাজলাম অথচ একটা ছবি পর্যন্ত তোলা রইলো না। ধ্রুবকে আমি জীবনেও মাফ করবো না।

সকালে ফোন রিস্টার্ট করতেই মেসেজ টোন বেজে উঠলো। হোয়াটস আপে মেসেজ এসেছে। ভেতরে ঢুকে দেখলাম ধ্রুব ছবি পাঠিয়েছে। রাতেই পাঠিয়েছিলো। ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলাম তাই বলতে পারবো না।

ছবিগুলো দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো। সাথে সাথে ধ্রুবকে মেসেজ পাঠালাম, “আই লাভ ইউ।”

রিপ্লাই এলো, “আই হেইট ইউ। তোমার সব ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে থেকে ব্রেক-আপ!”
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১২

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১২

বাসায় দরজায় দাঁড়িয়ে বেল বাজালাম। ধ্রুব এসে দরজা খুলে দিলো। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম,”আন্টি কই?”

—“ভেতরে আসো?”

আমি জুতো খুলে ভেতরে ঢুকলাম। ধ্রুব দরজা আটকে দিলো। ওর পরনে একটা শর্টস আর টি-শার্ট, পায়ে বাসার স্যান্ডেল। আমি স্কার্ট বদলে গোলাপি রংয়ের একটা ফুলহাতা থ্রিপিস পরে এসেছি। ধ্রুব আমার দিকে তাকিয়ে কিউট করে হাসলো। আমার কেন জানি না লজ্জা লাগছিলো ওকে এভাবে দেখতে। আমি আন্টির ঘরে চলে গেলাম। ধ্রুব পেছন পেছন ঘরে ঢুকলো। আন্টির ঘরে কেউ নেই। কিচেনেও কাউকে খুঁজে পেলাম না। ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করলাম,”আন্টি কোথায়?”

ধ্রুব বললো,”মা বাসায় নেই। তরুকে চেকাপে নিয়ে গেছে।”

—“কিন্তু মা যে বললো আন্টি আমাকে ডেকেছেন?”

—“ফোন করে বলেছে।”

—“তুমি আমাকে বলো নি কেন আন্টি বাসায় নেই?”

—“কেন বললে কি হতো? তুমি তো আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছ। আন্টি, আন্টি করছো কেন?

—“আমি দুজনের সঙ্গেই দেখা করতে এসেছি। বরঞ্চ তুমি বাসায় একা আছো জানলে আমি আসতাম না।”

—“কেন আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলবো?”

—“তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না। তুমি হচ্ছো একটা ডাকু! সত্যি করে বলোতো আন্টি কোথায়?”

—“বললাম তো মা বাসায় নেই।”

—“তুমি তাহলে সত্যিই আন্টিকে ফোন করে আমায় বাসায় ডেকে নিয়ে আসার কথা বলেছো?”

—“হুম!”

—“কেন? তোমার কি একটুও লজ্জা করলো না আন্টিকে কথাটা বলতে! তুমি একা বাসায়। আন্টি কি ভাববেন?”

আমি এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললাম। ধ্রুব আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,”রিলেক্স। তুমি এত রেগে যাচ্ছো কেন? আগে আমার পুরো কথাটা তো শুনবে?..আগামীকাল তরুর জন্মদিন। তাই মাকে বলেছি তুমি আর আমি মিলে ওর জন্য সারপ্রাইজ পার্টির প্ল্যান করবো! মা আন্টিকে ফোন করে সেই কথাই বলেছেন।”

—“কাল তরুর জন্মদিন?”

—“হ্যাঁ!”

তরুর প্রতি মনে মনে একটা ক্ষোভ রয়ে গেছে আমার। তাই ওর জন্মদিন নিয়ে খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারলাম না। গম্ভীরমুখে বললাম,”আমাকে কি করতে হবে?”

ধ্রুব আমার মুখের দিকে চেয়ে নিরবে হাসলো। আমার ডান হাতটা টেনে নিয়ে বলল,”জেলাস?” আমি বিরক্ত কন্ঠে বললাম,”সেটা জেনে তুমি কি করবে? আমাকে কি করতে হবে তাই বলো।”
ধ্রুব আমার গালটা টেনে দিয়ে বললো, “একটুখানি হাসতে হবে। নইলে এতকিছু কারজন্য করলাম?”

—“শুধু শুধু হাসবো কেন?”

—“শুধু শুধু যখন মুখ ভার করেছো তখন নাহয় শুধু শুধু একটু হাসো?”

—“পারবো না।”

—“তুমি এত নিষ্ঠুর কেন নিশাত? তোমার জন্য আমি লাভ ম্যারেজ কে এরেঞ্জ ম্যারেজ বলে চালাচ্ছি। মায়ের হাতে মার খেয়েছি। এমনকি বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞা পর্যন্ত করেছি, তুমি আমার জন্য একটু হাসতে পারবে না?”

—“না পারবো না। তুমি তো এসব আমার জন্য করো নি। আসল কথাটা হলো তরুর সাথে তোমার বনছিলো না,তাই। আমি কিছু জানি না মনে করেছো?”

আমি ইচ্ছে করে ধ্রুব রাগানোর জন্য কথাটা বললাম। তরুর জন্মদিন নিয়ে আদিক্ষেতা আমার সহ্য হচ্ছিলো না। কিন্তু ধ্রুব রাগলো না। মুচকি হেসে বললো,”বনছিলো না তো। কিন্তু কার জন্য বনলো না? তোমার জন্যই তো।”

—” ও এখন আমার দোষ? আমি কি তোমাকে তরুকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছি?”

—“না করো নি।”

—“তাহলে নিজের দোষ কাটাতে সবাইকে আমার নাম বলে বেড়াচ্ছো কেন? তোমার জন্য সবাই আমাকে রাক্ষসী, ডাইনী ভাবছে। সুমাইয়া তো বলেই ফেলল,” আমি নাকি তোমার মাথাটা চিবিয়ে খেয়েছি।”

—“খাও নি বুঝি?”

—“মোটেও না।”

—“তাহলে আমি তরুকে বিয়ে করলাম না কেন?”

—“আমি কি জানি! খুব আফসোস হচ্ছে মনে হয়?”

—“হচ্ছে। খুব হচ্ছে। মরে যেতে ইচ্ছে
করছে!”

—“তাহলে আমাকে ডেকেছো কেন? আমি বাসায় যাচ্ছি।”

আমি ধ্রুবর ঘর থেকে রাগ করে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। ডেকে এনে আমাকে এভাবে অপমান করলো? অসভ্য ছেলে একটা! আর ডাকিস আমাকে!
ধ্রুবর ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে এসে গ্লাসে পানি নিলাম খাওয়ার জন্য। বকবক করে গলা শুকিয়ে গেছে।
ধ্রুব আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে গ্লাসটা নিয়ে পানিটা খেয়ে নিলো। আমি পাজলড হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। শেষ চুমুকটুকু গিললো না ও। আমার কোমর সমেত টেনে ধরে ঠোঁটে ঠোঁটে মিলিয়ে দিলো। ওর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আমি মুখ বন্ধ করার জন্য ছটফট শুরু করলাম। কিন্তু ওর সাথে পেরে উঠলাম না। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইলো অসভ্যটা। বাধ্য হয়ে আমি মুখের পানিটা গিলে ফেললাম। সাথে সাথেই ধ্রুব আমাকে ছেড়ে দিলো। সেই সাথে গা জ্বালানো হাসি! লজ্জায় অস্বস্তিতে আমার আরক্তিম অবস্থা! মাথা তুলে তাকাতে পারছিলাম না। অতঃপর ধ্রুব নিজেই সদর দরজা খুলে ইশায়ায় আমাকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলো। আমি নড়লাম না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ধ্রুব দরজাটা সামান্য ভেজিয়ে পুনরায় আমাকে কোমর চেপে ধরে দুষ্টু হেসে বলল,”ভালোয় ভালোয় বলছি, চলে যাও। আমি কিন্তু খুব অসভ্য!”

আমি ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলাম। সারা শরীর শিরশির করছে। উত্তেজনায় বুক ধড়ফড় করছে। দাঁড়ালাম না। ছুটে বেরিয়ে গেলাম। ফলাফলস্বরূপ সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। অসাবধানতায় পা মচকে গেলো। অস্পষ্ট গোঙানি বেরোলো মুখ দিয়ে। আওয়াজ শুনে ধ্রুব বাইরে বেরিয়ে এলো। আমি পা চেপে ধরে সিঁড়িতে বসে ছিলাম। ও দুহাত পকেটে ঢুকিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে আমার এসে সামনে দাঁড়ালো , মুখে বিটকেল হাসি। আমি পারলে চোখ দিয়েই ওকে ভস্ম করে দেই। ও একটু ঝুঁকে আমার পায়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলল,”দেখো খোঁড়া টোড়া হয়ে গেলে কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।”

—“তোমার মত অসভ্য, আনসিভিলাইজড পার্সন আমি জীবনে দুটো দেখি নি ধ্রুব। তোমাকে লোকে সহ্য করে কি করে আমি বুঝি না। অসহ্য একটা!”

—“আমার হেল্প লাগবে সেটা ভালোভাবে বললেই তো হয়। মেজাজ গরম করছো কেন?”

—“তো এখন আমার কি করতে হবে? আমাকে উপরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তোমার পায়ে ধরতে হবে?”

—“নো, জানেমন! পায়ে ধরবে কেন? খালি একটু আদর করে বলতে হবে!”

—“শখ কতো! দরকার হলে আমি এখানে বসে থেকে রাত কাটিয়ে দেবো তবুও তোমাকে সাহায্য করতে বলবো না।”

—“ওকে। তাহলে আর কি করা! বসে থাকো এখানে। আমি গেলাম।”

ধ্রুব সত্যি সত্যি ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমি হতবুদ্ধি হয়ে বসে রইলাম। পা ভালো মতই মচকেছে। ব্যথায় নড়তেও পারলাম না। সিঁড়িতে বসে রইলাম। কিন্তু আমার মন বলছে ধ্রুব বেরোবে। এবং ধ্রুব বেরোলো! পরনের শর্টস বদলে ট্রাউজার পরে এলো। টি-শার্টের ওপর ফুলহাতা একটা শার্ট পরলো। বাসার স্যান্ডেল রেখে জুতো পরে নিলো।
আমার দিকে ঝুঁকে হাসলো। তারপর আমাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করলো। একটা কথাও বললো না। আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরে আরামসে বসে রইলাম। ম্যারিন অফিসারের ফিট বডি। ঝগড়াটে ভাবটা কেটে গিয়ে রোমান্টিক রোমান্টিক একটা ফিলিংস আসছিল। ব্যথার কথা ভুলে গেলাম!

চারতলা বেয়ে উঠার পর ধ্রুব দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন দম নিলো। আমাদের সিঁড়িগুলো প্রচন্ড খাঁড়া ধরনের। একা উঠতেই জান বেরিয়ে যায় তারওপর ও তো আমাকে নিয়ে উঠছে। বেচারার চেহারা দেখে মায়া হলো। কিন্তু এতক্ষন আমার সাথে যা করেছে তার কথা ভেবে ওকে ক্ষমা করতে পারলাম না। ভার আরো বাড়ানোর জন্য বেশি করে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম। ও আমার দিকে একপলক তাকিয়ে হাসলো কেবল। তারপরই আবার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলো। আমি খেয়াল করলাম ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হাতের চাপে ঘাড়ের রগ ফুলে গেছে। ওর অবস্থা দেখে আমার হাতের বাঁধন ঢিলে হয়ে গেলো। ও এবারো হাসলো। মধুর কন্ঠে বললো,”নিশাত তুমি নিজেও জানো না তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো!” আমি জবাব দিলাম না। ওর বুকে নাক ঘষলাম। ও মুখভর্তি হাসি নিয়ে বললো,”কি করছো। সুড়সুড়ি লাগছে তো!” আমার সব রাগ,ব্যথা, দুঃখ, অভিমান মিলিয়ে গেলো ওর হাসিটা দেখে। ওর বুকে মাথা রেখে চুপ করে রইলাম। ওর হৃদপিন্ডের উঠানামা গুনছিলাম আর ভাবছিলাম ধ্রুবকে আমি ঠিক কতটা ভালোবাসি! বোধহয় একপৃথিবীর চাইতেও অনেক বেশি।আমার সকল আনন্দ, বেদনা, হাসি,কান্না, ভালোলাগা, ভালোবাসা জুড়ে মোটকথা সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে শুধু ওর বসবাস!
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১১

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১১

তারপর রাগে দুদিন আর ওদের বাসায় যাই নি। কিন্তু যার ওপর রাগ করেছি সে জানেও না আমি তার ওপর রেগে আছি। একটা ফোন পর্যন্ত করে নি। আমিও করি নি। কেন করবো? আগে ও করবে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাচ্ছিলাম। ড্রয়িংরুমে আন্টির গলার আওয়াজ পেয়ে দেখতে গেলাম কি হচ্ছে।
ধ্রুব ভদ্রছেলের মত আন্টির পাশে বসে আছে। ওর পরনে খয়েরি রংয়ের একটা পাঞ্জাবি আর কালো জিন্স। পাঞ্জাবির হাতা একটুখানি গোটানো। হাতে কালো ঘড়ি। চুল গুলো জেল দিয়ে ফেরানো। এই বেশে দুর্দান্ত লাগছিলো! বাবা ওর সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছিলো।কিন্তু কি নিয়ে সেটা বুঝতে পারলাম না। ওর এত সেজেগুজে আসার কারণও বুঝতে পারছিলাম না। এদিকে আন্টির পরনেও নতুন শাড়ি। তাদের মুখোমুখি বাবা আর বড় ফুপা বসে আছেন। আন্টি আমাকে দেখে কাছে ডাকলেন। ধ্রুব খুব মনোযোগ দিয়ে বাবার কথা শুনছিলো। আমাকে দেখে আড়চোখে একবার তাকিয়ে পুনরায় আলোচনায় মনোযোগ দিলো। আমার বুঝতে বাকি রইলো না কি হচ্ছে। আমার পরনে তখন আমার সবচেয়ে পুরোনো সুতির জামাটা। যেটা পরতে পরতে একেবারে ত্যানা ত্যানা হয়ে গেছে। গরমে আরাম লাগে বিধায় প্রায়ই গায়ে দেই। চুলগুলো পাখির বাসা। চোখজোড়া রসগোল্লার মত ফুলে আছে।

আন্টি আমাকে ডেকে তার পাশে বসালেন। ধ্রুবর ওপর আমার এত রাগ হচ্ছিলো যে বলার বাইরে। সে আমাকে একটা বার জানালে কি হতো? আন্টি আমাকে যতই ভালোবাসুক। তিনি তো মেয়ে দেখতে এসেছেন? আমাকে এই ফকিন্নির বেশে দেখানোটা কি ধ্রুবর উচিৎ হলো? আড়চোখে তাকাতেই দেখলাম নরাধমটা মিটমিট করে হাসছে। আমি মনে মনে তাকে জীবনেও মাফ না করার প্রতিজ্ঞা করে একবার মায়ের প্রতি অগ্নিবর্ষণ করলাম। মায়ের তো একবার আমাকে জানানো উচিৎ ছিলো?

ধ্রুব আর আন্টি চলে গেলে আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম আমাকে জানানো হয় নি কেন? মা অপরাধির মত মুখ করে বললো,” তোর মন মেজাজ ভালো ছিলো না। তাই জানাতে চাই নি। কিন্তু তোর আন্টি নিজেই তাড়া দিলেন। ওদিকে ধ্রুবকে তোর বাবারও খুব পছন্দ। ছেলেটা ভালো! তোর বাবা সব খোঁজখবর নিয়েছে..।” আমি মাকে পুরোটা শেষ করতে না দিয়ে বললাম,”সেসব ঠিক আছে। কিন্তু আন্টি যে আমাকে দেখতে আসছেন তা তো আমাকে একবার বলা উচিৎ ছিলো।” মা আমার রাগ দমন করার চেষ্টা করে বললো,” তুই ঘুমাচ্ছিলি শুনে তোর আন্টি তোকে ডিস্টার্ব করতে বারণ করেলো।” আমি শীতল কন্ঠে বললাম,”যতই বারণ করুক। তুমি তো দেখেছো আমি কি জামা পরে শুয়েছিলাম। তোমার তো আমাকে ডেকে দেওয়া উচিৎ ছিলো।”

—“তো কি হয়েছে? তোর আন্টি তো তোকে
রোজই দেখেন।”

মাকে কি করে বোঝাই রোজ দেখা আর আজকে দেখা আর নয়। আজকের দেখাটা আমার জন্য অনেক বেশি স্পেশাল! আমি রাগে দরজা বন্ধ করে ধ্রুবর নাম্বারে ডায়াল করলাম। দুবার রিং হতেই ধ্রুব ফোন রিসিভ করলো। ওকে হ্যালো বলার সুযোগ না দিয়ে আমি এক নিশ্বাসেই বলতে শুরু করলাম,

—“তুমি এত খারাপ কি করে হতে পারলে ধ্রুব? কি করে আমার সাথে এমন করতে পারলে? তোমার একটুও খারাপ লাগলো না।”

—“কি করেছি আমি?”

আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম ওপাশ থেকে হাসি চেপে রাখার জোর চেষ্টা চলছে। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো। দাঁতেদাঁত চেপে বললাম,”কি করেছো তুমি জানো না? তোমার একটুও মায়া হলো না?”

ধ্রুব মিথ্যে সান্ত্বনার সুরে বললো,” আচ্ছা, এটা নিয়ে মন খারাপ করার কি আছে? মা তো তোমাকে রোজই দেখেন।”

—“রোজ দেখা আর আজকের দেখা কি এক হলো? আর রোজই যদি দেখে তাহলে আজকে এলে কেন দেখতে?”

—“আমি আসি নি। মা জোর করে নিয়ে এসেছে।”

—“মা জোর করে নিয়ে এসেছে। তোমাকে আমি চিনিনা ভেবেছো? তুমি ইচ্ছে করে এমন করেছো!”

—“সিরিয়াসলি আমি সত্যিই জানতাম না। আর যদি ইচ্ছে করেই করে থাকি তো সমস্যা কি? তুমি তো আমাকে বিয়ে করবে না বলেছো?”

দাঁতেদাঁত চেপে বললাম,”না করবো না। জীবনেও করবো না। তুমি আমার পা ধরে কান্নাকাটি করলেও আমি তোমাকে বিয়ে করবো না মনে রেখো।”

রাগে দুঃখে আমার কেঁদে ফেলার অবস্থা। ফোনের ওপাশ থেকে আমার ফোঁপানোর আওয়াজ পেয়ে ধ্রুব বললো,”একি নিশাত তুমি কাঁদছো? আরে বাবা এটা তো জাস্ট একটা ফর্মালিটি। এর জন্য বুঝি কান্নাকাটি করা লাগে।”

—“থাক গরু মেয়ে জুতো দান করতে হবে না। লাগবে না তোমার সান্ত্বনা। ”

—“আমি সত্যি বলছি আমি জানতাম না। মা হুট করেই প্ল্যান করেছে। ঠিক আছে তুমি কাঁদো!আমি রাখছি বায়।”

ফোন কেটে দিলো অসভ্যটা। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ফোনের দিকে চেয়ে রইলাম। আমার কান্না থামানোর একটু চেষ্টাও করলো না? আবার ফোন দিলাম। ফোন রিসিভ করেই বলল,”আবার কি?”

—“তুমি ফোন কেটে দিলে কেন?”

—“আমি ভেবেছিলাম তোমার কথা শেষ।”

—“না শেষ হয় নি। আমার অনেক কথা আছে। খবরদার ফোন রাখবে না তুমি।”

—“আচ্ছা রাখবো না। বলো কি বলবে?”

—“বাবার সাথে কি কথা বলছিলে তুমি?”

ধ্রুব হেসে উঠে বললো,”তোমাদের বাড়িটা হাতিয়ে নেওয়ার প্ল্যান করছিলাম।”

—“এই যে আবার…?”

—“আচ্ছা সরি। তেমন কিছু না তোমার বাবা আমাকে তার লাইফ হিস্ট্রি শোনাচ্ছিলেন। আমার কথা তোমাকে কিছু বলেছে?”

—“না। সেটা জানতে হলে আআপাতত ধৈর্য ধরতে হবে। আগামীকাল আরেকটা ছেলে দেখার কথা আছে। সব যাচাই বাছাই করে যদি তোমাকে বেস্ট মনে হয় তবে… ”

ধ্রুব আমার কথায় পাত্তাই দিলো না। বললো,”এই শোনো, আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো। আর্জেন্ট। রাখি?” ধ্রুব খুব সিরিয়াস সিরিয়াস ভাব নিয়ে কথাগুলো বললেও ও যে আমাকে রাগানোর জন্যই বলেছে সেটা ওর চাপা হাসির শব্দ আমার বুঝতে বাকি রইলো না। মেজাজ বিগড়ে গেলো। বললাম,”

—“তোমার কি মনে হচ্ছে না ধ্রুব, আমি যতই শান্ত থাকার চেষ্টা করছি তুমি ততই আমাকে রাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছো। কেন?”

ধ্রুব হাসতে হাসতে বললো,”কি আশ্চর্য নিশাত আমি ওয়াশরুমে যাবো না!”

—” তুমি আমাকে আর জীবনেও ফোন দেবে না অসভ্য ছেলে।”

আমি ফোন কেটে দিলাম। পাঁচমিনিট বাদে ধ্রুব আবার ফোন করলো। কেটে দিলাম। ও আবার কল করলো। আমি আবারো কেটে দিলাম। শেষে মেসেজ দিলো,”ফোন রিসিভ না করলে কিন্তু তোমাদের বাসায় এসে তোমাকে চুমু খেয়ে যাবো।” মেসেজটা সিন করতেই রাগের মাঝেই হেসে ফেললাম। সব রাগ পানি হয়ে গেলো। অসভ্যটা আমাকে রেগে থাকতে দেবে না। কিন্তু আমার যে রাগ পড়ে গেছে সেটা ওকে বুঝতে দিতে চাইলাম না। কল রিসিভ করেই ঝাড়ি শুরু করে দিলাম,

—“বারবার কেন আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছো? কি চাই তোমার?”

—“তুমি কি একবার নিচে আসতে পারবে?”

—“না।”

—“আসো না।”

—“বললাম তো পারবো না।”

—“আসো না, প্লিজ।”

—“না।”

ধ্রুব আমাকে রাগানোর জন্য বললো,”ঠিক আছে। আর কোনদিন এসো আমাদের বাসায়। তোমার একদিন কি আমার একদিন। তুলে আছাড় না মারবো একদম। ”

—“ঠিক আছে আসবো না।”

—“আসবা না তুমি?”

—“বললাম তো আসবো না। আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?”

ধ্রুব ফোন কানে রেখে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। আমি চুপ করে রইলাম। দুজনেই চুপচাপ। ধ্রুব হাল ছেড়ে দিলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অনুরোধী গলায় বললো,”আসো না প্লিজ!”

—“একটু আগে কি বলেছিলে?”

—“সরি।”

—“লাগবে না আমার সরি।”

—“আসো না প্লিজ!”

—“আচ্ছা ঠিক আছে আসছি। কিন্তু মাকে কি বলবো?”

—“বলো জামাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছো।”

—“বাজে কথা বললে ফোন রেখে দেবো কিন্তু।”

—“এই না না,দাঁড়াও। আমি মাকে বলছি তোমাকে ডেকে পাঠানোর জন্য।”

—“আন্টি কি ভাববেন?”

—“কিচ্ছু হবে না। মা খুব ফ্রি।”

—“তুমি কি আন্টিকে সব বলে দিয়েছো?”

—“হুম।”

—“কি করে বললে? তোমার লজ্জা করলো না?”

—“লজ্জা করবে কেন?”

—“করবে না কেন? লজ্জা শরম নেই তোমার?”

—“আছে। প্যান্টের নিচে।”

ধ্রুবর কথা শুনে আমার তো গালে হাত। ওর মুখে কিছুই আটকায় না। বিরক্ত হয়ে বললাম,”ছি! ছিঃ! ধ্রুব! এসব কি?”

—“যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর! তুমি বোকার মত প্রশ্ন করলে কেন?”

—“আমি বোকার মত প্রশ্ন করেছি?”

—“অফকোর্স তুমি বোকার মত প্রশ্ন করেছো! মা না জানলে তরুর সাথে বিয়েটা ভাঙ্গতো কি করে?”

—“আমি মাকে জানানোর কথা বলছি না। তুমি একটু আগে কি বলেছো?”

ধ্রুব ইনোসেন্ট টাইপ হাসি দিলো। যেন ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না সে। বললো,”কি বলেছি?”

—“অসভ্য! আমি বলতে পারবো না।”

ধ্রুব হো হো করে হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে বললো,” মাকে বলছি তাহলে?”

—“ঠিক আছে বলো।”

ধ্রুব ফোন কেটে দেওয়ার কিছুক্ষন পর মা এসে জানালো আন্টি আমাকে নিচে যেতে বলেছেন। আমি স্কার্ট বদলে গোলাপি রঙয়ের একটা জামা পরে নিলাম নিচে যাওয়ার জন্য।
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১০

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১০

এই কয়দিনে ধ্রুবকে ভালো করে খেয়াল করি নি। এবার ছুটিতে আসার পর ধ্রুব খুব শুকিয়ে গেছে। গাল ভেঙ্গে গেছে, চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। কন্ঠার হাড় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সবশেষে ওর সুন্দর মুখটায় বিষন্নভাব। খোলা ছাদে ওর চোখে চোখ পড়তেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। আমাকে দেখে নেভাতে গিয়েও নেভালো না। আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। নিরবে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বললাম,

—“তোমার সাথে আমার কথা আছে ধ্রুব!”

ধ্রুব আকাশ পানে চেয়ে থেকে শান্ত কন্ঠে বললো,”বলো।”

—“তার আগে তুমি সিগারেট ফেলো।”

কথাটা শুনে ধ্রুব আবারো অগ্নিবর্ষণ করলো আমার ওপর। তবে সিগারেট ফেলে দিলো। পায়ের তলায় পিষে নিভিয়ে ফেললো। দুহাত পকেটে ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। সিগারেট ফেলে দেওয়ায় আমি মনে মনে খুশি হলাম। কিন্তু মুখে প্রকাশ করলাম না। অভিমানী কন্ঠে বললাম,

—“তুমি আমাকে কেন বলো নি তরুর সাথে তোমার বিয়ে হয় নি?”

—“বলে লাভ?”

—“আশ্চর্য? লাভ কি তুমি জানো না?”

আমার প্রশ্নটা যে ধ্রুবকে আরো বেশি রাগিয়ে দিয়েছে সেটা ওর চেহারা দেখেই আমার বোঝা হয়ে গেলো। রাগে অভিমানে চেঁচিয়ে উঠে বলল,”না জানি না। আমি কেন তরুকে বিয়ে করি নি সেটা যখন তুমি জানো না তখন তরুর সাথে আমার বিয়ে হয় নি জানলে তোমার কি লাভ তাও আমি জানি না।”

ধ্রুবর রাগ দেখে আমি হেসে ফেললাম। ধ্রুব ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। চোখ লাল করে বললো,”হাসছো কেন?”

আমি ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। ধ্রুব চোখ পাকিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে। ওর একটু কাছে এগিয়ে মুচকি হেসে বললাম,

—“তোমার সাথে তরুর বিয়ে হয় নি জানলে আমার লাভ আছে কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। এবার তুমি বলো তুমি কেন তরুকে বিয়ে করো নি?”

ধ্রুব ঠান্ডা হলো। পরোক্ষনেই প্রচন্ড অভিমান ভর করলো মুখের ওপর। কিছুক্ষন সময় নিয়ে বলল,”ঐ কারণেই।”

আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম,”কি কারণ?”

ধ্রুব হেসে ফেললো। এক ঝটকায় আমাকে টেনে সিঁড়িঘরের দিকে নিয়ে গেলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আগে দ্বিতীয় বারের মত তপ্ত চুমু খেলো আমার ঠোঁটে। আমি ছাড়া পাবার জন্য ওর বুকে দুই তিনটা ঘুষি দিলাম। আমার ছটফটানিতে ধ্রুব বাধ্য হলো আমাকে ছেড়ে দিতে। আমি ঠোঁট মুছে ভয়ে ভয়ে চারপাশটা চাইলাম। আশেপাশে কেউ নেই, থাকলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। আমি ধ্রবকে সরিয়ে নিচে নেমে আসতে চাইলাম। ও পথ অবরোধ করে দাঁড়ালো। বললো,” আই হেইট ইউ!” আমি ওকে ঠেলে সরিয়ে নিচে নামতে শুরু করলে ধ্রুবও তাল মিলিয়ে নামতে শুরু করলো। পেছন দিক থেকে আমার ওড়না চেপে ধরে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছিলো।

হঠাৎ দুই তিন সিঁড়ি নামার পর সুমাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেলো। সুমাইয়া হাসিমুখে জানালো সে আমার কাছেই এসেছে। আমি ধ্রুবর দিকে চাইলাম। বেচারার মুখ কালো হয়ে গেছে। আমার ওড়না ছেড়ে দিয়ে ভালো ছেলের মত নিচে নামতে শুরু করলো। আমি মুচকি হেসে সুমাইয়াকে নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেলাম। সুমাইয়ার বান্ধবীর গায়ে হলুদ। সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে যাবে। তাই আমার কাছে মেহেদী পরতে এসেছে।
আমি মেহেদী পরিয়ে দিতে দিতে সুমাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ধ্রুবর বিয়ের দিন সে ছিলো কি না। সুমাইয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। মুখ বিকৃত করে বললো,”আর বলো না। সেদিন যা কান্ড হলো।” যদিও তরুর কাছ থেকে আমি সবই শুনেছি তবুও অবাক হওয়ার ভান করে বললাম,”কেন কি হয়েছিলো সেদিন?”
সুমাইয়া বিরক্ত মুখে বললো,”তোমাকে নিয়ে হস্পিটালে যাওয়ার পর ফিরে এসে ধ্রুব ভাইয়া হঠাৎ জানালো সে তরুকে বিয়ে করবে না। আন্টি, ধ্রুব ভাইয়ার মামারা, আত্মীয়স্বজন সবাই কত করে বোঝালো, তবুও রাজী হলো না। তরুর তো হাতে পায়ে ধরার বাকি ছিলো। কিন্তু ধ্রুব ভাইয়ার এক কথা, তিনি কিছুতেই তরুকে বিয়ে করবেন না।” সুমাইয়ার মুখ থেকে নতুন কিছু জানা যায় কি না সেই ভেবে বললাম,”কেন? ধ্রুব তো তরুকে ভালোবাসতো। তাহলে বিয়ে করে নি কেন?” সুমাইয়া মুখ বাকিয়ে বললো,” আমরাও তো তাই ভেবেছিলাম। ধ্রুব ভাইয়া তরুকে ভালোবাসে। কিন্তু বিয়ের দিন সে অন্য কথা বললো। তরুকে সহ্যই করতে পারছিলো না। আল্লাহই জানে কোন রাক্ষসী ধ্রুব ভাইয়ার মাথাটা চিবিয়ে খেয়েছে।তরুর মত ভালো মেয়েটাকে এত কষ্ট দিলো।” আমি মেহেদী লাগানো থামিয়ে সুমাইয়ার দিকে চাইলাম। বললাম,” ধ্রুব কি কারো কথা বলেছে, সে কাকে ভালোবাসে? ” সুমাইয়া কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো,ধ্রুব ভাইয়া প্রথমে বলতে চায় নি। কিন্তু সবার সন্দেহের চাপে পড়ে অবশেষে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। সে নাকি অন্য একজনকে ভালোবাসে। কিন্তু কোনভাবেই ডাইনীটার নাম বলতে রাজি হয় নি।”

সুমাইয়া যখন সত্যিটা জানতে পারবে তখন ওর রিয়েকশন কি হতে পারে ভেবে আমি মনে মনে হাসলাম! বললাম,

—“ডাইনী কেন বলছো? সে তো ধ্রুবকে জোর করে নি।”

—“জোর না করলে কি হয়েছে। মাথাটা তো খেয়ে নিয়েছে। তারজন্যই তরুর সাথে ধ্রুব ভাইয়ার বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো। বেচারা আন্টির হাতে মার পর্যন্ত খেলো অথচ বিয়ে করতে রাজী হলো না।”

সুমাইয়ার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।আন্টি ধ্রুবকে মেরেছে? অবাক হয়ে কথাটা আবার জিজ্ঞেস করলাম ওকে। সুমাইয়া মুখ ভার করে বললো,

—“মারে নি আবার! সবার সামনে ঠাস ঠাস করে গালে চড় মেরেছেন। তবুও কি গোঁ! একবারও বললো না বিয়ে করবো! এতবড় ছেলে মার খেয়ে নিরবে সহ্য করে গেছে। টুঁশব্দটি পর্যন্ত করে নি। অবশ্য আন্টির দোষ দিয়েও বা কি লাভ! ধ্রুব ভাইয়া তো মার খাওয়ার মতই কাজ করেছে। যতই নিজের ছেলে হোক তরুকেও তো তিনি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন।”

আমি মনে মনে দুঃখ বোধ করলাম। আবারো ধ্রুবকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা মনে পড়লো। সেদিন যদি আমি ধ্রুবকে ফিরিয়ে না দিতাম তাহলে ওকে কখনোই এমন পরস্থিতিতে পড়তে হতো না। আমার জন্যই সবার কাছে ছোট হয়ে গেলো। সবাই ওকে ভুল বুঝলো। আমি বিষন্ন কন্ঠে বললাম,

—“এমনও তো হতে পারে তোমার ধ্রব ভাইয়া তরুকে ভালোবাসার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি? হতে পারে না?”

—“পারে। আমরা তো আর কারো মনের ভেতর ঢুকে বসে নেই!”

মেহেদী পরানো শেষে সুমাইয়া চলে গেলো। আমি বালিশে মুখ ঢেকে কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম।
পরেরদিন সকালে ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সময় দোতলার সিঁড়িতে ধ্রুবর সাথে দেখা হয়ে গেলো। আমাকে দেখেই হাসি দিলো। হাসলে ওর গালে টোল পড়ে। খুব কিউট লাগে তখন। জবাবে আমিও হাসলাম। ধ্রুব খুব সিরিয়াস সিরিয়াস মুখ করে বললো,”আমরা নেক্স মান্থে বাসা ছেড়ে দিচ্ছি নিশাত!” আমি অবাক হয়ে গেলাম। ধ্রুব হঠাৎ বাসা ছাড়ার কথা বলছে কেন? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ” হঠাৎ বাসা ছাড়া কথা মনে হলো কেন?”

ধ্রুব গম্ভীরমুখে বললো,”মা বলেছে বউয়ের বাপের বাড়ি কাছে থাকলে বউ দুষ্ট হয়ে যায়। কথায় কথায় বাপের বাড়ি যাওয়ার হুমকি দেয়। অতএব এই বাসাটা আমাদের ছাড়তে হবে।”

কথাটা শেষ করে ধ্রুব একদৃষ্টিতে আমার দিয়ে চেয়ে রইলো। ওর চোখে সম্মোহন। ঠোঁটে হাসি! আমি লজ্জা পেয়ে বললাম,” সত্যিই চলে যাবে নাকি মজা করছো?”

—“একদম সত্যিই চলে যাবো। অবশ্য তোমার বাবা যদি বাড়িটা আমার নামে লিখে দেয় তাহলে থাকার কথা ভেবে দেখতে পারি।”

আমি ভেংচি কেটে বললাম,”কথাটা বাবাকে বলতে পারবে?

—“পারবো না কেন? একশোবার পারবো। মেয়ের জামাই হিসেবে বাড়িটা তো আমি পেতেই পারি!”

—“খুব সাহস না? বাবা জানতে পারলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবে।”

ধ্রুব খুব ভাব নিয়ে বললো,”শোনো সুন্দরী, যতই বাপের ভয় দেখাও না কেন তুমি যে আমার গলায় ঝুলে পড়ার জন্য একপায়ে খাড়া সেটা আমি ভালো করেই জানি।”

ওর ভাব দেখে সহ্য হলো না। আমিও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,”সেই আসাতেই থাকো।”

ধ্রুব ফট করে দুই তিন সিঁড়ি লাফিয়ে উঠে আমার খুব কাছে এসে দাঁড়ালো। খুব কাছে। এতটা কাছে যে আমি ওর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছিলাম। ফিসফিস করে বললো, “কেন করবে না আমাকে বিয়ে?”

ওর তপ্ত নিশ্বাস গালে পড়তেই আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে ফেললাম। হি ইজ ট্রায়িং টু হিপনোটাইজ মি! কিন্তু আমি ওর ফাঁদে পা দিচ্ছি না। কারণ আমি জানি আমার মুখ থেকে স্বীকার করিয়ে একটু বাদে আমাকেই খোঁটা দেবে অসভ্যটা। আমি নিশ্বাস চেপে রেখে বললাম,”না, করবো না। তুমি সরো আমার সামনে থেকে।” অতঃপর জোরপূর্বক ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলাম। ওর দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,

—“এখন খুব ভাব দেখানো হচ্ছে তাই না! আমার কিন্তু সব মনে আছে!

আমি নিজের ভাব বজায় রাখার জন্য জোর গলায় বলল,”বাজে কথা বলবে না। কি মনে আছে তোমার?”

—“ও, এখন সব বাজে কথা তাই না? মা মার্কেটে গেছে শুনে সেদিন একলা বাসায় কে কেঁদেছিলো আমার কাছে? খুব তো কেঁদেছিলে সেদিন।”

আমি থতমত খেয়ে বললাম,” কেঁদেছি। বেশ করেছি। তুমিও তো আমাকে জোর করে রুমে ঢুকিয়ে চুমু খেয়েছিলে?”

—“চুমু খাওয়ার জিনিস, খেয়েছি। তোমার মত তো আর ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদিনি।”

—“আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেছি?

—“অফকোর্স তুমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেছো। আমার স্পষ্ট মনে আছে।”

তারপর ধ্রুব আমার কান্নার দৃশ্য অনুকরণ করে বললো,”আমার ভুল হয়ে গেছে ধ্রুব, ভ্যাঁ..আই অ্যাম সরি ধ্রুব! ভ্যাঁ…আমি তোমাকে ভালোবাসি ধ্রুব, ভ্যাঁ…আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না ধ্রুব, ভ্যাঁ..এগুলো কে বলেছিলো?”

আমি জানি ধ্রুব সুযোগ পেলেই আমাকে খোঁটা দেবে। তাই সবসময় ওর সামনে নিজের ফিলিংস লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু অসভ্যটা পইপই করে সব মনে রেখেছে, এমনকি আমার কান্নার ভঙ্গিটাও! প্রতিবার কান্নার ফাঁকে সে আমাকে নকল করে নাক টানলো। এবং অবিকল আমার মত করে টিস্যু দিয়ে নাক মুছলো। কান্না শেষে আমার দিকে তাকিয়ে গা জ্বালানো হাসি দিলো।
আমি চোখ লাল করে চেয়ে রইলাম। দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, “আমি তোমাকে এই জীবনে বিয়ে করবো না। মরে গেলেও না!”

ধ্রুব আঙ্গুল দিয়ে চিরুনির মত চুল আঁচড়ে ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,”দেখা যাবে।” তারপর আমাকে রেখেই তরতর করে নিচে নেমে গেলো। আমি জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম।
.
.
.
চলবে

ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ৯

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ৯

মা রোজই আমাকে বিয়ে নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করছে। আমার সেসব নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। বাবা যাকে বলবেন, যখন বলবেন, বিয়ে করে নেবো ব্যস। এর বেশি আর কিছু জানার দরকার নেই। আমি আমার মত ভালো থাকার চেষ্টা করছি। ধ্রুবর ব্যাপারে নিজেকে শক্তভাবে হ্যান্ডেল করছি। ধ্রুবর সাথে জড়িত কোন চিন্তা মাথায় এলেই সেটাকে সাথে বন্ধ করে অন্য কাজে মন দিচ্ছি। তাতে করে যে লাভ হয় নি তা না। এখন আর আগের মত কষ্ট লাগে না। আগের চাইতে অনেক ভালো আছি।
চেহারার আগের লাবন্য ফিরে এসেছে। আত্মীয়স্বজনরা কেউ বাসায় এলেই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। বিয়ের আগে নাকি মেয়েরা সুন্দর হয়ে যায়। আমি এসব শুনে মনে মনে বিরক্ত হলেও মা কিন্তু এসবে বেজায় খুশি।

দিন সাতেক বাদে একদিন রাত্রীবেলা সুলতানাকে নিয়ে ছাদে উঠলাম হাওয়া খেতে। হাঁটতে হাঁটতে গান শুনছিলাম। হঠাৎ দুটো ছায়ামূর্তি দেখে আমাকে থমকে যেতে হলো। অন্ধকারেও একজনকে চিনতে আমার কোন অসুবিধে হয় নি। বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলাম মেয়েটা তরু। কিন্তু তরুর সাথে পুরুষ মানুষটিকে চিনতে পারলাম না! কে ইনি? ধ্রুব দেশে ফিরছে শুনেছি, কিন্তু লোকটার শারীরিক গঠন দেখে তো মনে হচ্ছে না ধ্রুব। এত রাতে তরুই বা এই লোকের সাথে ছাদে কি করছে? আমি নিচে চলে যাবো কি না ভাবছিলাম। তরু আমাদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,”কেমন আছো নিশাত?”
আমি বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলাম।জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললাম,”ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?”

তরুর বেবি বাম্প স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। পেটে হাত ছুঁইয়ে হাসিমুখেই বললো,”আমি ভালো আছি। মাঝে মাঝে একটু ভারী মনে হয় এই যা!”
আমি সরু চোখে ওর দিকে চেয়ে রইলাম। তরুর হাবভাব কেমন যেন অন্যরকম। আজকে হঠাৎ আমার সাথে এত ভালোভাবে কথা বলছে কেন? তরু আমার রিয়েকশনের অপেক্ষা না করে বললো,”শুনলাম তোমার নাকি বিয়ের কথাবার্তা চলছে?”

আমি ভদ্রতাসূচক হাসি দিলাম। তরুর সাথে থাকা পুরুষ লোকটি হাঁটতে হাঁটতে ছাদের অন্যপাশে চলে গেলো। তরু আমাকে চিমটি কেটে বলল,”অন্ধকারেও বেশ বুঝতে পারছি তুমি বেশ সুন্দরী হয়ে গেছো। বিয়ের আনন্দে?”

আমি ওর ঠাট্টায় যোগ না দিয়ে ঐ লোকটাকে ইঙ্গিত করে কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন করলাম,”ইনি কে?”

আমার মুখভঙ্গি দেখে তরু বিব্রত হলো। তবে প্রশ্নের উত্তর দিলো। কিন্তু ও যা বললো তা শুনে আমার কান খুলে মাটিতে পড়ে যাওয়ার দশা। প্রবল ধাক্কা লাগলো বুকের ভেতর। চোখ বড়বড় করে ওর দিকে চেয়ে রইলাম। তরু হাসিমুখে জানালো ঐ লোকটা তার স্বামী।

—“তুমি কি আমার সাথে মজা করছো? ঐ লোকটা তোমার স্বামী হলে ধ্রুব কে?”

—“ধ্রুব ভাইয়ার সাথে তো আমার বিয়ে হয় নি! তুমি জানো না?”

আমি হতভম্ভ কন্ঠে বললাম,”কি? ধ্রুবর সাথে তোমার বিয়ে হয় নি?”

—“না। সবাই জানে অথচ তুমি জানো না?

জানবো কি করে আমি তো হস্পিটালে ছিলাম। হস্পিটাল থেকে ফেরার পর ভেবেছিলাম ওর বিয়ে হয়ে গেছে। তাই ওর ব্যাপারে কোন খোঁজখবর জানার চেষ্টাও করি নি। কিন্তু সেই কথা তরুকে বললাম না। ওর মুখ থেকে সব শোনার অপেক্ষায় চুপ করে রইলাম। তরু মুখ কালো করে বললো,

—“সেদিন হস্পিটাল থেকে ফেরার পর ধ্রুব ভাইয়া সাফ সাফ জানিয়ে দিলো সে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। কারো কথা শুনলো না। ফুপির কথাও না। তাঁর নাকি আমাকে অসহ্য লাগে। আমি নাকি সেল্ফিস, আমার নাকি মানবতা বোধ নেই, আমি নাকি খালি নিজের টাই বুঝি! এসব বলে আমাকে বিয়ে করতে মানা করে দিলো।

তরু বলে যাচ্ছিল আমি কেবল অবাক হয়ে তার কথা শুনে যাচ্ছিলাম। ওর কথা শেষ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,” সেদিন ধ্রুব ভাইয়ার ওপর আমার খুব রাগ হয়েছিলো। ভেবেছিলাম আর জীবনে ওর সাথে কথা বলবো না। কিন্তু বিয়ের পর ঐ বাড়ি থেকে ধ্রুব ভাইয়া আর ফুপু যখন আমাকে আনতে গেলো আমি না করতে পারলাম না। ওরা ছাড়া আমার আপন জন আর কে আছে বলো? ”

—“কিন্তু তোমার বিয়ে?”

—“ধ্রুব ভাইয়া বিয়ে করতে রাজী না হওয়ার ভেবেছিলাম গলায় দড়ি দেবো , তখন ইনিই আমাকে উদ্ধার করেন। ধ্রুব ভাইয়ার কলিগ!”

—“তাই নাকি। ধ্রুবর সাথে ভাইয়া ডাকটা কি বিয়ে পরে যোগ হয়েছে? আগে তো নাম ধরে ডাকতে?”

—“অফকোর্স বিয়ের পরে। আগের কথা আলাদা। তখন আমি বিবাহিতও ছিলাম না শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ছিলো না। এখন শ্বশুরবাড়ির লোকজন আছে না। সবাই জানে ধ্রুব আমার ভাই। এখন আমি ওকে নাম ধরে ডাকি কি করে? ”

আমি মুচকি হাসলাম। তরু হঠাৎ চোখ পিটপিট করে বললো,”তুমি এত প্রশ্ন করছো কেন? কি ব্যাপার বলতো?”

—“এমনি। ধ্রুব কি বাসায় আছে?”

—“হুম।”

—“ঠিক আছে, তোমরা গল্প করো। আমি আসি। ”

ছাদ থেকে নেমে আমি সোজা ধ্রুবদের বাসায় গেলাম। ধ্রুব বাসায় নেই। আন্টি জানালো সে বাইরে গেছে।আমি আন্টির সাথে বসে বসে আড্ডা দিলাম আর তরুর শ্বশুর বাড়ির খোঁজখবর শুনলাম। তরুর বাচ্চা হবে জানতে পেরে আন্টি তাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। মেয়েদের প্রথম সন্তান বাপের বাড়িতে হয়। তরুর বাবা মায়ের দিকে থেকে আপনজন বলতে তো এরাই আছে। তাই খবরটা শুনেই আন্টি এবং ধ্রুব গিয়ে তরুকে নিয়ে এসেছে।

ধ্রুব এলো ডিনারের কিছুক্ষন আগে। তরুর বরের সাথে গল্প করছিলো। আমাকে দেখে প্রথমে অবাক হলো। এই কয়মাসে এই প্রথম আমি তাদের বাসায় গেছি। একটুপর পর আড়চোখে দেখছিলো আমি কি করি। আমি আন্টির ফোন থেকে মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আজকে আন্টির সাথে ডিনার করবো। খাবার টেবিলে তরুর বরের সাথে আমার আলাপ হলো। লোকটা বেশ ভালোই। এর সাথে তরু সুখেই থাকবে। ধ্রুব গম্ভীর মুখে খেয়ে উঠে গেলো। আমি ওর সাথে কথা বলার জন্য ফাঁক খুঁজছিলাম। কিন্তু শয়তানটা আমাকে কোন সুযোগই দিলো না।

অগত্যা আমাকে ওর সাথে দেখা না করেই বাসায় চলে আসতে হলো। সেই রাতে এক ফোঁটাও ঘুম এলো না। অস্থির হয়ে ভাবছিলাম কখন ওর সাথে কথা বলতে পারবো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভাবলাম ওদের বাসায় যাবো। পরে ভাবলাম এতসকালে কারো বাসায় যাওয়া ঠিক না। অভদ্রতা হবে। অনেক কষ্টে বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু শয়তানটা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলো আমি তার সাথে কথা বলতে চাই তাই আমাকে দেখেই বন্ধুদের সাথে দেখা করার অযুহাতে বেরিয়ে গেলো। সারা বিকাল আন্টির সাথে বসে গল্প করলাম। সন্ধ্যে হয়ে এলো তাও সে এলো না। বাধ্য হয়ে সেদিনও আমাকে চলে আসতে হলো।

তারপরদিন ঠিক করলাম যা হয় হোক। আজকে ওর সাথে কথা বলবোই বলবো। আমার ভাগ্য ভালো। সেদিন ধ্রুব একা বাসায় ছিলো। আন্টি তরুকে চেকাপ করাতে নিয়ে গিয়ে ছিলেন। বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো তরুর বারো তেরো বছর বয়সী দেবর রাতুল। সম্ভবত ঘুমাচ্ছিলো সে। দরজা খুলে দিয়েই আবার ভেতরে চলে গেলো। আমি পা টিপে টিপে ধ্রুবর ঘরে দিকে গেলাম। ওর ঘর থেকে টিভির আওয়াজ আসছে, শব্দ শোনা যাচ্ছে তারমানে ধ্রুব বাসায়।

ইয়েস! আমার ধারণাই ঠিক। ধ্রুব চেয়ারে হাতলে কনুই ঠেকিয়ে বসে আছে। হাতটা মুঠো করে থুতনিতে চেপে রাখা। সামনে কম্পিউটারের মনিটরে মুভি চলছে। ইংলিশ মুভি। নাম জানি না। ও আমাকে খেয়াল করে নি। আমি গিয়ে নিঃশব্দে ওর পেছনে দাঁড়ালাম। কিন্তু মনিটরে আমার ছায়া পড়তেই ও বুঝে গেলো। মুভি পজ করে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখলো। বিস্মিত কন্ঠে বললো,”কি ব্যাপার তুমি?”

—“হুম আমি। তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি।”

ধ্রুব ফের মুভি চালু করে দিয়ে বলল,”বলো।”

—“তুমি আগে এটা বন্ধ করো।”

—“তুমি বলোনা, আমি শুনছি।”

—“তরুকে বিয়ে করো নি কেন?”

ধ্রুব আমার কথার জবাব না দিয়ে ভ্রু কুঁচকে সামনের মনিটরের দিকে চেয়ে রইলো। মুভিতে হিরো এবং হিরোইন দুজনেই ভিলেনের চালে খুব বাজেভাবে ফেঁসে গেছে। ধ্রুব ‘শীট’ বলে চেঁচিয়ে উঠলো। আমার বুঝতে অসুবিধে হলো না ধ্রুব আমার প্রশ্নটা শুনছে না! রাগ হলেও চেপে রেখে আমি আবার প্রশ্ন করলাম,”তরুকে বিয়ে করো নি কেন?”

ধ্রুব কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফের জিজ্ঞাসা করলো,”কি?”

—“আমি জানতে চাইছি তুমি তরুকে বিয়ে করো নি কেন?”

—“সেটা দিয়ে তোমার কি দরকার? তুমি তোমার বিয়ে নিয়ে মাথা ঘামাও না!”

—“এটা তো আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না।”

—“সেটা তরুকেই জিজ্ঞেস করো।”

—“করেছি তরু জানে না।”

—“ওও!”

—“তো বলো? তুমি কেন তরুকে বিয়ে করো নি?”

—“আমি বিয়ে করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চিরকুমার থাকবো।”

—“আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না।”

—“আমিও না।”

আমার রাগ উঠে গেলো। গলা চড়িয়ে বললাম,”করছো। তুমি আমার প্রশ্নেই সরাসরি জবাব দিচ্ছো না? কেন ঠাট্টা করছো?”

ধ্রুব কম্পিউটার টেবিলে সজোরে বাড়ি মেরে উঠে দাঁড়ালো। ওর চোখেমুখে প্রচণ্ড রাগ! একেবারে আমার মুখোমুখি অগ্নিচক্ষু নিয়ে চেয়ে থেকে বললো,”ঠাট্টা মনে হচ্ছে তোমার? আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি? কেন আমি তরুকে বিয়ে করি নি তুমি জানো না? জানো না তুমি?..কি হলো বলো? বলো বলছি?”

ওর ধমকের ওপর ধমক খেয়ে ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার দশা। আমি তাড়াতাড়ি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বোঝালাম জানি। ধ্রুব মাথা কাত করে বললো,”কি জানো বলো?”

কিন্তু ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোলো না। তারওপর ধ্রুব ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। আমি জানি ও আমার সাথে খারাপ কিছু করবে না। কিন্তু রাগের সময় মানুষের মাথা ঠিক থাকে না। তাই সাহস দিয়ে ওর প্রশ্নের দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম। বললাম “তুমি তরুকে সহ্য করতে পারো না, তাই।”

ধ্রুব রাগে ঠোঁটদুটো চেপে ধরে আমার দিকে চেয়ে রইলো। স্পষ্টত বোঝা গেলো ও আমার ওপর হতাশ। দরজা খুলে দিয়ে আমাকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত করে বললো,”তোমার উত্তর পেয়ে গেছো! এবার তুমি আসতে পারো।”

আমি বেরোলাম না। সাহস সঞ্চয় করে বললাম,”আমি জানতাম না তুমি তরুকে বিয়ে করো নি।”

—“তো?”

—” না কিছু না।”

—“তো যাও বেরোও।”

আমি বেরিয়ে গেলে ধ্রুব ঠাস করে আমার মুখের ওপর রুমের দরজা বেরিয়ে গেলো। আমি অগ্নিচক্ষু নিয়ে দরজার দিকে চেয়ে থেকে বাসায় চলে এলাম। কিছুই তো জানা হলো না।উলটো অসভ্যটা ধমকে আমার প্রান বের করে নিচ্ছিলো।

তবে আমি দমলাম না। ধ্রুবর সাথে আবার কথা বলার সুযোগ খুঁজতে থাকলাম। প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে আন্টির সাথে গল্প করতে ওদের বাসায় যেতাম। পরিণামে ধ্রুব আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি বর্ষণ করে রুমের দরজা বন্ধ করে দিতো। মহা বিপাকে পড়লাম। এই ছেলে ছাদেও যায় না, ঘরেও কথা বলার সুযোগ নেই। এদিকে মায়ের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এবারের পাত্রটা বাবার বেশ পছন্দ হয়েছে। চিন্তায় চিন্তায় আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিলো। ধ্রুবর সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে উঠলাম।

অবশেষে ভাগ্য দেবতা আমার ওপর সুপ্রসন্ন হলেন। বিকেলে ধ্রুবর সাথে ছাদে দেখা হয়ে গেলো। ধ্রুব নিশ্চই ভেবেছিলো আমি ওদের বাসায় গল্প করতে যাবো। তাই ছাদে এসে বসেছিল। কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো, মা ছাদে মরিচ শুকাতে দিয়েছিলো সেটা নিতে এসেই ধ্রুবর সাথে দেখা হয়ে গেলো। শয়তানটা আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো।
.
.
.
চলবে